তিন
হিরণ ছাদে বসে গভীর মনোযোগে কী একটা বই পড়ছিল। এমন সময় পাশের বাড়ির ছাদে ওরই বয়সি ফুটফুটে একটি ফ্রকপরা মেয়ে একটা পলিথিনের বালতিতে করে কতকগুলো ভিজে জামাকাপড় রোদ্দুরে শুকোতে দিতে এল। মেয়েটির নাম স্বপ্না। হিরণ এ বছর মাধ্যমিক দেবে। ও দেবে পরের বছর। হিরণকে ওইভাবে এক মনে বই পড়তে দেখে স্বপ্না আলশের কাছে এসে ঝুঁকে পড়ে বলল, কী বই পড়ছ হিরণদা, অত মন দিয়ে?
হিরণ ওর দিকে চোখ মেলে বলল, ‘লালবাজারে রাহাজানি’। স্বপ্না হেসে বলল, ওই নামে আবার বই হয় নাকি?
বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দেখো।
স্বপ্না বই দেখে হেসে বলল, যাঃ। এটা তো পাণ্ডব গোয়েন্দা।
হলেই বা! খুব শিগগিরই এই নামে একটা বই বেরোবে। যার নায়ক কার্লস নিশ্চয়ই। নায়িকার নাম হবে স্বপ্না বোস।
জ্যাকল নামে এক জেলভাঙা কয়েদি। তার গোয়েন্দা হবেন হিরণ মজুমদার। সে বইতে কোনও নায়িকা থাকবে না?
সে বই লিখবে কে?
ভাবছি পাণ্ডব গোয়েন্দার লেখককে দিয়েই লেখাব।
তোমার যত সব উদ্ভট চিন্তা। তা হঠাৎ লালবাজারে রাহাজানির কথাটা মনে এল কেন? তা ছাড়া তুমি তো সচরাচর স্কুল কামাই করো না, আজ হঠাৎ ঘরে যে?
আজ সকালে খুব একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটে গেছে।
স্বপ্না কৌতূহলী হয়ে বলল, কীরকম শুনি তবু একটু?
তুই আয় না দুপুরবেলা আমাদের বাড়ি, সব বলব।
আজ আমার একটুও সময় নেই। চিত্তরঞ্জন থেকে আমার মামাতো বোন এসেছে। ওকে ছেড়ে যাই কী করে বলো?
বেশ তো, ওকে নিয়েই চলে আয়।
আজ হবে না।
এমন সময় ওবাড়ির সিঁড়ির দরজায় একটি ফুটফুটে কিশোরীর মুখ উঁকি দিয়েই আড়াল হয়ে গেল। হিরণ পলকের দেখাতেই খুশি হল। কী সুন্দর মেয়েটি, সোনার প্রতিমা যেন। বলল, ও বুঝি?
স্বপ্না বলল, ও মানে।
এই মাত্র সিঁড়ির দরজায় কে যেন একজন উঁকি দিয়েই নীচে নেমে গেল।
তুমি নিশ্চয়ই রিয়ার কথা বলছ। আমার মামাতো বোন। ছাদে আসছিল। আসলে তোমাকে দেখে লজ্জায় নেমে গেছে। ও না ভীষণ লাজুক। হিরণ বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, তাই নাকি? আজকের দিনে এমন মেয়েও আছে?
কেউ না থাক, রিয়া আছে। আসলে ওকে দেখতে তো খুব সুন্দর। সামনে এসে দাঁড়ালে অনেকেই ওকে দেখে চোখের পাতা ফেলতে ভুলে যায়। তাই ওর এত লজ্জা।
হিরণ কিছুক্ষণ স্বপ্নার দিকে চেয়ে রইল একভাবে। তারপর বলল, বেশ। সময় মতো আসিস তা হলে। বলে আবার গল্পের বইতে মনোনিবেশ করল। এমন সময় স্বপ্নার গলা শুনতে পেল, আয় না। চলে আয়, লজ্জা কী? ও আমাদের হিরণদা। খুব ভাল ছেলে।
স্বপ্নার ডাকে সিঁড়ির দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রিয়া। তারপর অভ্যস্থ হাতে স্বপ্নার কাজের সহযোগিতা করল।
হিরণ বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে দেখতে লাগল রিয়াকে।
একসময় বই মুড়ে আলশের ধারে এসে দাঁড়িয়ে বলল, এই তোমার মামাতো বোন রিয়া?
