শঙ্খচূড় – ৫

পাঁচ

নীলু পণ্ডিতের সত্যিই ডাক এসেছিল। মাসখানেকের মধ্যেই তার মেয়াদ ফুরোল।

দুনিয়ায় একজন হারালে তবে আরেকজন পায়। নীলু পণ্ডিত কন্যা হারাল, পেল মাধবদাস। মন্দির সংলগ্ন তারই বাড়িতে বাস করে দেবদাসী অলকাতিলতা। সে এখন অন্তঃপুরিকা। মন্দিরের গণ্ডীর বাইরে যাওয়া নিষেধ।

কিন্তু দেবদাসী হতে গেলে দেবতাকে শুধু পতিরূপে ভজনা করলেই হবে না, দেবতার সর্বপ্রকার মনোরঞ্জনের কলাবিদ্যাও আয়ত্ত করতে হবে। শুধু পূজায় নয়, নৃত্যে, গীতে, লাস্যে, লীলায় নিজেকে নিবেদন করে দিতে হবে গোপীনাথের পায়ে। সেই হল দেবদাসীর আমরণ সাধনা।

মাধবদাস নিজে একজন সঙ্গীতজ্ঞ, সুপটু মৃদঙ্গবাজিয়ে। একসময় নৃত্যেও পারদর্শী ছিল। তারই কাছে শুরু হয়ে গেল তিলকের নৃত্যকলা শিক্ষা।

দু’বেলা গুরু মাধবদাস শেখায়, তিলক শেখে। মৃদঙ্গে ঘা দিয়ে গুরু মুখে বোল বলে, তিলক ছন্দ তাল নয় অভ্যাস করে। মুদ্রার ব্যাখ্যা করে গুরু, আপন ললিত অঙ্গে অঙ্গে তার অনুকরণ করে ছাত্রী। নতুন জীবন, নতুন পরিবেশ, নতুন শিহরণ! এমনি করেই মৃদঙ্গের বোল, বীণের ঝঙ্কার আর নূপুরের ছন্দের মধ্যে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে লাগল হর্তুকিতলায় শোনা একটি গ্রাম্য বাঁশির সুর। গোপীনাথের স্মিতহাস্যবিকশিত মুখভাবের মধ্যে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে লাগল আজন্ম চেনা একটি কালোকোলো তরুণ মুখের ছায়া।

সময় যেন চকমকি নদীর স্রোত। দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। দেবদাসী অলকাতিলকা পুরোপুরি ভুলে গেল পুবপাড়ার নীলু পণ্ডিতের মেয়েকে। ভুলে গেল পোটো—পাড়ার সুদামের নিত্য—সাথী তিলককে।

.

কিন্তু জীবন যেন নাটকের রঙ্গমঞ্চ। একজনের প্রস্থান, আরেকজনের প্রবেশ। দেবদাসীর জীবনে সুদাম গেল, এল স্বয়ং রাজা কন্দর্পকান্তি। মন্দিরে একটি দেবদাসী এসেছে, কন্দর্পকান্তির তা অজানা ছিল না, কিন্তু খবরটাকে সে একটা সাধারণ ঘটনা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনি। কৌতূহল বা ঔৎসুক্যের লেশমাত্র তার মনে জাগেনি। যৌবনের একটা ধর্মেই সে দীক্ষিত ছিল, তা হচ্ছে বিপদ নিয়ে খেলা করা। তাই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের জঙ্গলে শিকারের নেশাতেই সে মেতে থাকত, দেবগড়ে থাকত খুব কম সময়।

সে বছর কন্দর্পকান্তি রেওয়া থেকে দেবগড়ে ফিরল রাসপূর্ণিমার দিন। আর, সেই দিনই রাতে দেবদাসীকে সে প্রথম দেখল।

রাজা দিব্যকান্তি তখন রোগশয্যায়। তাই রাজবংশের প্রথানুযায়ী ছেলেকে মন্দিরে পাঠালেন উৎসবে উপস্থিত থাকার জন্যে। বেশি রাতে বাইরের লোকজনকে মন্দির থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, রইল কেবল পুরোহিতের অধিকার নিয়ে মাধবদাস আর রাজার অধিকার নিয়ে কন্দর্পকান্তি। আর কয়েকজন রইল সেতার বীণা আর মন্দিরা নিয়ে। চোখে তাদের কাপড় বাঁধা, দেবদাসীকে দেখা নিষেধ।

