বারোমাস তুমি ক্ষ’য়ে গ’লে ঝরে
যা-কিছু পেয়েছ বর্ষার মেঘে বাতাসের স্বরে
দিগন্ত-কাঁপা রোদের সাড়ায়
শত বছরের কবির চোখের, প্রাণের তারায়
-নিত্য নিজেকে বলি বারবার-
বিনিময়ে তার
দু’দিনের যত সাধারণ সুখ
ছাড়ো হেসে-খেলে, শুধু এক-বুক
বেদনার রেণু ছড়িয়ে তোমার গানের ভাষায়
প্রগাঢ় অনেক অজানা আশায়
ভুলে গিয়ে ছেঁড়া হৃদয়ের ক্ষত
যেই ঝড় আজও না চাইতে আসে
মুছে ফেলে তাকে মেনে নাও এই বন্ধ্যা আকাশে
তারা ফোটানোর ব্রত।
কিছু নেই যার বিত্তের কণা
বাজিয়ে সে তার চিত্তের তারে আনে মূর্ছনা,
কত নেভা প্রাণে বাতি দেয় জ্বেলে
আবেগের নীল শিখা-শিহরণে, দ্যাখে চোখ মেলে
গ্রীষ্মকঠিন বর্ষাকোমল শহরের মুখ
প্রেমিকের মতো গাঢ় উৎসুক।
আমি যা-কিছুই করি আহরণ দিন-রাত্তির
উজ্জ্বল বহু গ্রন্থ অথবা দেশ-কাল আর ভোরের শিশির
পাখির বৃত্ত, কৃষ্ণচূড়ার রোদ্দুর থেকে
স্বচ্ছ মধুর মতো চেখে-চেখে-
ব্যর্থ হবে কি তা-ও একদিন?
পাতা ঝরে যাক, ব্যথা মর্মরে প্রাণ হোক লীন;
বিদ্যুৎজ্বলা সৃষ্টি-আগুনে ঝরুক ঝরুক ঘন অবিরল
হৃদয়ের মেঘ-জল।
বাঁকাচোরা পথ দু’পায়ে মাড়িয়ে দেখি উদ্ধত
কৃপাণের মতো
জ্বলছে প্রাণের রৌদ্রের শিখা রাত্রির খাপে;
যাকে ভালোবাসি তার ঠোঁটে কাঁপে
সূর্য-হাসির, সোনালি-চিকন বালি-ঝরা আভা-
তার জন্যেই কখনো বাঁচার আনন্দ বাড়ে।
জলের কুমির ডাঙার বাঘের দুরন্ত থাবা।
ক্রূর উদ্যত, হই না ছিন্ন পৃথিবীর দাঁত-নখের প্রহারে,
তবু জানি এত বিস্ময়-লাগা সভ্যতা আছে
জীবনের কাছে;
বিনিময়ে তার
তুচ্ছ মেনেছি খণ্ড খণ্ড যুদ্ধের হার।
অস্ত্র আমার নেই কিছু শুধু গান নিয়ে আমি
সংসার রুখে দাঁড়ালে কঠিন প্রান্তরে নামি;
যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি তবুও মরিনি থাবার
প্রহারে এখনও; সোনালি-চিকন সূর্য-হাসির, গ্রন্থ-আভার
পৃথিবীতে রোজ নতুন বোধের গাঢ় রূপাভাস,
বাঁচবার উল্লাস।