১
আজ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটল।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। টি.ভি.-তে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে।
রানু দেবী একাই শুনছেন। বাসুসাহেব আজ আদালতে যাননি। সারাদিন একটি বই পড়েছেন : ‘ম্যামাল্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড–ই. পি. ওয়াকারের লেখা। দুনিয়ার তাবৎ স্তন্যপায়ী জীবের বিষয়ে হঠাৎ কেন এই কৌতূহল বলা শক্ত। তবে ওঁর ধরনটাই ঐ রকম। ক্রমাগত বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে উত্তরণ। যেন জ্যাক অব অল ট্রেডস্’ হবার ব্রত নিয়ে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। সারাদিন বই মুখে বসে থাকাটা আবার বরদাস্ত হয়নি রানী দেবীর। তাই তাঁর তাড়নায় বিকালে একচক্কর ঘুরে এসে আবার গিয়ে বসেছেন লাইব্রেরি ঘরে।
কম্বাইন্ড-হ্যান্ড বিশে—এতদিনে সে প্রায় ‘পুরাতন ভৃত্য’ হতে বসেছে— নিঃশব্দে ওঁর নাগালের মধ্যে টিপয়ে সাজিয়ে দিয়ে গেল শ্যিভাস রিগ্যালের বোতল, বরফের টুকরো, কাজুবাদামের প্লেট, গ্লাস আর টংস। বাসু বইটা খুলে বসলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঁদ হয়ে গেলেন বইটাতে। কত বিচিত্র, কত অজানা জীবই না বিবর্তিত হয়েছে সূর্যের এই তৃতীয় গ্রহে
হঠাৎ দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হলেন রানী দেবী। তাঁর হুইল চেয়ারে পাক মেরে। বাসু চোখ তুলে দেখে বললেন, এটাই ফার্স্ট পেগ।
হেসে ফেলেন রানী। বলেন, তোমার পেগের হিসাব রাখতে আসিনি। যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোমার। অন্তত হিসাব করে হুইস্কি খেতে পারার মতো বয়স। আমি এসেছি অন্য একটা কথা বলতে—
—বল?
—একটি মেয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
—মক্কেল? এই অসময়ে? কী নাম?
—নাম বলেনি, বলতে চাইছে না। জানি না, তুমি ওকে মক্কেল বলে স্বীকার করে নিলে নাম ধাম জানাবে কি না।
—বয়স কত?
—ঠিক বলতে পারছি না। সতের-আঠারো-উনিশ-কুড়ি কিছু একটা হবে।
—না, তাহলে হবে না। সতের আর উনিশে অনেক ফারাক, আইনের চোখে। মোট কথা সাবালিকা তো?
—না, আমারই ভুল। সতের নয়। সাবালিকা সে নিশ্চয়ই।
—তাহলেই হল। সেক্ষেত্রে সংবাদটা ইন্টারকমের মাধ্যমে না জানিয়ে সশরীরে হাজিরা দেবার হেতুটা কী? বাই য়োর ওন অ্যাডমিশন, পেগের হিসাব রাখতে নয় যখন।
—হেতু আছে। একটা নয়, দুটো। প্রথমত একটা খবর তোমাকে জানানো দরকার, সেটা তোমার সঙ্গে ওর সাক্ষাতের আগেই। মেয়েটার সঙ্গে ছোট্ট একটা ভ্যানিটি ব্যাগ ছাড়াও আছে মাঝারি মাপের কালো রঙের একটা অ্যাটাচি কেস। সেটা থাক দেওয়া কারেন্সি নোটে বোঝাই।
—বল কী! কী করে জানলে?
—ও যখন আসে তখন আমি ভিতরের ঘরে বসে টিভি দেখছি। বিশু ওকে রিসেপশনে বসিয়ে আমাকে খবর দেয়। মেয়েটি বুঝতে পারেনি আমি একেবারে নিঃশব্দে আসব—পদশব্দ হবে না আমার হুইলচেয়ারে। আমি যখন ঘরের মাঝামাঝি এসে গেছি তখনই ও আমাকে দেখতে পায়। তাড়াহুড়ো করে অ্যাটাচি বন্ধ করে আমার দিকে তাকায়। ধরা পড়ে যাওয়ার চাহনি। তার আগেই আমি কিন্তু অ্যাটাচির ভিতরটা একনজর দেখে নিয়েছি।
—বুঝলাম। কত টাকা আছে ওর ব্যাগে? আন্দাজে কী মনে হল তোমার?
