লোহিত সরণ পদ্ধতি, মহাবিশ্ব ও এর প্রসারণ
আমেরিকার জ্যোতির্বিদ এম.এল. হিউমাসনের লোহিত সরণের পর্যবেক্ষণ সমূহের সহায়তা নিয়ে এডোইন হাবল প্রমাণ করেছিলেন যে, আকাশে যে মেঘসদৃশ দাগগুলো দেখা যায় এরা বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত এক একটি গ্যালাক্সি। এদেরকে খুব বেশি ক্ষীণ মনে হয়, কারণ এরা খুব বেশি দূরে অবস্থিত। তখনও পর্যন্ত (বর্তমান শেষেও) যে কেউ শক্তিশালী আলোক দুরবিন দিয়ে এবং রেডিও দুরবিনের সাহায্যে যতদূর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবেন, শনাক্ত করতে পারবেন যে, মহাবিশ্ব গ্যালাক্সি দিয়ে পরিপূর্ণ রয়েছে। মহাশূন্যব্যাপী এসব গ্যালাক্সি আলাদা আলাদাভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। মহাবিশ্ব নিয়ে আরও গভীর আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে আমাদের বোঝা উচিত-মহাবিশ্ব বলতে কী বুঝি? শক্তিশালী দুরবিন দিয়ে আমরা যতদূর পর্যন্ত অনুসন্ধান করেছি ততদূর পর্যন্ত গ্যালাক্সির অস্তিত্ব শনাক্ত করতে পেরেছি। এমনটিও ধরে নেওয়া অযৌক্তিক হবে না যে সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সিদের বাহিরেও আরও অনেক গ্যালাক্সি রয়েছে। অতএব বলা যায় যে, আমাদের পর্যবেক্ষণকৃত সকল গ্যালাক্সি যারা সংগত কারণেই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাদের সামষ্টিক রূপই হল মহাবিশ্ব। এবার ধরে নিচ্ছি সবচেয়ে দূরের কোনও গ্যালাক্সিতে যদি বুদ্ধিমান প্রাণীদের অস্তিত্ব থাকে তারাও আমাদের মতই তাদের চারপাশে গ্যালাক্সির বণ্টন পর্যবেক্ষণ করবে। অর্থাৎ সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সি থেকে আমাদের বিপরীত দিকে তারাও গ্যালাক্সিদের পরিমণ্ডল লক্ষ করবে। এই প্রেক্ষিতে সকল গ্যালাক্সির সমষ্টিগত রূপকে মহাবিশ্ব বলে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন আসে আমাদের সামষ্টিক রূপের বাহিরে কী এমন আরও গ্যালাক্সি আছে যেগুলো আমাদের সামষ্টিক রূপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়? এই প্রশ্নটি বিকল্প একটি সংজ্ঞার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত’অস্তিত্বমান যা কিছু আছে সবকিছুর সমন্বয়ই মহাবিশ্ব’। এবার দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি প্রথম সংজ্ঞা থেকে ভিন্ন। আমরা প্রথমটিই বেছে নেব। কারণ দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। আমাদের মহাবিশ্বের বাহিরে কী অন্য কোনও মহাবিশ্ব থাকতে পারে? এটা কী সম্ভব? সুতরাং, দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি জটিলতা বিবর্জিত।
গ্যালাক্সিগুলো যখন বিভিন্ন দল বা গ্রুপের সৃষ্টি করে তখন প্রতিটি দলকেই এক একটি স্তবক বলা হয়। প্রতিটি স্তবকে হাজার থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত গ্যালাক্সি থাকতে পারে। তথ্য প্রমাণ বলছে যে, ক্লাস্টারগুলো মিলিত হয়ে আরও বৃহৎ ক্লাস্টার বা স্তবক সৃষ্টি করে অর্থাৎ স্তবকদের স্তবক সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্তবকদের আরও ক্রমোচ্চবিভাগের প্রমাণ এখনও পর্যন্ত নেই। তথ্য পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রদত্ত যে কোনও সময়ে গ্যালাক্সিগুলো মহাবিশ্বব্যাপী গড়পড়তায় সমসত্ত্ব রূপে ছড়িয়ে আছে। এবার দুটি অংশের বিবেচনা করব। আয়তনের দিকে দুটি অংশই সমান। এই অংশগুলো সবচেয়ে নিকটতম স্থানীয় গ্যালাক্সিদের মধ্যবর্তী দূরত্বের তুলনায় অতি বিশাল। এখন দেখা যাবে যে, প্রদত্ত যে কোনও সময়ে প্রতিটি অংশে সমান সংখ্যক গ্যালাক্সি রয়েছে। অতএব, গড়পড়তায় যদি সবচেয়ে