১
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ তখন শেষ হয়ে গেছে। কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্মও মারা গেছেন। গঙ্গায় তাঁর ঔর্দ্ধদেহিক তর্পণ সেরে যুধিষ্ঠির কেবলই ভেজা কাপড়ে তীরে উঠে এসেছেন। তাঁর প্রাণ-মন আচ্ছন্ন। কুরুবংশের সবচেয়ে বুড়ো মানুষটি, যিনি ধৃতরাষ্ট্রের বাবারও অগ্র-জন্মা, তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সবার শেষে মারা গেলেন। যুধিষ্ঠির সেই মানুষটির কথা ভাবতে ভাবতেই গঙ্গাতীরে উঠছিলেন। কিন্তু আর সহ্য করতে পারলেন না। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন গঙ্গার বেলাভূমিতে।
ভাইরা ছিলেন। কৃষ্ণ ছিলেন। সবাই যুধিষ্ঠিরকে বীজন-সেচন করে সুস্থির করে তুললেন। কুরুক্ষেত্রের বিরাট যুদ্ধে আত্মীয়-স্বজনের অকালমৃত্যু, প্রিয়-প্রিয়তম ব্যক্তিদের তাঁরই কারণে আত্মবলিদান তিনি সহ্য করতে পারছেন না। স্বয়ং ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন— এই অকারণ প্রাণহানিতে কোনও দায়ই নেই তোমার। আমারই দোষ— কারণ আমি সেই দুর্বুদ্ধি পুত্রের কথা শুনে চলেছি— দুর্যোধনমহং পাপমন্ববর্তং বৃথামতিঃ। আমার ছোটভাই বিদুর আমাকে পই-পই করে বারণ করেছিলেন। আমি শুনিনি। বিদুর বলেছিলেন— দুর্যোধনের দোষেই এই কুরুবংশ, সমূলে বিনষ্ট হবে। কিন্তু আমি শুনিনি। তাকে কারাগারেও বন্দি করিনি। এমনকী বিদুর আমাকে এমনও বুদ্ধি দিয়েছিলেন যে— যুধিষ্ঠিরকে যদি আপনি রাজা নাও করেন, তবে আপনি নিজে মধ্যস্থ হয়ে রাজ্য পালন করুন। আমি তাও শুনিনি। আমি দুর্যোধনের মতেই চলেছি। তার ফল যা হবার হয়েছে। কিন্তু এই সম্পূর্ণ দুর্ঘটনা-পরম্পরার মধ্যে এমন কিছু দেখছি না, যার মধ্যে তোমার কোনও শোকের কারণ থাকতে পারেন—শোচিতব্যং ভবতা পশ্যামীহ জনাধিপ।
ধৃতরাষ্ট্র বলে গেলেন। যুধিষ্ঠির শুনলেন। কিন্তু তাই বলে তাঁর শোকবেগ কিছু প্রশমিত হল না। হওয়ার কারণও নেই। একেক জনের শোক-হর্ষের কারণ এবং পরিধি একেক রকম। ধৃতরাষ্ট্র সারা জীবন তাঁর দুর্যোধন-দুঃশাসনের গণ্ডির বাইরে চিন্তা করেননি। কীভাবে তাঁর পুত্রেরা রাজা হতে পারে, কীভাবে তারাই শুধু সুখে থাকবে— এই ক্ষুদ্র চিন্তায় যিনি জীবন কাটিয়েছেন, তাঁর পক্ষে শুধু এইটাই বলা সম্ভব— বাবা! শোকের যদি কিছু ঘটে থাকে, তবে আমার কিংবা গান্ধারীরই সেটা ঘটেছে। আমার একশো ছেলে মারা গেছে— শোচিতব্যং ময়া চৈব গান্ধাৰ্য্যা চ মহীপতে— তেমার তো তেমন কিছু হয়নি, বাবা! তুমি কেন শোক করছ?