নাটমন্দিরে মৃদঙ্গ কোলে নিয়ে বসল মাধবদাস। ঘা দিল মৃদু—মন্দ্র। গোপীনাথের সামনে নতজানু হয়ে বসেছিল অলকা তিলকা। নাটমন্দিরের দিকে পিছন ফিরে। মৃদঙ্গের ইসারা পেয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল, ঠাকুরের পায়ের কাছে রাখা ফুলের মালা কপালে ঠেকিয়ে নিজের গলায় পরলে। তারপর ধীর মন্থরগতিতে এসে দাঁড়াল নাটমন্দিরের অঙ্গনে। আলতা—পরা টুকটুকে পা দুটির স্পর্শসুখে নূপুর বেজে উঠল ঝুম—ঝুম ঝুম—ঝুম ঝুমুর—ঝুম।

নাটমন্দিরের সব ক’টা বাতির ঝাড় জ্বেলে দেওয়া হয়েছে। তারই আলোয় কন্দর্পকান্তি ভালো করে দেখল দেবদাসীকে। কিন্তু একী বেশভূষা দেবদাসীর!

লাল—পাড় ফিকে বাসন্তী রঙের মোটা তাঁতের শাড়ি পায়ের গোছের ওপরে তুলে পরা, আঁচলটা কোমরে জড়ানো। গায়ে সেই রঙের চেলি। সোনার অঙ্গে সোনার ভূষণের চিহ্ন নেই। সোনার স্থান দখল করেছে জঙ্গলের অতসী কাঞ্চন করবী চম্পা। মণিবন্ধে বাহুতে নিতম্বে কানে গলায় শুধু ফুলেরই গহনা। মাথায় সিঁথিমৌর অবধি ফুলে গড়া। চূড়া—খোঁপায় বন—যুঁইয়ের মালা জড়ানো। কপাল থেকে গাল অবধি কনে—চন্দন।

অলংকার না থাক, রূপ আছে। সজ্জা না থাক, দেবদাসী সাজতে জানে। চোখ ফেরাতে পারে না কন্দর্পকান্তি। কাঁচা হলুদবরণ অঙ্গ, নাক মুখ চোখ পটে আঁকা, টোল—পড়া চিবুকের গড়ন পানের মতো। পুষ্পস্তবকের মতো পীবর বুক আর ক্ষীণ কটির নিচে গুরু নিতম্ব তালে তালে তরঙ্গভেঙে দুলছে মৃদঙ্গের মেঘমন্দ্র বোলে। মুখচোরা নূপুর হয়ে উঠেছে মুখর।

নাচছে দেবদাসী। যেন সর্বাঙ্গ দিয়ে আরতি করছে গোপীনাথের!

আসনে ঋজু হয়ে বসে রইল কন্দর্পকান্তি। নারীকে এমন করে দেখার সুযোগ তার চব্বিশ বছরের জীবনে এর আগে আসেনি। সুযোগ সে খোঁজেওনি। ঘোড়া আর বন্দুককে সঙ্গী করাই এতদিন কাটিয়েছে। আজ প্রথম মনে হল বুনো জানোয়ার শিকার করাই জগতে একমাত্র নেশা নয়, নারীর রূপেরও একটা আশ্চর্য মাদকতা আছে।

আভূমি প্রণতা হয়ে নৃত্যের আরতি শেষ করলে দেবদাসী। তারপর গুরু ও রাজাকে নমস্কার জানিয়ে চলে গেল ঝুম—ঝুম করে। ফিরেও দেখল না।

কন্দর্প কয়েক মুহূর্ত অন্যমনে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করলে, মেয়েটি কে?

মাধবদাস বললে, অলকাতিলকা। নীলকণ্ঠ পণ্ডিতের মেয়ে।

দেবদাসী হল কেন?