কাছাকাছি গ্যালাক্সিদের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ হয়, তাহলে আমরা ১০০ মিলিয়ন আলোক বর্ষের একটি ঘনক্ষেত্র বিবেচনা করব। দেখা যাবে যে, ঘনক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যালাক্সি রয়েছে ঘনক্ষেত্রটি একই সময়ে অন্য যে কোনও স্থানে বিবেচনা করলেও এতে প্রায় সমান সংখ্যক গ্যালাক্সি থাকবে। এখানে ‘যে কোনও প্রদত্ত সময়’ শর্তটি মহাবিশ্বের গঠন বিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কেননা মহাবিশ্ব গতিশীল অবস্থায় থাকলে সময়ের সঙ্গে মহাবিশ্বের প্রদত্ত যে কোনও স্থানে গ্যালাক্সির সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে। তাছাড়া অতি দূরের গ্যালাক্সিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। কারণ এদের নিঃসৃত আলো বর্তমানে আমাদের কাছে পৌঁছার পূর্বে কয়েক বিলিয়ন বছর অতিক্রম করেছে। এবার যদি আমরা অনুমান করি আমাদের গ্যালাক্সি বিশেষ কোনও স্থানে অবস্থিত নয় তাহলে দেখব যে, আমাদের চারপাশের গ্যালাক্সির বিন্যাস আইসোট্রপিক অর্থাৎ সবদিক থেকে একই হবে। সুতরাং এটি অপরিহার্যরূপে সত্যি যে, গ্যালাক্সিগুলো মহাবিশ্ব ব্যাপী সমরূপে ছড়িয়ে আছে।
১৯৩০ সালের দিকে বিজ্ঞানী হাবল আবিষ্কার করেন গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি এদের গতির মধ্যে সুস্থিত কিছু নিয়মাবদ্ধতাও খুঁজে পান। তিনি দেখতে পান যে, কোনও গ্যালাক্সি আমাদের থেকে যত দূরে অবস্থিত তার অপসারণ বেগও তত বেশি। দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর অপসারণ বেগ যে নিয়ম মেনে চলে এই নিয়মকে হাবলের সূত্র বলে। হাবলের সূত্রানুযায়ী গ্যালাক্সির দূরত্ব থেকে এর সরণ বেগ নির্ণয় করা যাবে। এক্ষেত্রে গ্যালাক্সির দূরত্ব জানা গেলে ওই দূরত্বকে একটি বিশেষ সংখ্যা দ্বারা গুণ করে গ্যালাক্সিটির সরণ বেগ পাওয়া যাবে। আর এই বিশেষ সংখ্যাটি হল হাবলের ধ্রুবক। এই সংখ্যা যে কোনও প্রদত্ত সময়ে সকল গ্যালাক্সির জন্য একই থাকে। গ্যালাক্সিদের এই সরণের ব্যাপারটি অন্যভাবেও বলা যায়—গ্যালাক্সির সরণ বেগ তার দূরত্বের সমানুপাতিক। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট দূরে অবস্থিত একটি গ্যালাক্সি কোনও এক বেগে আমাদের থেকে দূরে সরে গেলে তার দ্বিগুণ দূরে অবস্থিত একটি গ্যালাক্সির সরণ বেগ তুলনামূলকভাবে দ্বিগুণ হবে। কিন্তু হাবলের এই সূত্রটি ত্রুটিপূর্ণ। আমাদের খুব কাছে অবস্থিত গ্যালাক্সিদের জন্য এ নীতি কার্যকর নয়, এমনকি খুব বেশি দূরের গ্যালাক্সিগুলোর জন্যও নয়। এই শৃঙ্খলাবদ্ধ অপসারণ বেগ ছাড়াও সকল গ্যালাক্সিতেই এলোমেলোভাবে আরও বেগের উপাংশ কাজ করে। আমাদের নিকটবর্তী গ্যালাক্সিগুলোতে এরকম এলোমেলো কিছু বেগ ক্রিয়াশীল থাকে। এই ক্রিয়াশীল বেগ ও সরণ বেগের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এই গ্যালাক্সিগুলো হাবলের এই নীতি মেনে চলে না। এর সুস্পষ্ট একটি উদাহরণ হল অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই গ্যালাক্সিটি আমাদের থেকে দূরে সরে যাওয়ার বদলে ক্রমান্বয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আবার অত্যন্ত দূরের গ্যালাক্সিরাও হাবলের নীতি থেকে সরে দাঁড়ায়। কারণ এসব গ্যালাক্সি থেকে বিমুক্ত আলো কয়েক বিলিয়ন বছর পূর্বে যাত্রা শুরু করেছিল। ওইসব পর্যায়কালে গ্যালাক্সিদের নিয়মাবদ্ধ গতিবেগ বর্তমান সময়কালের গতিবেগ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হতে পারে। দূরের গ্যালাক্সিদের ক্ষেত্রে হাবলের নীতি প্রয়োগ করলে দেখা যায় যে, অনির্দিষ্টভাবে বিশাল দূরত্বসমূহের জন্য এদের