যার জন্য সারা জীবন
আরও একটু সামনে যেতে হবে
মাত্র আর একখানাই খাড়া পাহাড়, দুটো পাগলা ঝোরা
এখানে বসিস নি, খুকি, ওঠ, আমি হাত ধরে তুলছি, বেলা যে বেশি নেই
কিংশুকের রেণুর মতো ঝরে পড়ছে আসন্ন সায়াহ্ন
অকস্মাৎ অতি চিকন আলোর মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা
এই দিগন্তে ধুলো আমার খুবই চেনা, সারা অঙ্গে সাত জন্মের ধুলো
সমস্ত অনিত্যতার মধ্যে আমার এই জন্ম দাগ!
পায়ের তলায় কাঁটা, রক্ত বিন্দু?
পায়ের তলায় এই সামান্য আদিম বর্ণ, আঃ কী আনন্দ
এতক্ষণে রমণী হলে, নীরার চেয়েও অধিকতর নারী
মন্দিরের মূর্তি নও, রাত্রি-জাগা শব্দ-খেলা নও
ব্যথায় তোমায় ওষ্ঠ কাঁপে, শিল্প তোমায় অমর হাসি দেয়নি
পায়ের তলায় এই সামান্য আদিম বর্ণ, আঃ কী আনন্দ
আমার দাঁত, আমার জিভ আজ ধন্য হলো!
এসো আবার চড়াই-উৎরাই
কতটা পথ এসছি, কত দুর্নিবার, বাকিটা আর কিছু না
দুদিকে গাঢ় জঙ্গলের হাতছানি, বাতাস ডাকছে এসো
বসতে পেলেই শুতে চাইবে এমন লোভ মাথায় আর ক্লান্ত মজ্জায়
সুন্দরের সশস্ত্র মোহ, এর আগে কি দেখিনি কক্ষনো?
এখানে বসিস নি, খুকি, ওঠ, আমি হাত ধরে তুলছি, বেলা যে বেশি নেই
আমরা সেই সেখানে যাবো, যেখানে তৃণ সদ্য জেগে উঠছে!
ওদিকে এমনকি ঝড়, নীরা!
আমরা কি আগুন খাইনি এই সেদিন ঘোর পাতালে যাইনি পিকনিকে?
চতুর্দিকে কাড়াকাড়ির খেলা, আমরা কারুক্কে হারাই নি, হার মানিনি
তারের ওপর দিয়ে হাঁটা, সবাই বললো, গেল এবার গেল
শরীর যেন প্রবাসী হাঁস, প্রতিটি দিন ভ্রমণ কৌতুক
মাত্র আর একখানাই খাড়া পাহাড়, দুটো পাগলা ঝোরা
হু হু শব্দে নামছে আকাশ, এখনই নয়, একটু দূরে থাকো!
দ্রিদিম দ্রিম দ্রিদিম দ্রিম ধ্বনি
ধন্যবাদ, আমরা কোনো উৎসবের আমন্ত্রণ আজকে নিচ্ছি না
ঝামরে উঠছে প্রায়ান্ধকার, চূড়ার কাছে সাত ঈগলের ডানা
আমরা আজ সেখানে যাবো, যার জন্য সারা জীবন এত সমস্ত কাণ্ড
শরীর যেন প্রবাসী হাঁস, প্রতিটি দিন ভ্রমণ কৌতুক
চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে, হঠাৎ যদি গড়িয়ে যাই নিম্ন গোলক-ধাঁধায়
আমায় ধরে রাখিস, খুকি, কোমল হাতে অনিঃশেষ মায়া…