০৪.
মৃতেরা কথা বলে না! হঠাৎ এই বাক্যটা মাথায় ভেসে এল শান্তশীলের। ড্রয়িং ডমের পাশের ঘরে একটা কম্পিউটারের সামনে বসে সে যন্ত্রের মতো কাজ করছিল। অফিসেরই কাজ। আজ এবং আগামিকাল তার অফিস যাওয়ার কথা ছিল না। মউকে নিয়ে বহরমপুর যেত। আগামীকাল ফিরে আসত অসুস্থ শ্বশুরমশাইকে নিয়ে। কিন্তু মউ মরে গেল।
এখন সাড়ে বারোটা বাজে। কিছুক্ষণ আগে ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে তার হটলাইনে সংক্ষেপে জানিয়েছে ঘটনাটা। বলেছে, আপাতত তার কোনও সাহায্যের দরকার নেই। হলে তা অবশ্যই জানাবে। ভুবনেশ্বরের রিপোর্ট দুপুরের মধ্যেই তৈরি করে ফেলবে। দুটোর মধ্যে কেউ যেন এসে নিয়ে যায়।
সেই রিপোর্ট তৈরি করতে করতে অদ্ভুতভাবে লাইনটা মাথায় ভেসে এল, ডেডস ডু নট স্পিক।
কোথায় পড়েছিল স্মরণ হলো না। দেওয়ালে পিকাসোর একটা প্রিন্টের দিকে তাকিয়ে রইল শান্তশীল। ছবিটা উইপিং উওম্যান। ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা এবং অসহায়তা চোখে বেঁধে। ছবি বোঝে না শান্তশীল। এটা কোম্পানিরই ডেকরেটারদের সাজিয়ে দেওয়া। এ মুহূর্তে কয়েকরকম রঙ এবং কালো মোটা রেখা ছাড়া ওই বোধটা ধরা দিল না তার চোখে। মউ বলতো, ছবিটা অসহ্য। সে কি ছবি বুঝত?
নাহ্। ফিল্মের ছবি ছাড়া অন্য কোনও ছবিতে মউয়ের আগ্রহ ছিল না। বেডরুমে সেই পপুলার টেলিসিরিয়ালের কয়েকটা স্টিল কালার প্রিন্ট বাঁধিয়ে রেখেছিল। ড্রয়িংরুমেও বড় করে বাঁধানো আছে একটা। সবই মউয়ের বিভিন্ন মুডের ফটোগ্রাফ। সেগুলো কিছুক্ষণ আগে নামিয়ে প্যাকেটে বেঁধে একটা আলমারির মাথায় রেখে দিয়েছে শান্তশীল। মউ হঠাৎ গতরাত থেকে একটা দুঃসহ স্মৃতি হয়ে গেছে তার কাছে। ব্যর্থতার স্মৃতি। কিংবা একটা পতনের ছবি।
মৃতেরা কথা বলে না। আবার ভেসে এল বাক্যটা। কাজের মেয়ে ললিতাকে আজ এবং আগামীকাল দু দিনের ছুটি দেওয়া আছে। ললিতা কোথায় থাকে, জানে না শান্তশীল। জানার দরকার মনে করেনি। পরশু ললিতা এলে পুলিশকে জানানোর কথা আছে। পুলিশ তাকে জেরা করবে। কারণ চন্দ্রনাথ দেববর্মনের খুনের কোনও মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ই ব্লকের কেউ কোনওদিন মউকে ওখানে দেখেনি বলেছে।
কিন্তু একমাত্র ললিতাই বলতে পারে মউয়ের গতিবিধির কথা। মউ মৃত। সে কথা বলবে না। কিন্তু তার হয়ে কথা বলার লোক নিশ্চয় আছে। প্রথম লোক ললিতা।
শান্তশীল আবার কম্পিউটারে মন দিতে গিয়ে বুঝল তার হাত ঠিক মতো কাজ করছে না। এ ঘরে সে সিগারেট খায় না। উঠে ড্রয়িংরুমে গেল। একটা সিগারেট ধরিয়ে ইজিচেয়ারে বসল। স্মৃতির দিকে পিছু ফিরতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে ঘুরল। ড্যাম ইট! জীবনে কতবার ভুল জায়গায় পা ফেলেছে। তারপর সামলেও নিয়েছে। কিন্তু এই ভুলটা একেবারে অন্য ধরনের। খুবই অপমানজনক।
ডোরবেল বাজল। আবার পুলিশ নাকি? বিরক্ত হয়ে শান্তশীল দরজায় গেল। আইহোলে দেখল সিকিউরিটি অফিসার রণধীর সিংহ দাঁড়িয়ে আছেন। তার পাশে লম্বা চওড়া এক বৃদ্ধ ফাদার ক্রিস্টমাস ধরনের চেহারা। বিদেশি বলে মনে হলো। কী ব্যাপার?
শান্তশীল দরজা খুলে বলল, বলুন মিঃ সিংহ!
রণধীর বললেন, ইনি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান স্যার! আপনাকে বিরক্ত করায় দুঃখিত। কিন্তু আমি নিরুপায়। যাই হোক, ইনি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। আমার সুপরিচিত।
শান্তশীল বলল, আসুন!
কর্নেল ভেতরে ঢুকলেন। রণধীর বললেন, আমি কাছাকাছি থাকছি কর্নেল সায়েব! আপনার জন্য অপেক্ষা করব।
রণধীর স্যালুট ঠুকে চলে গেলেন। শান্তশীল দরজা বন্ধ করে একটা চেয়ার দেখিয়ে দিল কর্নেলকে। নিজে বসল ইজিচেয়ারে। কর্নেল ঘরের ভেতর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বসলেন। তারপর অমায়িক কণ্ঠস্বরে বললেন, আপনাকে এখন বিরক্ত করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান।
শান্তশীল আস্তে বলল, আপনি বাঙালি?
কর্নেল পকেট থেকে নেমকার্ড বের করে দিলেন।
শান্তশীল কার্ডটা পড়ে বলল, আপনি একজন রিটায়ার্ড কর্নেল। তলায় ছাপানো আছে নেচারিস্ট। তো আমার কাছে কী? আমি নেচার-টেচার বুঝি না। আমি নেচার-লাভার নই। যাই হোক, বলুন!
আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
কী বিষয়ে?
কর্নেল হাসলেন। নাহ্ নেচার বিষয়ে নয়। আপনার স্ত্রীর শোচনীয় হত্যাকাণ্ড
তা নিয়ে আপনার মাথাব্যথা কেন জানতে পারি?
আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী মিঃ দাশগুপ্ত
ওটা আমার প্রশ্নের জবাব নয়। আমার স্ত্রীর ব্যাপারটা পুলিশ দেখছে। আপনি কেন এতে নাক গলাতে চান? বলেই শান্তশীল সংযত হলো। সরি!
কর্নেল আস্তে বললেন, ৭ মার্চ হোটেল কন্টিনেন্টালে আপনার কোম্পানি একটা পার্টির আয়োজন করেছিল। যেখানে আপনি সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন।
শান্তশীল তাকাল। সো হোয়াট?
সেই পার্টিতে হংকংয়ের এক বড় ব্যবসায়ী রঙ্গনাথনের সঙ্গে আপনার আলাপ হয়েছিল!
শান্তশীল কথাটা বাজিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল। একটু পরে বলল, হয়ে থাকতে পারে। নামটা চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু এ প্রশ্ন কেন?
কর্নেল চুরুটকেস বের করে একটা চুরুট ধরালেন। তারপর একরাশ ধোঁয়ার মধ্যে বললেন, আপনি কি চান না আপনার স্ত্রীর কিলার ধরা পড়ুক?
সে তো ধরা পড়েছে। শান্তশীল সোজা হয়ে বসল। কট উইদ দা মার্ডারউইপন।
হ্যাঁ। চন্দ্রনাথ দেববর্মনের একটা পয়েন্ট বাইশ ক্যালিবারের রিভলভার পাওয়া গেছে। লাইসেন্ডু আর্মস। এক রাউন্ড ফায়ার করেছিল সে, তা-ও সত্য। কর্নেল শান্তশীলের চোখে চোখ রেখে বললেন, কিন্তু মিঃ দাশগুপ্ত, মর্গের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আপনার স্ত্রীর মাথার ভেতর যে গুলিটা আটকে ছিল, তা পয়েন্ট আটত্রিশ ক্যালিবারের রিভলভার থেকে ছোঁড়া থ্রি নট থ্রি বুলেট।
শান্তশীল উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু উত্তেজনা দমন করে বলল, মর্গের রিপোর্টের কথা এখনও আমি জানি না। বাট নাও আই মাস্ট আস্ক দ্য কোয়েশ্চান, হু আর ইউ?
কর্নেল একটু হাসলেন। সেটা ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির কাছে জেনে নেবেন। তবে আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।
শান্তশীল কর্নেলকে তীক্ষ্ণদৃষ্টে একবার দেখে নিয়ে বলল, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমি বেশিক্ষণ আপনাকে বিরক্ত করব না। এবার বলুন, ৭ মার্চ রাত্রে হোটেলে কন্টিনেন্টালের পার্টিতে রঙ্গনাথন এবং আপনার স্ত্রীকে কি একান্তে কথা বলতে দেখেছিলেন? স্মরণ করার চেষ্টা করুন প্লিজ!
শান্তশীল একটু ভেবে নিয়ে বলল, মউ– আমার স্ত্রী, টেলিসিরিয়ালে। হিরোইন হিসাবে নাম করেছিল। সেই পার্টিতে সি ওয়াজ ন্যাচারালি অ্যান : অ্যাট্রাকটিভ ফিগার। অনেকেই তার অটোগ্রাফ আর ছবি নিচ্ছিল। আর রঙ্গ নাথন? তিনিও মউয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন। পার্টিতে যেভাবে পরস্পর কথা বলে, সেইভাবে।
আচ্ছা মিঃ দাশগুপ্ত, এবার একটা গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন।
বলুন!
পার্টি শেষ হবার পর আপনার স্ত্রীর মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন কি?
সি ওয়াজ টায়ার্ড, ফেরার পথে কলেছিল, এ সব ন্যাস্টি ভিড় তার ভাল লাগে না। আর সে কোনও পার্টিতে যাবে না।
আর কিছু?
নাহ্। আমি জানতাম তার অভিনয় জীবন যে কোনও কারণে হোক, আর ভাল লাগছিল না। বোম্বের হিন্দি ফিল্মওয়ালাদের অনেক বড় অফার সে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আপনার সঙ্গে কখন কোথায় মধুমিতা দেবীর প্রথম আলাপ হয়?
শান্তশীল আস্তে শ্বাস ফেলে বলল, আমার কোম্পানির স্টাফ রিক্রিয়েশন ক্লাব একটা নাটক করেছিল। লাস্ট অক্টোবরে। তারিখ মনে নেই। ক্লাবের নাটকে হিরোইনের রোলে মউকে ওরা হায়ার করে এনেছিল। নাটকের আগে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান হয়। আমি ছিলাম চিফ গেস্ট। ওদের অনুরোধে আমাকে নাটকের শেষ অব্দি থাকতে হয়েছিল।
আপনি মধুমিতা দেবীর অভিনয় দেখে নিশ্চয় মুগ্ধ হয়েছিলেন?
অস্বীকার করছি না। গ্রিনরুমে গিয়ে ওর সঙ্গে আলাপ করি। তাকে আমার নেমকার্ডও দিয়েছিলাম।
শুভ্রাংশু সোমকে তো আপনি চেনেন!
শান্তশীল তাকাল। একটু পরে বলল, হ্যাঁ। নাইস চ্যাপ। আপনি চেনেন নাকি ওকে?
কর্নেল সে-কথার জবাব না দিয়ে বললেন, বাই এনি চান্স শুভ্রাংশু কি মধুমিতা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে আপনার কাছে এসেছিল কোনওদিন?
আমি বুঝতে পারছি না কেন এ কথা জানতে চাইছেন?
প্লিজ অ্যানসার দিস কোয়েশ্চান!
ইজ ইট ইমপর্ট্যান্ট ইন দিস কেস?
মে বি। আমরা অনেক সময়েই জানি না যে আমরা কী জানি। শান্তশীল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, শুভ্রাংশু কী একটা গ্রুপথিয়েটারেও অভিনয় করে। সেই দলে মউও অভিনয় করত একসময়। সো মাচ আই নো– শুভ্রাংশু বলেছিল অবশ্য। তো হ্যাঁ, ইউ আর রাইট। শুভ্রাংশু মউকে সঙ্গে নিয়ে ওদের দলের স্যুভেনিরের বিজ্ঞাপনের জন্য বার দুই এসেছিল। এটা হতেই পারে সে মউ সম্পর্কে আমরা দুর্বলতা টের পেয়েছিল। আমাকে এক্সপ্লয়েট করার উদ্দেশ্য থাকতেই পারে। কিন্তু আমি কোম্পানির ইন্টারেস্ট দেখি। বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতেই পারে। তবে কোনও এমপ্লয়ির এফিসিয়েন্সিই আমার কাছে একমাত্র বিবেচ্য। এনিওয়ে, ওদের স্যুভেনিরে আমার কোম্পানির ফুলপেজ বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করেছিলাম।
শান্তশীল হঠাৎ থেমে গেল। কর্নেল বললেন, চন্দ্রনাথ দেববর্মনের সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে?
নাহ্। মর্নিংয়ে ওকে জগিং করতে দেখেছি। একসময় আমারও অভ্যাস ছিল।
ডিলাক্স মার্কেটিং রিসার্চ ব্যুরোর সঙ্গে আপনার কোম্পানির যোগাযোগ আছে?
শান্তশীল কথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারণ করল, ডিলাক্স মার্কেটিং রিসার্চ ব্যুরো–এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তবে আমাদের নিজস্ব মার্কেটিং রিসার্চ সেকশন আছে। তারা অনেকক্ষেত্রে বাইরেকার হেল্প নেয়। খোঁজ নেব। কেন?
আচ্ছা মিঃ দাশগুপ্ত, আপনার স্ত্রী পার্সোন্যাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকার কথা!
শান্তশীল কর্নেলের দিকে তাকাল। একটু পরে বলল, এটা কি একটা প্রশ্ন হলো কর্নেল সরকার?
মিঃ দাশগুপ্ত, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তার মানে, আপনি আপনার স্ত্রীর শোচনীয় মৃত্যুর পর নিশ্চয় তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্র দেখেছেন। কিছু সন্দেহজনক লেনদেন ওতে লক্ষ্য করেছেন কি না, সেটাই আমার জিজ্ঞাস্য।
শান্তশীল একটু উত্তেজিতভাবে বলল, মউ টেলিসিরিয়ালে এবং ছোটোখাটো অনেক ফিল্ম থেকে তত বেশি টাকা পায়নি। কিন্তু ওর কাঁধে একটা বোঝা ছিল। বহরমপুরে ওর বাবা-মা থাকেন। দুই ভাই আর এক বোন থাকে। আমরা শ্বশুরমশাই রিটায়ার করে ওখানেই বাড়ি করেছেন। আমি কখনও যাইনি। সেখানে। আজ দুজনে যাওয়ার কথা ছিল। শ্বশুরমশাই অসুস্থ বলে সে দম নিল। জোরে শ্বাস ছেড়ে ফের বলল, হ্যাঁ। মউয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আমি দেখেছি।
কর্নেল গম্ভীর মুখে বললেন, গত দু-তিন মাসে মোটা অঙ্কের টাকা ড্র করেছিলেন কি মধুমিতা?
