সতেরো
আমি একেনবাবুকে বললাম, “আপনি যে মশাই লুকিয়ে লুকিয়ে এত তদন্ত চালাচ্ছেন, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারি নি! কবে আপনাকে দায়িত্বটা দেওয়া হল?”
“প্রথম দিন থেকেই স্যার। মনে আছে, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমাকে আলাদা জেরা করতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন?”
“নিশ্চয় মনে আছে। কিন্তু তখন কি আর বুঝেছি কেন! ভালোকথা, হঠাৎ শৈলেন সাঁপুইকে সন্দেহ করলেন কেন?”
“শৈলেন সাঁপুই এমনিতেই একটা শেডি ক্যারেক্টার স্যার। আপনি তো ওঁর অফিসের বহর দেখেছেন। বলুন তো, একটা লোক শুধু অ্যাস্ট্রলজি করে এত টাকা রোজগার করে কি করে? তবে এই কেসে, আমার প্রথম খটকাটা লেগেছিল স্যার, আপনি যখন মিস্টার প্যাটেলের মৃত্যুর খবরটা ওঁকে জানালেন। এমনিতে উনি ভাব দেখান যে, পাস্ট ফিউচার সব কিছুই ওঁর জানা, অর্থাৎ না-জেনেও জানার ভাব করেন। ওঁর উচিত ছিল খবরটা শুনে সবজান্তার মত দুঃখ প্রকাশ করা। কিন্তু গিল্টি কনসান্স যাবে কোথায়! জেনে না-জানার ভান করতে গিয়ে একটু বেশি-বেশি আশ্চর্য ভাব দেখাচ্ছিলেন!
“তাই থেকেই!”
“আসলে স্যার, আমি সবাইকেই সন্দেহ করি, তারপর এক এক করে প্রত্যেকের সঙ্গে ঘটনাগুলো মেলাতে থাকি। আমি চিন্তা করছিলাম এই ‘বস’ লোকটি কে হতে পারে? যিনি এই ‘বস’ তিনিই সম্ভবত মিস্টার ভারওয়ানিকে গাড়ি ধাক্কা দিয়ে মেরেছেন। মিস্টার ভারওয়ানি তাঁকে ডিঙিয়ে মিস্টার প্যাটেলের সঙ্গে ডিল করছেন – সেটা উনি সহ্য করতে পারেন নি। এদিকে মিস্টার প্যাটেল অদৃশ্য হয়েছেন। মুনরকগুলো হয়তো এখন মিস্টার প্যাটেলের কাছে। তার থেকেও চিন্তার কথা, মুনরক চুরিতে ওঁর ভূমিকাটা কি – সেটাও হয়তো মিস্টার প্যাটেল জেনে ফেলেছেন! একটা ভূমিকা যে ওঁর ছিল সেটা তো আমরা জো-র কাছেই শুনেছি। আমার বিশ্বাস উনি চান্স নিতে চান নি। মুনরক পাওয়া যাক বা না যাক, মিস্টার প্যাটেলকে সরাতে হবে। এখন মিস্টার প্যাটেল যে এখানে লুকিয়ে আছেন, মাত্র গুটিকতক লোকই সেটা জানতেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মিস্টার সাঁপুই। উনি অবিনাশবাবুর খোঁজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই মিস্টার প্যাটেলের হদিশ জেনে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন, উনি অবিনাশবাবুর খোঁজ করছিলেন কেন? আমার ধারণা মিস্টার প্যাটেল কোথায় আছেন সেটা জানতেই। এইবার মেলান স্যার। মিস্টার সাঁপুইয়ের গাড়ির বাম্পার হরিণের ধাক্কায় ড্যামেজ হয়েছে। সত্যি কি হরিণের ধাক্কায়, না মিস্টার ভারওয়ানিকে ধাক্কা দেবার ফল? উনি ঐ বাম্পার সারানো নিয়ে ইন্সিওরেন্সের সঙ্গেও ডিল করেন নি – পাছে নানান প্রশ্ন ওঠে। তারপর দেখুন মিস্টার সাঁপুইয়ের অফিস শুক্রবার বন্ধ থাকে, সুতরাং তাঁর পক্ষে নিয়মিত পিঙ্ক এলিফ্যান্টে যাওয়াতে কোনও অসুবিধাই নেই। কিন্তু আসল ক্লু পেলাম স্যার, ক্রস পেনটা থেকে। ক্রস পেনটায় লিখতে গিয়ে দেখি লেখা ভাল পড়ছে না। তখন মনে হল, মিস্টার সাঁপুই প্রথম দিন যে-কাগজটা দিয়ে ভেলকি দেখিয়েছিলেন, সেটা একটু পরীক্ষা করি। ঠিক যা ভেবেছি! ইংরেজি চারের শুঁড়টা ছিল ঠিকই, কিন্তু কালি ভাল মত পড়েনি বলে, সেদিন রাত্রে অল্প আলোয় খেয়াল করি নি। দিনের আলোয় পরিষ্কার চেখে পড়ল বল পয়েণ্টের আঁচড়টা। তখন নিঃসন্দেহ হলাম স্যার – বস আর মিস্টার সাঁপুই একই লোক।”
“সবই বুঝলাম,” প্রমথ বলল, “কিন্তু মুনরকগুলো কোথায় গেল?”
“সব স্যার স্মিথসোনিয়ানে ফিরে গেছে। সহদেব বিপদ হতে পারে বুঝে ওঁর ক্যাকটাস গাছের পাথরের সঙ্গে ওগুলো মিশিয়ে টবটা জো-র কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। এক্সেলেণ্ট মুভ স্যার। সকলের চোখের সামনে, আবার সকলের চোখের বাইরে! যেই ধরতে পারলাম, ব্যাপারটা মুনরক নিয়ে, তখনই ক্যাকটাস গাছের রহস্যটা পরিষ্কার হয়ে গেল!”
“আপনি মশাই মহা ধড়িবাজ লোক!” আমি বললাম।
“কেন স্যার?”
“সেদিন তো শৈলেন শাঁপুইয়ের ম্যাজিক দেখে খুব আহা, বাহা, করছিলেন। ওটা যে ভাঁওতা, ফিউচার প্রেডিকশনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, সেটা তো একবারও ওঁকে বলেন নি!”
একেনবাবু উত্তরে একটু লাজুক হাসলেন।
শেষ