১ প্রভু বললেন, “জেরুশালেমের রাস্তায় হাঁটো। শহরের সার্বজনীন প্রাঙ্গণগুলিতে খুঁজে দেখো। যদি একজনও সত্ ও ভাল মানুষের সন্ধান পাও য়ে অন্তত সত্যের খোঁজ করছে, যদি এরকম এক জনও মানুষ থাকে তাহলে জেরুশালেমকে আমি ক্ষমা করে দেব।
২ লোকে শুধু এই বলে প্রতিশ্রুতি নেয: ‘প্রভুর অস্তিত্ব য়েমন নিশ্চিত তার দিব্য, কিন্তু তারা আসলে তা বলে না।”
৩ প্রভু, আমি জানি আপনি চান মানুষ আপনার অনুগত থাকুক। আপনি যিহূদাবাসীকে আঘাত করলেন। কিন্তু তারা কোন বেদনা অনুভব করে নি। আপনি তাদের ধ্বংস করলেন। কিন্তু তা থেকে তারা কোন শিক্ষা নেযনি। তারা ভীষণ একগুঁযে, জেদী। খারাপ কাজ করেছিল বলে তারা কোন রকম দুঃখপ্রকাশ পর্য়ন্ত করে নি।
৪ কিন্তু আমি (যিরমিয়) আমাকে মনে মনে বললাম, “তারা এত দরিদ্র এবং নির্বোধ য়ে তারা প্রভুর জীবনযাত্রা শেখে নি। ঈশ্বরের শিক্ষা বিষয়েও তারা কিছু জানে না।
৫ সুতরাং আমি যিহূদার নেতৃবৃন্দের কাছে যাব এবং তাদের সঙ্গে কথা বলব। নেতারা নিশ্চয়ই প্রভুর আচার বিধি জানবে। আমি নিশ্চিত য়ে তারা তাদের ঈশ্বরের বিধিসমূহ জানে।” কিন্তু নেতারা সব একত্র হল এবং প্রভুর সেবার কাজ থেকে দূরে সরে গেল।
৬ তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। তাই বন থেকে এক সিংহ এসে তাদের আক্রমণ করবে। মরুভূমি থেকে এক নেকড়ে বাঘ এসে সবাইকে মেরে ফেলবে। তাদের শহরের কাছে এক চিতা লুকিয়ে আছে। শহরের বাইরে কেউ বেরলেই তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খাবে। যিহূদার লোকরা বার বার পাপ করার ফলেই এগুলি ঘটবে। প্রভু বার বার সতর্ক করে কোন ফল পান নি। প্রভুর কাছ থেকে তারা বার বারই দূরে থেকেছে।
৭ ঈশ্বর বললেন, “হে যিহূদা, আমাকে একটি সঠিক কারণ দেখাও যার জন্য আমি তোমাদের ক্ষমা করব। তোমার ছেলেমেযেরা আমাকে ত্যাগ করে মূর্ত্তির কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। অথচ তোমার সন্তানদের আমি চাহিদা মতো সব কিছুই দিয়েছিলাম। তবু ওরা আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। ওরা ব্যভিচারিনীদের সঙ্গে অনেক বেশী সময় নষ্ট করেছে।
৮ তারা ভালোভাবে খাওয়া-দাওযা করা ঘোড়ার মতো, যারা কামাবেশের জন্য তৈরী। ওরা সেই সমস্ত ঘোড়ার মতো যারা প্রতিবেশীদের স্ত্রীকে ঘরে ডেকে আনে।
৯ “তাহলে আমি কি ঐ সব কাজের জন্য যিহূদার লোকদের শাস্তি দেব না?” এই হল প্রভুর বার্তা। “হ্যাঁ, তুমি জানো য়ে দেশ এই ভাবে বেঁচে থাকে তাকে আমার শাস্তি দিতে হবে। আমি তাদের য়োগ্য শাস্তিই দেব।
১০ “যাও যিহূদার সমস্ত দ্রাক্ষা গাছ কেটে দাও। (কিন্তু তাদের কখনও পুরোপুরি ধ্বংস কর না।) কেটে দাও দ্রাক্ষা গাছগুলির শাখাপ্রশাখা। কারণ এই শাখাপ্রশাখা প্রভুর নয়।
১১ যিহূদা এবং ইস্রায়েলের পরিবারগুলি আমার সঙ্গে প্রতি ভাবেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” এই ছিল প্রভুর বার্তা।
১২ “ঐ দেশবাসীরা প্রভুর বিরুদ্ধে মিথ্য়ে প্রচার করেছে। তারা বলেছে, প্রভু আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমাদের আক্রমণ করতে আসছে এমন কোন সৈন্য আমরা কখনও দেখব না। কোনদিন অনাহারে মারাও যাব না।’
১৩ “ভ্রান্ত ভাব্বাদীরা হল একটি ফাঁকা বাতাস। ঈশ্বরের বাক্য তাদের মধ্যে নেই। তাদেরও কপালে দুর্ভোগ ঘটবে।”
১৪ প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এই কথাগুলি বলেছেন: “ওই লোকরা বলেছিল য়ে আমি তাদের শাস্তি দেব না। সুতরাং যিরমিয়, আমি তোমাকে য়ে শাস্তি দেব তা আগুনের মতো হবে। ঐ লোকগুলি হবে কাঠের মতো। সেই আগুন ওদের পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।”
১৫ ইস্রায়েলের পরিবার, এই বার্তা হল প্রভুর, “আমি শীঘ্রই তোমাদের আক্রমণ করবার জন্য বহু দূর থেকে একটি প্রাচীন দেশকে নিয়ে আসব। বহু প্রাচীন সেই দেশ। সেই দেশের মানুষের ভাষা তোমরা বুঝতে পারবে না।
