রটন্তীকুমার

রটন্তীকুমার

স্কুলের ছুটির পর মানিক বললে, এই রটাই, আজ বিকেলে পাঁচটার সময় আমাদের বাড়ি আসবি, চায়ের নেমন্তন্ন।

রটাই বললে, আজ তোর জন্মদিন বুঝি?

—দূর বোকা, জন্মদিন বছরে ক বার হয়? এই তো সেদিন হয়ে গেল, ভোজ খেয়ে তোর পেটের অসুখ হল, মনে নেই?

—তবে কিসের নেমন্তন্ন ভাই?

—আজ বিকেলে দিদিমণির বর আসবে।

—তোর রুবি—দিদিমণির বিয়ে হয়ে গেছে নাকি?

—দূর বোকা, বিয়ের এখন কিছুই ঠিক হয় নি। আজ খগেনবাবু দিদিমণির সঙ্গে ভাব করতে আসবে। যদি খুব ভাব হয়ে যায় তবেই বিয়ে হবে।

রটাই সমঝদারের মতন বললে, অ। সে নিমন্ত্রণে যেতে সর্বদাই প্রস্তুত, উপলক্ষ্য যাই হোক, ভাব বা আড়ি বিয়ে বা বউভাত, অন্নপ্রাশন বা শ্রাদ্ধ। মুড়ি—ছোলাভাজা, কেক—বিস্কুট, কচুরি—সন্দেশ, পোলাও—কালিয়া, কিছুতেই তার আপত্তি নেই।

বিকালে পৌঁনে পাঁচটার সময় রটাই যথাসাধ্য পরিচ্ছন্ন হয়ে মানিকদের বাড়ি যাচ্ছে এমন সময় তার বড়দিদি বললে, এই রটাই, এই টিফিন ক্যারিয়ারটা নে, মানিকের মাকে দিবি। সাবধানে নিয়ে যাবি, ফেলে দিস নি যেন। খালি হলে আসবার সময় ফেরত আনবি।

টিফিন ক্যারিয়ারটা হাতে নিয়ে রটাই বললে, উঃ কি ভারী! কি কি আছে বড়দি? বাদামের নিমকি আর মাছের কচুরি আর মাংসের প্যাটি আর পেস্তার বরফি আর ল্যাংড়া আমের ল্যাংচা?

হ্যাঁ হ্যাঁ, সব আছে। মানিকদের বাড়ি গিয়ে তো দেখতেই পাবি, খেতেও পাবি।

—ওদের বাড়িতে খাওয়ানো হবে তো তুমি খাবার করে দিলে কেন? বল না দিদিমণি!

আঃ, তোর অত খোঁজে দরকার কি? মানিকের মা তৈরি করে দিতে বলেছেন তাই দিয়েছি।

মানিকদের বাড়ি বেশী দূরে নয়। সেখানে গিয়ে মানিকের মাকে টিফিন ক্যারিয়ারটা দিয়ে রটাই বললে, কই মাসীমা, রুবি—দির জামাইবাবু আসে নি?

মানিকের মা বললেন, ছেলের কথার ছিরি দেখ! দশ বছরের ঢেঁকি, এখনও বুদ্ধি হল না। ও তো পানুর বন্ধু খগেন, চা খাবার জন্যে আসতে বলেছি। খবরদার রটাই, তার সামনে অসভ্যতা করিস নি যেন।

সজোরে মাথা নেড়ে রটাই জানালে যে অসভ্যতা করার ছেলে সে নয়। মানিক তাকে বললে, দাদার সঙ্গে খগেনবাবু সাড়ে পাঁচটায় আসবে, ততক্ষণ ওঘরে ক্যারম খেলবি আয়।

যথাকালে মানিকদের দাদা পানু বা পান্নালালের সঙ্গে শ্রীমান খগেনের আগমন হল। সুশ্রী চেহারা, শৌখিন পোশাক, দেখলেই বোঝা যায় যে বড়লোক, নিজের মোটরে এসেছে। বয়স ছাব্বিশ—সাতাশ, তার বাপের অভ্র আর কয়লার ব্যবসায়ে কাজ করছে। রূপে গুণে বিদ্যায় টাকায় এমন পাত্র দুর্লভ, মানিকের মা তাকে জামাই করবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সম্প্রতি তাঁর বড় ছেলে পানুর সঙ্গে খগেনের আলাপ হয়েছে, মায়ের অনুরোধে পানু তার বড়লোক বন্ধুকে ধরে এনেছে।

চায়ের টেবিলে ছ জন বসেছেন—প্রধান অতিথি খগেন, প্রধান আকর্ষণ রুবি, প্রধান বক্ত্ৰী তার মা, দুই ভাই পানু আর মানিক, এবং মানিকের বন্ধু রটাই। বাড়ির কর্তা অনেক দেরিতে অফিস থেকে ফিরবেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে বারণ করেছেন।

