১ শমরিয়ায রাজা আহাবের রাজপ্রাসাদের কাছেই একটা দ্রাক্ষাক্ষেত ছিল। য়িষ্রিযেলে নাবোত নামে এক ব্যক্তি ছিল এই ক্ষেতের মালিক।
২ এক দিন রাজা আহাব নাবোতকে বললেন, “আমাকে তোমার ক্ষেতটা দিয়ে দাও, আমি সব্জির বাগান করবো। তোমার ক্ষেতটা আমার রাজপ্রাসাদের কাছে। আমি তোমাকে এর বদলে আরো ভাল দ্রাক্ষা ক্ষেত দেব। কিংবা তুমি যদি চাও আমি ক্ষেতটা কিনেও নিতে পারি।”
৩ নাবোত বলল, “এ আমার বংশের জমি। আমি আপনাকে কোনো মতেই দিতে পারব না।”
৪ নাবোতের কথায় ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আহাব তখন বাড়ি ফিরে গেলেন। য়িষ্রিযেলের এই ব্যক্তির কথা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। নাবোত বলল য়ে সে তার পরিবারের জমি দেবে না। আহাব বিছানায শুয়ে পড়লেন, মুখ ঘুরিযে রাখলেন এবং খেতে অস্বীকার করলেন।
৫ আহাবের স্ত্রী ঈষেবল গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি হয়েছে? খেলে না কেন?”
৬ আহাব বললেন, “আমি য়িষ্রিযেলের নাবোতকে ওর জমিটা আমায় দিয়ে দিতে বলেছিলাম। তার বদলে ওকে পুরো দাম দিতে বা আরেকটা জমি দিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু নাবোত আমাকে ওর জমি দেবে না বলে দিয়েছে।”
৭ ঈষেবল বলল, “তুমি ইস্রায়েলের রাজা। বিছানা ছেড়ে উঠে কিছু খাও, দেখবে তাহলেই অনেক ভাল লাগবে। নাবোতের জমি আমি তোমায় দেব।”
৮ এরপর ঈষেবরল আহাবের সীলমোহর দিয়ে তাঁর বকলমে কয়েকটা চিঠি লিখে নাবোত য়ে শহরে বাস করত সেখানকার প্রবীণদের পাঠিয়ে দিলেন।
৯ ঈষেবল লিখলেন:একটি উপবাসের দিন ঘোষণা করুন য়েদিন কেউ কোনো খাওয়া-দাওয়া করবে না। তারপর শহরের সমস্ত লোককে একটা বৈঠকে ডাকুন। সেখানে আমরা নাবোতের সম্পর্কে আলোচনা করব।
১০ কিছু লোককে জোগাড় করুন যারা নাবোতের নামে মিথ্যা কথা বলবে। তারা বলবে তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। এরপর নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলুন।
১১ য়িষ্রিযেলের প্রবীণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই নির্দেশ পালন করলেন।
১২ তারা একটি উপবাসের দিনের কথা ঘোষণা করলেন য়েদিন কেউ কিছু খেতে পারবে না। সেদিন তাঁরা সমস্ত লোকদের নিয়ে এক বৈঠক ডাকলেন। তারা সমস্ত লোকের সামনে নাবোতকে একটি বিশেষ জায়গায় স্থাপিত করলেন। নাবোতকে সেখানে লোকদের সামনে কাঠগড়ায দাঁড় করানোর পর
১৩ দুজন লোক বলল, তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। তখন লোকরা নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মেরে ফেলল।
১৪ তারপর নেতারা ঈষেবলকে খবর পাঠালেন, “নাবোতকে হত্যা করা হয়েছে।”
১৫ ঈষেবল যখন এখবর পেলেন তিনি আহাবকে বললেন, “নাবোত মারা গিয়েছে। তুমি য়ে ক্ষেতটা চেয়েছিলে, তা এবার নিয়ে নিতে পার।”