মাধবদাস সমস্ত বৃত্তান্ত জানালে।

শুনে কন্দর্প বললে, এ মেয়ের তো রাজরানি হবার কথা।

মাধবদাস বললে, রানিই তো হয়েছে। ব্রজরাজের রানি।

কন্দর্প বললে, তাই যদি হয়, তবে রানির মতোই থাকা উচিত ওর। শুনেছি আপনার ঘরেই ও থাকে, কাল থেকে বসন্তবিহারে ওর থাকার ব্যবস্থা হবে।

কিন্তু আমার ঘরে অলকাতিলকার কোনো অসুবিধা নেই।

অসুবিধা আছে আমি বলিনি। তবে দেবগড়ের দেবদাসীকে যোগ্য স্থানে রাখাই উচিত।

হাসলেন মাধবদাস। বললেন, মাপ করবেন যুবরাজবাহাদুর, একটু বোধ হয় ভুল হল। অলকাতিলকা দেবগড়ের দেবদাসী নয়, গোপীনাথের দাসী।

তবু লোকে বলবে দেবগড়েরই দেবদাসী। আর দেবগড়ের একটা মর্যাদা আছে।

এবারে আর হাসতে পারল না মাধবদাস। একটু ভেবে বললে, কিন্তু যুবরাজবাহাদুর, বসন্তবিহার যে দেবগড় রাজবংশের প্রমোদভবন।

কন্দর্প বললে, ছিল, আমার পূর্বপুরুষদের। কিন্তু বাবার আমল থেকে চাবিবন্ধ আছে। আমি সম্পূর্ণ সংস্কার করিয়ে দেব, ভাববেন না। জায়গাটা নিরালা, পরিবেশও ভালো। দেবদাসী যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সেজন্যে বিশ্বাসী পাহারাদার থাকবে।

আর বসল না কন্দর্পকান্তি। চলে গেল। শূন্য নাটমন্দিরে একা দাঁড়িয়ে রইল মাধবদাস চিন্তিত মুখে।

রাজার আদেশ, কিছু বলার নেই।

.

প্রায় চল্লিশ বছরেরও বেশি তালাবন্ধ ছিল ‘বসন্তবিহার’। লোকে বলে জলসাবাড়ি।

একসময় এই প্রাচীন প্রমোদভবনের বড় হলঘরে একশো বাতির ঝাড় জ্বলত প্রতি সন্ধ্যায়। নটীর নূপুরনিক্কণ অনুরণিত হত, দেয়ালে—ঝোলানো বৃহদাকার দর্পণে নগ্ন দেহলতার লাস্যভঙ্গিমা ঝলসে উঠত, সুরার স্রোত বয়ে যেত, আর মত্ত পুরুষ—কণ্ঠের মুহুমহু তারিফে রাত্রি লজ্জায় কালো হয়ে উঠত। সেই নৈশ ব্যাভিচারে বোবা সাক্ষী ছিল দেবগড়ের পাহাড় আর জঙ্গলের গাছপালা। অবশেষে শেষরাতের দিকে বসন্তবিহারের ছোট বাড়ির শয়নকক্ষে অসংলগ্ন প্রণয়কূজন শুনতে শুনতে দেবগড়ের রাত্রি ভোর হয়ে আসত।

কন্দর্পকান্তির ঠাকুরদাদা রাজা দেবকান্তির আমল পর্যন্ত বসন্ত বিহারের জলসাঘর নিত্য খোলা হত। কিন্তু ছেলে দিব্যকান্তি যেন দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। রক্তে ব্যভিচারের বদলে সাত্ত্বিকতা নিয়ে জন্মালেন, শাক্ত বংশের সন্তান হয়েও বৈষ্ণবধর্মে অনুরাগ হল। ফলে, দেবকান্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বসন্তবিহারের দরজায় তালা পড়ল।

সেই মরচে—পড়া পুরানো তালা খোলা হল চল্লিশ বছর পরে।

আমূল সংস্কার হল প্রমোদভবনের। আগাছা সাফ করে ফুলগাছের চারা বসানো হল। পুরোন আসবাব নতুন করে রঙ হল। এল শাড়ির বদলে রেশমি ঘাঘরা, জরির কাঁচলি, অগুরু চন্দন—চূর্ণ কুমকুম। আর তারই সঙ্গে এল একসেট রত্ন—অলংকার। মুক্তার বেসর, পান্নার দুল, হীরার কণ্ঠহার, নীলার অঙ্গুরী, আরো কত কী।