যথারীতি হালকা আলাপ আর অকারণ হাসি চলতে লাগল। রুবি গোটাকতক গান গাইলে। তার মা বললেন, জান বাবা খগেন, ইনফুলুএঞ্জা হবার পর থেকে রুবির গলাটা একটু ধরে গেছে, নইলে বুঝতে কি চমৎকার গায়। রীতিমত ওস্তাদের কাছে শেখা কিনা। এই ছবিটি দেখ, রুবি এঁকেছে। নাম দিয়েছে—মত্ত দাদুরী। আকাশে ঘনঘটা, সরোবর জলে টইটুম্বুর, তাতে রক্ত করবী ফুটেছে—

রুবি বললে, রক্ত কুমুদ।

—হ্যাঁ হ্যাঁ, রক্ত কুমুদ ফুটেছে। সরোবরের তীরে সারি সারি দাদুরীরা সব বসে আছে, গলা ফুলিয়ে প্রাণপণে ডাকছে, তাদের ছাতি যাওত ফাটিয়া। অবনী ঠাকুরকে দেখবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তিনি রইলেন না তো। আর এই দেখ, কি সব সুন্দর সুন্দর বুনেছে। এই টেবিল ক্লথটি হচ্ছে অজণ্টা প্যাটানের, চারিদিকে পদ্মফুল আর মধ্যিখানে একটি মুরগি। খুব একসেলেণ্ট করেছে না? ওরে পানু, খগেনের ছাতির মাপটা নে তো, রুবি ওর জন্যে একটা ভেস্ট বুনে দেবে। জান খগেন, সবাই বলছে, মেয়ের যখন অত রূপ তখন মিস ইণ্ডিয়া কমপিটিশনে দাঁড়াচ্ছে না কেন! আমার খুব মত ছিল, কিন্তু ওর বাবা কিছুতেই রাজী হলেন না। মস্ত বড় অফিসার হলে কি হবে, জন্ম যে অজ পাড়াগাঁয়ে।

মানিক তার ভাবী ভগিনীপতিকে প্রশ্নে প্রশ্নে অস্থির করতে লাগল।—আপনার এই ঘড়িটায় দম দিতে হয় না বুঝি? এই ফাউণ্টেন পেনটার দাম কত? মোটর গাড়িতে রেডিও বসান নি কেন? আপনার সিগারেট কেসটা দেখান না, বিলাতে কিনেছেন বুঝি? আপনার ক্যামেরা আছে? আমাদের ছবি তুলে দেবেন? ইত্যাদি।

খগেনকে রটাইএর খুব পছন্দ হল। সে তিন—চার বার আলাপের চেষ্টা করলে, কিন্তু তার মুখ থেকে কথা বেরুতে না বেরুতে রুবি আর তার মা কটমট করে তার দিকে তাকালেন, অগত্যা সে চুপ করে খাবারের অপেক্ষায় বসে রইল। আজ রটাইকে নিমন্ত্রণ করতে রুবির মায়ের মোটেই ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু সে খাবার বয়ে আনবে, তাঁদের বাড়িতে চাকরের অভাব, সেজন্য নেহাৎ চক্ষুলজ্জার খাতিরে তাকে খেতে বলা হয়েছে।

অবশেষে খাবার এল। বাড়ির চাকর একটা ময়লা হাফপ্যাণ্টের ওপর ফরসা হাত—কাটা শার্ট পরে খাবার আর চায়ের ট্রে একে একে নিয়ে এল। সে মেদিনীপুরের লোক, কিন্তু রুবির মা তাকে ‘বোই’ সম্বোধন করে হিন্দীতে ফরমাশ করতে লাগলেন। রুবি পরিবেশন করলে। রটাই সব অনাদর ভুলে গিয়ে নিবিষ্ট হয়ে খেতে লাগল।

রুবির মা বললেন, কই, কিছুই তো খাচ্ছ না বাবা খগেন, আরও দুটো কচুরি আর প্যাটি দিই। বল না রে রুবি ভাল করে খেতে, এত খেটে সব তৈরি করলি, না খেলে মেহনত সার্থক হবে কেন। সব জিনিস কেমন হয়েছে বাবা?

