এগারো
অফিসারদের সঙ্গে যখন ভিমরুলের চাকের সামনে এলেন চারদিকে তখন থমথম করছে।
বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়ে বাসব মজুমদার অন্যান্য পদস্থ পিনাকী বলল, এই বাড়ি।
বাসব মজুমদার বললেন, এই বাড়ি? ঠিক বলছ তুমি? ওই দেখুন ভিমরুলের চাক।
জানো এই বাড়িটা কার?
তা তো জানি না। তবে এই সেই বাড়ি।
এই বাড়ির মালিকের নাম রসময় রায়। আমার বিশেষ পরিচিত এবং বন্ধু লোক। অত্যন্ত সৎ এবং সজ্জন তিনি।
রঞ্জনবাবু বললেন, সেই সৎ সজ্জনের ভেতরেই হয়তো কোনও দুর্জন বাসা বেঁধে আছে।
এ অসম্ভব। আমার মনে হয় কেউ তাকে ব্ল্যাকমেল করে সাময়িকভাবে এই বাড়িটাকে দখল করে নিয়েছে। হয়তো এই বাড়িরই গুপ্তকক্ষে বন্দি আছেন তিনি। আমরা রেড করতে ঢুকে তাঁকে অ্যারেস্ট করে হাতকড়া পরাব, আর আসল অপরাধী সমস্ত অপরাধের বোঝা ওই নিরীহ ভদ্রলোকের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেয়ে যাবে।
রঞ্জনবাবু বললেন, এত লোডশেডিংয়েও যখন বাড়ির ভেতরে এমার্জেন্সি আলো জ্বলছে, তখন নিশ্চয়ই লোকজন আছে এর ভেতর। চলুন ঢুকে পড়া যাক। আর গুদাম ঘরেরও তালা ভাঙা হোক।
বাসববাবু বললেন, খবরদার নয়। কোনওভাবেই ঢোকা নয় ওর ভেতর। মনে রেখো এটা রিমোট কনট্রোলের যুগ। চারদিক থেকে এলাকাটাকে ভালভাবে ঘিরে রাখো। আর মাইকে ঘোষণা করো ওদের আত্মসমর্পণ করবার। ভুলেও কেউ ভেতরে ঢুকো না।
বাসববাবুর আদেশ মতোই কাজ হল।
একটু পরেই কারেন্ট এসে যাওয়ায় আশেপাশের ঘরবাড়ির আলোও জ্বলে উঠল। অনেক গৃহস্থের বাড়ি আশেপাশে। রাতদুপুরে পুলিশ দেখে ছাদে বারান্দায় তাই লোকে লোকারণ্য।
মি. ডলফিন আর মংপু ডিটোনেটার হাতে বেশ কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়েছিল। ডিটোনেটারটা ছিল মংপুর হাতে। ডলফিন ছিল আরও দূরে। কিন্তু পুলিশ যখন বাড়ির কাছে এল অথচ বাড়িতে ঢুকল না, ঠিক তখনই প্রমাদ গনল দু’জনে। সমস্ত পরিকল্পনাটাই বানচাল হতে বসেছে দেখে ডলফিন সংকেত দিল মংপুকে। মংপু এক নম্বর এবং দু’নম্বর বোতাম দুটোই একসঙ্গে টিপে দিল। কিন্তু কোথায় কী? একটা পটকা ফাটার শব্দও শোনা গেল না যে। সে বার বার টিপেও যখন যখন সফল হল না, তখন এক-পা এক-পা করে পিছু হটল। ডলফিন কোনওরকমে পালাতে সক্ষম হলেও মংপু ধরা পড়ল পুলিশের হাতে। অবশ্যই জীবিত অবস্থায় নয়। কেন না আশপাশ থেকে তখন ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বৃষ্টি হচ্ছে। তারই একটিতে মংপুর খেল খতম।