—তা কেমন করে বলব? পঞ্চাশ টাকার নোটের বান্ডিল মনে হল। পাশাপাশি থাক দেওয়া। কিন্তু সবটাই যে নোটের বান্ডিল তা নাও হতে পারে। হয়তো নিচের দিকে ওর শাড়ি- ব্লাউজ-তোয়ালে বা বই-পত্র আছে …
বাসুসাহেব মাথা নেড়ে বললেন, এটা তোমার ব্যারিস্টার-গৃহিণীর উপযুক্ত কথা হল না, রানু। সেক্ষেত্রে মেয়েটি নোটের বান্ডিল নিচে রেখে তোয়ালে চাপা দিত। তার উপর শাড়ি- ব্লাউজ, বই-পত্র সাজাতো। তাই নয়? যাতে ডালাটা খুললেই…
—তা বটে।
—সে যা হোক, তুমি তখন দুটো হেতুর কথা বলেছিলে। দ্বিতীয়টা?
—দ্বিতীয় হেতু—আশঙ্কা ছিল : তুমি যদি এই অবেলায় ওকে ফিরিয়ে দাও।
—হুঁ! নামধাম জানো না, কী বিপদ তা জান না, অথচ অর্থাভাব যে নেই তা জান, তবু দর্শনমাত্র ও তোমার মন জয় করেছে! মেয়েটি কি খুব সুন্দরী?
—না। তবে নিষ্পাপ সরল চেহারা। ভারি মিষ্টি দেখতে।
—শুধু তাতেই?
এবার রানীর নয়ন নত হল। মেদিনীনিবদ্ধ দৃষ্টিতে বললেন, হ্যাঁ, তাতেই। ওর বয়সটা যে…
মাঝপথেই থেমে গেলেন। বাসু কুঞ্চিতভ্রুভঙ্গে সওয়াল করেন, বয়সটা কী? সে তো আঠারো-উনিশ…
নতনেত্রেই নিম্নকণ্ঠে জবাব দিলেন রানী, এই হুইলচেয়ারটা যদি এ বাড়িতে আদৌ না আসত, তাহলে আজ ঐ বিশেষ বয়েসের একটি মেয়ে …
বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান বাসুসাহেব। দুহাতে রানীর দুটি বাহুমূল চেপে ধরে বলে ওঠেন, আয়াম সরি!
—না, না, এতে ‘সরি’ হবার কী আছে?
—আছে, রানু, আছে, এবার আমিই বোকার মতো প্রশ্নটা করে বসেছি। ব্যারিস্টার- গৃহিণীর স্বামীর উপযুক্ত নয় ঐ প্রশ্নটা। আমার আন্দাজ করা উচিত ছিল, কেন তোমার এই চঞ্চলতা*। চল যাই। দেখি মেয়েটি কী বিপদে পড়ে অসময়ে ছুটে এসেছে।
[*’মাছের কাঁটায়’ এ প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা আছে। প্রায় দশবছর আগে যে দুর্ঘটনায় রানী দেবী পঙ্গু হয়ে ধান, সেই দুর্ঘটনাতেই নিহত হয়েছিল এঁদের কিশোরী কন্যা, মিঠু : একমাত্র সন্তান।]
লাইব্রেরি ঘরে শ্যিভাস-রিগ্যালের বোতলটার পাদমূলে উবুড় হয়ে পড়ে থাকল এই দুনিয়ার যাবতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা একটি স্বাধিকার প্রমত্ত দ্বিপদী প্রজাতির উৎপীড়নে অবলুপ্তির মহানেপথ্যে ডোডো-ডাইনোসরদের সমগোত্রীয় হতে চলেছে। বাসুসাহেব তাঁর সহধর্মিণীর হুইলচেয়ারটা ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে চললেন বাইরের ঘরের দিকে। রিসেপশনের কাছাকাছি এসে রানীর চাকা-চেয়ারের পিঠ থেকে হাত দুটি সরিয়ে নিলেন। বললেন, যাও। ওকে পাঠিয়ে দাও।
চেম্বারে ঢুকে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। রানী চেয়ারে পাক মেরে এগিয়ে গেলেন রিসেপশন কাউন্টারের কাছে।
