যাচ্ছিলাম তো ঠিকানাবিহীন

কেন এই দৃশ্য ভেবে ওঠে বারবার
সুস্পষ্ট আমার চোখে? মুছে
ফেলতে যতই চেষ্টা করি, ব্যর্থ হই তত আর
হৃৎপিণ্ড-কাঁপানো নানা দৃশ্য দাঁত-নখ
ভীষণ খিঁচিয়ে
আমাকে দখল করে। আমার চোখের
সামনেই গুঁড়িয়ে যায় সব ঘর-বাড়ি
এক লহমায় আর বেবাক বিপন্ন নর-নারী
মাতম করার ক্ষণটুকু না পেতেই ডুবে যায়
ক্ষুধিত মাটির নিচে। কারা পরিচিত
খুব, কারাই-বা
বেগানা সে-কথা ভেবে দেখিনি তখন।

বারবার হানা দিচ্ছে যে ভীষণ দৃশ্য তা-কি
সত্যি না-কি কোনো
দুঃস্বপ্ন আমাকে খুব বিপন্ন করার মতলবে নিয়মিত
ছুড়ে দিচ্ছে রক্ত-হিম-করা দৃশ্যাবলি
আমার দু’চোখে। ক্ষয়ে যেতে থাকি এই বিরানায়, কয়েকটি
কালো ঘোড়া ধেয়ে আসে হিংস্রতায় আমার গণ্ডিতে।

আসমানে দৃষ্টি পড়তেই দেখি কে যেন ভরাট
পূর্ণিমার চাঁদকে ভীষণ
দ্রুত চেটে অনেকটা খেয়ে ফেলেছে এবং রক্তের শিশির ঝরঝরে নদী হয়ে
বইছে দিগন্তে। হতবাক আমি বেশ কিছুক্ষণ
চোখ মুদে থাকি আর মুদিত চোখেও বিভীষিকা
খেলা করে অবিরাম। মাথার ভিতর
কারা যেন অগোচরে ঢুকিয়ে দিয়েছে রাশি রাশি তীক্ষ্ণ কাঁটা।


হঠাৎ হোঁচট খেতে খেতে
সামলে নিয়ে এগোই আস্তে খোলা পথে।
দেখার কত কিছুই আছে ডানে বামে,
এখনো তো চলার পথে দৃষ্টি মেলে দেখি বটে
নর-নারী, অবোধ শিশু, দোকানদারি, গাছ-গাছালি।
মনে অনেক ছবি জমে, যায় হারিয়ে তবু কিছু।


ঘুমিয়ে ছিলাম নিজের ঘরের পুরনো খাটের
শয্যায় একা। মশারিটা আজ হয়নি খাটানো,
মশারা দিব্যি নিচ্ছিল শুষে অনেক রক্ত
আমার রুগ্ন শিরা থেকে, আমি পাইনি কো টের
মোটেও তখন। আমি কি ঘুমের সাগরের ঢেউ
উজিয়ে সাঁতার কেটে অজানার টানে বহুদূরে
অচিন দেশের উদ্দেশে ভেসে যাচ্ছিলাম তো ঠিকানাবিহীন।
জলের ঝাপটা লাগছিল চোখে, আখেরে ছুঁলাম অপরূপ তীর।

অভীষ্ট তীরে পৌঁছুনো জানি সহজ তো নয়। বড়ই অচেনা,
জমি হিংসুক, গাছপালা সব তেড়ে আসতেই ইচ্ছুক খুব
অষ্টপ্রহর। পশুগুলো সবই বিকট, হিংস্র। তাহলে কোথায়
আশ্রয় নেব এমন প্রহরে অতিশয় এই ক্লান্ত শরীরে?
হঠাৎ ভীষণ ঝোড়ো হাওয়া এসে আমাকে উড়িয়ে
নিয়ে যায় দূরে, বহু দূরে যেন পাখি হয়ে আমি উড়ছি আকাশে।


বেজায় নোংরা আবর্জনার স্তূপ থেকে
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম। একরাশ ধুলো,
নানা এলেবেলে জিনিসের টুকরো টাকরা শরীরে
লেগেছিল আঠার মতো। অনেক
জোরে গা ঝাড়া দিয়েও পুরোপুরি আবর্জনামুক্ত
হতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম। খানিক এগুতেই হঠাৎ
অস্ত্রসজ্জিত কজন বদমেজাজি জবরদস্ত লোক
আমাকে গ্রেপ্তার করল। কী আমার অপরাধ কিছুতে
জানতেই পারলাম না। ওদের
সুরত দেখেই পিলে চমকে উঠেছিলো আমার।
সমুদ্রের কিনার ঘেঁসে ওরা আমাকে
হাত-বাঁধা হালতে নিয়ে যাচ্ছিলো। কী-ই বা আমার
কসুর জানাবার প্রয়োজনই বোধ করেনি। সমুদ্রের ধোঁয়াটে
কিনারে আমাকে দাঁড় করিয়ে
কোনো কিছু না বলেই তিনজন বিদঘুটে, নিষ্ঠুর
আজব জীব স্টেনগান আমার দিকে তাক করে বুলেট
ছুড়তে ছুড়তে নোংরা দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল। আমি নিষ্প্রাণ
লুটিয়ে পড়েছিলাম নাকি গুলিবিদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনো?
২৯-১০-২০০৩