যম-দুয়ারে পড়ল কাঁটা – ২

পরদিন সকালে প্রাতভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে এসে বাসুসাহেব দেখলেন, বাড়ির বাকি তিনজন বাসিন্দা বাগানে বেতের চেয়ার পেতে বসেছেন। বিশে চা পরিবেশন করছে।

উনি ওঁর নির্দিষ্ট বেতের চেয়ারটা টেনে নিতেই সুজাতা ‘দৈনিক সঞ্জয় উবাচ’র একটা পাতা বাড়িয়ে ধরে বলে, দেখুন মামু। আপনার ক্লায়েন্ট বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

কাল রাত্রে ডিনার টেবিলে কেসটার সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে। বাসুসাহেব ইতিমধ্যে সুকৌশলীকে ঐ অজ্ঞাত মক্কেল এবং তার অপরিজ্ঞাত আততায়ী তথা প্রিয়জন সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কৌশিক রাগ করে বলেছিল, প্রাথমিক কিছু ‘ডাটা’ তো দেবেন? একটা স্টার্টিং পয়েন্ট? সন্ধান নেওয়া শুরু করব কোথা থেকে?

বাসু বলেছিলেন, সব সমস্যার শুরুটাই অমারাত্রির মতো নীরন্ধ্র অন্ধকার। কিন্তু যারা আস্তিক তারা বিশ্বাস করে – কোনও অমারাত্রিই নিষ্প্রভাত’ হয় না।

কৌশিক বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ওসব কাব্য কথা। ‘নিষ্প্রভাত’ শব্দটা অভিধানে নেই!

বাসুও বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, হুঁঃ! উনি নাকি এককালে কবিতা লিখতেন! অভিধান! মাই ফুট!’

তাই বিজ্ঞাপনের ওপর চোখ বুলিয়ে বাসু বলেন, কী সুজাতা? কাল বলিনি, সন্ধানী দৃষ্টি থাকলে আলোর আভাস ঠিক পাওয়া যাবে।

কৌশিক বলে, তা তো যাবে, কিন্তু বিজ্ঞাপনটা দিচ্ছেন কে? আপনার মক্কেল না তাঁর শত্রুপক্ষ?

বাসু দ্বিতীয়বার পড়লেন শেষ পৃষ্ঠার ব্যক্তিগত কলমে বোল্ড টাইপে ছাপা বিজ্ঞাপনটা!

হিসাবটা মেটাতে চাই। অবিলম্বে এবং নগদে। হোটেল পান্না, রিপন স্ট্রিট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার আগে। ছত্রিশ-চব্বিশ-ছত্রিশ।’

বললেন, দুটোই হতে পারে। তবে ‘কোড নম্বর’ পড়ে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, এটা আমাদের মক্কেল সংক্রান্ত! সুকৌশলী, কী পরামর্শ দাও?

কৌশিক বলে, ‘দৈনিক সঞ্জয় উবাচ’ অফিসে খোঁজ করব?

— বৃথা। বিজ্ঞাপনটা যদিও মিস্টিরিয়াস, এবং কাউন্টার-ক্লার্ক— তা সে পুরুষই হোক, অথবা নারী—বিজ্ঞাপনের শেষ তিনটি শব্দ শুনে নিশ্চয় বিজ্ঞাপনদাত্রীর দিকে চোখ তুলে তাকাবে—যদি আমাদের মক্কেলই এটা করে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সে তোমাকে ‘কোড নেম’-এ বিজ্ঞাপনদাত্রীর বিষয়ে কিছু বলবে না। এটা কাগজের এথিক্স।

কৌশিক বলে, তাহলে আমিও একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে আসি, কালকের কাগজে, ঐ একই জায়গায়। ধরুন, বিজ্ঞাপনটা এই রকম: ‘হোটেলের ভিতরে যাব না। ফাঁদ পাতার চেষ্টা করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বিষ্যুদবার সন্ধ্যা ছয়টার সময় ঐ হোটেলের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকব। ছত্রিশ-চব্বিশ-ছত্রিশ’।

বাসু বললেন, কিন্তু কে যাচ্ছ? তুমি না সুজাতা?

