১ য়ে সময় যারবিয়ামের পুত্র অবিয খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, সেই সময় যারবিয়াম তার স্ত্রীকে বলল, “তুমি শীলোতে গিয়ে ভাববাদী অহিযর সঙ্গে দেখা কর। অহিযই সে-ই ভাববাদী যিনি বলেছিলেন, আমি ইস্রায়েলের রাজা হব। তুমি দশটা রুটি, কিছু কেক, এক ভাঁড় মধু নিয়ে তার কাছে গিয়ে আমাদের পুত্রের কি হবে জিজ্ঞেস করো। তিনি নিশ্চয়ই তোমাকে বলে দেবেন। তবে দেখো এমন ভাবে ছদ্মবেশে য়েও যাতে কেউ বুঝতে না পারে য়ে তুমি আমার স্ত্রী।”
২
৩
৪ কথা মতো যারবিয়ামের স্ত্রী শীলোতে ভাববাদী অহিযের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। যদিও অহিযর তখন অনেক বয়েস হয়েছে এবং দৃষ্টিশক্তি হারিযেছেন।
৫ প্রভু তাঁকে বললেন, “যারবিয়ামের স্ত্রী তোমার সঙ্গে দেখা করে ওদের অসুস্থ ছেলে সম্পর্কে জানতে আসছে।” অহিয কি বলবে সেকথাও প্রভু বলে দিলেন।যারবিয়ামের স্ত্রী এসে অহিযর বাড়িতে উপস্থিত হল। সে আত্মগোপন করে এসেছিল।
৬ কিন্তু অহিয দরজায তার পাযের শব্দ শুনতে পেয়ে বলল, “এসো গো যারবিয়ামের স্ত্রী। তুমি কেন লোকের কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয গোপন করছো? তোমাকে আমি একটা দু:সংবাদ দেব।
৭ যাও ফিরে গিয়ে যারবিয়ামকে বলো প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘যারবিয়াম আমি তোমাকে ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে আমার ভক্তদের অধীশ্বর বানিয়েছি।
৮ দায়ূদের বংশধর ইস্রায়েল শাসন করত। কিন্তু আমি সেই রাজ্য তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তোমাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সেবক দায়ূদের মতো নও। দায়ূদ একনিষ্ঠ ভাবে আমাকে অনুসরণ করত, আমি যা চাইতাম ও তাই করত।
৯ কিন্তু তুমি অনেক বড় বড় পাপ করেছ। তোমার আগে কোন শাসক এতো জঘন্য পাপ করে নি। তুমি আমাকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছ। তুমি মূর্ত্তি পূজা ও অন্যান্য দেবতাদের পূজা শুরু করেছ। এর ফলে আমি খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছি।
১০ তাই আমি তোমার পরিবারে বিপদ ঘনিয়ে আনব। তোমার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে আমি হত্যা করব। আগুন য়ে ভাবে ঘুঁটে পোড়ায ঠিক সে ভাবে আমি তোমার পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেব।
১১ তোমার পরিবার থেকে য়ে কেউ শহরে মারা যাবে তাকে কুকুরে খাবে এবং তোমার পরিবারের য়ে লোক মাঠে মারা যাবে তাকে শকুনে খাবে। প্রভু বলেছেন।”‘
১২ ভাববাদী অহিয যারবিয়ামের স্ত্রীকে আরো বললেন, “এবার তুমি বাড়ি যাও। তুমি তোমার শহরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার পুত্র মারা যাবে।
১৩ ইস্রায়েলের সমস্ত লোক কাঁদতে কাঁদতে ওকে সমাধিস্থ করবে। যারবিয়ামের পরিবারে একমাত্র তোমার পুত্রকেই কবরে সমাধিস্থ করা হবে। কারণ যারবিয়ামের পরিবারে এক মাত্র প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর তুষ্ট ছিলেন।
১৪ প্রভু ইস্রায়েল শাসন করার জন্য এরপর য়ে নতুন রাজা বেছে নেবেন সে যারবিয়ামের বংশ ধ্বংস করবে। এসব ঘটতে আর বেশী দেরী নেই। তারপর প্রভু ঈস্রাযেলের ওপর আঘাত হানবেন। দেশের সমস্ত লোক ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকবে।
১৫ “তারপর প্রভু ইস্রায়েলের ওপর আঘাত হানবেন। ইস্রায়েলের লোকরা ভীত হবে তারা জলের মধ্যে ঘাসের মতন কাঁপবে। এই ভালো দেশ থেকে প্রভু ইস্রায়েলকে উপড়ে ফেলবেন। এটি সেই দেশ য়েটি তিনি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন। তিনি তাদের ফরাত্ নদীর অপর পারে ছড়িয়ে দেবেন। এসবই ঘটবে কারণ প্রভু লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন কারণ তারা বাঁশ দিয়ে আশেরার মূর্ত্তি বানিয়ে পূজা করেছিল।