খগেন বললে, অতি চমৎকার হয়েছে, এমন খাবার কোথাও খাই নি।

উৎফুল্ল হয়ে রুবির মা বললেন, সত্যি? তোমার জন্যে রুবি সমস্ত নিজের হাতে তৈরি করেছে, ওর রান্নার হাত অতি চমৎকার।

রটাই—এর মুখ কচুরিতে বোঝাই, তবু সে চুপ করে থাকতে পারল না, মুখের ডেলাটা এক পাশে ঠেলে রেখে জড়িয়ে জড়িয়ে বললে, বা রে, ওসব তো আমার বড়দি করেছে।

রুবির মা গর্জন করে বললেন, চুপ কর অসভ্য ছেলে! যা জানিস না তা বলতে আসিস কেন?

কচুরি—পিণ্ড কোঁত করে গিলে ফেলে রটাই বললে, বাঃ, আমিই তো বাড়ি থেকে সব নিয়ে এলুম।

রুবির মুখের তিন স্তর গোলাপী প্রলেপ ভেদ করে বেগনী আভা ফুটে উঠল। তার মা রেগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, পানু, এই হতভাগা হিংসুটে ছোঁড়াটাকে মানিকের পড়বার ঘরে রেখে আয় তো। মিথ্যে কথার ঢেঁকি, ভদ্রসমাজে কখনও মেশে নি, কেবল বড়াই করতে জানে। তখনই বারণ করেছিলুম ওটাকে আনিস নি, তা মানকে তো শুনবে না, ভারী গুণের বন্ধু যে।

পান্নালাল রটাইএর হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে বললে, তোর তো খাওয়া হয়ে গেছে, এখন বাড়ি যা রটাই।

রটাই বললে, খাওয়া তো কিছুই হয় নি, এখনও প্যাটি নিমকি বরফি ল্যাংচা আর চা বাকী রয়েছে। খালি হলে টিফিন ক্যারিয়ারটাও তো নিয়ে যেতে হবে।

—আচ্ছা আচ্ছা, আমি সব এনে দিচ্ছি। তুই এখানে একলাটি বসে চুপচাপ খেয়ে নিবি তার পর সোজা বাড়ি চলে যাবি, কেমন?

রটাই ঘাড় নেড়ে জানালে যে তাতেই সে রাজী। এত ধমক খাওয়ার পরেও তার খিদে ঠিক আছে, কিন্তু পান্নালাল তাকে যা এনে দিলে তা যথেষ্ট নয়, যেটা আসল জিনিস, ল্যাংড়া আমের ল্যাংচা, তাই তাকে দেওয়া হয় নি। যা জুটল তাই সে অনেকক্ষণ ধরে খেলে, তার পর কাকেও কিছু না বলে বাড়ি রওনা হল।

রটাইএর বেফাঁস কথার ফলে ও—ঘরের চায়ের আসরটি একেবারে মাটি হয়ে গেল। আলাপ মোটেই জমল না, যে উদ্দেশ্যে এত আয়োজন তাও কিছুমাত্র অগ্রসর হল না। রুবি গোঁজ হয়ে বসে রইল, তার মুখ থেকে হাঁ—না ছাড়া কোনও কথা বেরুল না। ওই বজ্জাত রটাইটাকে সে যদি হাতে পায় তো কুচি কুচি করে কেটে ফেলে। আর মায়ের বা কি আক্কেল, তাঁর মেয়ে নিজের হাতে খাবার তৈরি করেছে এ কথা ইশারায় বললেই তো চলত, ঢাক পিটিয়ে জানাবার কি দরকার ছিল? কেবল বকবক করে এলোমেলো কথা বলতে পারেন, ওই শয়তান ছোঁড়াটা যে জলজ্যান্ত সামনে বসে রয়েছে সে হুঁশই হল না।

অপ্রিয় ব্যাপারটা চাপা দেবার জন্য রুবির মা অনর্গল কথা বলে যেতে লাগলেন, পান্নালালও তার বন্ধুকে খুশী করবার জন্য নানা রকম রসিকতা করতে লাগল। খগেন হাসিমুখে অল্পস্বল্প কথা বলে কোনও রকমে শিষ্টাচার বজায় রাখলে। খানিক পরে সে দাঁড়িয়ে উঠে বললে, আজ উঠি মাসীমা, আর এক জায়গায় দরকার আছে। ওঃ, যা খাইয়েছেন তা হজম হতে তিন দিন লাগবে।

রুবির মা বললেন, কি আর খেয়েছ বাবা, ও তো কিছুই নয়। আবার এসো, সকালে বিকেলে সন্ধ্যেয় যখন তোমার সুবিধে। তুমি তো ঘরের ছেলে, যা ঘরে থাকবে তাই খাবে।

আবার আসবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং ঝুঁকে নমস্কার করে খগেন বিদায় নিলে।

কিছুদূরে গিয়েই সে দেখতে পেলে, একটি ছেলে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে চলেছে। গাড়ি থামিয়ে খগেন ডাকল, ও খোকা! রটাই থমকে দাঁড়িয়ে বললে, আমাকে ডাকছেন?