মোটা অঙ্ক মানে দুবার দশ হাজার টাকা তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি এবং এ মাসে। এটা স্বাভাবিক। শ্বশুরমশাই গতমাস থেকে অসুস্থ।
এখন একজ্যাক্ট ব্যালান্স কি পঞ্চাশ হাজারের ওপরে? নাকি নিচে?
শান্তশীল হতাশ ভঙ্গিতে বলল, দিস ইজ টু মাচ! পুলিশও আমাকে এত প্রশ্ন করেনি। দে নো মাই সোশ্যাল স্ট্যাটাস! মাই পজিশন! অ্যান্ড ইউ আর আস্কিং মি দিজ ননসেন্স কোয়েশ্চানস! কে আপনি তাও এক্সপ্লেন করছেন না। আপনি কি ব্ল্যাকমেল করতে এসেছেন আমাকে?
কর্নেল একটু হেসে বললেন, হ্যাঁ। ব্ল্যাকমেল ইজ দা রাইট ওয়ার্ড মিঃ দাশগুপ্ত! আপনার স্ত্রীকে কেউ ব্ল্যাকমেল করছিল।
শান্তশীলের চোখে একমুহূর্ত চমক ঝিলিক দিল। তারপর শান্তভাবে বলল, প্লিজ এক্সপ্লেন ইট–ইফ সো মাচ ইউ নো।
আমার ধারণা, আপনার স্ত্রীর ব্যাঙ্ক পঞ্চাশ হাজারের অনেক নিচে।
থার্টি সিক্স মতো। কিন্তু কে মউকে ব্ল্যাকমেল করছিল? কেন করছিল? করলে আমাকে সে গোপনই বা করবে কেন? আমার ক্ষমতা সে জানত। শান্তশীল দ্রুত একটা সিগারেট ধরাল। হা– তার অতীত জীবনে স্ক্যান্ডালাস কিছু থাকতেই পারে। আমি জানি অভিনেত্রীদের অনেকের জীবনে কী সব ঘটে থাকে। মউ ভালোই বুঝত, আমি তার আগের, জীবনে নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতে রাজি নই। আই অ্যাম এ মর্ডান ম্যান অ্যান্ড সি নিউ ইট ওয়েল।
মিঃ দাশগুপ্ত! তবু আপনি একজন পুরুষমানুষ। চূড়ান্ত মডার্ন হয়ে ওঠা ওয়েস্টেও কোনও পুরুষমানুষ তার স্ত্রীকে নিয়ে তোলা ব্লু ফিল্ম বরদাস্ত করতে পারে না- দ্যাট আই ক্যান অ্যাসিওর। আপনি আফটার অল ভারতীয়।
ব্লু ফিল্ম বললেন? শান্তশীল ভুরু কুঁচকে তাকাল।
হ্যাঁ ব্লু ফিল্ম।
ইউ মিন, মউকে নিয়ে তোলা ব্লু ফিল্ম?
ধরুন তা-ই।
সরি কর্নেল সরকার। আমি বিশ্বাস করি না। ক্ষমা করবেন, এ সব উদ্ভট কথাবার্তা শোনার সময় আমার নেই। আমার হাতে জরুরি কাজ আছে। দেড়টা বাজে।
শান্তশীল উঠে দাঁড়াল। কর্নেল অগত্যা উঠলেন। তারপর দেওয়ালে একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন, ওখানে একটা বড় ছবি ছিল সম্ভবত। আপনার স্ত্রীর ছবি হতেই পারে। হ্যাঁ, ওই টেবিলে একটা ছিল। চিহ্ন লক্ষ্য করছি। স্ত্রীর স্মৃতি আপনার পক্ষে আপাতত অসহনীয় হতেই পারে। তবে শিগগির ভুলেও যাবেন। থ্যাঙ্কস্। চলি।
শান্তশীল নিষ্পলক তাকিয়ে শুনছিল। কর্নেল বেরিয়ে যাওয়ার পর এগিয়ে গিয়ে জোরে দরজা বন্ধ করল।…
.