যদি কেউ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়
এখন আমার দিকে, ‘বলো, তুমি কী বলতে চাও
আজকের জন সমাবেশে? এ দেশের
প্রতি কতটুকু ভালবাসা রেখেছ সঞ্চিত বুকে,
দিতে হবে তার
বিশদ প্রমাণ’, আমি রাঙা ধুলো ওড়া
পথ, গাছে চুপ ব’সে থাকা বাদামি পাখির দিকে
কেবল ছড়িয়ে দেবো বৃষ্টি, থাকব নিরুত্তর, একা।
ধানশীষ, প্রবাসী স্বামীর জন্যে রমণীর গাঢ় মমতার
মতো টলটলে দিঘি, পানি ছুঁই ছুঁই
ডাল ছেড়ে চকিতে উড্ডীন মাছরাঙা,
সন্ধ্যায় নির্জন ঘাটে মাঝিহীন নৌকোর গলুই, গোধূলিতে
নিঝুম লাঙল কাঁধে কৃষকের ঘরে-ফেরা, রাত্রির কুটিরে
কুপির আলোয় রাঙা কৃষাণীর মুখ,
কিশোরগঞ্জের পথে গাড়ি থেকে দেখে নেওয়া ছায়াচ্ছন্ন পানের বরজ
আমার হৃদয়ে তোলে ঢেউ আজ, এই বয়সেও।
শহরের ফ্ল্যাটের চূড়ায়
জেগে-থাকা পূর্ণ চাঁদ শোনায় পাঁচালি
শ্বেত স্তব্ধতার;
পিচের মসৃণ পথে গড়ানো কাগজ মধ্যরাতে,
এবং উদ্ভিন্ন রাধাচূড়া
কুণ্ঠিত গলিকে দেয় অন্য মানে। বাণিজ্যিক কোলাহল থেমে
গেলে মধ্যত্তির ঘরে ক্যাসেট প্লেয়ার থেকে ঝরে
সরোদের সুর আর ডাগর দুপুরে
বারান্দায় পড়ে থাকে সদ্য যৌবনের মতো, বন্দনীয় পলাশের লাল,
পথে আঁকা ডালিম গাছের ছায়া, দেখি
চোখ ভ’রে। এখন কোথায় যাব? দূরবর্তী মেঘমালা আমাকে বানায়
রাখাল নিভৃতে মাসোহারা ছাড়া, পথ থেকে পথে
চরাই স্বপ্নের পাল। থাক,
আর কোনও কথা নয়, স্বদেশ প্রেমের প্রতিযোগিতায় এই নিভন্ত বেলায়
খেলোয়াড়ি ভঙ্গিমায় চাপিয়ে রঙিন জার্সি গায়ে
মুখর পংক্তিতে দাঁড়াবার সাধ নেই, বিশেযত
যখন নিয়ত শুনি ভন্ড ভক্ত মন্ডলীর
বেলেল্লা আসরে
হে স্বদেশ, তোমার উদ্দেশে টগবগ ক’রে ফোটে
স্তুতির বুদ্বুদ।
ওদের বন্দনা থেকে শুধু অশ্লীলতা ভেজাল তেলের মতো
চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে; ইচ্ছে হয়, বমি ক’রে ফেলি।
সে ভিড়ে আমার কোনো ভূমিকা থাকার
কথা নয়, আমি শুধু একা-একা কাকডাকা ভোরে,
নির্ঘুম রাত্তিরে
করে যাব অক্ষরের চাষ, হে স্বদেশ,
কিল, ঘুষি, লাথি যত খেতে হয় খাব,
তুমি এই অভাগার মাথায় নিভৃতে
রেখ হাত, তোমার গভীর নেত্রপাত
ঝরাক অমেয় স্নেহধারা।
৪।৭।৯১