মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে…

মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে…

প্ল্যাটফর্মে নেমে পায়চারি করতে করতে দুহাত ছড়িয়ে আড়মোড়া
ভাঙতেই
ঠেঙো ধুতি ও ফতুয়া পরা, ছাতাবগলে একজন শালিক শালিক চেহারার
লোক
থমকে জিজ্ঞেস করলো,
কে গো, আমাদের ফটিক লয়?
বাজপাখির মতন এক সুবিশাল হাস্য দিয়ে তাকে চুপসে দিলুম
সে পালাবার পথ পায় না, তো তো করে নেমে গেল রেললাইনে
প্রচণ্ড রোদে ধোঁয়া বেরুতে লাগলো তার গা থেকে, সে কপূর হয়ে গেল
দিগন্তে…

একটু বাদে ট্রেন ছাড়বার পরেই এক সবুজ ঢেউয়ের মতন বিস্মরণ
ঝাপটা মারে আমার কপালে
জানলার পাশে দুটো উড়ন্ত ফিঙে চোখ মেরে বলে যায়, দুয়ো, দুয়ো
আমিই কি তবে ফটিক, কিংবা তার যমজ, এতক্ষণে আলপথ ধরে
ঠেঙো ধুতি ও ময়লা ফতুয়া, ছাতাবগলে শালিক লোকটার পাশাপাশি
হেঁটে যেতে যেতে
কোথায়…কোন গ্রামে…ফটিক কি এতদিন নিরুদ্দেশ ছিল
পালিয়ে ছিল দারোগা-মহাজনের তোয়, সুফল আনতে গিয়েছিল শহরে
সে ফিরেছে বলে শাঁখ বাজবে, চোখের জল দিয়ে ধোয়ানো হবে তার
পা
একটি অকাল-বৈধব্য মাখা স্ত্রীলোক ছাই ছাই চোখ মেলে বলবে,
হেথায় তো তোমায় কেউ জোর করে ধরে আনেনিকো
কেন এলে?
আঁশটির মতন ধারালো তার উদাসীনতা, টিয়া পাখির মতন তীক্ষ্ণ
ট্যাঁ ট্যাঁ করছে দুএকটি বাচ্ছা…

অকাল বৃষ্টিতে পচে গেছে ধানের গোছ, পূর্ণিমার চাঁদের গায়ে কাদা
কালভার্টের পাশে তাড়া তাড়া নির্বাচনী ইস্তাহার সেঁতিয়ে পড়ে আছে
বাঁধ ভাঙা নোনা জলে ঘুরপাক খাচ্ছে ফটিকের ছেড়া চটি
এই অনন্তের টুকরো দৃশ্যের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মহাবিশ্ব
একটি নবীন তৃণের ডগা মাথা তুলে বললো, ফিরিয়ে দাও ফটিককে
তার নিজের জায়গায়
নইলে সব কিছু মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে..