শুধু দু’টুকরো শুকনো রুটির নিরিবিলি ভোজ
অথবা প্রখর ধু-ধু পিপাসার আঁজলা-ভরানো পানীয়ের খোঁজ
শান্ত সোনালি আল্পনাময় অপরাহ্নের কাছে এসে রোজ
চাইনি তো আমি। দৈনন্দিন পৃথিবীর পথে চাইনি শুধুই
শুকনো রুটির টক স্বাদ আর তৃষ্ণার জল। এখনও যে শুই
ভীরু-খরগোশ-ব্যবহৃত ঘাসে, বিকেলবেলায় কাঠবিড়ালীকে
দেখি ছায়া নিয়ে শরীরে ছড়ায়,-সন্ধ্যা-নদীর আঁকাবাঁকা জলে
মেঠো চাঁদ লিখে
রেখে যায় কোনো গভীর পাঁচালি-দেখি চোখ ভরে;
ঝিঁঝির কোরাসে স্তব্ধ, বিগত রাত মনে করে
উন্মন-মনে হরিণের মতো দাঁতে ছিঁড়ি ঘাস
হাজার যুগের তারার উৎস ঐ যে আকাশ
তাকে ডেকে আনি হৃদয়ের কাছে, সোনালি অলস মৌমাছিদের
পাখা-গুঞ্জনে জ্বলে ওঠে মন, হাজার-হাজার বছরের ঢের
পুরোনো প্রেমের কবিতার রোদে পিঠ দিয়ে বসি, প্রগাঢ় মদের
চঞ্চলা সেই রসে-টুপটুপ নর্তকী তার নাচের নূপুর
বাজায় হৃদয়ে মদির শব্দে, ভরে ওঠে সুরে শূন্য দুপুর
এখনও যে এই আমার রাজ্যে-এইটুকু ছিল গাঢ় প্রার্থনা-
ঈশ্বর! যদি নেকড়ের পাল দরজার কোণে ভিড় করে আসে,-
এইটুকু ছিল গাঢ় প্রার্থনা-তবুও কখনো ভুলব না, ভুলব না।
ভাবিনি শুধুই পৃথিবীর বহু জলে রেখা এঁকে
চোখের অতল হ্রদের আভায় ধূপছায়া মেখে
গোধূলির রঙে একদিন শেষে খুঁজে নিতে হবে ঘাসের শয্যা।
ছন্দে ও মিলে কথা বানানোর আরও কত তীক্ষ্ণ লজ্জা
দৃষ্টিতে পুষে হাঁটি মানুষের ধূসর মেলায়!
চোখ ঠেরে কেউ চলে যায় দূরে, কেউ সুনিপুণ গভীর হেলায়
মোমের মতন চকচকে সুখী মুখ তুলে বলে এঁকেবেঁকে ‘ইশ,
দিনরাত্তির মধুভুক সেজে পদ্য বানায়, ওহো, কী রাবিশ!’
আকাশের নিচে তুড়ি দিয়ে ওরা মারে কত রাজা, অলীক উজির
হেসে-খেলে রোজ। তবু সান্ত্বনা আকাশ পাঠায় স্বর্গ-শিশির,
জোনাকি-মেয়েরা বিন্দু-বিন্দু আলোর নূপুরে ভরে দেয় মাঠ
গাঢ় রাত্তিরে বিষণ্ন সুরে তোমার রাজ্যে একা-একা হাঁটি
আমি সম্রাট!
শিশিরের জলে স্নান করে মন তুমি কি জানতে
বিবর্ণ বহু দুপুরের রেখা মুছে ফেলে দিয়ে
চলে যাবে এই পৃথিবীর কোনো রুপালি প্রান্তে?
নোনাধরা মৃত ফ্যাকাশে দেয়ালে প্রেতছায়া দেখে, আসন্ন ভোরে
দু’টুকরো রুটি
না-পাওয়ার ভয়ে শীতের রাতেও এক-গা ঘুমেই বিবর্ণ হই,
কোনো-একদিন গাঢ় উল্লাসে ছিঁড়ে খাবে টুঁটি
হয়তো হিংস্র নেকড়ের পাল, তবু তুলে দিয়ে দরজায় খিল
সত্তাসূর্যে যেসাসের ক্ষমা মেখে নিয়ে শুধু গড়ি উজ্জ্বল কথার মিছিল।
হয়তো কখনো আমার ঠাণ্ডা মৃতদেহ ফের খুঁজে পাবে কেউ
শহরের কোনো নর্দমাতেই,-সেখানে নোংরা পিছল জলের
অগুনতি ঢেউ
খাব কিছুকাল। যদিও আমার দরজার কোণে অনেক বেনামি
প্রেত ঠোঁট চাটে সন্ধ্যায়, তবু শান্ত রুপালি স্বর্গ-শিশিরে স্নান করি আমি।