১৬ আহাব তখন গিয়ে সেই দ্রাক্ষার ক্ষেত নিজের জন্য দখল করলেন।
১৭ এ সময় প্রভু তিশ্রের ভাববাদী এলিয়কে শমরিয়ায নাবোতের দ্রাক্ষার ক্ষেতে গিয়ে আহাবের সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দিলেন।
১৮ তিনি বললেন, “আহাব ঐ ক্ষেত নিজের জন্য দখল করতে গিয়েছেন। ওকে গিয়ে বল, ‘আহাব তুমি নাবোতকে হত্যা করে এখন ওর জমি দখল করছ। তাই আমি তোমায় শাপ দিলাম য়ে জায়গায় নাবোতের মৃত্যু হয়েছে সেই একই জায়গায় তোমারও মৃত্যু হবে। য়েসব কুকুর নাবোতের রক্ত চেটে খেযেছে তারা ঐ একই জায়গায় তোমারও রক্ত চেটে খাবে।”‘
১৯
২০ এলিয় তখন আহাবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আহাব এলিয়কে দেখতে পেয়ে বললেন, “তুমি আবার আমার পিছু নিয়েছ। তুমি তো সব সময়ই আমার বিরোধিতা করো।”এলিয় উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি আবার তোমাকে খুঁজে বের করেছি। তুমি আজীবন প্রভুর বিরুদ্ধে পাপাচরণ করে কাটালে।
২১ তাই প্রভু তোমাকে জানিয়েছেন, ‘আমি তোমায় ধ্বংস করব। আমি তোমাকে ও তোমার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করব।
২২ তোমার পরিবারের দশাও নবাটের পুত্র যারবিয়ামের পরিবারের মতো হবে। কিংবা রাজা বাশার পরিবারের মতো। এই দুই পরিবারই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি একাজ করব কারণ আমি তোমার ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়েছি। তুমি ইস্রায়েলের লোকদের পাপাচরণের কারণ।’
২৩ প্রভু আরো বললেন, ‘কুকুররা তোমার স্ত্রী ঈষেবলের দেহ য়িষ্রিযেল শহরের পথে ছিঁড়ে খাবে।
২৪ তোমার পরিবারের য়ে সমস্ত লোকের শহরে মৃত্যু হবে তাদের মৃতদেহ কুকুর খাবে আর মাঠেঘাটে যারা মারা যাবে তাদের মৃতদেহ চিল শকুনিতে ঠোকরাবে।”‘
২৫ ৫আহাবের মতো এতো বেশী অপরাধ বা পাপ আগে কেউ করেন নি। তাঁর স্ত্রী ঈষেবলই তাঁকে এসব করিযেছিলেন।
২৬ আহাব ইমোরীয়দের মতোই কাঠের মূর্ত্তি পূজা করার মতো জঘন্য পাপাচারণ করেছিলেন। এই অপরাধের জন্যই প্রভু ইমোরীয়দের ভূখণ্ড নিয়ে তা ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন।
২৭ এলিয়র কথা শেষ হলে আহাবের খুবই দুঃখ হল। তিনি তাঁর শোকপ্রকাশের জন্য পরিধেয বস্ত্র ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর শোকপ্রকাশের পোশাক গায়ে দিলেন। খাওয়া-দাওয়া করে দুঃখিত ও শোকসন্তপ্ত আহাব ঐ পোশাকেই ঘুমোতে গেলেন।
২৮ প্রভু তখন ভাববাদী এলিয়কে বললেন,
২৯ ”আমি দেখতে পাচ্ছি আহাব আমার সামনে বিনীত হয়েছে। তাই আমি ওর জীবদ্দশায় কোনো সংকটের সৃষ্টি না করে ওর ছেলে রাজা না হওয়া পর্য়ন্ত অপেক্ষা করব। তারপর আমি আহাবের বংশের ওপর বিপদ ঘনিয়ে তুলব।”