১৬ যারবিয়াম নিজে পাপ করেছে, আর ইস্রায়েলের লোকদের পাপাচরণের কারণ হয়েছে। তাই প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের পরাস্ত হতে দেবেন।”
১৭ যারবিয়ামের স্ত্রী তির্সাতে ফিরে গেল। বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তার পুত্রের মৃত্যু হল।
১৮ সমগ্র ইস্রায়েল প্রভুর কথা মতো চোখের জলে ভাসতে ভাসতে তাকে কবর দিল। প্রভু তাঁর সেবক ভাববাদী অহিযর মাধ্যমে এসবই জানিয়েছিলেন।
১৯ রাজা যারবিয়াম আরো অনেক কিছু করেছিল। সে অনেক যুদ্ধ করেছিল এবং লোকদের ওপরে রাজত্ব চালিযে যাচ্ছিল। সে যা করেছিল সে সমস্ত বিবরণই ‘ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
২০ যারবিয়াম ২২ বছর রাজত্ব করার পর তার মৃত্যু হলে তাকে তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে কবর দেওয়া হল। যারবিয়ামের মৃত্যুর পরে তার পুত্র নাদব নতুন রাজা হলেন।
২১ শলোমনের পুত্র রহবিয়াম যখন যিহূদার রাজপদে অধিষ্ঠিত হলেন তখন তাঁর বয়স ৪১ বছর ছিল। তিনি ১৭ বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। ইস্রায়েলের অন্যান্য শহরের মধ্যে থেকে প্রভু এই শহরটিকে সম্মানিত করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। রহবিয়ামের মা নয়না ছিলেন জাতিতে অম্মোনীয়া।
২২ যিহূদার লোকরা পাপ করেছিল এবং এমন সব কাজ করেছিল যা প্রভু অনুচিত বলে বিবেচনা করেছিলেন। উপরন্তু তারা এমন অনেক কাজ করেছিল যার ফলে প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। এই সমস্ত লোকরা ছিল তাদের পিতৃপুরুষদের চেয়েও খারাপ।
২৩ এরা উঁচু বেদী ছাড়াও পাথরের স্মৃতিসৌধ, বাঁশের পবিত্র মূর্ত্তি প্রভৃতি বানিয়েছিল। প্রত্যেকটি উচ্চস্থান, সবুজ গাছের তলায় তারা এই সব কদাকার জিনিস বানিয়েছিল।
২৪ তাদের মধ্যে এমন মানুষ ছিল যারা অন্য দেবতার পূজার জন্য রতিক্রিযার্থে দেহ বিক্রয় করেছিল। যিহূদার অনেক লোক অনেক মন্দ কাজ করেছিল। এই পবিত্র ভূভাগে আগে যারা বাস করত ঈশ্বর তাদের হাত থেকে জমি কেড়ে নিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
২৫ রহবিয়ামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে মিশরের রাজা শীশক জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
২৬ শীশক প্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদ থেকে সমস্ত সম্পদ, এমনকি দায়ূদের বানানো সোনার ঢালগুলো পর্য়ন্ত নিয়ে যান।
২৭ তখন রহবিয়াম এই জায়গায় রাখার জন্য পিতল দিয়ে নতুন ঢাল বানালেন। তিনি এই নতুন ঢালগুলো রাজপ্রাসাদের দরজায প্রহরীদের রাখতে দিয়েছিলেন।
২৮ এরপর যখনই রাজা মন্দিরে য়েতেন প্রহরীরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ঐ ঢালগুলো নিয়ে য়েত। তারপর যখন প্রহরীরা ফিরে আসত, তারা ঐ ঢালগুলি প্রহরী কক্ষের দেওয়ালের ওপর আবার রেখে দিত।
২৯ রাজা রহবিয়াম য়ে সমস্ত কাজ করেছিলেন তা ‘যিহূদার রাজাদের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
৩০ রহবিয়াম ও যারবিয়াম দুজনেই সব সময় একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন।
৩১ রহবিয়াম মারা যাবার পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরে সমাধিস্থ করা হল। তাঁর মা ছিলেন নয়মা। তিনি ছিলেন অম্মোনীয় জাতীয। রহবিয়ামের পর তার পুত্র অবিয়াম নতুন রাজা হলেন।