একটু পরেই বাইরের দিক থেকে ঘরে ঢুকল একটি তরুণী। ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন রানী বছর বিশেকের কাছাকাছি তার বয়স।
হালকা কোবাল্ট-ব্লু রঙের সিন্থেটিক শাড়ি, সঙ্গে একই রঙের ম্যাচ করা হাফ হাতা ব্লাউজ! ঐ রঙেরই টিপ, দুল এবং গলায় হারের লকেট। এত খুঁটিয়ে সচরাচর দেখেন না বাসুসাহেব মেয়েদের সাজপোশাক। আজ ওকে দেখেই ওঁর মনে পড়ে গেল মেয়েটি গেইন্সবরোর ব্লু-বয়-এর স্ত্রীয়াম-ঈপ ‘ব্লু-গার্ল!’
তাই এত খুঁটিয়ে দেখা
বাসুর নির্দেশে মেয়েটি দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট একটি চেয়ার দখল করে বসল। অ্যাটাচি পাশে নামিয়ে রাখল না। রাখল কোলের উপর।
বাসু বলেন, বল মা, আমি কী ভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?
কীভাবে শুরু করবে ও বোধহয় স্থির করে উঠতে পারছিল না। হঠাৎ মনস্থির করে বলে ওঠে, দেখুন, একটি বিশেষ কারণে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে চাই। আমি চাই না আমার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব…
বাক্যটা ওর শেষ হয় না। বাসু মাঝপথেই বলে ওঠেন, ‘নিরুদ্দেশ’ না ‘নিখোঁজ’?
—আজ্ঞে?
—‘নিরুদ্দেশ’ মানে উদ্দেশবিহীন। বাউণ্ডুলের মতো। ‘ক্ষ্যাপা’ যেমন পরশ পাথর খুঁজে ফিরত ঠিক সে ভাবে নয়, কারণ ক্ষ্যাপার লক্ষ্য ছিল স্থির— পরশ পাথর! তুমি বোধহয় বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ‘নিখোঁজ’ হতে চাইছ, ‘নিরুদ্দেশ’ নয়,—ঐ যাদের ফটো টি.ভি.-তে দেখানো হয়, ভবানীভবনের মিসিং স্কোয়াডে খবর দেবার আবেদন জানিয়ে। তাই নয়?
জবাবে মেয়েটি যা বলল তা ভিন্ন প্রসঙ্গ : এক গ্লাস জল খাব।
—খাবে নয়, পান করবে। জলটা খাদ্য নয়। … দিচ্ছি।
বেলের আওয়াজ শুনে বিশু এল। পরক্ষণেই আদেশমতো নিয়ে এল এক গ্লাস জল। রানী দেবীর ট্রেনিঙে কায়দামাফিক অর্থাৎ নিচে ট্রে, উপরে ডিশ দিয়ে ঢাকা। মেয়েটির শুকিয়ে ওঠা কণ্ঠনালী স্বাভাবিক হবার পর বাসু প্রশ্ন করেন :
—কী নাম?
—কার? আমার?
—না তো কি যার আতঙ্কে নিখোঁজ হতে চাইছ, তার?
মেয়েটি নতনয়নে বললে, আমার নামটা জানাতে অসুবিধা আছে …
—তা তো হতেই পারে। সেক্ষেত্রে তোমাকে মক্কেল বলে মেনে নিতে আমারও অসুবিধা আছে। তুমি এস মা,—
মেয়েটি রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়। বলে, আমার আশঙ্কা ছিলই ক্লায়েন্টের নাম-ঠিকানা জানা না থাকলে আপনি আমার কেস নেবেন না। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন স্যার, আমি যদি শিখা দত্তের মতো একটা বানানো নাম-ঠিকানা আপনাকে দিতাম তাহলে আপনি নিশ্চয় আমার কাছ থেকে একটা ‘রিটেইনার’ নিতেন। মক্কেল বলে স্বীকার করতেন? তারপর মিথ্যে নাম- ঠিকানার জন্য সময় নষ্ট করতেন।
—শিখা দত্ত কে? কার কথা বলছ?
