মালিশ মেশিন
আমার মাঝে মধ্যে ভালো-মন্দ খাওয়ার ইচ্ছে করলে বোনের বাসায় হাজির হই-কখনো অবিশ্যি স্বীকার করি না যে খেতে এসেছি, ভান করি এই দিকে কাজে এসেছিলাম যাবার সময় দেখা করে যাচ্ছি। বোনের বাসা দোতলায়-সিঁড়ি দিয়ে উঠছি হঠাৎ দেখি কে যেন ঠিক সিঁড়ির মাঝখানে একটা কলার ছিলকে ফেলে রেখেছে, মানুষের কাণ্ডজ্ঞান কত কম হলে এরকম একটা কাজ করতে পারে? কেউ যদি ভুল করে এই হিলকের উপর পা দেয় তা হলে কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার ঘটে যাবে– প্রথমত পা পিছলে সে পড়ে যাবে তারপর সিঁড়ি দিয়ে গাছের গুঁড়ির মতো গড়িয়ে যাবে। সিঁড়ির শেষ মাথায় পৌঁছে এসে সে দেওয়ালে আঘাত করবে তখন তার হাত-পা ভেঙে যাবে, মাথা ফেটে রক্তারক্তি হয়ে যাবে, কে জানে হয়তো ব্রেন ড্যামেজ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে।
কাজেই আমি খুব সাবধানে কলার ছিলকে বাঁচিয়ে সিঁড়িতে পা ফেললাম; আর কী আশ্চর্য ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে ঘটল সেটা এখনো একটা রহস্যের মতো; আমি আবিষ্কার করলাম যে আমি ঠিক ছিলকেটার ওপর পা ফেলেছি। তারপর ঠিক আমি যা ভেবেছিলাম তাই ঘটল, আমি প্রথমে পা পিছলে দড়াম করে পড়ে গেলাম, তারপর গাছের গুঁড়ির মতো গড়িয়ে যেতে লাগলাম। প্রায় অনন্তকাল গড়িয়ে আমি সিঁড়ির নিচে পৌঁছে দেওয়ালটাকে আঘাত করলাম, আমার হাত ভাঙল, পা ভাঙল, মাথা ফেটে রক্তারক্তি হয়ে গেল, মাথার ভেতরে ঘিলু নড়ে উঠে ব্রেন ড্যামেজ হয়ে গেল এবং আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কে জানে হয়তো শুধু অজ্ঞান নয়, মরেই গেলাম।
আমার ওজন নেহায়েৎ কম নয় দেখলে মন খারাপ হয় বলে আজকাল অবিশ্যি ওজন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি), কলার ছিলকেতে পা পিছলে আমি নিশ্চয়ই ভীষণ শব্দ করে পড়েছি, দেওয়ালে মাথা ঠুকে যাবার সময় নিশ্চয়ই একটা গগনবিদারী চিৎকারও করেছিলাম-কারণ দেখতে পেলাম দরজা খুলে আমার বোন, দুলাভাই, বি এবং কাজের বুয়া ছুটে এসেছে। বিন্দু ছোট বলে সে সবার আগে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল, মামা, তুমি এখানে শুয়ে আছ কেন?
সবাইকে যখন দেখতে পাচ্ছি, কথা শুনতে পাচ্ছি তার মানে নিশ্চয়ই মরে যাই নি বা অজ্ঞানও হয়ে যাই নি। কথা যেহেতু বুঝতে পারছি মনে হয় এখনো পুরোপুরি ব্রেন ড্যামেজ হয় নি। আমি কোকাতে কোকাতে বললাম, পিছলে পড়ে গিয়েছি।
বিল্টু কলার ছিলকেটা আবিষ্কার করে বলল, তুমি হাঁটার সময় কি চোখগুলো খুলে পকেটের মাঝে রেখে দাও? কলার ছিলকেটা দেখ নি?
ফাজলেমি করবি না বি-দেখছিস না হাত-পা সব ভেঙে গেছে? মাথা ফেটে গেছে?
তোমার কিছু হয় নি মামা, ওঠ।
ততক্ষণে বোন, দুলাভাই এবং বুয়াও চলে এসেছে। বুয়া বলল, না বিল্টু বাই, মামার অবস্থা কেরাসিন। মনে হয় হাত-পা ভাইঙ্গা লুলা হইয়া গেছে।
দুলাভাই এসে আমাকে টিপেটুপে দেখে বলল, তুমি পড়েছ খুব জোরে, কিন্তু কিছু ভাঙে টাঙে নাই।
সত্যি?
হ্যাঁ, সত্যি।
উঠতে পারবে? নাকি ধরে নিতে হবে।
বুয়া শাড়িটা কোমরে পেঁচিয়ে এগিয়ে এসে বলল, মামারে আমার কোলে তুইল্যা দেন আমি উপরে নিয়া যাই। আমি নিজে নিজে উপরে উঠতে পারব ভরসা ছিল না, কিন্তু টিঙটিঙে বুয়া যেভাবে আমাকে কোলে করে উপরে নিয়ে যেতে হাজির হল যে আমি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেলাম। এক হাত দুলাভাইয়ের উপর আরেক হাত বিল্টুর ঘাড়ে দিয়ে। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে উপরে উঠে এলাম। দুলাভাইয়ের কথা সত্যি হাত-পা কিছু ভাঙে নি, মাথাও ফাটে নি। খুব বেঁচে গেছি এই যাত্রা।
আমাকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে দুলাভাই বললেন, তোমাকে আরো সাবধান হতে হবে। যেখানেই যাও সেখানেই যদি এইভাবে আছাড় খাও তা হলে ঢাকা শহরের সব বিল্ডিং ধসিয়ে ফেলবে।
বোন এক গ্লাস পানি এনে বললেন, খা তাড়াতাড়ি।
কী এটা?
লবণ পানি। পড়ে গিয়ে শক পেলে খেতে হয়।
এটা কোন দেশী চিকিৎসা জানি না কিন্তু বোনের কথা না শুনে উপায় নেই। তাই পুরোটা খেতে হল। বোন বললেন, সর্ষে দিয়ে ইলিশ বেঁধেছিলাম। কিন্তু তোর যা অবস্থা, তুই তো খেতেও পারবি না।
আমি হালকাভাবে আপত্তি করে কিছু একটা বলতে চাইছিলাম কিন্তু বুয়া চিৎকার করে বলল, কী কন আম্মা আপনি খাওয়ার কথা? মামা এখন খাইলে উপায় আছে? শরীরের বিষ নাইম্যা যাইব না? সর্বনাশ!
কাজেই শরীরে যেন বিষ নেমে না যায় সেজন্য আমি সোফায় উপুড় হয়ে শুয়ে রইলাম, অন্যেরা যখন হইচই করে সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ মাছ খেল তখন আমি খেলাম আধবাটি বার্লি।
কিছুক্ষণ পর বোন এসে জিজ্ঞেস করল, তোর শরীরের অবস্থা কী?
আমি চিঁ চিঁ করে বললাম, এখন মনে হয় ভালো। তবে ঘাড়ে খুব ব্যথা। কোথায়?
আমি হাত দিয়ে জায়গাটা দেখিয়ে দিলাম। বোন বলল, দে একটু মালিশ করে দিই। ভালো লাগবে।
আমি বললাম, না, না, লাগবে না
বোন আমার কথা শুনল না, মাথার কাছে বসে আমার ঘাড় মালিশ করতে লাগল। প্রথমে এক-দুইবার ব্যথার একটা খোঁচা অনুভব করলাম, তারপর কিন্তু বেশ আরামই লাগতে লাগল। আমি চোখ বুজে আরামে আহা-উঁহু করতে লাগলাম। বোন বলল, পঁড়া একটু সর্ষের তেল দিয়ে নিই, দেখবি ব্যথা কোথায় পালাবে।
ঘাড় মালিশ করতে করতে বোন বুয়াকে ডেকে খানিকটা সর্ষের তেল গরম করে দিয়ে যেতে বলল। বুয়া একটু পরেই গরম তেল দিয়ে গেল, সেটা হাতে নিয়ে বেশ কায়দা করে ঘাড়ে তেল মালিশ করে দিতে লাগল। সত্যি কথা বলতে কি বাংলা ভাষায় তেল মালিশ বলে যে একটা শব্দ আছে সেটা কোথা থেকে এসেছে কেমন করে এসেছে এই প্রথমবার আমি সেটা বুঝতে পারলাম। ঘাড় থেকে আরামটা আমার সারা শরীরে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। আমার চোখ বুজে এল এবং মনে হতে লাগল বেঁচে থাকাটা মন্দ ব্যাপার নয়। বেহেশতে নিশ্চয়ই হুর পরীরা এভাবে ঘাড় মালিশ করে দেবে। আমার ভেতরে একটা বেহেশতের ভাব চলে এল এবং ঠিক বেহেশতের মতো মুরগি রোস্টের গন্ধ পেতে লাগলাম।
বেহেশতি এই ভাবটা নিশ্চয়ই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। কারণ হঠাৎ করে আমার বোন বলল, মুরগি রোস্টের গন্ধ কোত্থেকে আসছে?
আমি চমকে উঠলাম, বললাম, তুমিও গন্ধ পাচ্ছ?
বোন অবিশ্যি পুরো ব্যাপারটিকে স্বর্গীয় অনুভূতি হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করল না, হুঙ্কার দিয়ে বলল, বুয়া।
বুয়া প্রায় সাথে সাথে ছুটে এল, আমারে ডাকছেন আম্মা?
বোন তেলের বাটিটা দেখিয়ে বললেন, এইখানে কী দিয়েছ?
সর্ষের তেল শেষ। মুরগি রোস্টের থেকে চিপে ঘি বের করে গরম করে দিয়েছি আম্মা!