অপসরণ বেগও অনির্দিষ্টভাবে অতি বেশি হয়ে যায়। হয়ত-বা এদের সরণ বেগ আলোর বেগের থেকেও বেশি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বলে, কোনওকিছুর বেগই আলোর বেগের থেকে বেশি হতে পারে না। এক্ষেত্রে এই সমস্যাটির সমাধান অতি সূক্ষ্ম। লোহিত সরণ পদ্ধতির ব্যাখ্যার পর আমরা এই বিষয়টি বিবেচনা করব। কিন্তু এদিকে হাবলের নীতির দূরের গ্যালাক্সিগুলোর এ ব্যতিক্রমধর্মী আচরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা মহাবিশ্বের সামগ্রিক গঠনের সম্পর্কে কার্যকর তথ্য পেতে পারি।
বিজ্ঞানী হাবল কীভাবে দূরের গ্যালাক্সিদের বেগ নির্ণয় করেছিলেন? তিনি ওইসব গ্যালাক্সি থেকে নির্গত আলোর লোহিত সরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। বিকিরণ বর্ণালির দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (লাল তরঙ্গ) দিকে সরে যাওয়াকে লোহিত সরণ বলে। এই বিষয়টি নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যেতে পারে। ধরা যাক একজন পর্যবেক্ষক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। একটি গাড়ি সাইরেন বাজাতে বাজাতে পর্যবেক্ষকের অভিমুখে এগিয়ে আসে এবং এক সময়ে তাকে অতিক্রম করে চলে যায়। গাড়িটি ব্যক্তির কাছ থেকে যতই দূরে সরে যায় সাইরেনের তীক্ষ্ণতা ততই কমতে থাকে। আর গাড়িটির গতিবেগ যত বেশি হয়, সাইরেনের তীক্ষ্ণতা পূর্বের অবস্থা থেকে তত দ্রুত কমতে থাকে। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকের কাছে পৌঁছবার মুহূর্তের এবং দূরে সরে যাওয়ার মুহূর্তের তীক্ষ্ণতার মধ্যে পার্থক্য তত বেশি হবে। যদি কেউ শব্দের কম্পাঙ্ক জানতে পারেন তাহলে শব্দের প্রারম্ভিক কম্পাঙ্ক ও পর্যবেক্ষক কর্তৃক গৃহীত কম্পাঙ্কের মধ্যে তুলনা করে গাড়িটির গতিবেগ নির্ণয় করতে পারবেন। এটি একটি সাধারণ গাণিতিক হিসাবের ব্যাপার মাত্র। যদি কোনও উৎস শব্দ সংকেত বা আলোক সংকেত দিতে থাকে তাহলে প্রাথমিক সংকেতটি প্রতি সেকেন্ডে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কম্পনের শামিল। যখন একজন পর্যবেক্ষক ওই সংকেতগুলো গ্রহণ করবে তখন সে কতগুলি কম্পণ গ্রহণ করবে আর তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তি ও উৎসের গতিবেগের সম্পর্কের ওপর। যদি উৎস পর্যবেক্ষকের অভিমুখে গমন করে তাহলে কম্পনগুলো ঘন হয়ে যায়। ফলে সে বেশি সংখ্যক কম্পন গ্রহণ করবে। আর উৎস দূরে সরে যেতে থাকলে সে কম সংখ্যক কম্পন গ্রহণ করবে। এই মূলনীতিটি আবিষ্কার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান জোহান ডপলার (১৮০৩-১৮৫৩)। তাই এই নীতি ‘ডপলার ক্রিয়া’ নামে পরিচিত। আবহবিৎ ক্রিশ্চোফ হেন্ডরিক (১৮১৭-১৮৯০) উন্মুক্ত ট্রেনে ভেরীবাদকের অর্কেস্টার দলের মাধ্যমে শব্দের ওপর ডপলার ক্রিয়ার পরীক্ষা করেছিলেন।
বিজ্ঞানী হাবল দূরবর্তী গ্যালাক্সিদের বেগ নির্ণয় করতে ডপলার ক্রিয়া ব্যবহার করেছিলেন। তিনি দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো থেকে নির্গত আলোর কম্পাঙ্ক ও আমাদের দ্বারা ওই একই আলোর গৃহীত কম্পাঙ্কের মধ্যে তুলনা করেছিলেন। আর এ থেকে তিনি গ্যালাক্সিদের বেগ নির্ণয় করেছিলেন। তিনি কীভাবে এগুলো বের করতে পেরেছিলেন? এই বিষয়টি নিচের বর্ণনা থেকে বোঝা যাবে। আলো হচ্ছে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের রূপ। ৩.৪ নম্বর চিত্রটিকে এই বিকিরণের সাধারণ উপকরণ হিসেবে ধরে নেওয়া যাক। চিত্রটি অত্যন্ত আক্ষরিক অর্থে নেওয়া উচিত হবে না। চিত্রের পর পর দুটি চূড়ার মধ্যবর্তী স্থানটি হল তরঙ্গদৈর্ঘ্য। বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ০.০০০০২ থেকে ০.০০০১ সেন্টিমিটার হলে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে আমরা আলো বলি।