—বাঃ! ছন্দা রায়, ‘কৌতূহলী কনের কাঁটার।’
বাসুকে মনে মনে স্বীকার করতে হল, মেয়েটি সওয়াল-জবাবে পোক্ত। প্রথম ওভারের ইন- সুইঙ্গারে ঘাবড়ে গেছিল বটে কিন্তু আনাড়ী ‘ব্যাটস্ ও-ম্যান’ নয়।
বললেন, অল রাইট। বল, কী তোমার বিপদ?
—বিশ্বাস করুন স্যার, আমি কোনও অন্যায় করিনি, —না ধর্মত, না আইনত। কিন্তু বিশেষ কারণে কোন একজন ধুরন্ধর লোক আমাকে ফাঁদে ফেলতে চাইছে। আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইছে …..
পুলিশে তোমাকে ধরতে পারে কোনও একটি বিশেষ অপরাধের চার্জে। তা তুমি সেটা করে থাক, বা নাই কর। অপরাধটা কী জাতীয় তা আন্দাজ করতে পারছ?
—ধরুন খুন।
—‘ধরুন খুন’? তার মানে পুলিশে তোমাকে কোন্ অপরাধের আসামী হিসাবে খুঁজছে, তাও তুমি জান না? কোনো অপরাধ আদৌ সংঘটিত হয়েছে কি না সেটুকু অন্তত জান কি?
—আজ্ঞে না।
—সেটা ‘এম্বেজমেন্ট’ হতে পারে কি?
—মানে?
—‘Embezzlement’ বোঝ না? ‘কালো বাংলায় যাকে বলে তহবিল তছরুপ?
—কালো বাংলায়?
হ্যাঁ তাই। ‘তহবিল তছরুপ’ করলে যে টাকা হাতে আসে তা ব্যাঙ্কে ডিপজিট করা যায় না। অ্যাটাচি কেস বোঝাই করে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হয়। সেটা কালো’ টাকা। তাই ‘এম্বেজমেন্টের’ বঙ্গানুবাদ শাদা বাংলায় হয় না। যতক্ষণ সেটা তহবিলে আছে, ততক্ষণ সেটা শাদা, তছরুপ হয়ে গেলেই কালো।
মেয়েটি নতনয়নে বললে, একবার বলেছি, আবারও বলি, আমি জ্ঞানত-অজ্ঞানত কোন অন্যায়, পাপ বা আইনত কোন অপরাধ করিনি। আমি শুধু আমার অত্যন্ত প্রিয় একজনকে বিপদ থেকে বাঁচাতে চাইছি। নিশ্চয়ই সেটা পাপ কাজ নয়, অপরাধ নয়।
—তার মানে তোমার সেই অত্যন্ত প্রিয়জনটি কিছু একটা অপরাধ করেছে? খুন, চুরি, বা তহবিল তছরুপ?
—আমি তা বলিনি, কারণ আমি তা এখনো জানি না। আমার পিছনে যে অদৃশ্য শয়তানী শক্তি কাজ করে চলেছে, আমার বিশ্বাস তার পিছনেও সেই অশুভ শক্তি একই উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে …
—অল রাইট। তুমি আমার কাছে কী জাতীয় সাহায্য চাইছ?
—আমার যষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, আমি অবিলম্বেই কোনও একটা ফাঁদে পড়ে যাব। আমাকে পুলিশে গ্রেপ্তার করবে। তৎক্ষণাৎ আমি আপনার সাহায্য চাইব। তাই কিছু অগ্রিম ‘রিটেইনার দিয়ে যেতে চাই। মিথ্যা অভিযোগে, মানে ওদের শয়তানীতে যদি ধরা পড়ি তখন যেন বলতে পারি আপনি আমার অ্যাটর্নি। আপনার অনুপস্থিতিতে কারও কোন প্রশ্নের জবাব আমি দেব না।
বাসু জানতে চান, তুমি বিবাহিত?