কী করে বোঝাবেন যুধিষ্ঠির? কেন সবার দুঃখ ছাপিয়ে তাঁর দুঃখ বড় হয়ে উঠছে? ধৃতরাষ্ট্রের কথা থেকে বোঝা যায়— শত পুত্রের মৃত্যুর পরেও তাঁর যেন এক ধরনের সান্ত্বনা আছে। তিনি যেন বুঝেই ফেলেছেন— ছেলেরা দুষ্টবুদ্ধি ছিল, সেই পাপে তারা গেছে। পাপের প্রতিফল মৃত্যু, আর সেই মৃত্যুর ফলে পিতামাতার শোক— ফলং প্রাপ্য মহদ্ দুঃখং নিমগ্নঃ শোক-সাগরে। খুব সোজা সরল হিসাব। কিন্তু যুধিষ্ঠিরের জীবনে তো এই সোজা সরল হিসাব নেই। কেমন করে তিনি মনকে বোঝাবেন? সারা জীবনের যন্ত্রণার জটিলতায় তাঁর মন তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে— ভীষ্ম কী পাপ করেছিলেন? তিনি মারা গেলেন কেন? কী করেছিলেন দ্রোণাচার্য? তিনি তো কুরু-পাণ্ডব-বংশের কেউ নন? তিনি বেঘোরে প্রাণ দিলেন কেন? কী করেছিল অভিমন্যু? কোন পাপে সেই সদ্য-যুবকের প্রাণ গেল। এমনকী দুর্যোধনের আর আর ভাইরা, কর্ণ, শল্য— এঁদের জন্যও তার যন্ত্রণা কিছু কম নেই? এ সব কথা কেমন করে বোঝাবেন যুধিষ্ঠির? সেই যেদিন অস্ত্র-পরীক্ষার জন্য দ্রোণাচার্য সবাইকে এক পংক্তিতে দাঁড় করিয়ে যুধিষ্ঠিরকে প্রথম ডেকে বলেছিলেন— বৎস যুধিষ্ঠির! তুমি কী দেখতে পাচ্ছ, সেদিন কী দেখেছিলেন তিনি?
যুধিষ্ঠির দেখেছিলেন— একটি গাছের ওপর দ্রোণাচার্য একটি খেলনা পক্ষী বসিয়ে রেখেছেন পত্রান্তরালে। যুধিষ্ঠির বুঝেছিলেন পাখিটাকে বাণবিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু দ্রোণাচার্য জিজ্ঞাসা করলেন— বৎস যুধিষ্ঠির! তুমি কী দেখতে পাচ্ছ? তুমি কি গাছটাকে দেখতে পাচ্ছ? আচ্ছা, এই যে আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমাকে কি দেখতে পাচ্ছ তুমি? আচ্ছা হ্যাঁ, তোমার ভাইরাও তো দাঁড়িয়ে আছে, তুমি কি ওদেরও দেখতে পাচ্ছ?
