প্রায়শ আমার স্বপ্নে একটি ময়ূরপঙ্খী নাও
ভেসে ওঠে কুয়াশায়। মাঝে মাঝে সে কোন্ ঘাটের
স্মৃতি পাটাতনে
কেমন ক্রন্দন করে, যেন শিশু ঘুমের ভেতর। কখনো বা
কিছু ছায়া সোনালি ময়ূরপঙ্খী নায়ে
হাঁটে, ঘোরে, নাচে দলে দলে।
দীর্ঘকায় সুকান্ত সারেঙ, চোখ যাঁর
মুক্তির আলোয় স্নাত, প্রবল ধরেন হাল, উত্তাল ঢেউয়ের
আঘাতে ময়ূরপঙ্খী নাও
কম্পমান ক্ষণে ক্ষণে। তবু তিনি গন্তব্য সন্ধানে
অবিচল মাল্লাদের নিয়ে এবং চৌদিকে তার
অমরতা গুঞ্জরিত স্বর্ণবর্ণ ভ্রমরের মতো।
কে এক তিরিক্ষি দাঁড়কাক অগোচরে
ঠাম মাস্তুলে বসে, ঠোকরায় পাল, মাঝে মাঝে
চিৎকারে বিদীর্ণ করে হাওয়া। কতিপয়
বিশ্বাসঘাতক আততায়ী ষড়যন্ত্রে মেতে
হঠাৎ হরণ করে সারেঙের প্রাণ। দিগ্ভ্রান্ত
জলযান ঘূর্ণাবর্তে পড়ে
হতে চায় খান খান। কুমন্ত্রণা, কুহকের
আমন্ত্রণ ময়ূরপঙ্খী নাওটিকে কত ভুল ঘাটে
নিয়ে যায়। আখেরে নকল সারেঙের
কাল শেষ হলে
বিক্ষুব্ধ তরঙ্গে টালমাটাল নায়ের হাল ধরে
মনোনীতা সাহসিকা বাঙালি মানবী একজন।
সুবাতাস পাগুক নতুন পালে, মানবীর মাথায় ঝরুক
নিহত সুকান্ত সারেঙের
স্নেহের শিশির আর মাঝিমাল্লা, যাত্রীদের গানে
ময়ূরপঙ্খীটি যাক নতুন পানির স্রোত কেটে।