চিত্র-৩.৪ : একটি তরঙ্গের দুটি ক্রমাগত চূড়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এই সীমায় আমরা দেখতে পাই। সুতরাং, নির্দিষ্ট মাত্রার তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের রূপই হল আলো। যে বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষা বেশি সে তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে যথাক্রমে অবলোহিত বিকিরণ, অণুতরঙ্গ, এবং রেডিও তরঙ্গ বলে। অন্যদিকে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিকিরণসমূহকে যথাক্রমে অতিবেগুনি রশ্মি (আল্ট্রা ভায়োলেট), রঞ্জন-রশ্মি, এবং গামা রশ্মি বলে। এসব বিকিরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো ৩.১ নম্বর সারণিতে উল্লেখ করা হল। সকল তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ একই বেগে চলে আর তা হল আলোর বেগ। প্রতি সেকেন্ডে কোনও একটি স্থির বিন্দু অতিক্রম করে যতগুলো তরঙ্গ তার সংখ্যাই হল বিকিরণ কম্পাঙ্ক। তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা আলোর বেগকে ভাগ করলে বিকিরণ কম্পাঙ্ক পাওয়া যায়। সুতরাং, তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি হবে বিকিরণের কম্পাঙ্ক তত কম হবে।
সারণি-৩.১ : তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও বিকিরণের ধরন।
একটি নক্ষত্র বা গ্যালাক্সি সব ধরনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ দেয়। নক্ষত্র বা গ্যালাক্সির বিভিন্ন মেকানিজম থেকে বিভিন্ন তরঙ্গের বিকিরণ সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, নক্ষত্রের মধ্যে পারমাণবিক দহনের কারণে তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়। আর নক্ষত্র বিকিরণ ত্যাগ করতে করতে ক্রমান্বয়ে শীতল হতে থাকে। বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণাদের (যেমন—ইলেকট্রন, প্রোটন) গতি থেকে রেডিও আদলে বিকিরণ সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে, চূড়ান্ত বিশ্লেষণ এই বলে যে, আধানযুক্ত কণাদের গতির কারণেই সব ধরনের বিকিরণের সৃষ্টি হয়। বিকিরণ এসব কণা থেকে শক্তি বহন করে মহাশূন্যের চারপাশ এলাকায় নিয়ে যায়। ফলে কণাসমূহ শক্তি হারায়। আমরা যখন এক খন্ড লোহাকে তাপ দিই তখন মূলত আমরা ইলেকট্রন কণাসমূহের যথেচ্ছ গতিকে বাড়িয়ে তুলি। ফলে অবলোহিত বিকিরণ (infrared radiation) বা তাপের সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনের এ এলোমেলো গতি যতই বাড়িয়ে তুলব, ততই আমরা উচ্চ কম্পাঙ্কের বিকিরণ লাভ করব। যেমন—লোহা ‘লাল জ্যোতিতে’ পরিণত হয়।
যে কোনও উৎসের বিকিরণ থেকে শক্তি সৃষ্টি হয়। আর ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সে শক্তির পরিমাণও হয় ভিন্ন ভিন্ন। নিচের ৩.৫ নম্বর চিত্রটি দ্বারা তীক্ষ্ণতা বনাম কম্পাঙ্কের লেখ দেখানো হল। এই লেখচিত্রটি দেখায় যে, λo – তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কম্পাঙ্কের পরিমাণ তীক্ষ্ণতা সবচেয়ে বেশি হয়। এ রকম একটি গ্রাফকে বিকিরণের স্পেকট্রাম (বর্ণচ্ছটা) বলা হয়। এই ‘স্পেকট্রাম’ শব্দটি আলোর সংশ্লেষণ বা বর্ণালি বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্পেক্টোমিটার বা বর্ণালি বীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কোনও উৎস থেকে নিঃসৃত আলোকে তার বিভিন্ন উপাদান বর্ণে সংশ্লেষ করা যায়। স্পেক্টোমিটারের একটি সাধারণ রূপ হচ্ছে প্রিজম। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এবং লৌহ খণ্ড প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দ্যুতিমান বস্তুর বিকিরণে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বর্ণালি রয়েছে। নক্ষত্র বা গ্যালাক্সির কিছু বিকিরণ এদের বাহিরের অঞ্চলের গ্যাস, মেঘেদের দ্বারা বিশোষিত হয়। কিছু নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এই শোষণ সংঘটিত হয়। এ শোষণের পরিমাণ নির্ভর করে যে বস্তু শোষণ করছে তার প্রকৃতির ওপর