অলকাতিলকা বাস করতে এল বসন্তবিহারে, কিন্তু ছুঁল না সে—সব। নিরাভরণ অঙ্গে মোটা তাঁতের শাড়িই জড়িয়ে রাখল। পালঙ্কের বদলে ঘরের ভূমিতলেই কম্বল বিছিয়ে শয়ন করলে।

খবর পেয়ে কন্দর্পকান্তি দেখা করতে এল।

সকালে মন্দিরে যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছিল অলকাতিলকা। স্নান সেরে সাধারণ শাড়ি পরেই দেখা করলে সে।

কন্দর্পকান্তি জিজ্ঞেস করলে, নতুন পোশাক পরোনি কেন?

মৃদু গলায় অলকাতিলকা বললে, ও তো নটীর সাজ।

কন্দর্পকান্তির ভুরু ঈষৎ কুঞ্চিত হল। বললে, লোকরঞ্জনের জন্যে যে নাচে, শাস্ত্রে তাকেই নটী বলে। তুমিও নাচো, গোপীনাথের মনোরঞ্জনের জন্যে।

সে—নাচ আমার পূজা।

পূজা করে বলে দেবদাসী তো সন্ন্যাসিনী নয়! সোনার অলঙ্কারগুলোই বা কি দোষ করলে?

ভূমিতলে চোখ রেখে অলকাতিলকা জবাব দিলে, ফুলই আমার গহনা।

কন্দর্প একটু হেসে বললে, কিন্তু রাত পোহালে ফুল শুকিয়ে যায়, সোনা থাকে চিরকাল।

অলকাতিলকা বললে, আমি গরিবের মেয়ে।

কন্দর্প বললে, একদিন ছিলে, এখন তুমি দেবগড়ের দেবদাসী। আর, তোমার বয়সও শুনেছি মাত্র আঠারো। জীবনের অনেকটাই বাকি।

চকিতে চোখ তুলে তাকাল অলকাতিলকা। কন্দর্পকান্তি সোজা তাকিয়ে আছে তার দিকে। পুরুষের দৃষ্টির ভাষা বুঝতে নারীর এক লহমাও লাগে না। কি ছিল কন্দর্পের মুগ্ধ দৃষ্টিতে? যৌবনের সাদর অভ্যর্থনা?

অলকাতিলকার চোখের পাতা ভারি হয়ে নেমে এল।

কন্দর্প বললে, সুন্দরকে যা আরো সুন্দর করে, তা পরতে দোষ কি?

দেবদাসীর কাছ থেকে কোনো সাড়া এল না। একটু বাদেই ফটকের বাইরে কন্দর্পকান্তির ঘোড়ার খুরের আওয়াজ মিলিয়ে গেল।

পালকি অপেক্ষা করছিল। দেবদাসী এসে উঠে বসল।

মাধবদাসও অপেক্ষা করছিল মন্দিরে। বললে, আজ বিলম্ব হল যে?

বিলম্বের কারণ জানালে অলকাতিলকা। তারপর জিজ্ঞেস করলে, আমি এখন কি করব?

মাধবদাস পালটা প্রশ্ন করলে, তোমার মন কি বলে?

প্রশ্নটা বোধ হয় এড়িয়ে গেল অলকাতিলকা। বললে, আপনি যা বলবেন, তাই করব।

তার মুখের ওপর গভীর দৃষ্টি ফেলে চেয়ে রইল মাধবদাস। যেন তার অন্তরতল অবধি দেখে নিতে চাইছে। কোন আকাঙ্ক্ষা, কোন অতৃপ্তি অন্ধকারে কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে সেখানে?

কি দেখল মাধবদাসই জানে। কিছুক্ষণ বাদে বললে, শাস্ত্রে দেবদাসীর বেশভূষার তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তোমার মন যদি লক্ষ্যে স্থির থাকে, সাজসজ্জার খোলসে কিছু আসে যায় না মা। সমাজে থাকতে হলে রাজার আদেশটাও মানতে হয়।

অলকাতিলকা নিশ্চিন্ত হল। গোপীনাথের দাসী না চাইলেও আঠারো বছরের গরিবের মেয়ে গুরুর এই নির্দেশই চাইছিল!