স্বপ্না বলল, হ্যা। প্রায় ছ’-সাত বছর পরে এল। এর আগেও তুমি ওকে দেখেছ। তখন অবশ্য ও আরও ছোট ছিল।
আমিও সাত বছরের ছিলাম। তুইও ছ’ বছরের ছিলি। কাজেই সেই সময় ওরও বয়স তো তাই। ও কি তোরই সঙ্গে পরীক্ষা দেবে? হ্যাঁ, আমরা দু’জনেই আগামী বছর মাধ্যমিক দেব। হিরণ বলল, ওরা কোথায় যেন থাকে?
চিত্তরঞ্জনে।
চিত্তরঞ্জন শুনেছি খুব ভাল জায়গা। চিত্তরঞ্জনের কোথায় থাকে ওরা? এতক্ষণে রিয়া মুখ খুলল। স্বপ্নাকে বলল, ওকে জিজ্ঞেস কর, ও কি
চিত্তরঞ্জনে গেছে কখনও? বললে চিনতে পারবে?
বলল, না। তা অবশ্য পারব না। আমি যাইনি কখনও। তবে আমার বাপি কয়েকবার গেছেন সরকারি কাজে সুন্দর পাহাড়িতে।
রিয়া এবার সরাসরি হিরণকে বলল, আমরা উত্তর সুন্দর পাহাড়িতে থাকি। ওই জন্যই বোধহয় তোমাকে এত সুন্দর দেখতে।
রিয়া বলল, যারা সুন্দরপাহাড়ির বাইরে থাকে তারাও তো দেখছি কম সুন্দর নয়।
এমন সময় মা উঠলেন ছাদে। হিরণকে গল্প করতে দেখে বললেন, ওমা, তুই এখানে? আমি তো ভরে মরি। চারদিক খোঁজাখুঁজি করছি। তারপর হঠাৎ নজর পড়ল রিয়ার দিকে। স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে সবিস্ময়ে বললেন, তোর সেই মামাতো বোনটা না? কত বড় হয়ে গেছে রে? কবে এল?
স্বপ্না বলল, কাল রাত্তিরে।
কার সঙ্গে এল? ওর মা এসেছে?
মা-বাবা সবাই এসেছেন। ওনারা অবশ্য আজ বিকেলেই চলে যাবেন। ও থাকবে।
তা বেশ বেশ। মা নীচে গেলেন।
হিরণ আর রইল না ওপরে। ধীরে ধীরে নেমে এল নীচে। মনটা ওরও আজ ভাল নেই। কেন না খবরের কাগজ খুললেই যা সব দেখছে তাতে সাধারণ মানুষ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী কারও কোনও নিরাপত্তাই আর নেই। কে যে কখন একটা খবর হয়ে যাবে তা কে জানে? বিশেষ করে ওই শয়তান লোকটা সত্যিই যদি বাপির কোনও ক্ষতি করে এই আশঙ্কাতেই ও মনমরা হয়ে গেল। কী দুঃসাহস। জলজ্যান্ত একজন মানুষকে খুন করে দিব্যি ওর বাপির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে গেল। হিরণের মনে হচ্ছে ও যদি ওর বাপির মতন হত তা হলে এই মূহূর্তে ওই দুষ্কৃতীকে খুঁজে বার করে ছাল-চামড়া ছাড়িয়ে নিত ওর। কিন্তু বাপি কেন যে তা করেন না তা ও কিছুতেই বুঝতে পারে না। কথায় আছে শত্রুর শেষ রাখতে নেই। একথা যে কতখানি সত্য তা আজ মর্মেমর্মে বুঝতে পারছে ও। কিন্তু বাপি কেন বোঝেন না?
দুপুরে স্নান-খাওয়ার পর সবে একটু শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে এমন সময় স্বপ্না ও রিয়া এসে হই হই করে ওর ঘরে ঢুকল। ওদের মায়েরাও এসেছেন। হিরণের মায়ের সঙ্গে পাশের ঘরে গল্পে মাতলেন তাঁরা। স্বপ্না আর রিয়া এসে বিরক্ত করতে শুরু করল হিরণকে।
স্বপ্না বলল, এ কী! আর ক’মাস বাদে যে ছেলে মাধ্যমিক দেবে সে কিনা এই ভরদুপুরে ঘুমোতে শুয়েছে?
হিরণ উঠে বসে বলল, না না। দিবানিদ্রা আমার ধাতে সয় না। এমনি একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলাম আর কী।
রিয়া আর স্বপ্না দু’জনেই এসে খাটের ওপর ওর বিছানায় বসল।
স্বপ্না বলল, এই হচ্ছে হিরণের ঘর। কেমন সুন্দর সাজানো-গোছানো বল দেখি?