কী করে বুঝবেন যুধিষ্ঠির, আচার্য দ্রোণ, যাঁকে তিনি এত শ্রদ্ধা করেন, ভালবাসেন সেই আচার্যের প্রশ্নের মধ্যে কোনও জটিলতা থাকবে? আচার্য কি শিষ্যের মন বোঝেন না? সরল শিশুকে প্রশ্ন করা হল— তোমার কাছে দশটি আম ছিল। তুমি তোমার ভাইকে চারটি আম দিয়ে দিলে? তোমার হাতে কটা রইল? শিশু গুনতে থাকে— এক, দুই, তিন, চার। শিক্ষক প্রথমে নির্বিকার-ভাবে মাঝখান থেকে বললেন— ওরে! এটা যোগ হবে না, বিয়োগ হবে? শিশু বলল— বিয়োগ। মাস্টারমশাই ছাত্রের আত্মবিশ্বাস পরীক্ষা করার জন্য চোখ গরম করে বললেন— অ্যাঁ, এটা বিয়োগ? হতচকিত বালক হঠাৎ সপ্রতিভ হয়ে শিক্ষককে সমর্থন করে— না স্যর! যোগ।
অঙ্কে ভুল হয়ে গেল। সরল ছাত্র কী করে ভাববে— তাঁর মাস্টারমশাই অঙ্ক পরীক্ষার সঙ্গে আরও একটা পরীক্ষা করছেন। ভাষার জটিলতায় তার মনোবল পরীক্ষা করছেন। সরল শিশু যেমন জটিলতার ভাষা বোঝে না, যুধিষ্ঠিরও তেমনই বোঝেন না— তাঁর আচার্য, তাকে লক্ষ্যভেদের চেয়েও বড় এক পরীক্ষায় নিমজ্জিত করেছেন। বোঝেন না বলেই তাঁর কত সরল উত্তর— হ্যাঁ আচার্য! আমি দেখতে পাচ্ছি— আমার সামনে এই বিশাল বনস্পতি, ডালপালা-পাতায় ভরা বিশাল বনস্পতি। দেখতে পাচ্ছি আপনাকে, কুরু-পাণ্ডবের অস্ত্রগুরু আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ভাইদের দেখতে পাচ্ছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উদ্যত-শীর্ষ। আর ওই যে শিল্পীর নিপুণ হাতে বানানো পক্ষীটি— সেটাও দেখতে পাচ্ছি— বার বার সব দেখছি, দেখতে পাচ্ছি— ভবন্তঞ্চ তথা ভ্রাতৃন্ ভাসঞ্চেতি পুনপুনঃ। যেন সবচেয়ে অকিঞ্চিৎকর ওই পাখিটি।
অঙ্কে ভুল হয়ে গেল। আচার্য একটুও খুশি হলেন না। বোর্ডে অঙ্ক কষতে এসে প্রথম চরণেই ভুল করলে মাস্টারমশাই যেমন চোখটি ছোট করে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন— বেঞ্চে গিয়ে বোস। যথেষ্ট হয়েছে। দ্রোণ সেইভাবে অখুশি হয়ে গালাগালি দিলেন— সরে যাও এখান থেকে। তোমার দ্বারা হবে না— তমুবাচ অপসর্পেতি…নৈতচ্ছক্যং ত্বয়া বেত্ত্বং লক্ষ্যমিতেব কুৎসয়ন্।
হতবাক যুধিষ্ঠির অঙ্ক মেলাতে না পেরে কেমন করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, কেমন তাঁর মনের অবস্থা হয়েছিল— মহাভারতের কবি সে সব কথা কিছু বলেননি। বলেননি বলেই আরও জানি— যুধিষ্ঠির হতচকিত হলেও তাঁর নিজস্ব অঙ্কের হিসাবে তিনি স্থির। লোকচক্ষে সে হিসাব যত বড় ভুলই হোক— আচার্যের সামনে সব দেখার সেই হিসাবটুকুই তাঁর জীবনের অঙ্ক। তিনি সব দেখতে পান— বিশাল বনস্পতিকে দেখতে পান, আচার্যকে দেখতে পান, ভাইদের দেখতে পান, আর সেই অকিঞ্চিৎকর পাখিটিও দেখতে পান।