অনেক পরে পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকে উদ্ধার করলেন রসময়বাবুকে। স্ত্রীপুত্র সহ তিনি ওষুধ ও ইঞ্জেকশনের প্রভাবে গভীর ঘুমে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু সারা বাড়ি তোলপাড় করেও স্বপ্না-রিয়া বা হিরণের দেখা পেলেন না কেউ। সেই সঙ্গে খোঁজ পেলেন না কার্লস জ্যাকলেরও। কিন্তু আশ্চর্য! সেই লোকটি কোথায়? সে কি আগেই পালিয়েছে? কোথায় গেল পিনাকী গুপ্তর বর্ণনায় সেই গড ফাদার? পুলিশ ও দুষ্কৃতীদের গুলির লড়াই তখন তুঙ্গে উঠেছে! এই অভিযানে পুলিশ এখানে। এসেছে দলবল সহ কয়েক ব্যাটেলিয়ান। সেই সঙ্গে এসেছে চার-পাঁচটি বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত গোয়েন্দা কুকুর। তারাই আশপাশে লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র দু’জন দুষ্কৃতীকে আঁচড়ে কামড়ে ধরিয়ে দিল। তাদের ধরে ঘা-কতক দিতেই সব কিছু ফাঁস করে দিল তারা। তাদেরই কথামতো তাদের সঙ্গে নিয়েই পুলিশের গাড়ি ছুটে চলল মাঝের হাটের দিকে। যেখানে কার্লস জ্যাকলের হেফাজতে ছেলেমেয়েগুলো বন্দি আছে।
এই পথ খুব একটা দীর্ঘ নয়। তবু বাসব মজুমদারের এক একটি মুহূর্ত যেন এক একটি ঘণ্টা বলে মনে হতে লাগল।
এক সময় পুলিশ যখন যথাস্থানে এসে পৌঁছল তখন কেউ কোথাও নেই সেখানে। শুধু গলির মুখে নর্দমার ধারে যে মৃতদেহটা পড়েছিল, তার মুখে টর্চের আলো ফেলেই চমকে উঠলেন বাসববাবু। সিংহগর্জনে চিৎকার করলেন, কার্লস জ্যাকল।
এরপরে শুরু হল চিরুনি অভিযান। পুলিশ কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে শুরু করল সে কী দারুণ তল্লাসি! বাড়ি বাড়ি ঢুকে চলতে থাকল তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ।
এই তিন কিশোর-কিশোরীর অনিষ্ট আশঙ্কায় সকলেরই বুক কেঁপে উঠল। বাসব মজুমদারের বার বারই মনে হল কার্লস জ্যাকলের কাছে তিনি হেরে গেলেন। তাঁর একমাত্র ছেলেই যদি হারিয়ে যায়, তো কার্লস জ্যাকলের ডেড বড়িতে তাঁর প্রয়োজনটা কী? কিন্তু কোথায় গেল ওরা? ওদের কাটা লাশ কি এখন গঙ্গার স্রোতে ভাসছে? নাকি পচন ধরার অপেক্ষায় ঘুমিয়ে আছে কোনও ম্যানহোলের গর্তে? বাসব মজুমদার কোনও কিছুই তাই ভাবতে পারলেন না আর।
রহস্যের মায়াজাল ছেঁড়া যাক এইবার।
এই চক্রের গড ফাদার মি. ডলফিন কোনওরকমে পালিয়ে এসে গোপন সংবাদপ্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে কার্লস জ্যাকলকে জানিয়ে দেয় বেঁটেবাঁটুলের বিশ্বাসঘাতকতার কথা। আর কার্লস তখুনি দলবল নিয়ে খুঁজতে বেরোয় বামনটাকে। ইতিমধ্যে রিয়ার অন্তর্ধানে কার্লস জ্যাকল খুবই চিন্তিত ছিল। তাই স্বপ্না ও হিরণকে আগের জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে ওত পেতে ছিল ওইখানেই। সে জানত এর মধ্যে বামনটার কোনও কারসাজি থাকলে সে নিশ্চয়ই ওদের উদ্ধার করতে ওইখানে আসবে। এবং এলও তাই। চাল ভুল একটুও হয়নি কার্লস জ্যাকলের। কিন্তু ক্ষুদেটাকে যে আছাড় মারবার সঙ্গে সঙ্গে ওই ওইভাবে লাফিয়ে পড়ে ওকেই গুলি করবে তা সে ভাবতেও পারেনি। একেই বলে অদৃষ্টের পরিহাস। অমন বৃহৎ শক্তি যাকে লোহার খাঁচায় রেখেও ধরে রাখতে পারল না, একটা ক্ষুদে বামন তাকে এক লহমায় মৃত্যুর মুখে পৌঁছে দিল।