—হ্যাঁ হ্যাঁ। তোমার নাম কি ভাই?

—রটাই।

—এস, গাড়িতে ওঠ, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।

রটাই উঠে বসল। খগেন বললে, তুমি বুঝি খুব রটিয়ে বেড়াও তাই রটাই নাম?

রটাই উত্তর দিলে, দূর তা কেন। আমার ভাল নাম শ্রীরটন্তীকুমার রায়চৌধুরী, আমি রটন্তীপূজার দিন জন্মেছিলুম কিনা তাই আমার দাদামশাই ওই নাম রেখেছেন। আর বড়দির নাম জয়ন্তীমঙ্গলা, ছোড়দির না প্রত্যঙ্গিরা।

—উঃ, তোমাদের খুব জাঁকালো নাম দেখছি? বাড়ি কত দূরে? কোন ক্লাসে পড়? বাড়িতে কে কে আছেন?

রটাই জানালে, তার বাড়ি বেশী দূরে নয়। সে ক্লাস সিকসে পড়ে। বাবা রেলে কাজ করেন, বাইরে ঘুরে বেড়াতে হয়, মাঝে মাঝে আসেন। বাড়িতে আছেন তার মা, দুই দিদি আর সে নিজে। দিদিদের এখনও বিয়ে হয় নি। তা ছাড়া ভুঁদো কুকুর আর রূপুসী বেড়াল আছে। ভুঁদোটা ভীষণ লোভী, সেদিন মালপো চুরি করে খেয়েছিল। কিন্তু রূপুসী হচ্ছে ভদ্র মহিলা খেতে না বললে খায় না। শীঘ্রই তার বাচ্চা হবে, খগেনের যদি দরকার থাকে তবে যতগুলো ইচ্ছে নিতে পারে।

রটাই মোটেই লাজুক নয়, অপরিচয়ের জন্য যেটুকু সংকোচ ছিল তা অল্পক্ষণ আলাপে সহজেই কেটে গেল। সে প্রশ্ন করলে রুবিদির সঙ্গে আপনার ভাব হল?

খগেন হেসে বললে, কই আর হল। চায়ের টেবিলে তুমি যে বোমা ছুঁড়েছ তাতে তো সবাইকার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।

—আপনি আমার ওপর রাগ করেছেন? আমার কিন্তু কিচ্ছু দোষ নেই।

—না না, তুমি খুব ভাল ছেলে, শুধু একটু কাণ্ডজ্ঞানের অভাব, যা বলতে নেই তাই বলে ফেলেছ।

আমি তো সত্যি কথাই বলেছি। আমার বড়দির কাছেই শুনেছি যে মানিকের মা বলেছিলেন তাই খাবার তৈরি করে দিয়েছে।

—না হে না। তুমি কিচ্ছু জান না, রুবি—দিই সব নিজের হাতে তৈরি করেছে।

—কখখনো নয়, আপনিই কিচ্ছু জানেন না। রুবি—দি শুধু আলু সেদ্ধ আর ডিম সেদ্ধ করতে পারে। ব্যাঙের ছবিটা তার আঁকা বটে, কিন্তু সেই যে পদ্মফুলের আর মুরগির ছবিওয়ালা টেবিল ক্লথটা আপনাকে দেখিয়েছে সেটা রুবি—দি তৈরি করে নি। মানিকদের বাড়ির পাশের বাড়িতে আমাদের ক্লাসের কেল্টে থাকে, তারই পিসীমা ওটা বানিয়েছে। আমি ওদের বাড়ি যাই কিনা, তাই সব জানি।

—উঃ, তুমি অতি সাংঘাতিক ছেলে, আঁফাঁ তেরিবল! কিন্তু তোমার সেই জয়ন্তীমঙ্গলা দিদিমণিই যে খাবার তৈরি করেছেন তার প্রমাণ কি? তোমাদের বাড়ি গেলে আমাকে ওই রকম খাওয়াতে পারবে?

—খুব পারব, না পারলে আমার দু কান মলে দেবেন।

—আর যদি পার তবে তুমি আমার দু কান মলে দেবে নাকি?

—দূর, আপনি যে বড়। যদি হেরে যান তো আমাকে ফাইন দেবেন।

—কত ফাইন দিতে হবে?

একটু ভেবে রটাই বললে, একটা টাকা দেবেন।

—মোটে এক টাকা দিলেই হবে?

—দু—টাকা যদি দেন তো আরও ভাল, আমার দু কানের বদলে আপনার দু টাকা। এখুনি চলুন না আমাদের বাড়ি।

—পাগল নাকি! এই মাত্র এত খেয়ে আবার তোমাদের বাড়িতে খাব কি করে?