চিত্র-৩.৫ : লেখচিত্র একটি উৎস থেকে নিঃসৃত বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও তীক্ষ্ণতা নির্দেশ করছে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য λo-তে বিকিরণ স্পন্দনের তীক্ষ্ণতা সবচেয়ে বেশি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, অঞ্চলে ক্যালসিয়াম পরমাণু থাকলে বিকিরণ একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শোষিত হবে, লোহা পরমাণু থাকলে অন্য এক তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শোষিত হবে এবং অন্য কোনও মৌল থাকলে অন্য কোনও তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শোষিত হবে। বাহিরের অঞ্চলগুলোতে যেসব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণ শোষিত হয় ওই সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো অন্ধকার রেখায় পরিণত হয়। অর্থাৎ বিকিরণ এই সব অংশে লীন হয়ে গেছে। বিজ্ঞানী হাবল দূরবর্তী কিছু গ্যালাক্সি থেকে আগত আলোর ওপর গবেষণা করে কিছু অন্ধকার প্রণালি দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন অন্ধকার অংশটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্রমান্বয়ে বড়ো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিকে সরে যাচ্ছিল। খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, এই সরণগুলো গ্যালাক্সিদের সরণ বেগের জন্যই ঘটছে। গ্যালাক্সিগুলোর অংশের এই সরণগুলোকে বলা হয় লোহিত সরণ। দৃশ্যমান আলোর এই সরণ ঘটে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিকে।
মহাজাগতিক বস্তু থেকে আগত আলোর বর্ণালিতে অন্ধকার প্রণালি বা অঞ্চলের উপস্থিতি অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের জানা ছিল। জার্মান পদার্থবিদ জোসেফ ভন ফ্রনহোফার (১৭৮৭-১৮২৬) সূর্যালোকের বর্ণালিতে এই অন্ধকার অঞ্চলগুলো দেখতে পান। ১৮০২ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ উইলিয়াম হাইদি (১৭৬৬-১৮২৬) বিভিন্ন বস্তুর বিকিরণ থেকে একই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ১৮৬৮ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হিউগ্যিনস (১৮২৪-১৯১০) দেখিয়েছিলেন যে, কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্রের বর্ণালির অন্ধকার রেখাগুলো তাদের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সূর্যালোকের লাল কিংবা নীল বর্ণালির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিকে সরে যাচ্ছিল। নক্ষত্রগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় কিংবা আমাদের দিকে এগিয়ে আসে বলে তিনি এ বিষয়টিকে ডপলার ক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। নাক্ষত্রিক বস্তুর লোহিত সরণের ফলে আমাদের থেকে দূরে সরে যায় আর নীল সরণের জন্য এর উলটোটা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপেলা নক্ষত্রটির লোহিত সরণ ঘটছে। এটি ০.০১% আলোর বেগে অর্থাৎ ৩০ কিলোমিটার/সেকেন্ডে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত যুগ্ম তারা, শনির বলয়সহ বিভিন্ন নাক্ষত্রিক বস্তুর গতিবেগ বের করতে এই ডপলার ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছিল।