—দুজনেই। ভেবে দেখুন, মামু: দুটো সম্ভাবনা। প্রথমত, বিজ্ঞাপনটা আপনার মক্কেল দিয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে যে অ্যাটাচি ভর্তি টাকা নিয়ে সে হোটেল পান্নায় অপেক্ষা করছে ব্ল্যাকমেল মেটাতে। তাহলে আরও ধরে নিতে হবে যে, ওরা পরস্পরকে চেনে। না হলে প্রাপক হোটেল পান্নায় এসে, কেমন করে ওকে খুঁজে বার করবে? রিসেপশনে এসে তো বলতে পারে না, ৩৬-২৪-৩৬ কোন ঘরে উঠেছে? দ্বিতীয় সম্ভাবনা, বিজ্ঞাপনটা দিয়েছে ‘ব্ল্যাকমেলার’। তাই ‘অবিলম্বে’ ও ‘নগদ’ শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে আপনার মক্কেল তাকে চেনে। কিন্তু ঠিকানা জানে না। তাই রিপন স্ট্রিটের হোটেল পান্নায় এসে দিনকয়েক ব্ল্যাকমেলারকে থাকতে হচ্ছে।

বাসু বললেন, তোমার যুক্তিটা ঠিকই আছে। তবে সময়টা বদলে নাও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার বদলে কর, বেলা এগারোটা সাত আই. এস. টি!

—বুঝেছি! সন্ধ্যা ছয়টায় হোটেলের গেটে অনেক লোকজন থাকবে। বেলা এগারোটা সাত মিনিট হলে মানুষটাকে চিহ্নিত করা সহজ হবে। সে স্ত্রীলোকই হোক, অথবা পুরুষ।

এই মতোই ব্যবস্থা হল।

দুপুরে বাসুসাহেবের একটা আর্বিট্রেশন মামলা ছিল। নিজের বাড়িতেই। আদালতে যেতে হয়নি।

সন্ধ্যায় কৌশিক ফিরে এসে খবর দিল — রিপন স্ট্রিটের ‘হোটেল পান্না’ মোটামুটি খানদানী পান্থশালা। ছয়তলা বাড়ি, লিফ্‌ট আছে, ‘বার’ও আছে। দৈনিক সঞ্জয় উবাচ অফিসেও গিয়েছিল। পূর্ববর্তী বিজ্ঞাপনদাতার কোনও পাত্তা পায়নি। তবে সে নিজে যে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে তার কপিটা দেখালো।

‘৩৬-২৪-৩৬। হোটেলের ভিতরে নয়। হোটেলের সামনে ট্যাক্সিতে অপেক্ষা করব। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা থেকে এগারোটা পাঁচ। একা আসা চাই। তুমিজানোকে।’

**

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সুজাতা এসে পৌঁছাল রিপন স্ট্রিটের হোটেল পান্নায়। ঠিক পৌনে এগারোটায় সে হোটেল লাউঞ্জে ঢুকে রিসেপশন কাউন্টারের কাছাকাছি সোফা দখল করে একটা পেপারব্যাক খুলে বসল। কাউন্টার ক্লার্কের সঙ্গে ওর চোখাচোখি হল। সুজাতা বারে বারে তার মণিবন্ধের দিকে তাকাতে থাকে ভাবখানা : হোটেল-লাউঞ্জে সওয়া- এগারোটা নাগাদ কারও সঙ্গে তার জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।

কৌশিক এল, আলাদা। একটা ট্যাক্সি নিয়ে। ঠিক এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিটে। তার পরনে গ্রে রঙের সুট। চোখে কালো চশমা। মাথায় টুপি এবং তার কানাটা এমনভাবে নামানো যাতে মুখটা ভাল দেখা না যায়। কৌশিক বসেছে পিছনের সিটে। ড্রাইভারকে বলেছে, হোটেলের ঠিক সামনে ট্যাক্সিটা পার্ক করতে।

ট্যাক্সিটা ঠিক হোটেলের সামনে পার্ক করা গেল না। কারণ আগে থেকেই সেখানে একটা অ্যাম্বাসাডার পার্ক করা। তার পিছনে একটা মারুতি। অগত্যা গেট থেকে একটু দূরে গাড়িটা পার্ক করে ট্যাক্সি ড্রাইভার জানতে চাইল, কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?