—আচ্ছা, পরশু রবিবার, সেদিন বিকেলে ঠিক আসবেন বলুন।

—তুমিই বাড়ির কত্তামশাই নাকি? ওখানে কেউ তো আমাকে চেনেন না. যদি গায়ে পড়ে খেতে যাই তবে যে আমাকে অসভ্য হ্যাংলা মনে করবেন।

—ইশ, মনে করলেই হল! আমি তো আপনাকে চিনি, আমার কথায় যদি আপনি আসেন তবে কেউ কিচ্ছু মনে করবে না। কিন্তু দেখুন, আমরা হচ্ছি গরিব, অত রকম খাবার হবে না। মানিকের মা মাছ মাংস পেস্তা বাদাম এইসব পাঠিয়ে দিয়েছিল তাই বড়দি করে দিয়েছে। রবিবার বিকেলে ঠিক আসবেন কিন্তু।

—বেশ, তুমি যখন নিমন্ত্রণ করছ তখন যাব। কিন্তু খাবার মোটেই তৈরি করবে না শুধু চা।

—বাঃ, তা হলে আপনার বিশ্বাস হবে কি করে?

—কেউ খাবার করতে জানে কি জানে না তা আমি চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি। আর একটা কথা। —ওখানে যে কাণ্ডটি বাধিয়েছিলে তা যেন তোমাদের বাড়িতে ব’লো না, তা হলে আমি ভারী লজ্জায় পড়ব। আর দেখ, মানিককে সেদিন ডেকো না যেন।

—নাঃ, মানিকের সঙ্গে আড়ি করে দিয়েছি। আজ অতক্ষণ তার পড়বার ঘরে একলাটি রইলুম একবারও এল না।

—আড়ি করবে কেন, শুধু পরশু দিন তাকে তোমাদের বাড়িতে এনো না। আচ্ছা রটন্তীকুমার, তোমার বড়দির তো খুব জমকালো নাম, জয়ন্তীমঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী, খাবার তৈরিতেও ওস্তাদ, তিনি দেখতে কেমন?

—খুব সুন্দর। রুবি—দি এক ঘণ্টা ধরে রং মেখে তবে ফরসা হয়, কিন্তু বড়দিকে কিছুই করতে হয় না। আর তার গানের কাছে রুবি—দির গান যেন কাগ ডাকছে। কিন্তু বললেই বড়দি গায় না, আপনি যদি খুব অনেক বার অনেক করে বলেন তবেই গাইবে। আর জানেন, বড়দি এম এ পাশ, ছোড়দি আসছে বছর ম্যাট্রিক দেবে, আর রুবি—দি তিন বার ফেল করেছে। বড়দির শীগগির একটা চাকরি হবে। দাদামশাই কি বলেন জানেন? লক্ষ্মী আর সরস্বতী আর অন্নপূর্ণা একসঙ্গে যোগ করে তিন দিয়ে ভাগ করলে যা হয় বড়দি হচ্ছে তাই।

—আর তোমাকে কি বলেন?

হিহি করে হেসে রটাই বললে, সে ভারী বিশ্রী। আমাকে বলেন, ন্যাজ—কাটা বীর হনুমান।

—বিশ্রী কেন, হনুমানের মতন সচ্চরিত্র দেবতা কটা আছে? আমার কি মনে হয় জান? তুমি হচ্ছ নারদ মুনি, পাক্কা দালাল, মানিকের মা তোমার কাছে একবারে খুকী, কমপিটিশনে দাঁড়াতেই পারেন না। এইটে তোমাদের বাড়ি তো? আচ্ছা, এস ভাই, পরশু আবার দেখা হবে।

বাড়ি এসে রটাই বললে, দিদিমণি, মস্ত খবর, খগেনবাবুকে নেমন্তন্ন করেছি, পরশু বিকেলে চা খেতে আসবেন।

জয়ন্তী বললে, খগেনবাবু আবার কে?

—ওই যে, আজ যিনি মানিকদের বাড়ি চা খেলেন। তার সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়েছে। উঃ, মস্ত বড় মোটরকার! তোমাকে বেশী কিছু করতে হবে না, শুধু মাছের কচুরি, মটন প্যাটি, ল্যাংড়া আমের ল্যাংচা আর চা।

জয়ন্তী তার মাকে ডেকে বললে, তোমার খোকার আক্কেল দেখ মা। কথা নেই বার্তা নেই হুট করে কোথাকার কে খগেনবাবুকে নেমন্তন্ন করেছে। আবার আমাকে খাবারের ফরমাশ করছে। খাবার খুব সস্তা, না? তার খরচ তুই দিবি?