ধৃতরাষ্ট্র সারা জীবন ধরে শুধু পুত্রের রাজত্ব-প্রাপ্তি নিয়ে চিন্তা করেছেন, অতএব পুত্রের মৃত্যুর পর সেটাই তাঁর একমাত্র শোক। কিন্তু যিনি ভীষ্মকে দেখেছেন বিশাল বনস্পতির মতো, যিনি আচার্যকে বরণ করেছিলেন গুরু হিসেবে, যে ভাইদের তিনি চেনেন ভাই হিসেবেই— কুরু-পাণ্ডবদের বিভেদ যাঁর কাছে এক রাজনৈতিক কৃত্রিমতা ছাড়া আর কিছু নয়, এমনকী কুরুক্ষেত্রের বিরাট যুদ্ধে দূর দূর থেকে উড়ে আসা স্বপক্ষীয়— বিপক্ষীয় পদাতিক, ভাড়া করা সৈন্য-পক্ষীগুলিও যাঁর শোকদৃষ্টি এড়ায় না, তাঁর অঙ্ক কোনওদিন মেলে না। আচার্যের সামনে অস্ত্র-পরীক্ষার দিনে সব দেখতে পাওয়ার মধ্যে যে অকৃতকার্যতা ছিল, সেই অকৃতকার্যতা আজ এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরেও কাজ করছে তিনি রাজা হতে পারছেন না। রাজা হতে চাইছেন না। কারণ লক্ষ্যভেদের সময় যেমন অর্ধনিমীলিত একচক্ষুতে একতম শিকার তাঁর চোখে পড়েনি, তেমনই আজও একচক্ষুর একাত্মিকা দৃষ্টিতে তিনি রাজত্বের দিকে তাকিয়ে নেই।
তিনি সব দেখতে পান, সবার দিকে তাঁর দৃষ্টি আছে বলেই সকলকেই তিনি হারিয়ে বসে আছেন। মনের সঙ্গে তাঁর নিরন্তর যুদ্ধ চলে। কেউ তাঁর সম-দৃষ্টির ব্যবহারে খুশি নয়। ভীম নয়, হয়তো অৰ্জুনও নয়, দ্রৌপদী নয়, নকুল-সহদেব তো নয়ই। এমনকী গর্ভধারিণী জননী পর্যন্ত তাঁর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। সবাইকে তিনি খুশি করতে চান, এমনকী শত্রুপক্ষকেও। অথচ কেউ তাঁর সম-ব্যবহারে খুশি নয়। তাঁকে তাই সব সময় যুদ্ধ করতে হয় নিজের সঙ্গে, অস্ত্রহীন নিরন্তর সংগ্রাম। কথাটা অন্য কেউ বুঝতে না পারুক, চতুর-শিরোমণি কৃষ্ণ ঠিক বুঝেছিলেন। ঠিক সময়ে যেভাবে তিনি ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিলেন, তাতে আজকের দিনের মহান মনস্তত্ত্ববিদরাও হার মানবেন।
রাজসিংহাসনে বসতে অনিচ্ছুক যুধিষ্ঠিরকে কৃষ্ণ বলেছিলেন— মানুষের দুই রকমের অসুখ হয়, দাদা! শরীরের অসুখ আর মনের অসুখ— দ্বিবিধা জায়তে ব্যাধিঃ শারীরো মানসস্তথা। এই দুই ব্যাধি কিন্তু আলাদা থাকতে পারে না। এ ওকে সাহায্য করে, ও একে সাহায্য করে। অর্থাৎ শরীর খারাপ হলে মনও আস্তে আস্তে বিবশ হয়, আবার মন খারাপ হলে শরীরও গোলমাল করতে থাকে। তাই বলছিলাম— এই শরীর আর মনের অসুখ পরস্পর প্রতিপূরকের মতো জড়িয়ে আছে— পরস্পরং তয়ো-র্জন্ম নির্দ্বন্দ্বং নোপপদ্যতে।