১৬ তাদের তীরের থলিগুলি খোলা কবরের মতো। তারা সবাই বলবান সৈন্য।
১৭ ঐ সব সৈন্যরা তোমাদের মজুত করা সমস্ত খাদ্য খেযে ফেলবে। ধ্বংস করবে তোমাদের সন্তানদের। তোমাদের মেষ ও রাখাল বালকদের তারা খেযে ফেলবে। দ্রাক্ষা আর ডুমুর ফল খাবে। তারা তোমাদের সমস্ত বিশ্বস্ত দুর্ভেদ্য শহরগুলিকে ধ্বংস করবে।”
১৮ এই হল প্রভুর বার্তা, “কিন্তু যিহূদা, যখন এই ভয়ঙ্কর দিনগুলো তোমাদের জীবনে আসবে তখন কিন্তু আমি পুরোপুরি তোমাকে ধ্বংস করব না।
১৯ যিরমিয়, তোমাকে যিহূদার লোকরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘কেন প্রভু তোমার ঈশ্বর আমাদের প্রতি এমন খারাপ ব্যবহার করলেন?’ তখন তুমি (যিরমিয়) তাদের উত্তর দেবে: ‘তোমরা প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ, তোমাদের দেশে বিদেশী মূর্ত্তিসমূহ বানিয়েছ এবং তাদের সেবা করেছ। সুতরাং তোমরা এখন বিদেশে বিদেশীদের সেবা করবে।”‘
২০ প্রভু বলেছেন, “এই বার্তা জানিয়ে দাও যিহূদা এবং যাকোবের পরিবারগোষ্ঠীকে:
২১ এই হল বার্তা: ‘হে নির্বোধ মানুষ তোমাদের কোন বুদ্ধি নেই। তোমাদের চোখ আছে অথচ দেখতে পাও না! কান আছে কিন্তু শুনতে পাও না।’
২২ নিশ্চয়ই তোমরা আমাকে ভয় পাও।”‘ এই ছিল প্রভুর বার্তা। “আমার সামনে তোমাদের ভয়ে শিউরে উঠতে হবে। আমিই সেই একজন য়ে তটভূমি দিয়ে সমুদ্রকে সীমাযিত করেছে, যাতে জল তার বাইরে না বইতে পারে। জলের ঢেউ হয়তো বালুতটে আছড়ে পড়বে। কিন্তু কোন কিছুকে ধ্বংস করতে পারবে না। ঢেউ গর্জন করে বালুতটে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু কখনও বালুতটের সীমানা পেরোতে পারবে না।
২৩ কিন্তু যিহূদার লোকরা ভীষণ একগুঁযে এবং জেদী। তারা সর্বদা আমার বিরুদ্ধে যাবার ছক কষে গিয়েছিল এবং অবশেষে আমাকে ছেড়েও গিয়েছিল।
২৪ যিহূদার লোকরা কখনও বলেনি, ‘প্রভু আমাদের ঈশ্বরকে ভয় পাওয়া এবং সম্মান জানানো উচিত্। তিনিই আমাদের শরত্ এবং বসন্তকালে সঠিক সময় বৃষ্টি এনে দিয়েছেন। তিনিই আমাদের ফসল তোলার সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।’
২৫ যিহূদার লোকরা, তোমরা অনেক ভুল কাজ করেছ। তাই সময় মতো বৃষ্টির দেখা পাচ্ছো না। তোমরা যথেষ্ট ফসল ফলাওনি। তোমাদের পাপসমূহ প্রভুর কাছ থেকে ভালো জিনিষ পাওয়া থেকে তোমাদের বিরত করেছে।
২৬ আমার দেশবাসীর মধ্যে কিছু শযতান লুকিয়ে আছে। যারা পাখী ধরবার জন্য খাঁচা তৈরী করে, তারা তাদের মত। পাখী ধরবার পরিবর্তে তারা মানুষ ধরবার ফাঁদ পাতে।
২৭ এই সব দুষ্ট লোকদের, যারা মিথ্যায ভরা, তাদের বাড়ীগুলো হল পাখীতে ভরা খাঁচাসমূহের মতো। তাদের মিথ্যাগুলি তাদের ধনী ও শক্তিশালী করেছে।
২৮ তারা তাদের অসত্ কর্ম দিয়ে মোটা এবং স্বাস্থ্য়বান হয়ে উঠেছে। অশুভ উপায়ে তারা হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য়বান। তাদের শযতানির কোন শেষ নেই। তারা অনাথ শিশুদের ব্যাপারে কোন মিনতি করে নি। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। তারা গরীব লোকদের প্রতি কখনও সুবিচার করেনি।
২৯ ঐসব কাজের জন্য আমি কি যিহূদার লোকদের শাস্তি দেব না?” এই ছিল প্রভুর বার্তা। “তুমি জানো এই ধরণের দেশগুলোকে আমি উচিত্ শাস্তি দিয়ে থাকি। আমাকে তাদের য়োগ্য শাস্তিই দিতে হবে।”
৩০ প্রভু বললেন, “যিহূদা দেশে একটা সাংঘাতিক এবং রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
৩১ ভাব্বাদীরা মিথ্য়ে কথা বলে এবং যাজকদের যা করার কথা তা তারা করে না। আমার লোকরা, ভাব্বাদীরা এবং যাজকরা যা করে তাই ভালোবাসে। কিন্তু হে আমার লোকসমূহ, তোমাদের যখন শাস্তি পাবার সময় আসবে তখন তোমরা কি করবে?”