দিনকয়েক পরে কন্দর্পকান্তির ঘোড়ার খুরের শব্দ আবার এসে থামল বসন্তবিহারের ফটকে। পরিচারিকা জানালে যুবরাজবাহাদুর দর্শনপ্রার্থী। নতুন সজ্জায় অনভ্যস্ত দেবদাসী ওড়নাখানা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এল। পাতলা মসলিনের আড়ালে দেখা যাচ্ছে, দেবদাসীর পরনে গাঢ় রক্তবর্ণ রেশমি ঘাঘরা, বুকে জরির খাটো কাঁচুলির নিচে সুগৌর কটিদেশের হাতছানি, টিকালো নাকে মুক্তার বেসর, বাহুতে বাজুবন্ধ, গুরুনিতম্বে চন্দ্রহার, সিঁথিতে সিঁথি—মৌর। রক্তবর্ণ ঘাঘরার সঙ্গে মিল রেখেছে অধরে তাম্বুল আর পায়ের আলতা। আঠারো বছরের রূপ—যৌবনের গাঙে যেন কোটালের বান ডেকেছে!

অভিভূত হয়ে গেল কন্দর্পকান্তি। চব্বিশ বছরের বলিষ্ঠ পৌরুষ আবিষ্ট হয়ে গেল। মুখ দিয়ে শুধু বেরোল, বাঃ!

ওড়নাখানা গায়ের ওপর আরো একটু টেনে দিলে দেবদাসী।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নীরবে চলে যাচ্ছিল কন্দর্পকান্তি। অলকাতিলকা পিছু ডেকে বললে, যুবরাজবাহাদুর, কিছু বলবেন?

যেতে যেতেই উত্তর দিলে কন্দর্প, বলতে আসিনি, দেখতে এসেছিলাম।

চলে গেল যুবরাজবাহাদুর। অলকাতিলকা পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়াল দর্পণের সুমুখে। দেয়ালজোড়া বিশাল দর্পণে ছায়া পড়ল। অলকাতিলকা নিজেকে দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে একটু ক্ষীণ হাসি ফুটল তাম্বুল—রাঙা ঠোঁটের সীমায়।

প্রত্যেক যৌবনবতী নারীর মধ্যে এক মোহিনী থাকে, পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে নিজেকে মেলে দিয়ে সে আত্মপ্রসাদ লাভ করে।

.

দেবগড়ে কন্দর্পকান্তির বুঝি মন বসেছে। বাইরে বাইরে শিকারের প্রোগ্রাম প্রায়ই বাতিল হতে থাকল, তার বদলে তার বাদামি রঙের প্রিয় ঘোড়া প্রায়ই এসে থামতে লাগল বসন্তবিহারের ফটকে। দেবদাসীর কোনো অভাব আছে কিনা জানবার জন্যে।

অলকাতিলকা বলে, রাজার দয়ায় অভাব হবে কেন?

কন্দর্প বলে, রাজার ভাণ্ডারে দয়া ছাড়া আরো কিছু আছে, তা বোধ হয় জানো না?

কন্দর্পের উজ্জ্বল চোখে একটা সাগ্রহ প্রত্যাশা ফুটে ওঠে।

আগের চেয়ে অনেকটা সপ্রতিভ হয়েছে দেবদাসী। স্বচ্ছন্দ হয়েছে তার কথাবার্তা। মৃদু হেসে বলে, জেনে কি হবে? যেটুকু পেয়েছি, আমি তাতেই সুখী। বেশি রাখার জায়গা নেই।

এ কি দেবদাসীর চাপা গরব, না নিষ্কাম মনের কথা?

কন্দর্পকান্তি ঠিক বুঝতে পারে না।

কিন্তু এসব আগের ঘটনা। যে ঘটনা বলছিলাম, সেই ব্যাপারেই ফিরে আসা যাক। দিব্যকান্তির মৃত্যুর পর রাধা প্রতিষ্ঠার কথায়।