শিয়রে মৃত্যুর হাত। সারা ঘরে বিবর্ণ আলোর স্তব্ধ ভয়। অবসাদ। চেতনার নির্বোধ দেয়ালে স্তিমিত চিন্তার ছায়া নিবে আসে। রুগ্ণ হাওয়া ঢালে ন্যাসপাতির বাসী গন্ধ। দরজার আড়ালে কালো-টুপি যে আছে দাঁড়িয়ে, তার নিষ্পলক চোখ, রাত্রি ভর হলে সে হারাবে। সিঁড়ি-অন্ধকারে মাথা ঠুকে ঠুকে কে যেন উপরে এল অনভিজ্ঞ হাতে চুপিচুপি ভিজিট চুকিয়ে দিয়ে ম্রিয়মাণ ডাক্তারবাবুকে। শিয়রে মৃত্যুর হাত। স্তব্ধীভূত সমস্ত কথার মন্থর আবেগে জমে অস্বস্তির হাওয়া। সারা ঘরে অপেক্ষা নিঃশ্বব্দ জটলা। যেন রাত্রির জঠরে মানুষের সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভাসিয়ে শূন্য সাদা থমথমে ভয়ের বন্যা ফুলে ওঠে। ওদিকে দরজার আড়ালে আবছায়া-মূর্তি সারাক্ষণ যে আছে দাঁড়িয়ে, নিষ্পলক চোখ তার। নিরুচ্চার মায়ামন্ত্রে বাঁধা ক্লান্তির করুণ জ্যোৎস্না নেমেছে শয্যার পাশ দিয়ে। শিয়রে মৃত্যুর হাত। জরাজীর্ণ ফুসফুসে কখন নিশ্বাস টানার দীর্ঘ যন্ত্রণার ক্লান্তি ধীরে-ধীরে স্তব্ধ হয়ে গেছে কেউ জানে না তা। ভোরের শিরশিরে হাওয়ায় জানলার পর্দা কেঁপে উঠে তারপর আবার শান্ত হয়ে এল। ছায়া অন্ধকার। মাঠ-নদী-বন পেয়েছে নিদ্রার শান্তি। এদিকে রাত্রির অবসানে সে-ও নেই। শান্তি! শান্তি! সে চলে গিয়েছে। সঙ্গে তার কে গেছে জানে না কেউ, শুধু এই অন্ধকার জানে।