লিফটের যাত্রী
এটি হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম লিফট। গাইড মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গভীরে চলে গেছে। এই পাঁচ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে মাত্র এক মিনিট।
লিফটের যাত্রীরা বিস্ময়সূচক এক ধরনের শব্দ করল। গাইড মেয়েটি যাত্রীদের বিস্ময়টুকু উপভোগ করে বলল, যাত্রীদের সুবিধের জন্য তাদের চেয়ারে বিশেষ সিটবেল্ট রয়েছে। এই সিটবেল্ট তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে।
গাইড মেয়েটির কথা শুনে যাত্রীদের অনেকেই অকারণে আনন্দে হেসে ফেলল। মেয়েটি সবার দিকে তাকিয়ে একবার মিষ্টি হেসে বলল, পৃথিবীর গহ্বরে আপনাদের যাত্রা আনন্দময় হোক।
মেয়েটি লিফট থেকে বের হয়ে যায় এবং সাথে সাথে ঘরঘর শব্দ করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের ভিতরেই লিফটটি একটি ঝাঁকুনি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করে। সাথে সাথে ভিতরের যাত্রীরা আরেকবার আনন্দধ্বনি করে ওঠে।
লিফটের ভিতরে তৃতীয় সারির চতুর্থ যাত্রীর মাথার চুল সাদা এবং চোখে ভারি চশমা। লিফট ছেড়ে যাবার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তার মুখে এক ধরনের শঙ্কার ছায়া পড়ল। তিনি তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার কলমটা বের করে সামনে ছেড়ে দিলেন। কলমটি নিচে না পড়ে তার সামনে ঝুলে রইল এবং সেটি দেখে তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যে জিনিসটি নিয়ে তার ভিতরে সন্দেহ হয়েছে সেটি সত্যি।
ঠিক এ রকম সময়ে পাশে বসে থাকা লাল চুলের কমবয়সী একটা মেয়ে চিৎকার করে বলল, দেখ দেখ, কলমটা পড়ছে না!
সাদা চুলের বয়স্ক মানুষটা ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকালেন, বললেন, পড়ছে।
পড়ছে? তাহলে পড়তে দেখছি না কেন?
আমরাও পড়ছি। তাই বুঝতে পারছি না।
মেয়েটি চমকে উঠে বৃদ্ধ মানুষটির দিকে তাকাল, এবং তিনি জোর করে তার মুখে একটি হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলেন। তার মুখের হাসিটি হল অত্যন্ত বিষণ্ণ হাসি।
লাল চুলের মেয়েটি হঠাৎ তীক্ষ্ণ স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে এবং লিফটের সব যাত্রী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে তার দিকে ঘুরে তাকাল।