আমার সকল শব্দছন্দ আজকাল সারাক্ষণ
তোমার নিবাসে ধরনা দেয়, বসে থাকে
সিঁড়তে অথবা
ঘরের চোকাঠে নগ্ন হাঁটুতে চিবুক রেখে, কখনো হঠাৎ
সাজানো ড্রইং রুমে ঢুকে পড়ে, কখনো শোবার ঘরে আর
নীলচে চিরুনি তুলে নিয়ে চুল আঁচড়ায়, তোমার বালিশে
খুব ঝুঁকে কুস্তুরীর ঘ্রাণ নিতে চায়,
কী ব্যাকুল খোঁজে
সদ্য শাড়ি পরা রাঙা তোমার কৈশোর। ছুঁতে চায়
তাকে,যে তোমার মধ্যে অন্তরালে আছে
সবুজ পাতার ভিড়ে মুখ
লুকিয়ে, ভোরের কুয়াশায় মিশে সুদূর উদ্যানে।
ইদানীং প্রেমের কবিতা লিখি বলে শক্রপক্ষ ঢাক ঢোল
করতাল বাজিয়ে খুব উৎসব মুখর
মেথর পট্রির নরনারীদের মতো গোল করে,
এমনকি প্রিয়তম বন্ধু বলে, ‘বড় বাড়াবাড়ি
হয়ে যাচ্ছে; এখন তোমার শব্দাবলী
শুধু একজন রমণীর চতুর্দিকে ভ্রমরের মতো ওড়ে
এবং “তোমাকে মনে হয় ভিক্ষু কোনো, যে কখনো
এক মুঠো চাল কিম্বা দশ পয়সা নয়,
নিবিড় অঞ্জলি পেতে প্রহরে প্রহরে ভিক্ষা চায় ভালোবাসা
বরং এখন তুমি চন্দ্রমল্লিকাকে কাছে ডাকো,
জ্যোৎস্নাঝলসিত
মধ্যরাতে জলকন্যাদের গান শোনো কান পেতে। সেই সুর
গহীন গাঙের ঢেউদের কম্পমান তরুণীর মতো
তরণীর দোলা কবিতার পর্বে পর্বে জুড়ে দাও।
তাহলে কী করি? তুমিহীন এক দণ্ড
চলে না আমার আর না গেলে তোমার কাছে শুধু
মনে হয়, এক্ষুনি ভীষণ ভূমিকম্প হবে আর
লাভা স্রোতে ভেসে যাবো, আমার কংকাল
কোথাও থাকবে পড়ে বিপুল ধ্বংসের ভস্মীভূত
বনকুসুমের পাশে। লোকটা কে ছিল জানবে না
কেউ কোনো দিন আর; সে কি
ছুঁয়েছিল কারো হাত অথবা অধর?
যদি আমি না লিখি প্রেমের পদাবলী, ঘাট থেকে
নৌকা ছাড়বে না,
গাংচিল ছড়িয়ে ডানা নদীর ঢেউয়ের
ডগা ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়বে না, কোকিলেরা
ভুলে যাবে গান, কোনো রমণীর কাছে
কোনো পুরুষকে মানবে না আর, ‘চলন্তিকা’ থেকে
ভালোবাসা নামক শব্দটি
প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাবে মেঘময় নিরুদ্দেশে।
জনক জননী
শিশুর মাথায় ঘ্রাণ নেবে না কখনো।
তখন মানুষ বদ্ধ জলাশয়ে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে
এ ওর গলায় গেঁথে দেবে
জহর মেশানো ছোরা আর দলে দলে অন্ধ আতঙ্কের চাপে
ব্যাপক আগুনে দেবে ঝাঁপ।