রটাই হাত নেড়ে বললে, সে তুমি কিচ্ছু ভেবো না দিদিমণি, আমি তোমাকে দুটো টাকা দেব। কিন্তু আজ নয়, সেই পরশুর পরে তরশু দিন দেব।

—তুই টাকা পাবি কোথা থেকে? মানিকের মায়ের কাছ থেকে মুটেভাড়া আদায় করবি নাকি?

—ধেৎ। তোমাকে সে পরে বলব, এখন বলতে মানা।

—অচেনা উটকো লোকের জন্য আমি খাবার করতে পারব না।

—অচেনা কেন হবে, আমার সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেছে যে। তাঁর নিজের মোটরে আমাকে এখানে পৌঁছিয়ে দিয়ে গেলেন।

—তাতেই কৃতার্থ হয়ে গেছিস বুঝি?

রটাইএর মা বললেন, তা খোকা যখন নেমন্তন্ন করে ফেলেছে তখন আসুক না খগেনবাবু। কিছু খাবার তৈরি করিস, বাজারের জিনিস দেওয়া তো ভাল দেখাবে না।

নির্দিষ্ট দিনে বিকেল বেলায় খগেন রটাইদের বাড়ি উপস্থিত হল। বসবার ঘরের সজ্জা অতি সামান্য, শুধু তক্তাপোশের ওপর ফরাশ পাতা। কিন্তু আদরের ত্রুটি হল না, রটাইএর মা খগেনের সঙ্গে আত্মীয়ের মতন আলাপ করলেন। আজকের আসরে প্রধান বক্তা রটাই, সে তার নতুন বন্ধুকে নিজের সম্পত্তির মতন দখল করে রইল এবং একটানা কথা বলে যেতে লাগল।

একটু পরে জয়ন্তী আর তার ছোট বোন খাবার নিয়ে এল। খগেন বললে, রটন্তীকুমার, এ তোমার অত্যন্ত অন্যায়, আমি বারণ করেছিলুম তবু তুমি এতসব খাবার করিয়েছ।

রটাই বললে, বাঃ শুধু বুঝি আপনার জন্যে বড়দি খাবার করেছে, আমিও খাব যে। সেদিন মানিকদের বাড়ি আমার তো ভাল করে খাওয়াই হয় নি।

জয়ন্তী বললে, পেটুক কোথাকার!

কচুরি চিবুতে চিবুতে খগেনের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে রটাই চুপি চুপি বললে, এখন আপনার বিশ্বাস হল তো? দুও, দু টাকা হেরে গেলেন! আজই দেবেন কিন্তু। দেখুন, এইবারে দিদিমণিকে গান গাইতে বলুন না।

খগেন চুপি চুপি উত্তর দিলে, উঁহু, আজ নয়, আর এক দিন হবে এখন।

রটাইএর মা বললেন, এই খোকা, ওঁকে বিরক্ত করছিস কেন, খেতে দিবি না?

জয়ন্তী বললে দেখ না, জোঁকের মতন ধরে আছে।

খগেন সহাস্যে বললে, না না, বিরক্ত করে নি। ও আমাকে খুব স্নেহ করে, যদিও মোটে দশ মিনিটের পরিচয়। রটাই হচ্ছে অত্যন্ত দিদিভক্ত, আমার কানে কানে আপনার একটু গুণগান করছিল।

জয়ন্তী বললে, ভারী অসভ্য হয়েছিস তুই।

রটাই বললে, কই আবার অসভ্য হলুম! শুধু বলছিলুম, তুমি ভাল খাবার করতে পার। তা বুঝি অসভ্যতা হল? আচ্ছা, তুমি খাবার পার না, গান পার না, সেতার পার না, মোটেই কিচ্ছু পার না। জান বড়দি, খগেনবাবুর মোটরে কিচ্ছু শব্দ হয় না, ঝাঁকুনিও লাগে না।

খগেন বললে, চল না, আমার সঙ্গে একটু বেড়িয়ে আসবে। তার পর তোমাকে এখানে পৌঁছিয়ে দিয়ে যাব এখন।

মহা উল্লাসে রটাই হনুমানের মতন হুপ শব্দ করে গাড়িতে চড়ে বসল। তার মা আর দিদিদের কাছে বিদায় নিয়ে এবং আবার আসবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খগেন গেল।

যেতে যেতে রটাই খগেনকে বললে, দেখুন, রুবি—দি হচ্ছে একদম বাজে, তার মা আরও বাজে। আপনি আমার বড়দির সঙ্গেই ভাব করুন।

খগেন বললে, নেহাৎ বাজে কথা বলনি রটাই। কেমন করে ভাব করতে হয় আমাকে শিখিয়ে দিতে পার? ওঃ হো, তোমার বাজী জেতার কথা ভুলে গিয়েছিলুম, এই নাও।