কার্লস জ্যাকল খুন হতেই দলের লোকেরা যে যেদিকে পারল পালাল। লোক অবশ্য খুব একটা বেশি ছিল না। পাঁচ-ছ’জন। বামনটাকে লক্ষ্য করে ওরাও কয়েকটা গুলি চালাল। কিন্তু ক্ষুদেটা তুডুকতুডুক করে লাফিয়ে ডিগবাজি খেয়ে এদিক সেদিকে লুকিয়ে পড়ায় সব কটা গুলিই ফসকাল। অতএব ওরা আর অযথা গুলি নষ্ট না করে পুলিশের মোকাবিলার জন্য কিছু সঙ্গে রেখেই কেটে পড়বার সিদ্ধান্ত নিল।
ওরা চলে গেল। কিন্তু খুকুমণি কোথায়? তাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তবে কি ওরা সঙ্গে করে নিয়ে গেল খুকুমণিকে? বামনের চোখে যেন জল এল। এরই মধ্যে খুকুমণিকে ঘিরে কত মধুর স্বপ্ন দেখে ফেলেছিল সে। খুকুমণির জন্যই ভাল হতে চেয়েছিল। ভেবেছিল কোনও একটা দূরদেশে চলে যাবে। সেখানে একটা ভদ্র পল্লীতে ঘর ভাড়া নিয়ে খুকুমণিকে রাখবে। ও তো একটা বেঁটেবাঁটুল। ওকে নিয়ে মজা করবে লোকে। তাই লোকের খোশামোদ করে চা জল বয়ে দিয়ে কোনও দোকান-ঢোকানে কাজও জুটিয়ে নেবে একটা। আর নির্ভীক সৈনিকের মতো পাহারা দেবে খুকুমণিকে। ওকে ও দিদিভাই বলে ডাকবে। আর সারাজীবন অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছায়ার মতো, সঙ্গে থাকবে ওরা। খারাপ কাজ ও করবে না। কিন্তু কোনও দুষ্টু লোক কখনও খুকুমণিকে বিরক্ত করলে, তখনই দেখিয়ে দেবে ওর পয়েন্ট থ্রি এইটের খেল। এটাকে ও কখনও হাতছাড়া করবে না। সবসময় রক্ষাকবচের মতো এটাকেও রেখে দেবে মাথার বালিশের নীচে। অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গকে যেমন বিনাশ করতে হয় তেমনি দুষ্ট লোকেদেরও শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিতে নেই।
বামন খুকুমণির শোকে মুহ্যমান হয়ে কার্লস জ্যাকলের পরিত্যক্ত ঘাঁটিতেই আবার এসে ঢুকল। শূন্য খাঁচার মতো বাড়িটার ভেতরে ঢুকে প্রতিটি ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল সে। আর পাগলের মতো ডেকে চলল, খুকুমণি… খুকুমণি…। কিন্তু না। ওর ডাকে কেউই সাড়া দিল না। ও ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে লাগল। ছাদে উঠেই দেখল চিলেকোঠার সামনে কে যেন একজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। সম্ভবত খুকুমণি এই লোকটাকে জখম করে ওর পালাবার পথ পরিষ্কার করে নিয়েছিল। কিন্তু ওকে গুলি করল কে? এ নিশ্চয়ই ক্রোধে উন্মত্ত কার্লস জ্যাকলের কাজ। যাই হোক, এখন থেকে আর একটি লোকও কার্লস জ্যাকলের শিকার হবে না। কিন্তু খুকুমণি…?
