ম্যানহাটানে মিস্ত্রি মার্ডার – ৯

দিলীপ কাপাদিয়া তাঁর দলবল নিয়ে বেশ সকাল সকালই এলেন। সঙ্গে দু-দুটো ভিডিয়ো ক্যামেরা, সাউন্ড রেকর্ডার, নানান সাইজের লাইট, রিফ্লেক্টর, ফিল্টার, ইত্যাদি বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে! মুহূর্তের মধ্যে বাইরের ঘরে আর তিল ধারণের জায়গা রইল না। একেনবাবু রেডি হয়েই ছিলেন। প্রমথের বকুনি খেয়ে ঘিয়ে কোটটা আজ পরেননি, তার বদলে বেঢপ সাইজের ফিকে নীল হাত কাটা সোয়েটার। বোঝা যায় খুবই আনাড়ি হাতের কাজ। প্রমথ একটা নির্দয় মন্তব্য করতে গিয়েছিল, ভাগ্যিস করেনি! কথায় কথায় বেরিয়ে গেল ওটা একেনবউদির নিজের হাতে বোনা! 

একেনবাবু বেশ গর্ব গর্ব মুখ করেই সোফায় বসেছিলেন। কফি টেবিলের অন্যদিকে দিলীপ কাপাদিয়া। 

“আপনি রেডি?” দিলীপ কাপাদিয়া জিজ্ঞেস করলেন। 

“হ্যাঁ স্যার।”

কেউ একজন হুকুম দিলেন, “চুপ, সবাই চুপ।” তারপর শুনলাম ‘লাইট’, ‘সাউন্ড’, ‘ক্যামেরা’ ইত্যাদি কয়েকটা কথা। একেনবাবুরা যেখানে বসেছেন জায়গাটা হঠাৎ আলোয় আলোকিত। যেই চোখে আলো পড়ল আড়ষ্ট হয়ে একেনবাবুর চোখ পিটপিট শুরু হল। দিলীপ কাপাদিয়া এত আলোর মধ্যেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। খুব সহজ ভঙ্গিতে মুনস্টোন মিস্ট্রি ছাড়াও দেশের কয়েকটা কেস নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন। প্রথম দিকের জড়তা কাটিয়ে একেনবাবু দিব্যি উত্তর দিলেন। দিলীপ কাপাদিয়া তখন জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা মিস্টার সেন, আপনার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং কেস কোনটা?”

একেনবাবু ঘাড় চুলকে বললেন, “কে জানে স্যার, আমার কাছে কেস মাত্রই ইন্টারেস্টিং। ধরুন, এখন যে কেসটা করছি সেটা তো নিঃসন্দেহে খুবই ইন্টারেস্টিং।”

“কোন কেস?”

“বল্লভ শাহের মৃত্যুর তদন্ত।”

“ওটা আপনি করছেন?”

“ঠিক আমি না স্যার… তবে পুলিশকে একটু সাহায্য করছি।”

“আমাদের দেশে হয়তো অনেকে জানেন না,” দিলীপ কাপাদিয়া ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে টিভির শ্রোতাদের উদ্দেশে বললেন, “নিউ ইয়র্কের ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি পরিচিত মুখ ছিলেন মিস্টার বল্লভ শাহ। রেস্টুরেন্ট বিজনেসে মিস্টার শাহ মাত্র আট বছরের মধ্যে অসামান্য সাফল্য লাভ করেছিলেন। এই প্রোগ্রামে ওঁর একটা পরিচিতি দেবার পরিকল্পনাও আমার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শুটিং শুরু হবার মাত্র কয়েক দিন আগে কোনো এক আততায়ীর হাতে ওঁর মৃত্যু ঘটে। এই কেসটা সমাধান করতে মিস্টার সেন নিউ ইয়র্ক পুলিশকে সাহায্য করছেন এবং এর মধ্যেই ডক্টর আনন্দ শর্মা নামে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।” কথাগুলো বলে দিলীপ কাপাদিয়া একেনবাবুর দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলেন, “এবার বলুন মিস্টার সেন, কেন এই কেসটা আপনার কাছে এত ইন্টারেস্টিং লাগছে?”

এতক্ষণে একেনবাবু মনে হল একটু স্বাভাবিক হয়েছেন। ওঁর নর্মাল স্টাইলে ঘাড় ঘষতে ঘষতে বললেন, “কারণ খুব সিম্পল স্যার, আই থিংক উই কট দ্য রং পার্সন।”

“রং পার্সন?” দিলীপ কাপাদিয়া হতভম্ব হয়ে প্রশ্নটা করলেন। 

“হ্যাঁ স্যার, রং পার্সন। আমার বিশ্বাস ডক্টর শর্মা আসল খুনি নন। “দ্যাটস ইন্টারেস্টিং! কুড ইউ এক্সপ্লেইন দ্যাট?”

“এই ক্যামেরার সামনে স্যার! আর এটা তো আমার অনুমান, পুলিশের নয়!”

বুঝলাম এটা নিয়ে কিছু বলা একেনবাবুর একেবারেই মনঃপূত নয়। কিন্তু দিলীপ কাপাদিয়া পাত্তা দিলেন না। বললেন, “হোয়াই নট? এটা আপনার ইন্টারভিউ, আপনার কথা শোনার জন্যেই তো এখানে আসা!”

একেনবাবু কয়েক মুহূর্ত কী জানি ভাবলেন। তারপর বললেন, “ঠিক আছে স্যার, বলছি। কিন্তু তার আগে স্যার আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, মানুষ মানুষকে খুন করে কেন?”

“আর ইউ আস্কিং মি?” দিলীপ কাপাদিয়া কপট বিস্ময়ে প্রশ্নটা করলেন।

একেনবাবু অনেক সময়েই ঠাট্টা ধরতে পারেন না। সিরিয়াস মুখে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ স্যার।”

“ওয়েল, আমি আপনার মতো ক্রাইম এক্সপার্ট নই। বাট আই ক্যান থিংক অফ এ নাম্বার অফ রিজনস… ওটা ক্রাইম অফ প্যাশন হতে পারে অথবা টাকা, সম্পত্তি, পলিটিক্যাল মোটিভ, রিভেঞ্জ — অনেক কিছুই পেছনে থাকা সম্ভব।”

“দ্যাটস, এনাফ স্যার।” একেনবাবু মিস্টার কাপাদিয়াকে থামিয়ে বললেন, “এবার খেয়াল করুন স্যার, এই প্রত্যেকটা কারণের পেছনে একটা কমন পয়েন্ট আছে।”

“আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড। 

“লেট মি এক্সপ্লেইন স্যার। কমন পয়েন্ট হল প্রত্যেকটিই ভিক্টিম সংক্রান্ত। অর্থাৎ, লোকটাকে হত্যা করা হয়েছে কারণ লোকটার সম্পত্তি কারও হাতে আসবে, পলিটিক্যালি কেউ লাভবান হবে, লোকটা কোনো ক্ষতি করেছিল— তার প্রতিশোধ নিতে। বুঝতে পারছেন স্যার, কী বলতে চাচ্ছি?”

“আই থিংক সো। কিন্তু বুঝতে পারছি না, আপনার পয়েন্টটা কী!”

“পয়েন্টে আসছি স্যার। কিন্তু তার আগে কাইন্ডলি আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিন। ডক্টর শর্মার খুন করার মোটিভটা কী?”

“আই ক্যান ওনলি স্পেকুলেট মিস্টার সেন।” দিলীপ কাপাদিয়া গম্ভীরভাবে বললেন। “বাজারে গুজব আছে মিস্টার শাহ বহু লোককে ঠকিয়ে ওঁর বিজনেসটা এত বড়ো করেছেন। ইট ইজ পসিবল ডক্টর শর্মাও ওঁর ভিক্টিম হয়েছিলেন। এটা সেই ক্ষতির প্রতিশোধ নেওয়া। “

“ঠিক স্যার, অবশ্যই সেটা হতে পারে। তবে আরেকটা সম্ভাবনাও উপেক্ষা করতে পারি না!”

“আরেকটা সম্ভাবনা?” দিলীপ কাপাদিয়া অবাক হয়ে একেনবাবুর দিকে তাকালেন। 

“হ্যাঁ স্যার। ধরুন, মিস্টার শাহকে যিনি মার্ডার করেছেন তাঁর সঙ্গে মিস্টার শাহের কোনো সম্পর্কই নেই। সেক্ষেত্রে মিস্টার শাহের সঙ্গে কার সম্পর্ক খারাপ বিচার করে খুনী ধরতে গেলে বিরাট ভুল হয়ে যাবে।”

“বুঝলাম না কী বলতে চাচ্ছেন!” মুখ দেখে বুঝলাম এরকম একটা অর্থহীন কথা যে একেনবাবু বলতে পারেন, উনি কল্পনাও করেননি! 

শুধু দিলীপ কাপাদিয়া নয়, আমিও একেনবাবুর বক্তব্যের মাথামুণ্ডু খুঁজে পেলাম না। 

“সেই জন্যেই কেসটা এত ইন্টারেস্টিং স্যার। আমার ধারণা ডক্টর শৰ্মা, অর্থাৎ যাঁকে খুনী বলে সাজানো হয়েছে, তাঁর মৃত্যুদণ্ড বা জেল হলে যাঁর লাভ, তিনিই হচ্ছেন আসল হত্যাকারী। বল্লভ শাহের খুন হবার একমাত্র কারণ হল সেটাই।”

“দাঁড়ান, মিস্টার সেন। আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন ডক্টর শর্মার বল্লভ শাহকে মারার কোনো মোটিভ বা কোনো সুযোগ ছিল না? নাকি ওঁর কোনো অ্যালিবাই ছিল?”

“না স্যার। কোনোটাই প্রমাণ করতে পারব না।”

“তাহলে?”

“মোটিভ-এর ব্যাপারে আপনি একদম রাইট স্যার। কিন্তু অপরচুনিটির ব্যাপারটায় আমি শিওর নই। আমি যদ্দূর জানি, এমন কেউ নেই যে ডক্টর শর্মাকে বুধবার দুপুরে বল্লভ শাহের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে!”

“ঢুকতে না দেখলেও ডক্টর শর্মার গাড়ি বল্লভ শাহের বাড়ির পাশের রাস্তায় দাঁড় করানো ছিল, তাই না?” দিলীপ কাপাদিয়া বললেন, “আর কী প্রমাণের দরকার?”

“সেটাই প্রশ্ন স্যার। আর ব্যাপারটা সত্যিই পাজলিং টু মি! ভেবে দেখুন, নিউ ইয়র্কের মতো শহরে দিনে-দুপুরে ‘নো পার্কিং’ এরিয়াতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাউকে খুন করতে যাওয়া… পুলিশ তো নির্ঘাত সেটা জানবে! 

“সেটা অস্বীকার করব না, একটু পাজলিং নিশ্চয়,” দিলীপ কাপাদিয়া স্বীকার করলেন। “তবু আমি বলব ট্যাক্সি চেপে খুন করতে যাওয়ার থেকে ওটা অনেক নিরাপদ। সেক্ষেত্রে ট্যাক্সি ড্রাইভার এক জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে থেকে যেত!”

“এটা স্যার ভুল বলেননি। কিন্তু ডক্টর শর্মা ট্যাক্সিকে বল্লভ শাহের বাড়ির সামনে দাঁড় না করিয়ে এক ব্লক দূরে দাঁড় করাতে পারতেন; আর ট্যাক্সিরই-বা কী দরকার ছিল, উনি হাঁটতে পারতেন! মাত্র তো ছ’ব্লক-এর পথ! শীতের মধ্যে হাঁটতে ইচ্ছে না করলে, স্বচ্ছন্দে সাবওয়ে নিতে পারতেন! সেটাই তো পারফেক্ট হত! 

“বোঝাই যাচ্ছে মিস্টার সেন, উনি আপনার মতো স্মার্ট নন!” আলোচনাটা একটু লঘু করার জন্যেই বোধহয় দিলীপ কাপাদিয়া একটু হেসে বললেন। “তাই যদি হতেন, তাহলে যে দড়ি গলায় পেঁচিয়ে খুন করেছেন, সেই দড়ির বান্ডিলটাই গাড়ির ট্রাঙ্কে ফেলে রাখতেন না, কিংবা বল্লভ শাহর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে খুন করতে যেতেন না। এগুলো অবশ্য গত রাত্রে লোকাল নিউজ চ্যানেলের খবর। সত্যি-মিথ্যা আপনারা ভালো জানবেন।”

“না স্যার, আপনি ঠিকই বলেছেন। আর সেটাই স্যার ট্রলি টুলি পাজলিং। একটা বুদ্ধিমান লোক একসঙ্গে এতগুলো বোকামি করবেন কেন!”

“অ্যাপারেন্টলি হি ডিড।” দিলীপ কাপাদিয়া বললেন। 

“সেটাই পুলিশের ধারণা স্যার। কিন্তু আমার ধারণা তারা ভুল পথে এগোচ্ছে।”

“কেন?”

“তার দুটো কারণ তো আপনিই এক্ষুনি বললেন স্যার। যে দড়ি খুন করতে ব্যবহার করেছেন, তার বান্ডিল নিজের গাড়ির ট্রাঙ্কে রেখে দিলেন কেন?”

“অন্য কোথাও ফেলার সুযোগ হয়তো পাননি।”

“খুনের পরে তো বহু ঘণ্টা কেটে গেছে। এতটা সময়ের মধ্যেও?”

“হয়তো খেয়ালও করেননি যে বান্ডিলটা পড়ে আছে।”

“আসল খুনি কিন্তু খুবই সতর্ক লোক।”

“কী সেটা করে বুঝলেন?”

“ওই যে, অফিসে কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, অর্থাৎ সব সময়ে তিনি গ্লাভস পরেছিলেন। যিনি এরকম হিসেব করে চলেন তিনি এতগুলো মারাত্মক ভুল করবেন কেন—নো-পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি পার্ক করা, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে খুন করতে যাওয়া, দড়ির বান্ডিল গাড়িতেই ফেলে রাখা…”

একেনবাবুকে থামিয়ে দিয়ে দিলীপ কাপাদিয়া বললেন, “সেটাই তো আপনাকে বললাম, বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও ভুলগুলো করেছিলেন।”

“এর থেকে অনেক সহজ এক্সপ্ল্যানেশন কিন্তু আছে স্যার। ডক্টর শর্মা বলেছেন ওঁর এক সেট চাবি খোয়া গেছে। সেটা যদি হত্যাকারীর হাতে যায়, তাহলে তার পক্ষে দড়ির বান্ডিলটা একসময় ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়। এমনকী হত্যাকারীর পক্ষে গাড়িটা চুরি করে ‘নো পার্কিং’ এরিয়াতে পার্ক করে হত্যাকাণ্ডটি সেরে আবার স্বস্থানে গাড়ি রেখে আসাটাও অসম্ভব নয়। ঠিক কিনা স্যার?”

“দ্যাটস ননসেন্স!” দিলীপ কাপাদিয়া বিরক্ত হয়ে বললেন। “আপনি যা বলছেন তা হল ডক্টর শর্মার কথা। কিন্তু আমি যদ্দূর শুনেছি পুলিশ অনেক পরীক্ষা করেও ডক্টর শর্মার গাড়ি আর কেউ চালিয়েছিল বলে প্রমাণ পায়নি। আমি ফরেনসিক এক্সপার্ট নই বটে, কিন্তু এটা জানি যে কেউ সিটে বসলে তার জামাকাপড়ের সূক্ষ্ম ফাইবার প্রায় সব সময়েই সিটে লেগে থাকে। অবশ্য আপনি বলতে পারেন খুনি লন্ড্রি থেকে ডক্টর শর্মার জামাকাপড় চুরি করে গাড়িতে বসেছিল।” চেষ্টা সত্ত্বেও দিলীপ কাপাদিয়া তাঁর গলার স্বর থেকে শ্লেষের ভাবটা এড়াতে পারলেন না। 

“না, আমি সেটা বলব না। কিন্তু আরেকটা সম্ভাবনার কথা ভাবুন স্যার। ডক্টর শর্মার মতো কালো মার্সিডিজ আরও অনেকের আছে—একই ইয়ারের, একই স্টাইলের। তাঁদের কেউ যদি ডক্টর শর্মার গাড়ির যে নম্বর প্লেট তার একটা নকল নিজের গাড়িতে লাগিয়ে নেন?”

দিলীপ কাপাদিয়া এবার একটু কপট গাম্ভীর্য নিয়ে বললেন, “মিস্টার সেন, আপনার এই সম্ভাবনার মধ্যে কিন্তু আমিও পড়ি। তবে আমার বোধহয় দুশ্চিন্তা করাটা উচিত হবে না, কারণ আমি মঙ্গলবার রাত্রে ওয়াশিংটন ডিসি-তে যাই, ফিরি বৃহস্পতিবার সকালে। অর্থাৎ মার্ডারের সময়ে আমি ছিলাম ওয়াশিংটন ডিসি-তে।”

“ইয়েস স্যার, সেটাই আপনি পুলিশকে বলেছেন।”

“শুধু বলেছি তা নয়, পুলিশকে সেখানে যাবার প্লেনের টিকিট, ওয়াশিংটনে হায়াত রিজেন্সি হোটেলের পেমেন্টের রেকর্ড, তা ছাড়া ওখানের গাড়ি ভাড়ার রসিদ, সব কিছুই দেখিয়েছি। আর হ্যাঁ, ভাড়া গাড়িটা আমি মাত্র চল্লিশ মাইল চালিয়েছিলাম, সুতরাং সেটা নিয়ে আমার পক্ষে নিউ ইয়র্কে আসা যে সম্ভব নয়, সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।”

“ইউ আর রাইট স্যার, অ্যাবসোলিউটলি রাইট। আমার এরকমভাবে সম্ভাবনাগুলো আলোচনা করা উচিত হয়নি। তাই তো বলছিলাম ক্যামেরার সামনে এসব আলোচনা করা একদম ভুল।”

“দ্যাটস ওকে, আপনি আপনার সন্দেহের কথা বলছেন, নাথিং রং দেয়ার।” দিলীপ কাপাদিয়া অনেকটা মিটমাটের সুরেই বললেন। “এবার আসুন আবার আমাদের ইন্টারভিউয়ে ফিরে যাওয়া যাক। আপনার মতে…।”

একেনবাবু দিলীপ কাপাদিয়াকে থামিয়ে বললেন, “স্যার, এতটা যখন ধৈর্য ধরে শুনলেন, তাহলে আরেকটা সম্ভাবনার কথাও আপনাকে বলে ফেলি, কেমন?”

দিলীপ কাপাদিয়া একটু থতমত খেয়ে বললেন, “বলুন।”

“আমি স্যার প্রমথবাবুর কাছে শুনলাম আপনি নাকি সোমবারও ওয়াশিংটন ডিসি-তে ছিলেন। সেখান থেকে একটা ফ্লাইট নিয়ে রাত্রে নিউ ইয়র্কে ফিরে এসেছিলেন। আবার সন্ধেয় ডিসি-তে ফিরে যান।”

“হ্যাঁ, তা এসেছিলাম। তার কারণ শুটিং-এর কিছু জিনিসপত্র ফেলে গিয়েছিলাম।”

“না, না, সেটা আমার সমস্যা নয়, স্যার। আপনি নিশ্চয় কোনো দরকারের জন্যেই ফিরে এসেছিলেন। আমার সমশ্যাটা অন্য। আমি বার করার চেষ্টা করছিলাম ঠিক কোন ফ্লাইট নিয়ে আপনি ওয়াশিংটন ডিসি-তে গিয়েছিলেন! অনেক খোঁজ করেও সেটা আমি বার করতে পারিনি।”

“দেয়ার ইজ এ গুড রিজন ফর দ্যাট,” দিলীপ কাপাদিয়া বললেন, “শুটিং-এর জন্য কিছু ভারী জিনিসপত্র নিতে হবে বলে আমি রোববার আমার ক্যামেরাম্যানের গাড়িতে রাইড নিয়ে ডিসি-তে গিয়েছিলাম। ইউ কুড হ্যাভ আস্কড মি দ্যাট কোয়েশ্চেন, সহজেই আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যেত!”

“ঠিক, সেটাই আমি ভেবেছিলাম স্যার, গাড়িতে গিয়েছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি নিজের গাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে মনে হল অবশ্যই না, তাহলে ওখানে আবার গাড়ি ভাড়া করলেন কেন…. 

দিলীপ কাপাদিয়া হতাশভাবে একেনবাবুর দিকে তাকিয়ে আছেন- বুঝতে পারছেন না কী বলতে চাচ্ছেন একেনবাবু। 

“আসলে ভাবছিলাম স্যার, এই ক’দিনের মধ্যেই আপনাকে কত বার ডিসি- নিউ ইয়র্ক করতে হল— কম খরচার ব্যাপার তো নয়।”

“শুনুন একেনবাবু, এইসব খরচা কিছুই নয়,” অনুকম্পা ঝরে পড়ল দিলীপ কাপাদিয়ার গলায়। “শুটিং-এ এক এক দিনে কত খরচ হয় আপনার কোনো ধারণা আছে?”

“না স্যার, তবে শুনেছি একশো-দুশো কোটি টাকা লেগে যায় একটা সিনেমা বানাতে।”

“তাহলে? আর আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন, কত বার আমি ডিসি-নিউ ইয়র্ক করছি তাই নিয়ে?”

“এটা ঠিকই বলেছেন স্যার। এইসব ভাবতে ভাবতেই সম্ভাবনাটা আমার মাথায় ঝিলিক দিল!”

 “কী সম্ভাবনা?” দিলীপ কাপাদিয়ার স্বরে বিরক্তি আর বিস্ময় দুটোই ধরা পড়ল।

“যে কথাটা একটু আগে আপনাকে বলছিলাম স্যার, ডক্টর শর্মা জেলে গেলে কার খুব লাভ হয়? 

“হোয়াট আর ইউ টকিং অ্যাবাউট?”

এবার গলার স্বরে কোনো বিস্ময় নেই, দিলীপ কাপাদিয়া বেশ রূঢ়ভাবেই প্রশ্নটা করলেন। 

“আমি বলতে চাচ্ছি স্যার, উনি জেলে গেলে আপনার নিশ্চয় লাভ হবে।”

দিলীপ কাপাদিয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন দেখে একেনবাবু ব্যাখ্যা করে বললেন, “ভেবে দেখুন স্যার, ডক্টর শর্মা তাঁর অন্য সব বিজনেস গুটিয়ে ইন্ডিয়ান ফাস্ট-ফুড বিজনেসে নামছেন, এটা অনেকেই জানেন। এদিকে আপনার ফিল্ম কোম্পানির মোটা অংশ হচ্ছে ওঁর। উনি যদি ওঁর টাকাগুলো সরিয়ে নেন, তাহলে আপনি যে নতুন ফিল্ম-এ হাত দিচ্ছেন, তার কী হবে?”

দিলীপ কাপাদিয়া কোনো উত্তর দিলেন না। 

একেনবাবু বলে চললেন, “আমার বিশ্বাস স্যার, ডক্টর শর্মা আপনাকে বলেছিলেন উনি ওঁর প্রাপ্য অংশ নিয়ে চলে যাবেন। সঙ্গে সঙ্গেই আপনি বুঝতে পেরেছিলেন তাড়াতাড়ি কিছু না করতে পারলে আপনার যুগান্তকারী ছবি তৈরির প্ল্যান বানচাল হয়ে যাবে! আপনি নিশ্চয় স্যার নানান জায়গা থেকেই ইনভেস্টর খুঁজছিলেন, কিন্তু জোগাড় করে উঠতে পারছিলেন না। ডক্টর শর্মা এই প্রজেক্ট থেকে এখন চলে গেলে নতুন কাউকে পাওয়া অসম্ভব হবে। আপনি নিশ্চয় ডক্টর শর্মাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, এরকম একটা দুর্দান্ত প্রজেক্ট থেকে চলে না যেতে। কিন্তু ভালো ছবির মর্ম তিনি কী বুঝবেন! ওঁর কাছে আর্ট আর ফুড একই ব্যাপার! …এক্সকিউজ মি স্যার,” বলে একেনবাবু কফি টেবিলে রাখা জলের বোতলের ছিপি খুলতে খুলতে বললেন, “লাইটগুলো স্যার সূর্যের আলোকে হার মানায় … গলাটা একেবারে শুকিয়ে গেছে, একটু ভিজিয়ে নিই।”

দিলীপ কাপাদিয়ার মুখ রাগে থমথম করছে! কিন্তু একেনবাবু একেবারেই ভাবলেশহীন। ঢক ঢক করে আধ বোতল জল খেয়ে বললেন, “ও হ্যাঁ স্যার, যেটা বলছিলাম… আপনাকে এখন এমন একটা কিছু করতে হবে যাতে ডক্টর শর্মা আপনার ফিল্ম কোম্পানি থেকে ওঁর টাকাগুলো সরাতে না পারেন। তার একটা সহজ উপায় ডক্টর শর্মাকে খুন করা। কিন্তু সেটা খুবই রিস্কি, পুলিশের মনে সন্দেহ জাগতে পারে! তখন আপনার মাথায় এই দারুণ আইডিয়াটা এল— আপনি এমন একজন লোককে খুন করবেন যার সঙ্গে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু ডক্টর শর্মার গণ্ডগোল চলছে! এটা কিন্তু ব্রিলিয়ান্ট স্যার, কারণ সবাই ডক্টর শর্মাকেই এ ব্যাপারে সন্দেহ করবে, তালেগোলে আপনি আপনার সৃষ্টি সম্পূর্ণ করতে পারবেন!”

“আপনি উন্মাদ! আউটরাইট ক্রেজি!” দিলীপ কাপাদিয়া আর স্থির থাকতে পারলেন না, চেঁচিয়ে উঠলেন। 

আমি টেরিয়ে টেরিয়ে সবার রিয়্যাকশন দেখার চেষ্টা করছি। ক্যামেরাম্যান- এর চোখ আর ক্যামেরায় নেই, প্রমথ নার্ভাস হয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, শুধু একেনবাবুই নির্বিকার। বোতলের বাকি জলটুকু শেষ করে বললেন, “না স্যার, উন্মাদ আমি নই। এবার আপনাকে বলি, আপনি কী করলেন। আপনি মোটামুটি জানতেন ডক্টর শর্মা বল্লভ শাহকে ঘৃণা করেন। যদিও কারণটা আপনি পরিষ্কার জানতেন না। হয়তো বল্লভ শাহ একসময়ে ডক্টর শর্মাকে ঠকিয়েছিলেন। সম্ভবত বিজনেসের জন্য টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি, মিস্টার শাহ অনেকের ক্ষেত্রে তাই করেছেন। তাই যদি না হবে তাহলে বল্লভ শাহের পরম শত্রু অরুণ শেঠের সঙ্গে ওঁর এত বন্ধুত্ব হবে কেন? শুধু তাই নয়, ডক্টর শর্মা হঠাৎ করে ফুড বিজনেসে নামছেন কেন— সেটা কি শুধু টাকার জন্যে না বল্লভ শাহকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে ওঁর ক্ষতি করতে? যাই হোক, আপনার মনে হল বল্লভ শাহকে খুন করার একটা মোটিভ ডক্টর শর্মার আছে। অর্থাৎ, ডক্টর শর্মাকে ফাঁসাতে হলে মিস্টার শাহ-ই হলেন খুন হবার উপযুক্ত ক্যান্ডিডেট। এরপর আপনি স্যার খুনের প্ল্যানটা পাকা করতে শুরু করলেন। একটা দুশ্চিন্তা আপনার ছিল, নিউ ইয়র্ক পুলিশ আপনার সাজানো ক্লু-গুলো ঠিকঠাক ধরতে পারবে কিনা। ইউ ওয়ান্টেড টু গিভ দ্য পুলিশ অল দ্য হেল্প ইউ কুড যাতে ডক্টর শর্মা তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে যান! কেউ নিশ্চয় আমার কথা আপনাকে বলেছিল। সেই জন্যেই স্যার আই অলসো বিকেম এ পার্ট অফ ইওর ডকুমেন্টারি। আপনি আমার মধ্যেও বল্লভ শাহ সম্পর্কে একটা কিউরিওসিটি জাগিয়ে দিলেন, যাতে তাঁর মৃত্যুতে আমিও নিজের থেকে একটা অনুসন্ধান চালাতে শুরু করি! এরপর নিজের একটা অ্যালিবাই তৈরি করার কাজে লাগলেন, যাতে প্রমাণ থাকে খুনের সময় আপনি বাইরে ছিলেন…।”

দিলীপ কাপাদিয়ার চোয়াল দেখলাম শক্ত হয়ে গেছে আর ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপছে। বুঝতে পারছিলাম উনি একেবারে ফিউরিয়াস! নিতান্ত ভদ্রলোক বলে আত্মসংবরণ করে আছেন। একেনবাবুর দীর্ঘ বক্তৃতা শেষ হবার আগেই উনি কড়া গলায় বললেন, “মিস্টার সেন, আই ওয়ান্ট ইউ টু আন্ডারস্ট্যান্ড, যেসব মারাত্মক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আপনি আনছেন, তার কণা মাত্র ভিত্তি নেই। আই ওয়ান্ট ইউ টু উইথড্র দেম রাইট নাউ।”

“সরি স্যার, সেটা তো পারব না,” একেনবাবু ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “যদি না আপনি বুঝিয়ে বলেন, কেন আপনি প্রথম বার গাড়ি চড়ে গেলেন, কিন্তু প্লেনে রিটার্ন টিকিট কেটে মিস্টার শাহর খুন হবার দু-দিন আগে এসে সেদিনই কয়েক ঘণ্টা বাদে ফিরে গেলেন। ওখানে গিয়েই আবার হোটেলে চেক ইন করে গাড়ি ভাড়া করলেন। হোয়াই স্যার? …”

দিলীপ কাপাদিয়ার এতক্ষণে খেয়াল হল, ক্যামেরা অন’ আছে। “কাট” বলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে একেনবাবুকে বললেন, “মিস্টার সেন, আমি এতক্ষণ ভাবছিলাম আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আনব কিনা…” দিলীপ কাপাদিয়ার গলার স্বরে এবার পরিষ্কার তাচ্ছিল্য, “কিন্তু তারপর ভাবলাম তাতে জিতে আমার কী লাভ! আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের অবস্থা যদি আপনার জামাকাপড়ের মতো হয় তাহলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমার কানাকড়িও জুটবে না। ইট উইল বি এ ওয়েস্ট অফ টাইম। বাট লেট মি টেল ইউ, চাইলে আপনাকে একটা কেন দশটা কারণ দেখাতে পারি, কেন আমি রিটার্ন টিকিট কেটে এসেছিলাম, কিন্তু আপনার এই অবাস্তব অভিযোগের কোনো উত্তর আমি দেব না। বিকজ ইট ইজ টোটালি ইনসেইন।”

একেনবাবু দমলেন না। “আপনি নিশ্চয় স্যার অনেক কারণ দেখাতে পারেন। তবে দুটো কারণ আমি অনুমান করতে পারি, যদিও সে-দুটো আপনি বলবেন না। আপনি একটা দড়ি থেকে এক টুকরো কেটে রেখে বাকি বান্ডিলটা সঙ্গে এনেছিলেন। সেইসঙ্গে এনেছিলেন একটা গাড়ির নিউ ইয়র্ক স্টেটের নম্বর প্লেট। ডিসি-তে সেটা বানিয়েছিলেন আপনার চেনাজানা সিনেমার কোনো প্রপ-মেকারকে দিয়ে। কেন এনেছিলেন, সেটা স্যার বলি?”

“কেন নয়। এতটাই যখন বানাতে পারলেন, ওটাও বলুন।” গলায় শ্লেষ ঝরে পড়ল দিলীপ কাপাদিয়ার। 

“প্লেন থেকে নেমেই, আপনি সোজা আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার নিজের গাড়ির নম্বর প্লেট সরিয়ে ডিসি থেকে নিয়ে আসা নম্বর প্লেটটা লাগালেন— ওটা ছিল ডক্টর শর্মার গাড়ির নম্বর। এবার দড়ির বান্ডিলটা নিয়ে ডক্টর শর্মার গাড়ির ট্রাঙ্কে সেটা রাখলেন। আপনি জানতেন ডক্টর শর্মার গাড়ি কোথায় থাকে, আর তার এক সেট চাবি আগেই আপনি চুরি করেছিলেন। কাজটা সেরে চাবিটা গ্লাভ কম্পার্টমেন্টে ফেলে দিয়ে আপনি ডিসি-তে ফিরে গেলেন।”

দিলীপ কাপাদিয়া হাততালি দিয়ে বললেন, “চমৎকার গল্প। কিন্তু তাও তো ফাঁক রয়ে গেল। যেদিন খুনটা হল সেদিন তো আমি ডিসি-তে! ফিরেছি তার পরের দিন।”

“সেটাই আমি ভাবছিলাম। তখন হঠাৎ মনে হল স্যার, সেক্ষেত্রে আপনার অফিস থেকে খুনের দিন কে ফোন করেছিলেন ডক্টর শর্মার অফিসে। ফোন যে করা হয়েছিল আমি জানি স্যার। আপনার অফিসে লাস্ট কল ডায়ালড ভুল করে টিপে আপনার মার্লিন ফোনের ডিসপ্লে-তে যে নম্বরটা পেয়েছিলাম, সেটা ছিল ২৬২- ৭৪২৪। কী করব স্যার, ফোটোগ্রাফিক মেমারি আমার- নম্বরগুলো সব সময়ে চোখের সামনে ভাসে। পুলিশ চেক করে জানিয়েছে নম্বরটা ডক্টর শর্মার ফোনের। যিনি ফোন করেছিলেন, ডক্টর শর্মার সেক্রেটারিকে তিনি বল্লভ শাহ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। এইখানে স্যার অঙ্ক মিলছে না। ফোন করা হয়েছে আপনার অফিস থেকে, আমি নিজের চোখে তার প্রমাণ পেয়েছি। ফোনটা গেছে ডক্টর শর্মার অফিসে। কখন সেই সময়টাও পুলিশ চেক করে জেনেছে। অথচ আপনি তখন ডিসি-তে। কী অদ্ভুত ব্যাপার না স্যার!”

দিলীপ কাপাদিয়ার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, “কিন্তু আমি তো তখনও ডিসি- তে, পরের দিন আমি চেক আউট করি হোটেল থেকে, গাড়ি রিটার্ন করি। তারপর নিউ ইয়র্কে ফিরে আসি ক্যমেরাম্যানের গাড়িতে।” কোনোমতে কথাগুলো বলে যোগ করলেন, “পুলিশ প্লেনের রেকর্ড চেক করে দেখতে পারে।”

“কিন্তু অন্যভাবেও তো যাতায়াত করা যায় স্যার, খুব দ্রুত গতিতেই। সেটাই আপনি করেছিলেন ট্রেন ধরে। খুনের দিন সকালে ট্রেনে করে বাড়ি এসে নিজের গাড়ি পার্ক করলেন বল্লভ শাহর অফিসের সামনে নো-পার্কিং জোন-এ। গাড়ি থেকে নেমে ওঁর অফিসে গিয়ে অতর্কিতে বল্লভ শাহকে আক্রমণ করে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ভদ্রলোককে খতম করতে বেশি সময় আপনার লাগেনি। বেরিয়ে এসে ইতিমধ্যে দেখলেন গাড়িতে পুলিশের টিকিটও পেয়েছেন। ব্যস, মিশন অ্যাকমপ্লিশড। গাড়ি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে গাড়ি থেকে ডক্টর শর্মার ভুয়ো নম্বর প্লেটটা সরিয়ে নিজের আসল নম্বর প্লেট লাগালেন। তারপর সেই ভুয়ো নম্বর প্লেটটা নিয়ে আবার ট্রেন-এ করে ফিরে গেলেন ডিসি-তে। এটাও তো আপনি করে থাকতে পারেন স্যার, তাই না? যা বললাম, সেগুলো কিন্তু পুলিশ নানানভাবেই চেক করতে পারবে। … আজ আমার ইন্টারভিউ আর হবে না স্যার। আপনি শুটিং-এর সব যন্ত্রপাতি প্যাক করতে বলুন। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আসছেন আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যাবার জন্য।”

.

পরিশিষ্ট 

“দিলীপ কাপাদিয়া স্ট্র্যাটেজিতে ভুল করেছেন আপনাকে ইনভল্ভ করে, কিন্তু আপনিও মশাই স্ট্র্যাটেজিতে একটা ব্লান্ডার করেছেন।” প্রমথ খুব সিরিয়াস মুখ করে বলল। 

“কোথায় স্যার?”

“আপনার ডকুমেন্টারি শেষ হবার পর মিস্টার কাপাদিয়াকে ধরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে দূরদর্শনে আপনার ইন্টারভিউটা সবাই দেখতে পেত!”

“কথাটা ভুল বলেননি স্যার, আমি আবার বড়াই করে আমার ফ্যামিলিকে টিভির কথাটা লিখে ফেলেছি।”

“অর্থাৎ আপনার কপালে অনেক দুঃখ আছে! 

“তা একটু আছে স্যার। নাঃ, এই অ্যাঙ্গেল থেকে সত্যিই একদম চিন্তা করিনি।”

“সেটাই তো আপনার সমস্যা, অলওয়েজ সিংকিং সিংকিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার। আপনার প্ল্যানটা আগেভাগে আমাকে জানালে উপদেশটা সময়মতো পেতেন!”

আমি প্রমথকে বললাম, “চুপ কর, ওঁকে আর জ্বালাস না।” তারপর একেনবাবুকে বললাম, “জানেন, আমি কিন্তু প্রমথকে অনেক আগেই বলেছিলাম দিলীপ কাপাদিয়াই খুনি।”

একেনবাবু বললেন, “তাই নাকি স্যার, কী করে?”

প্রমথ বলে উঠল, “আপনিও যেমন! বলেছিল না মুণ্ডু!”