—না, স্যার।
—তা তুমি আমার সাহায্য যখন টেলিফোনে চাইবে তখন আমি কেমন করে বুঝব যে, তুমিই টেলিফোনের ও প্রান্তে আছে? তোমার গলার স্বর টেলিফোনে কেমন শোনায় তাও তো আমি জানি না।
মেয়েটি বললে, ঠিক আছে। একটা সঙ্কেত’ বা ‘কোড নম্বর’ দিয়ে আমি আমার পরিচয় দেব।
—কী কোড নম্বর?—
— ছত্রিশ-চব্বিশ-ছত্রিশ!
—হঠাৎ এমন একটা অদ্ভুত নম্বর?
মেয়েটি নতনয়নে বললে, ওটা আমার ভাইটাল স্ট্যাটিটিক্স।
বাসুসাহেব এপাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলেন। রানী তাঁর ইনভ্যালিড চেয়ারে কথোপকথনের নোট রেখে যাচ্ছেন। তাঁর কোনও ভাবান্তর হল না। স্বামীর সঙ্গে চোখাচোখি পর্যন্ত হল না।
বাসুসাহেব মেয়েটিকে বললেন, সচরাচর এমন শর্তে আমি কোন মক্কেলের কাছে ‘রিটেইনার’ গ্রহণ করি না। কিন্তু একটি ব্যতিক্রমক্ষেত্র হিসাবে তুমি একশ টাকা জমা দিয়ে যেতে পার। তোমার কোড নম্বরে আহ্বান পেলে আমি হাজতে গিয়ে তোমার কথা শুনব।
মেয়েটি কালো অ্যাটাচিটায় হাত দিল না। ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে একটা পঞ্চাশ টাকার বান্ডিল বার করে দুখানি নোট বাড়িয়ে ধরে।
বাসু বলেন, রসিদটা কী নামে হবে? ছত্রিশ-চব্বিশ-ছত্রিশ?
মেয়েটি লজ্জা পেল। বললে, রসিদের প্রয়োজন নেই।
—তোমার না থাকলেও আমার আছে। আইনের প্রয়োজনে, ইনকাম ট্যাক্সের প্রয়োজনে। ঠিক আছে, নামটা যখন জানব তখন কাউন্টার-ফয়েলে বসিয়ে দেব।
মেয়েটি উঠে দাঁড়ায়। বলে, আপনি আমাকে নিশ্চিত্ত করলেন স্যার। আপনার কীর্তি-কাহিনী ‘কাঁটা সিরিজ’-এর কল্যাণে আমার ভালভাবেই জানা ছিল। আপনাকে ধন্যবাদ আমি দেব না, তবে একটা প্রণাম করব।
মেয়েটি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তেই বাসুসাহেব ঠ্যাঙ-জোড়া টেনে নিলেন। বললেন, অজ্ঞাতকুলশীলার রিটেইনার নেওয়া যায়। কিন্তু প্রণাম নেওয়া যায় না মা। তোমার পরিচয়টা যেদিন পাব প্রণামটাও সেদিন নেব।
মেয়েটি এক মুহূর্ত ইতস্তত করল। মনে হল সে আহত হয়েছে! তারপর দুহাত তুলে দুজনকে নমস্কার করে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল ওঁর টেবিলের ওপর দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট নামিয়ে দিয়ে।
বাসুসাহেবের লক্ষ্য হল—এতক্ষণে তাঁর ধর্মপত্নী নোটবই বন্ধ করে ওঁর দিকে তাকিয়েছেন। তখন বললেন : কী বুঝছ? কতটা সত্যি, কতটা ভেজাল?
রানী নির্বিকারভাবে বললেন, শেষ দুটো সত্যি, প্রথমটা ভেজাল!
—তার মানে?
— তার মানে কোড নাম্বারটা ওর নিজের ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স নয়।