তুই এটাকে ঘর বলছিস স্বপ্না? আমি তো স্টুডিয়ো বলতে যাচ্ছিলাম।
হিরণদার বাবা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের একজন বড় অফিসার। তাঁর ছেলের ঘর, কেন হবে না বল ?
সেটাই বড় কথা নয়, ঘর সাজানোটা হচ্ছে রুচির ব্যাপার।
হিরণ বলল, এই ঘরে যা কিছু দেখছ সবই আমার মায়ের পরিকল্পনায়। স্বপ্না হলল, সে যাই হোক। কিন্তু হিরণদা, তুমি তো স্কুল কামাই করে ঘরে থাকবার ছেলে নও।
হিরণ বলল, আমি কখনও অপ্রয়োজনে স্কুল কামাই করি না। খুব একটা জরুরি কাজ না থাকলে বা শরীর খারাপ না হলে রোজই আমি স্কুলে যাই। তবে আজ সকালে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে যে ভীষণ একটা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
কী রকম?
হিরণ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। একবার স্বপ্নার দিকে তাকাল। একবার দেখল রিয়াকে। ঢল ঢল কচি কিশোরীর মুখদুটোতে কৌতূহল ফুটে উঠেছে যেন। হিরণ বলল, আমাদের সকলেরই জীবন বিপন্ন।
স্বপ্না অবাক হয়ে বলল, সে কী! তোমার বাবা অতবড় একজন গোয়েন্দা
অফিসার, আর তুমি এই কথা বলছ?
হিরণ বলল, শুনবে? কিন্তু কথা দাও কাউকে এসব কথা বলবে না?
স্বপ্না-রিয়া দু’জনেই বলল, কথা দিলাম।
হিরণ তখন এক এক করে সব কথা খুলে বলল ওদের।
ওরা সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। বলল, তা হলে তো যে কোনও মুহূর্তে প্রতিশোধ নেবার জন্যে ওরা এসে হাজির হতে পারে এখানে।
তাই চুপচাপ শুয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম কত কিছু।
রিয়া বলল, কিন্তু এইভাবে কতদিন ঘরে বসে থাকবে?
জানি না। তবে আগামী দু’–একটা দিন হয়তো যাব না। তার মধ্যে আশা করি কিছু একটা হয়ে যাবে। যতক্ষণ না কিছু হয় ততক্ষণ ঘরেই পড়াশোনা করি।
স্বপ্না বলল, ঘরের পড়াশোনা মানে তো গল্পের বই।
হিরণ বলল, তখন পড়ছিলাম বলে? আরে না না।
গল্পের বই পড়ি সময় কাটাবার জন্যে। স্কুলের বই পড়তে আমি কিন্তু একদম ফাঁকি দিই না।
রিয়া হঠাৎ বলল, আচ্ছা হিরণদা, তুমি ওই কার্লস জ্যাকল না, কী যেন নাম বললে, যতদিন না লোকটা ধরা পড়ে ততদিনের জন্যে তুমি দূরে কোথায় চলে যেতে পার না?
কোথায় যাব? কার কাছে যাব? কেউ তো নেই আমাদের।
ধরো না কেন, আমাদের সুন্দর পাহাড়িতেই যদি যাও?
হিরণ হেসে বলল, তা হলে তো খুব ভালই হয়, তবে কি না জেনেশুনে অকারণে তোমাদের শান্তির নীড়ে অশান্তির বীজ পুঁতে আসব কেন? অশান্তির বীজ!
তা নয়তো কী? কার্লস জ্যাকলের নজর এড়িয়ে আমি বাঁচব কোথায়? জলের তলায় লুকোলে ও সেখানে থেকেও খুঁজে বার করে আনবে আমাকে। লোকটা এতবড় শয়তান যে অত কড়া প্রহরা সত্ত্বেও সকলের নজর এড়িয়ে একটা কাটা মুণ্ডু ঠিক গিয়ে রেখে তো এল।
তাতে কী?
তাতে কী মানে? আমার ওপর বদলা নিতে গিয়ে তোমাকেই তুলে নিয়ে যাবে যখন, তুমি কী করবে?
এত সস্তা নাকি? ছুঁয়ে দেখুক না একবার আমাকে।
স্বপ্না বলল, তুই যে দেশলাই কাঠির বারুদের মতো ফস করে উঠলি। ব্যাপারটা কী? তোর সেই লজ্জা কোথায় গেল?