হঠাৎ দূরের দিকে লক্ষ পড়ায় কী যেন দেখে চমকে উঠল বামন। ও আলোঅন্ধকারের বুক চিরে স্থির হয়ে পড়ে থাকা রেলের লাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে যখনই ভাবছিল খুকুমণিকে ওরা ওইখান দিয়েই কোনও দূরদেশে নিয়ে চলে গেছে কি না, তখনই ওর নজরে পড়ল। কী একটা যেন। দেখেই লাফিয়ে উঠল সে। আর এতটুকু দেরি করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এখুনি ওখানে যেতে নাপারলে খুকুমণিকে আর বাঁচানো যাবে না।
ও তুর তুর করে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে এসে যেই না নীচের ধাপে পা দিয়েছে, অমনি দেখল কাতারে কাতারে পুলিশ এসে ঢুকে পড়েছে বাড়ির ভেতর। তাই না দেখে বোকার মতো আবার উঠে এল ছাদের ওপর। তারপর ওরই বেঁধে রাখা সেই দড়ি ধরে ঝুলে পড়েই পাশের ছাদে মারল এক লাফ। আর সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে একটা গুলি এসে লাগল ওর গায়ে। ও তাতে ভ্রূক্ষেপও করল না। কেন না এখুনি একটা মালগাড়ি আসবার সময় হয়ে গেছে। তাই ছাদের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়েই ওই অবস্থাতেই আবার ছুটে চলল রেল লাইনের দিকে। পেছনদিক থেকে একদল পুলিশও তাড়া করল ওকে! তারা সমানে চেঁচাতে লাগল, হল্ট— হল্ট—
কিন্তু কে শোনে কার কথা?
এমন সময় কে যেন বলে উঠল, ফায়ার।
নিস্তব্ধতা কাঁপিয়ে একটা গুলির শব্দ। বামনের দেহটা একবার বলের মতো লাফিয়ে উঠে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল। তারপর ক্রমশ স্থির হয়ে আসতে লাগল সব কিছু।
বাসববাবু, রঞ্জনবাবু আর নীহারবাবু ছুটে এলেন বামনটার কাছে।
নীহারবাবু ওর জামার কলার ধরে মাটি থেকে টেনে তুললেন ওকে। বললেন, কে তুই?
বামনের চোখে জল।
সে অতিকষ্টে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, খু-কু-ম-ণি।
তোর নাম খুকুমণি?
বামন ঘাড় নেড়ে না বলল । তারপর দূরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, খু-কু-ম-ণি!
তুই কার্লস জ্যাকলের লোক?
বামন ঘাড় নাড়ল।
আমাদের ছেলেমেয়েগুলোকে ওরা কোথায় রেখেছে জানিস? বামন আঙুল দিয়ে কী যেন দেখাতে গেল। কিন্তু পারল না। কেন না তার আগেই স্থির হয়ে গেল সে।
বাসববাবু বললেন, চলো তো সামনের দিকে। মনে হচ্ছে ওইদিকেই ওরা নিয়ে গেছে ওদের। লোকটা বারবার ওইদিকেই যখন দেখাচ্ছে…। পুলিশ, কুকুর, কনেস্টবল এবং অফিসাররা সবাই ছুটলেন রেললাইনের দিকে। খানিকটা যাবার পরই কুকুরের চিৎকারে ছুটে গেলেন সবাই। দেখলেন সে এক রোমহর্ষক দৃশ্য। অন্ধকার রেলপথের একটু নির্জনে তিনটি ছেলেমেয়েকেই দুষ্কৃতীরা লাইনের সঙ্গে লম্বালম্বিভাবে এমন করে বেঁধে ফেলে রেখেছে যে কোনও একটা ট্রেন যদি হঠাৎ এসে পড়ত তা হলে কী যে হত ভাবা যায় না।
পুলিশ ওদের সকলকেই মুক্ত করলে হিরণ বলল, আমরা যে এখানে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় ছিলাম তোমরা কী করে জানলে বাপি? বাসববাবু বললেন, আর বলিস না। একটা ক্ষুদে বামন…।
বাসববাবুর কথা শেষ হবার আগেই রিয়া বলে উঠল, কই কোথায়? কোথায় সে?