কৌশিক ওর দিকে একটা দশ টাকার নোট বাড়িয়ে ধরে বলে, এটা তোমার মিটারের উপর।

ট্যাক্সি ড্রাইভার নোটখানা বুক পকেটে রেখে একটা সিগারেট ধরায়। এতক্ষণে সওয়ারির সাজপোশাকের দিকে তার নজর যায়। 007 মার্কা কিছু পিকচার নিশ্চয় তার দেখা আছে। সে মনে মনে খুশি হয়।

এগারোটা বাজল।

হোটেল থেকে বেশ কিছু লোক বাইরে এল। কিছু ঢুকলও। গাড়ির পাশ দিয়ে দু-চারজন যাতায়াতও করছে। কেউ যে ওকে বিশেষ নজর করছে, তা মনে হল না কৌশিকের। মিনিট তিনেকের মধ্যেই ওর লক্ষ্য হল একটি বিশেষ তরুণীকে। ট্যাক্সিটার পাশ দিয়ে সে তৃতীয়বার যখন হেঁটে গেল। বর্ণনা শোনাই ছিল। কৌশিকের চিনতে অসুবিধা হল না। মেয়েটি কিন্তু ট্যাক্সিটার কাছে এগিয়ে এল না। কৌশিকও কোন সাড়া দিল না। চতুর্থবার ট্যাক্সিটার পাশ দিয়ে যাবার সময় সে বেশ কাছে ঘনিয়ে এল। তাকিয়ে দেখল ট্যাক্সিটার পিছনের একক যাত্রীটির দিকে। কিন্তু হয়তো যাকে খুঁজছে সে নয়—এ কথা বুঝে নিয়ে দূরে সরে গেল। ফুটপাতের স্টলওয়ালার দোকানে কিছু মাসিকপত্র নাড়াচাড়া করতে থাকে।

কৌশিক বুঝল, ও ভয় পেয়েছে। যোগাযোগ করবে না। যতক্ষণ কৌশিক ট্যাক্সি নিয়ে চলে না যাচ্ছে মেয়েটি ততক্ষণ স্টল ছেড়ে নড়বে না। অগত্যা কৌশিক মনস্থির করে। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয় পার্ক স্ট্রিটের দিকে যেতে।

ট্যাক্সিটা দৃষ্টিপথের বাইরে যাওয়ার পরেও মেয়েটি দাঁড়িয়ে রইল ম্যাগাজিন স্টলে। ট্যাক্সির নম্বরটা সে নিশ্চয় দেখে রেখেছে; মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সেই নম্বরী ট্যাক্সিটা ফিরে এল না দেখে সে হোটেলে ফিরে গেল। রিসেপশন কাউন্টারে গিয়ে কী একটা চাবি চাইল। কাউন্টার- ক্লার্ক পিছনের বোর্ড থেকে একটি চাবি পেড়ে নামালো। চাবিটা নিয়ে মেয়েটি এলিভেটারের দিকে এগিয়ে গেল। লিফটটা উপরে উঠতে শুরু করতেই সুজাতা এগিয়ে এল কাউন্টারের দিকে। কত নম্বর চাবি মেয়েটি নিয়েছে তা সে দূর থেকে দেখতে পায়নি; কিন্তু পেরেকটা চিহ্নিত করছে; তৃতীয় সারির পঞ্চম চাবিটা। কাছে এসে দেখল চাবিটার পেরেকের পাশে লেখা 315

সুজাতাকে এগিয়ে আসতে দেখে রিসেপশনিস্ট মেয়েটি বললে, ইয়েস? ক্যান আই হেলপ য়ু?

