রামগড় স্টেশনে সন্ধ্যা
ট্রেন এলে চলে যাব, ততক্ষণ চেয়ে দেখি প্রজাপুঞ্জ সহ এই সম্রাট আকাশ
অলীক মূর্তির মতো কয়েকটি মনুষ্য বিন্দু ঘুরছে ফিরছে প্লাটফর্মে, লাইনের উপরে
আমার বন্ধুটি পাশে সিগারেট ঠোঁটে চেপে ছুটি-শেষ করা এক ঘন দীর্ঘশ্বাস
ধোঁয়ায় মিশিয়ে ছুড়ল আমার চোখের দিকে, রামগড়ে, বাতাসের প্রতি স্তরে স্তরে।
কলকাতায় ফিরে যাবে সহস্র সুতোয় বাঁধা কীর্তিমান সুদর্শন ছিমছাম যুবক
ট্যাক্সিতে সময় মাপবে, অনেক সন্ধ্যাকে খুন করবে নানা রেস্তোরাঁয়, এরোড্রামে,
ভিড়ে
শনিবার তাস খেলবে, ঘরভরা অট্টহাসে টেনে নেবে বন্ধুদের চোখের চুম্বক
সুখের নানান সুর এঁকে রাখবে ওষ্ঠে, চোখে, দ্যুতিমগ্ন যৌবনের বুক চিরে চিরে।
এখন সে অকস্মাৎ চেয়ে দেখল রামগড়ের যুবতী-প্রতিম এই সায়াহ্নের দিকে
কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে হঠাৎ আমাকে বলল কেঁপে উঠে যেন এক অন্য কণ্ঠস্বরে
আশ্চর্য, আশ্চর্য, দেখ! সবলে আমার হাত ধরে রেখে চেয়ে রইল, তীব্র নির্নিমিখে
অশ্রুর বিন্দুর মতো শীতের করুণ রৌদ্র তখন বিরলে ঝরছে পর্বত শিখরে।
গ্রিসীয় মূর্তির মতো রূপবান, বস্তুনিষ্ঠ, আবেগ-অগ্রাহ্য করা আমার বন্ধুকে
সেই একবার শুধু নিতান্ত সামান্য, ক্ষুদ্র, পটভূমিকার পাশে মূঢ়, অসহায়
সংগীতে দেখেছি আমি।—সুনন্দ, ট্রেনের শব্দ শুনতে পাচ্ছ? তৎক্ষণাৎ আমি তার
বুকে
প্রতিধ্বনিময় কণ্ঠে বলে উঠে, লঘু হেসে, চৈতন্য এনেছি সেই মায়াবি সন্ধ্যায়।