বিজ্ঞানী হাবল কীভাবে বুঝেছিলে যে, অধিক লোহিত সরণের এবং অধিক বেগে অপস্রিয়মাণ গ্যালাক্সিগুলো অতি দূরে অবস্থিত? এর রহস্য হচ্ছে যে, তিনি দেখেছিলেন, যে গ্যালাক্সি যত ক্ষীণ বা অনুজ্জ্বল, সে গ্যালাক্সির লোহিত সরণ তত বেশি। এখন দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণত অনুজ্জ্বল গ্যালাক্সিগুলোই অতি দূরে অবস্থিত। যা হোক, এখানে একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এই জন্য যে, কোনও গ্যালাক্সিকে অনুজ্জ্বল দেখায় শুধু তার অধিক দূরত্বের জন্য নয় হয়ত-বা এটির আলোর বিকিরণ কম বা হতে পারে এটি বাস্তবিকই অনুজ্জ্বল গ্যালাক্সি। সেজন্য বিজ্ঞানী হাবলকে বিশেষ শ্রেণির কিছু গ্যালাক্সির ওপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করতে হয়েছিল। এসব গ্যালাক্সি আনুমানিকভাবে মোট একই পরিমাণ বিকিরণ দিচ্ছিল। গ্যালাক্সিগুলোর পরম উজ্জ্বলতাও ছিল একই। এসব গ্যালাক্সি ‘প্ৰমাণ বাতি (Standard Candle)’ নামে পরিচিত ছিল কারণ তাদের উজ্জ্বলতা এবং অনুজ্জ্বলতার বিচার করে অনুমান করা হত এরা কত দূরে। এসব প্রমাণ বাতির উজ্জ্বলতা যত কম হবে এরা তত বেশি দূরে অবস্থিত। কিন্তু ওইসব ‘Standard Candle’ খুঁজে পাওয়া ছিল খুবই দুরূহ কাজ যে সমস্যাটির সমাধান তখনও পুরোপুরিভাবে হয়নি। সুতরাং হাবল যা খুঁজে পেয়েছিলেন তা হল দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর লোহিত সরণ ও তাদের দৃশ্যমান বা আপাত উজ্জ্বলতার মধ্যে সম্পর্ক। এটি প্রকৃতপক্ষে পর্যবেক্ষণের পূর্বেই অনুমান করা হয়েছিল।
উৎসের অপসারণ বেগ ছাড়াও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় লোহিত সরণ ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যদি একটি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত কোনও উৎস থেকে আলো নির্গত হয় আর যদি একটি দুর্বল মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক সে আলো গ্রহণ করে তাহলে ওই পর্যবেক্ষক আলোর লোহিত সরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তবে এটি অসম্ভব যে, শক্তিশালী মহাকর্ষীয় উৎসের কারণেই দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর লোহিত সরণ ঘটছে। প্রথমত গ্যালাক্সিগুলোর যে পরিমাণ লোহিত সরণ ঘটছে তা শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কারণে ততটুকু সরণ ঘটতে পারে না। দ্বিতীয়ত দুর্বল মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করেই লোহিত সরণের যে সুস্তিত নিয়মতান্ত্রিক বৃদ্ধি ঘটছে তাও বোঝা খুব কঠিন। সুতরাং বর্তমানে বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে একমত যে, গ্যালাক্সির অপসারণ বেগের কারণেই লোহিত সরণ ঘটছে। তবে আরেকটি বিকল্প ব্যাখ্যা হল যে, অন্তত এ লোহিত সরণের কিছু অংশের জন্য হয় মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র দায়ী নয়তো এ যাবৎ পর্যন্ত অজানা কোনও ভৌত প্রক্রিয়া এর পেছনে কাজ করছে।
হাবলের সূত্র যথেচ্ছভাবে বলছে যে, অনির্দিষ্টভাবে গ্যালাক্সিদের দূরত্ব যত বৃদ্ধি পায় তাদের অপসারণ বেগও তত বেশি হয়। তাহলে এ বিষয়টি কি বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে লঙ্ঘন করে না? জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ লোহিত সরণের আকৃতিকে ‘z’ বর্ণ দ্বারা চিহ্নিত করেন। এটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ভগ্নাঙ্কবৎ সরণ বা মূল তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও গৃহীত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে পার্থক্যকে বোঝায়। এ পার্থক্যটি হয় মূল তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা ভাগ করার মাধ্যমে।
