বৃষ্টিভেজা গোধূলিতে তোমার শোকমিছিলে
এসে মনে হলো, কেন আমরা
এমন বিহ্বল শোকে? কেন আমাদের চোখের পাতা
ভিজে উঠছে বার বার?
তুমি দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েও
মৃত্যুর নিষ্ঠুরতার কথা ভাবোনি,
নিস্তব্ধ কণ্ঠে জীবনের স্তব
রচনা করেছ তন্দ্রাচ্ছন্নতায়।
জীবন এবং মৃত্যুর বিবাদে তুমি বিপন্ন এই বদ্বীপে
ফুল ফোটানো আর
সুর জাগানোর উদ্যোগ নিয়েছ,
প্রাণের স্বদেশ
তোমার চৈতন্যের কুয়াশাময় প্রবাহে
দীপের মতো ভেসেছে সারাক্ষণ।
এদেশের প্রতিটি গোলাপ উচ্চারণ করে
তোমার নাম,
প্রতিটি গাছের সবুজ পাতা, লতাগুল্ম
আবৃত্তি করে তোমার জীবন;
প্রত্যে সুকণ্ঠ পাখি তোমার নামের গান ছড়িয়ে দেয়
খোলা রাস্তায়,
মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটে, নিঃস্ব বস্তিতে।
খরগোশের লাল বোতামের মতো চোখে
কাঁপে তোমার নাম।
তোমার দিগন্ত-কাঁপানো আন্দোলনের গাথা
বাঙ্ময় হয় প্রতিটি নদীর উৎসমুখে,
পাহাড়ি কুটিরের বিষণ্নতায়,
বিপন্ন মানুষের আর্তিতে।
তোমার নাম আমাদের হৃৎস্পন্দন,
আমাদের আক্রান্ত অতীতের
ইতিহাস, আমাদের আহত গৌরবের
সোনালি দুপুর,
আমাদের মৈত্রীর পূর্ণিমা-রাত।
যে মর্কটেরা তোমার নাম
কাদায় ফেলে কলুষিত করে,
ওরা এই বাংলার কেউ নয়।
বাংলার নিসর্গ ধিক্কারের ঝংকারে
ওদের অশ্লীলতাকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে,
ওদের কুৎসিত মুখে
চুনকালি মেখে দিচ্ছে প্রগতির নতুন ইতিহাস,
যার বুনিয়াদ নির্মিত তোমারই হাতে,
আমরাও হাত লাগিয়েছি সেই কাজে।
এই তিমিরাবৃত প্রহরে দেখতে পেলাম
তোমার উত্তোলিত হাতে
নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে ফেরারি বসন্ত
আর আমাদের ভবিষ্যৎ।