টাকা দুটো পকেটে পুরে রটাই বললে, আমরা ইস্কুলে কি করে ভাব করি জানেন? মনে করুন একটা নতুন ছেলে এসেছে। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলুম, এই তোর নাম কিরে? সে বললে, হাবুল। আমি তার পিঠ চাপড়ে বললুম, হাবলু, তোর সঙ্গে আমার ভাব হয়ে গেল, এই নে দুটো লাল কাঁচের গুলি। আবার আড়ি করা আরও সহজ, দাড়িতে তিন বার বুড়ো আঙুল ঠেকিয়ে বলতে হয়—আড়ি আড়ি আড়ি।

—খাসা নিয়ম। তোমার রুবি—দির সঙ্গে ওই রকমে ভাব হতে পারে, তিনি মুখিয়ে আছেন কিনা। কিন্তু তোমার জয়ন্তীমঙ্গলা দিদিমণিটি অন্য রকমের, পিঠ চাপড়ে ভাব করা যাবে না। তাঁর মতন রমণীর মন সহস্র বর্ষেরই সখা সাধনার ধন। যা হোক, আমি চেষ্টা করে দেখব। কিন্তু হাজার বছর সাধনা করা তো চলবে না, আমার বাবা মা বিয়ের জন্য তাড়া লাগিয়েছেন যে। বলেছেন, যাকে খুশি বিয়ে কর, কিন্তু বোকার মতন পছন্দ করো না, আর বেশী দেরি না হয়; মাঘ মাসে আমরা তীর্থভ্রমণে বেরুব, তার আগেই বিয়ে দিতে চাই। দেখি তার মধ্যে কিছু করতে পারি কিনা। শোন রটাই, তুমি বড় ব্যস্তবাগীশ, তোমার দিদিমণিকে ভাব করবার জন্য খচিও না যেন।

—উ রে বাবা! তা হলে আমার পিঠে দমাদম কিল মারবে।

—আমাকেও মারবে না তো?

—নাঃ, আপনাকে কিচ্ছু বলবে না।

বেড়ানো শেষ হলে রটাইকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে খগেন চলে গেল। তার পর সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য এক মাসের মধ্যে একবার মানিকদের বাড়ি এবং তিনবার রটাইদের বাড়ি গেল। খগেন বড় মুশকিলে পড়ল, রুবির মা বার বার তাকে আসবার জন্য বলে পাঠাচ্ছেন, এদিকে রটাইএর আবদার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ছেলেমানুষের কথা ঠেলা যায় না, অগত্যা রটাইদের বাড়িতে খগেন ঘন ঘন যেতে লাগল।

দিন কতক পরে রটাই জিজ্ঞাসা করলে, ভাব হল?

খগেন বললে, ধীরে রটন্তীকুমার, ধীরে। পণ্ডিতেরা বলেন, পথ হাঁটা, কাঁথা সেলাই, আর পাহাড় টপকানো শনৈঃ শনৈঃ মানে আস্তে আস্তে করতে হয়। ভাব করাও সেই রকম, তাড়াহুড়ো চলে না। বাবা যদি আমাকে ত্যাজ্যপুত্তুর করতেন তবে এত দিন কোন কালে ভাব হয়ে যেত। তা তো তিনি করবেন না, আবার তাঁর টাকাও বিস্তর আছে, সব আমিই পাব। এই হয়েছে বিপদ।

—বিপদ কেন? টাকা থাকা তো ভালই, কত রকম মজা করা যায়, আইসক্রীম, চকোলেট, মোটর গাড়ি, দম দেওয়া ইঞ্জিন, ব্যাডমিণ্টন, পিংপং, লুডো আরও কত কি।

—তোমার দিদি যে তা বোঝেন না। তাঁর বিশ্বাস, সমান সমান না হলে ভাব করা ঠিক নয়। আমি তাঁকে বলি, তুমিই বা কিসে কম? দেখতে আমার চাইতে ঢের ভাল, বিদ্যেতেও বেশী। তোমার দাদামশাই তো বলেই দিয়েছেন তুমি হচ্ছ, লক্ষ্মী সরস্বতী আর অন্নপূর্ণার অ্যাভারেজ। তুমি চমৎকার গাইতে পার, আমার গলা টিপলেও সারেগামা বেরুবে না। তুমি হরেক রকম খাবার করতে জান, মায় ল্যাংড়া আমের ল্যাংচা, আমি পাঁউরুটি কাটতেও জানি না। তবু তোমার দিদিমণি খুঁতখুঁত করছেন। যা হোক, তুমি ভেবো না রটাই, সব ঠিক হয়ে যাবে, দিন কতক সবুর কর।

পাঁচ দিন পরে রটাই আবার প্রশ্ন করলে, ভাব হল?