গ্যালাক্সিদের অল্প বেগের জন্য আলোর বেগের সঙ্গে একটি তুলনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঠিক গ্যালাক্সির লোহিত সরণ ‘z’ কে আলোর বেগ ‘c’ দ্বারা গুণ করলে গ্যালাক্সির বেগ পাওয়া যায় cz। সুতরাং একটি গ্যালাক্সির ০.১৫ এর একটি লোহিত সরণের জন্য এর বেগ হবে আলোর বেগের ১৫ শতাংশ। গ্যালাক্সির বেগ যখন আলোর বেগের এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি হয় তখন আর বেগ ও লোহিত সরণের মধ্যে এ সম্পর্ক বজায় থাকে না। যদিও অতি উচ্চ লোহিত সরণকে পর্যবেক্ষণ করা যায়, তবে আলোর বেগের চেয়ে অধিক বেগকে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে বস্তুর লোহিত সরণ অসীম হলে তার বেগ আলোর বেগের সমকক্ষ হয়। সম্পর্কটি ৩.৬ নম্বর চিত্রে দেখানো হল। গ্যালাক্সি থেকে লোহিত সরণ যে দূরত্বে অসীম হয়ে যায় তাকে দিগন্ত বা আকাশপ্রান্ত বলে অভিহিত করা হয়। দিগন্তের অপর পার্শ্বের গ্যালাক্সিসমূহকে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে দিগন্তের ওপাশের গ্যালাক্সিগুলোর বেগ কি আলোর বেগের চেয়ে বেশি নয়? কিছু যুক্তিতে এরকমটা হতে পারে। কিন্তু কিছু কারণে এ বিষয়টি আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব লঙ্ঘন করে না। কেবল মধ্যাকর্ষণ অনুপস্থিত হলে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব যুক্তিসিদ্ধ হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। মহাবিশ্বের সর্বত্রই মহাকর্ষীয় বল রয়েছে। আলবার্ট আইনস্টাইনের (১৮৭৯-১৯৫৫) আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অনুসারে এই মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র স্থান ও সময়ের প্রকৃতিকে পুরোপুরি বদলে দেয়। এটি এমন নয় যেন বস্তু আলোর বেগের চেয়ে বেশি বেগে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টির সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু দৃষ্টিকোণ থেকে স্থান স্বয়ং নিজেই আলোর বেগের চেয়ে বেশি বেগে সম্প্রসারিত হচ্ছে। যেহেতু পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমরা দিগন্তের বাইরের গ্যালাক্সিসমূহকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি না, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারি। মধ্যাকর্ষণ ব্যাপারটি মহাশূন্যে বক্রতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর এই ‘বক্রতা’ ব্যাপারটি বক্র স্থানে অবস্থিত পরস্পর থেকে অতি দূরে অবস্থিত দুজন পর্যবেক্ষকের কাছে বেগের ধারণাটি উলটপালট করে দেয়। দূরের গ্যালাক্সির বেগ নির্ধারণ করার উত্তম পথ হল ওই গ্যালাক্সির লোহিত সরণ পর্যবেক্ষণ করা। লোহিত সরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গ্যালাক্সির বেগ নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু কেউ বলতে পারেন দিগন্তে লোহিত সরণ অসীম হয়ে যায় আর সেই দিগন্তের বাইরের গ্যালাক্সিদের পর্যবেক্ষণ করা যায় না। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের সাহায্যে একটি জটিল ফরমুলার মাধ্যমে এই জটিলতার সমাধান করা যায়। কিন্তু এই বইয়ের মূল বিষয় অনুধাবন করার জন্য এত জটিল হিসাবনিকাশ নিষ্প্রয়োজন।
চিত্র-৩.৬ : লেখচিত্রটি লোহিত সরণ (২) ও অপসারণ বেগের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে। লোহিত সরণ অসীম হলেই বস্তুর অপসারণ বেগ আলোর বেগের সমকক্ষ হয়।