রিয়া বলল, হিরণদাকে দেখে ওর কথা শুনে কেন জানি না আমার আড়ষ্ট ভাবটা কেটে গেছে। শুধু তাই নয়, আমার কী মনে হচ্ছে জানিস, কেউ হিরণদার গায়ে হাত দিতে এলে তার দুটো হাতই কেটে দিই।
বলিস কীরে ! খুব সাহস দেখছি।
আজকাল সাহসী না হলে বাঁচার উপায় আছে? মেয়েরা যদি মেয়েই হয়, আর ঘোমটা টানা বউ হয় তা হলে কিন্তু অশেষ দুর্গতি তাদের।
হিরণ বলল, আমি কিন্তু এই ব্যাপারে এক মত। সরকার এক সময় আইন করে বাঙালির হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন! কিন্তু সেই দিন আসছে যেদিন আবার আইন করে সকলকেই আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র নিতে বাধ্য করা হবে। বিশেষ করে মেয়েদের।
রিয়া হ্যান্ডসেক করবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল হিরণের দিকে।
হিরণ ওর হাতে হাত মেলাল। আর ঠিক তেমনি সময় টেলিফোন বেজে উঠল তার মতো করে। ক্রিরিরিং… ক্রিরিরিং—। হিরণ ছুটে গিয়ে টেলিফোনের রিসিভার তুলে কানের কাছে ধরে অভ্যস্ত গলায় বলল, হ্যালো।
কে হিরণ নাকি?
বলছি। আপনি কে?
তুমি আজ স্কুলে গেলে না কেন?
আমি আর কখনও স্কুলে যাব না।
না, না। স্কুলে যাবে, লেখাপড়া শিখবে। পাস করে কলেজে ভরতি হবে। তবে না? তোমার বাবা কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গেছেন। আমি বলি ভয় কী? মরতে তো একদিন হবেই। দু’দিন আগে, না হয় পরে।
হিরণ উত্তেজিত গলায় বলল, কিন্তু আপনি কে? আপনার নাম বলছেন না কেন?
আরে আমি কি তোমার বাবার মতন সি আই ডি অফিসার, যে নাম বললেই তুমি চিনবে। আমি একটা ফালতু লোক।
তা হলে তুমি বিদেয় হও। বলেই সশব্দে নামিয়ে রাখল রিসিভারটা।
মা পাশের ঘর থেকে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বললেন, কে ফোন করেছিল রে?
সেই শয়তান লোকটা নয় তো? কী বলল সে?
পরিচয় দিল না। শুধু জানতে চাইল আমি স্কুলে যাইনি কেন?
শিউরে উঠলেন মা, সে কী!
স্বপ্না ও রিয়ার মা পাশেই ছিলেন। বললেন, কী ঝামেলা বাবা। আবার ছেলেপুলের ওপর নজর দেওয়া কেন?
ওকে আমি পই পই করে বলেছিলাম শয়তানটাকে ধরেই শেষ করে দিতে। কিন্তু কেন যে শুনল না ও আমার কথা।
এমন সময় প্রচণ্ড শব্দে একটা বোমা ফাটল বাইরের দরজার কাছে। পরক্ষণেই একটা গুলির শব্দ। কে যেন আর্তনাদ করে উঠল, আ-আ-আ। ধোঁয়ায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে উঠল চারদিক। হিরণ দরজা খুলে দেখতে যাচ্ছিল। স্বপ্না আর রিয়া দু’দিক থেকে দুটো হাত টেনে ধরল ওর।
মা বললেন, যাচ্ছিস কোথায়? এই অবস্থায় কেউ বাইরে যায়?
বাইরে তখন প্রচণ্ড হট্টগোল।
হিরণ বলল, আমাকে বাইরে যেতে না দাও ছাদে উঠে দেখতে দাও অন্তত। দরজার সামনে বোমা, গুলি। কী থেকে কী হল দেখতে হবে না?
অতএব সবাই ছাদে উঠল। ছাদে উঠে যে দৃশ্য দেখল, সেই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেল সকলেই। দেখল ডোরা কাটা লুঙ্গিপরা নিম্নশ্রেণীর এক মুসলমান যুবক পথের ওপর উপুড় হয়ে ছটফট করছে। তাকে ঘিরে জনতার ভিড়। এই যুবকই বাড়ির সামনে বোমা ফাটিয়েছিল। কিন্তু ওর কী হল? হিরণের মনে হল নীচে নেমে এসে একবার ভাল করে সার্চ করে দেখে লোকটিকে। কিন্তু না। তা সে করল না। এ কাজের জন্যে বাপি তো আছেন।