কৃষ্ণ বলতে চাইলেন— যুধিষ্ঠির মনের সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করতে করতে শরীরটিও খারাপ করে ফেলেছেন। কিন্তু কেন এমন হবে? যুধিষ্ঠির তো মোটেই সাধারণ মানুষের মতো নন। সাধারণ জনে যখন দুঃখে পড়ে, তখন সুখের কথা স্মরণ করে দিন কাটায়। ধনৈশ্বর্য-প্রতিপত্তিহীন জমিদারপুত্রেরা এ বিষয়ে স্মরণীয়। আর কতক মানুষ আছে যারা সুখের দিনে দুঃখের কথাগুলি স্মরণ করে দিন কাটায়। কৃষ্ণ বললেন— কিন্তু তুমি তো এর কোনওটাই নও দাদা। তুমি দুঃখের দিনে দুঃখ ঘোচানোর কোনও চিন্তা করনি, আর আজ সুখের দিনেও কোনও সুখের কথা চিন্তা করছ না— স ত্বং ন দুঃখী দুঃখস্য ন সুখী সুসুখস্য বা। তা, এমন একটা লোককে আমি কী বা বলব? যার দুঃখবোধের ক্ষমতাই নেই, সুখ-দুঃখে যার সমান দৃষ্টি, তেমন একটা স্বভাব-শান্ত লোককে আমি কী বোঝাতে পারি, দাদা— অথবা তে স্বভাবো’য়ং যেন পার্থাবকৃষ্যসে।
কৃষ্ণ পাণ্ডব-মহিষী দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন যুধিষ্ঠিরকে। একে একে অন্যায় পাশা-খেলা, বনবাস, অজ্ঞাতবাস, বিরাটনগরে কীচকের আচরণ, অভিমন্যু-বধ— সব একে একে স্মরণ করিয়ে দিলেন যুধিষ্ঠিরকে। কিন্তু তাতে যুধিষ্ঠিরের কোনও বিকার হল না। কৃষ্ণ এবার আসল কথাটা বললেন। বললেন— তুমি ভীষ্ম-দ্রোণের সঙ্গে যে বিরাট যুদ্ধ করে এসেছ, দাদা, আজ সেই রকম একটা যুদ্ধ করতে হবে তোমার মনের সঙ্গে। শুধু তোমার মনের সঙ্গে— মনসৈকেন যোদ্ধব্যং তত্তে যুদ্ধম্ উপস্থিতম্।
বস্তুত দ্রোণ-ভীষ্মের সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের অস্ত্র-যুদ্ধের কথা বলছেনও না কৃষ্ণ। কারণ এঁদের সঙ্গে যুধিষ্ঠির কতটুকুই বা যুদ্ধ করেছেন? মনে রাখতে হবে ভীষ্ম-দ্রোণকে বধ করার ব্যাপারেও যুধিষ্ঠিরকে সবচেয়ে বেশি লড়াই করতে হয়েছে তাঁর মনের সঙ্গেই। যে পিতামহের কাছে সারা জীবন তিনি স্নেহ-প্রশ্রয় পেয়েছেন, যে আচার্যের সাধুবাদ সদা-সর্বদা তাঁকে শক্তি, উৎসাহ আর উদ্দীপনা জুগিয়েছে— যুদ্ধ লাগলে সেই পিতামহ এবং আচার্যের প্রাণহানি করার চেষ্টা করতে হবে— এই মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে যুধিষ্ঠির কোনওদিন মুক্তি পাননি। যুদ্ধ লাগার আগে এই দু’জনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যুধিষ্ঠিরকে উদ্যুক্ত করেছেন। যুধিষ্ঠিরের মানসিক দ্বন্দ্ব তাতে থেমে যায়নি। তাঁদের মৃত্যুর পর সেটা বরং বেড়েছে।
এখন আরেক লড়াই। তাঁকে রাজা হতে হবে। কৃষ্ণ বলেছেন— এ লড়াইটা আরও কঠিন, দাদা! এ লড়াই করতে হবে যাদের সমস্ত যুক্তি সাজিয়ে নিজের কাজের মাধ্যমে। লড়াই করতে হবে নিরাকার এক মুক্ত মনের সঙ্গে, যেখানে ধনুক-বাণের কোনও কার্যকারিতা নেই, আত্মীয়-বন্ধুর ভূমিকা নেই কোনও। তোমাকে যুদ্ধ করতে হবে শুধু নিজের সঙ্গে— আত্মনৈকেন যোদ্ধব্যং তত্তে যুদ্ধমুপস্থিতম্। সবার শেষে কৃষ্ণ জোর দিয়ে বললেন— এ যুদ্ধ তোমায় জয় করতেই হবে, দাদা! নইলে ঐ অবস্থা হবে তোমার— তস্মিন্ননির্জিতে যুদ্ধে কামবস্থাং গমিষ্যসি?