বিস্মিত বাসবাববাবু বললেন, তুমি তাকে চেনো?
চিনি মানে? আমাদের এই চরম বিপদে সেই তো একমাত্র বন্ধু। ও না থাকলে সব শেষ হয়ে যেত আজ। আপনারাও বাঁচতেন না, আমরাও না।
সে কী! কিন্তু…।
রিয়া অল্পক্ষণের মধ্যেই সব কথা খুলে বলল সকলকে।
সব শুনে সকলেরই মাথা হেঁটে।
এই চরম মুহূর্তে যে মানুষ নিস্বার্থভাবে জীবনরক্ষা করে গেল সকলের তাকেই কিনা শত্রু ভেবে…
গুলির আদেশ রঞ্জনবাবু দিয়েছিলেন। তাই তাঁর প্রাণেই আঘাতটা লাগল বেশি।
বাসববাবু বললেন, ওই জন্যই ও বার বার খুকুমণি খুকুমণি করছিল। রিয়া কেঁদে ফেলল ঝর ঝর করে। বলল, আমাকে শিগগির ওর কাছে নিয়ে চলুন আপনারা। ওকে একবার শেষ দেখা আমি দেখব।
হিরণ ও স্বপ্না বলল, আমরাও যাব। ওই মহৎপ্রাণকে শেষবিদায় আমরাও জানিয়ে আসব সবাই।
একটা মালগাড়ি তখন গম গম করে মাটি কাঁপিয়ে বজবজের দিকে চলে গেল। আর একটু দেরি হলে এই গাড়ির চাকার তলাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত ওরা। খুব সময়ে ওদের তিনজনকেই উদ্ধার করা গেছে। সবই ঠাকুরের কৃপা এবং বামন অবতারের দয়া। ওই ক্ষুদ্র মানুষটি না-থাকলে এই কাহিনিটিই অন্য রকম হয়ে যেত আজ।
ওরা বামন অবতারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যখন বাড়ি ফিরে এল, তখন ভোরের আলো ফুটে উঠেছে।
ক্লান্ত অবসন্ন বাসববাবু সোফায় দেহটা এলিয়ে দিতেই টেলিফোনটা বেজে উঠল, ক্রি রিং রিং। ক্রি রিং রিং।
বাসববাবু রিসিভার কানে দিয়ে বললেন, হ্যালো, মি. মজুমদার স্পিকিং… গুড মর্নিং মি. মজুমদার। আশা করি ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরেছেন। কে! কে তুমি?
সে কী! আমার গলা চিনতে পারছেন না?
কার্লস জ্যাকল।
কার্লস জ্যাকল মৃত। কিন্তু আমার মৃত্যু নেই। আমি ডলফিন জ্যাকল। অপরাধজগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমি ঘুণপোকার মতো মিশে থাকব। চি-র-কা-ল। তবে আপাতত আমি দূরে— অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। লালবাজারে রাহাজানি করে কার্লস জ্যাকলের নামে একদিন আমিই কলকাতার আতঙ্ক ছিলাম। এখন আমার লালমহলে গিয়ে আপনারাই রাহাজানি করুন। বিদায়, বন্ধু বিদায়!
শয়তান ! এতদিন তুমিই তা হলে নাম ভাঁড়িয়ে আমাকে ধোঁকা দিয়ে এসেছ? ওদিক থেকে কী যেন উত্তর ভেসে এল ঠিক বোঝা গেল না। বাসববাবু দু’বার-তিনবার হ্যালো হ্যালো করলেন। তারপর বললেন, ইডিয়ট। বলেই সশব্দে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন।
ছেলেমেয়েদের ফিরে পেয়ে পাশাপাশি দুটি বাড়িতেই তখন আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।