খগেন বললে, আর একটু দেরি আছে।

রটাই বিরক্ত হয়ে বললে, এত দিনেও ভাব হল না? আমার সঙ্গে তো আপনার এক মিনিটে ভাব হয়েছিল। বড়দির ভারী অন্যায়, আপনি তাকে বলুন, তিন দিনের মধ্যে যদি ভাব না করে তবে আড়ি হয়ে যাবে।

—ওহে রটন্তীকুমার, ধৈর্যং রহু ধৈর্যং। আমি যদি লঙ্কেশ্বর রাবণ হতুম তো আল্টিমেটম দিতুম যে তিন দিনের মধ্যে ভাব না করলে তাঁকে কাটলেট বানিয়ে খেয়ে ফেলব। কিন্তু তা তো পারব না। তাড়াহুড়ো লাগালে তোমার দিদিমণি ভড়কে যাবেন, হয়ত রেগে দিয়ে তাঁর কোন ক্লাসফ্রেন্ড তরুণকুমার কি করুণকুমারের সঙ্গেই ভাব করে ফেলবেন। আমিও তখন মরিয়া হয়ে রুবি—দির কাছেই যাব—

তিড়বিড় করে হাত পা ছুঁড়ে রটাই বললে, খবরদার যাবেন না বলছি! বেশ, আরও কিছুদিন দেখুন।

তিন দিন পরে রটাই আবার প্রশ্ন করলে, হল?

খগেন বললে, এইবারে হব হব। তোমার দিদিমণিকে বলেছি, টাকার জন্য ভাবছ কেন, ও তো বাবার টাকা। আমার হাতে এলে তিন দিনে ফুঁকে দেব। যদি মামুলী উপায় পছন্দ না কর তবে হাসপাতাল আছে, ইস্কুল কলেজ আছে, রামকৃষ্ণ মিশন গৌড়ীয় মঠ আছে, হরেক রকম গুরু মহারাজের আখড়া আছে, যেখানে বলবে দিয়ে দেব। তার পর হাত খালি করে কপোত—কপোতী যথা উচ্চবৃক্ষচূড়ে বাঁধি নীড় থাকে সুখে, সেই রকম ফুর্তিতে থাকা যাবে।

—কিন্তু মোটর কার তো চাই?

—চাই বইকি। তাতে চড়েই তো মুষ্টিভিক্ষা করতে বেরুব, খুদ—কুঁড়ো যা আনব তাই দিয়ে তোমার দিদি পোলাও রাঁধবেন। আর দেখ, আমাদের কুটীরের সঙ্গে লাগাও একটা মস্ত তিন—তলা ধর্মশালা থাকবে, তুমি আর মানিক কেল্টে ভুল্টু বাবলু প্রভৃতি তোমার বন্ধুবর্গ মাঝে মাঝে এসে সেখানে বাস করবে। তার সামনেই একটি চমৎকার খেলার মাঠ—

—উঃ কি মজা! আর দেরি করবেন না, চটপট ভাব করে ফেলুন।

দেরি হল না। তিন দিন পরে ইস্কুলে মানিক বললে, হ্যাঁরে রটাই খগেনবাবু নাকি খালি খালি তোদের বাড়ি যায়? রটাই সগর্বে উত্তর দিলে, যাবেই তো, বড়দির সঙ্গে ভাব হয়ে গেছে যে।

কিন্তু এই ভাব হওয়ার ফলে রটাইদের বাড়ির লোকের সঙ্গে মানিকদের বাড়ির লোকের ভীষণ আড়ি হয়ে গেল। রুবির মা কেল্টের পিসীকে বললেন, উঃ, কি বেহায়া গায়ে পড়া মেয়ে ওই জয়ন্তীটা,—জানা নেই শোনা নেই একটা বজ্জাত বিশ্ববকাট ছোকরা খগেন, তাকেই ভেড়া বানালে গা!

কেল্টের পিসী বললেন, মুখে আগুন, ঝাঁটা মার, ঝাঁটা মার।

জয়ন্তীর বিয়েতে মানিকদের বাড়ির কেউ এল না, কিন্তু কেল্টেদের সবাই এল, মায় তার পিসী। তিনি ঝাঁটা নিয়ে যান নি, আঁচলের ভেতর একটা থলি নিয়ে গিয়েছিলেন। পিসী অল্পে তুষ্ট, শুধু ভাঁড়ার থেকে গণ্ডা—পাঁচেক কড়া—পাক সন্দেশ আর জয়ন্তীর উপহার—সামগ্রী থেকে খান দুই রসাল গল্পের বই সরিয়েছিলেন।

১৩৫৯(১৯৫২)