—অফ কোর্স য়ু ক্যান। এক্ষুনি যিনি 315 নম্বর চাবিটা নিয়ে গেলেন উনিই কি শকুন্তলা চ্যাটার্জি? গ্যানন অ্যান্ড ডাস্কার্লির ডক্টর সামন্তের পার্সোনাল সেক্রেটারি?

কাউন্টার ক্লার্ক সুজাতাকে আপাদমস্তক ভাল করে দেখে নিয়ে বলল, আপনি অনেকক্ষণই হোটেল লাউঞ্জে বসে আছেন। কেন বলুন তো?

সুজাতা মিষ্টি হাসল। বলল, এককথায় তার জবাব: চাকরির সন্ধানে। মিস্ চ্যাটার্জিকে আমি চাক্ষুষ কখনো দেখিনি। উনি এগারোটা নাগাদ এই হোটেলে আমাকে আসতে বলেছিলেন। রুম নম্বর কত তাও বলেননি। বলেছিলেন, রিসেপশনে এসে অপেক্ষা করতে। উনি ডেকে নেবেন। সাড়ে দশটা থেকে এগারোটা মধ্যে।

—আই সি! তাহলে আপনার কেন মনে হল যে উনিই …

মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে সুজাতা বললে, ওঁর বর্ণনা শুনেছি। ওঁদের অ্যানুয়াল সোশালে তোলা গ্রুপ ফটোতে ওঁর ছবিও দেখেছি। অবশ্য গ্রুপ ফটো তো? খুব ছোট মাপের

মেয়েটির বিশ্বাস হল। রেজিস্টার হাতড়ে বললে, আয়াম সরি। ওঁর নাম শকুন্তলা চ্যাটার্জি নয়। চিত্রলেখা ব্যানার্জি। রাঢ়ী ব্রাহ্মণ শুধু এটুকুই মিলেছে!

সুজাতার মুখটা ম্লান হয়ে যায়। ধন্যবাদ জানিয়ে সে চলে আসতে যায়। কাউন্টার ক্লার্ক ও কে অপেক্ষা করতে বলে। মেয়েটি সত্যিই ভাল। রেজিস্টারে বেশ কিছুক্ষণ ধরে খোঁজাখুজি করে বলল, আমি দুঃখিত। শকুন্তলা চ্যাটার্জি নামে কোন বোর্ডার এখন এ হোটেলে নেই।

পুনরায় ধন্যবাদ জানিয়ে সুজাতা বিদায় হল।

পূর্বপরিকল্পনামতো পার্ক স্ট্রিটের পিটার-ক্যাট’ হোটেলে এসে কৌশিকের সঙ্গে দেখা করল সুজাতা। সব কথা জানাল। দুজনে মধ্যাহ্ন আহার সেরে নেয়। সুজাতা নিউ আলিপুরে চলে যায়। কৌশিক ফিরে এল হোটেল পান্নায়

রিসেপশন কাউন্টারে বেশ কিছু লোক ভিড় করে আছে। কৌশিক একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে থাকে। কাউন্টার ক্লার্ক তীক্ষ্ণদৃষ্টির অধিকারিণী সুদর্শন যুবকটি তার নজর এড়াতে পারে না। কাউন্টারটা একেবারে ফাঁকা হতে মেয়েটি খবরের কাগজখানা টেনে নেয়। তখনই ঘনিয়ে আসে কৌশিক। বলে, এক্সকিউজ মি, আমাকে একটা খবর দিতে পারেন?

—বলুন? আপনাদের সেবা করতেই তো আমি আছি।

—মিস্ চিত্রলেখা ব্যানার্জি কি এই হোটেলে উঠেছেন?

মেয়েটি কোন রেজিস্টার দেখল না। নামটা তার স্মরণে ছিল। তৎক্ষণাৎ জবাব দিল, উঠেছেন। রুম নম্বর 315। ঘরেই আছেন। দেখা করতে চান?

কৌশিক শশব্যস্ত হয়ে ওঠে, না, না। নিশ্চয় না। সর্বনাশ!

মেয়েটির ওর ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। বলে, সে কী! কেন? দেখা করতেই তো এসেছেন? না কি?

