শব্দ

ঝটিঙ্গা নামের এক দুর্দান্ত পাহাড়ী নদীর পাশে
হারাঙ্গাজাও নামে একটা
নম্র ছিমছাম স্টেশন
পাথুরে প্ল্যাটফর্মে একজন রেলবাবু কাঁঠালের দর করছেন
আমাদের কামরায় পর্যাপ্ত ভিড় ও হাতকড়া বাঁধা
দু‘জন খুনী আসামী
এবং উজ্জল স্কার্ট-পরা চারটি
সুস্বাস্থ্যবতী অহঙ্কারী খাসিয়া তরুণী,
কয়েকজন শিখ সৈনিক,
মনুষ নামের অসংখ্য মানুষ
আর দু’পাশে বিশাল বিশাল আদিম, পাহাড় ও
চাপ চাপ বিশৃঙ্খল অরণ্য
দৃশ্যটি এই রকম।

জনলার পাশে বসে আমি সিগারেট টানছিলাম
ঝাটিঙ্গা ও হারাঙ্গাজাও এই দুর্বোধ্য নাম দু‘টি
মাথার মধ্যে টং টং শব্দ করে
কিছুতেই অন্যমনস্ক হতে দেয় না।
এ-ও সেই শব্দের স্বজাতি যা ব্রহ্মস্বাদ সহোদর
এইসব শব্দের কূলপ্লাবিনী রহস্য বা আরণ্যক মাদকতা
খেলা করে আমাকে নিয়ে
ঐ দূর পাহাড়-প্রতিবেশী অরণ্য দেখলে মনে হয়
ওখানে কখনো মানুষ প্রবেশ করেনি
যদিও জরিপের কাজ পৃথিবীতে আর কোথাও বাকি নেই-
নদীর মতন উরু দেধেই তৎক্ষণাৎ
ঝাটিঙ্গার মাংসল জলের স্রোত ও
খুনী আসামীদ্বয়ের ধ্যাতা মুখ এবং
সৈনিকের নিস্পৃহতা-
মানুষ নামের অসংখ্য মানুষ…

খেলা ভেঙে দিয়ে আমি বললাম, শান্তনু, দেশলাইটা দাও তো-
এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে আমি নিজেকে নিজের মধ্যে
বন্দী করার চেষ্টা করি
তবু একটু পরেই ঝাটিঙ্গা শব্দটি আকাশে লাফ দিয়ে ওঠে
পাহাড়ের এ-পড়া এক রমণীর উপচে ওঠা বুকে
শেষবার চোখ রেখেছে
যমজের মতন ঐ দুই খুনী আসামী
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিতের আর কোনো দোষ নেই…
মেঘলা কখনো খোলে কিনা এই নিয়ে অনেক গবেষণা
সমতলে উৎকট গ্রীষ্ম, এখানে ঠান্ডা নরম হওয়া
হঠাৎ পাতলা মেঘ এসে নদীটি আর দৃশ্য নয়,
মাদক ছলচ্ছল ধ্বনি-
রেলবাবুটির দরাদরি শেষ হয়নি, পাথর থেকে
চুঁইয়ে পড়ছে জল
সকালের নিথর আছন্নতা খানখান করে ভেঙে
অন্তরীক্ষে বিশাল গর্জন জেগে ওঠেঃ
ঝা-টি-ঙ-গা! হা-রা-ঙ-গা-জা-ও!
এই বুনো রোমাঞ্চকর শব্দ
ট্রেনের কামরা থেকে আমাকে টেনে হিঁচড়ে
বার করে নিয়ে বলতে চায়-
এসো, এসো, দ্বিধা করছো কেন, তুমিও পৃথিবীর আদিবাসী।।