কৌশিক তার জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলল, কীভাবে আপনাকে বোঝাব বুঝে উঠতে পারছি না। মানে ইয়ে আমাদের মধ্যে একটু মিস্-অ্যান্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েচে। ও রাগ করে এই হোটেলে এসে উঠেছে। আমি খোঁজ পেয়ে গেছি জানলে ও আবার হোটেল পালটাবে।

মেয়েটির মজা লাগে। জানতে চায়, মিস্‌ ব্যানার্জি আপনার আত্মীয়?

কৌশিক সলজ্জে বলে, এখনো হয়নি। নিকট আত্মীয়া যাতে হয় সেই চেষ্টাতেই তো প্রাণপাত করছি।

—তাই বুঝি? তা বাধাটা কোথায়?

কৌশিক চোখ বড় বড় করে বলে, বাধা এক ঝুড়ি। এক নম্বর : আমি বামুন নই। কায়েত দু-নম্বর : চিত্রার মা! তিনি আমাকে দু-চক্ষে দেখতে পারেন না।

—কিন্তু কেন? আপনি তো তেমন কুৎসিত নন?

—আপনিও তাই বললেন? চিত্রাও তাই বলে, আমি দেখতে ভালই। কিন্তু আমার রোজগার যে ডাক্তার গাঙ্গুলির মতো নয়

—ডাক্তার গাঙ্গুলিটি আবার কে?

—যার সঙ্গে চিত্রার মা চিত্রার বিয়ে দিতে চান। ডাক্তার গাঙ্গুলি কি হোটেলে এসেছিল? রোগা বেঁটে বিশ্রী দেখতে কালো …

মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে। বলে, তা তো আমি জানি না। তবে শিলিগুড়ির একজন ডাক্তারবাবুকে উনি ফোন করেছিলেন। মিস্ ব্যানার্জির কে এক আত্মীয় শিলিগুড়ির সরকারি বড় হাসপাতালে আছে সাম মিস্টার হরিসাধন অথবা হরিনারায়ণ বসু। চেনেন?

কৌশিককে স্বীকার করতে হয়, হ্যাঁ, চিনি বৈকি। কী হয়েছে হরির?

—ঠিক জানি না? মোটর অ্যাক্সিডেন্ট কেস। দু-দুবার এস. টি. ডি করেছেন মিস ব্যানার্জি। শিলিগুড়িতে। আমিই কল দুটো এস. টি. ডি.-তে বুক করি। তাই শুনেছি। ডাক্তারবাবু বলছিলেন হরিবাবুর এখনো জ্ঞান হয়নি। কেসটা খারাপের দিকে টার্ন নিতে পারে। আপনি মিস্ ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলবেন? হরিবাবুর ব্যাপারে? উনি ঘরেই আছেন।

—না, না! আমার কথা চিত্রাকে কিছু বলবেন না, প্লিজ। হরির কপালে যা আছে তাই হবে। আমি শুনে কী করব?

—হরিবাবু মিস্ ব্যানার্জির কে হন?

—ওদের গাড়ির ড্রাইভার। ধন্যবাদ। আমি চলি। চিত্রাকে আমার কথা কিছু বলবেন না তো?

—আপনি অত ভীতু কেন?

—এই দেখুন! আপনিও ঐ কথাটা বললেন?

—কেন? আমার আগে আর কেউ ওকথা বলেছে?

—বলেনি? হাজারবার বলেছে! বলে বলে আমাকে ভীতু বানিয়ে ছেড়েছে।

—কে?

—কে আবার? ঐ চিত্ৰাই!

রিসেপশনিস্ট খিলখিলিয়ে হেসে উঠতে গিয়ে বিষম খায়। কারণ তখনই এক বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন, কি ফর রুম নম্বর 212 প্লিজ।

রিসেপশনিস্ট বৃদ্ধকে চাবিটা দিয়ে এপাশ ফিরে দেখে— চিত্রলেখা ব্যানার্জির ভীরু প্রেমাস্পদ ইতিমধ্যে হাওয়া!