এক মুহূর্তে আমার স্বর্গীয় আনন্দ উবে গেল, সমস্ত ব্যথা ভুলে আমি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বললাম, কী বললে তুমি? কী বললে? মুরগি রোস্টের ঘি?
বুয়া অবাক হয়ে বলল, এত রাগ হন কেন মামা? ঘি কি খারাপ জিনিস?
আমি চিৎকার করে বললাম, রসগোল্লাও তো ভালো জিনিস তাই বলে তুমি শরীরে রসগোল্লা মেখে বসে থাকবে?
বুয়া অবাক হয়ে বলল, মামা, এইসব কী কয়? মানুষ শরীলে রসগুল্লা মাখবে কেন? মামার কি মাথা খারাপ হইছে?
আমার ইচ্ছে হল বুয়ার গলা টিপে তাকে খুন করে ফেলি, অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করলাম। বোন খানিকক্ষণ চোখ লাল করে বুয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে হি হি করে হেসে ফেলল, কিছুতেই আর হাসি থামাতে পারে না। তার হাসি শুনে দুলাভাই আর বিল্টু ছুটে এল, জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
বোন আমাকে দেখিয়ে বলল, শুঁকে দেখ।
দুলাভাই আর বিল্টু সাবধানে আমাকে শুঁকে দেখল। বিল্টু ভুরু কুঁচকে বলল, মামা তোমার শরীর থেকে চিকেন রোস্টের গন্ধ বের হচ্ছে কেন?
দুলাভাই বললেন, নতুন ধরনের কোনো আফটার শেভ?
বুয়া ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করল, জে না। মামা শরীরে মুরগির রোস্টের ঘি মাখছে
দুলাভাই চোখ কপালে তুলে বলল, সে কী? এরকম কাজ করলে কেন?
আমি মেঘস্বরে বললাম, আমি করি নাই।
তা হলে কে করেছে?
আপা।
দুলাভাই বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা কোন ধরনের রসিকতা? দশটা নয় পাঁচটা নয় আমার একটা মাত্র শালা তাকে তুমি ঘি মাখিয়ে রাখছ? মানুষটা সাদাসিধে বলে সবাই মিলে কেন বেচারাকে উৎপাত কর?
বোন মাথা নাড়ল, হাসির দমকে কথা বলতে পারছে না, কোনোমতে বলল, আমি ইচ্ছা করে করি নাই–এই বুয়া।
সবাই মিলে হাসাহাসি করছে দেখে বুয়াও হঠাৎ করে খুব উৎসাহ পেয়ে গেল, সেও হাসতে হাসতে বলল, গোন্ধটা খারাপ না। এখন আপনাকে দেখলে মনে হয় একটা কামড় দেই। হি হি হি
আমার ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাম পা-টা টনটন করছে, কপালের কাছে খানিকটা ফুলে গেছে এবং সেই অবস্থায় ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে আমি চলে এলাম, ঠিক করলাম যতদিন এই বুয়া বাসায় আছে আমি আর সেই বাসায় যাচ্ছি না।
পরের এক সপ্তাহ আমার শরীর থেকে মুরগির রোস্টের গন্ধ বের হতে লাগল। যার সাথেই দেখা হয় সেই বলে, চিকেন রোস্ট আপনার খুব ফেবারিট? আচ্ছামতন খেয়েছেন। মনে হচ্ছে-শরীর থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।
.
সপ্তাহ দুয়েক পর ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম রাতে নিশ্চয়ই বেকায়দায় ঘুমিয়েছি, ঘাড়ে ব্যথা। এর আগের বার বোন মালিশ করে দিয়েছিল–ভারি আরাম লেগেছিল সেদিন, আমি তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘাড় মালিশ করতে শুরু করলাম। একটু পরেই আবিষ্কার করলাম আজকে সেরকম আরাম লাগছে না। অন্যে মালিশ করে দিলে যেরকম আরামে একেবারে চোখ বন্ধ হয়ে আসে নিজে মালিশ করলে তার ধারেকাছে যাওয়া যায় না। কারণটা কী? এর নিশ্চয়ই একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। অনেক দিন সায়রা সায়েন্টিস্টের বাসায় যাওয়া হয় নি একবার গিয়ে জিজ্ঞেস করে এলে হয়। যারা খেতে পছন্দ করে তাদের বাসায় দইয়ের হাড়ি নিয়ে যেতে হয়, যে কবি তার বাসায় যেতে হয়। কবিতার বই নিয়ে। যে গান গায় সে নিশ্চয়ই খুশি হয় গানের সিডি পেলে, যে বিজ্ঞানী তার কাছে নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক সমস্যা নিয়েই যাওয়া উচিত। পরদিন বিকেলবেলা আমি সায়রা। সায়েন্টিস্টের বাসায় হাজির হলাম। আমাকে দেখে সায়রা বললেন, ভালোই হয়েছে আপনি এসেছেন। মনে মনে আমি আপনাকেই খুঁজছি।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? আবার কোনো এক্সপেরিমেন্ট?
না, এক্সপেরিমেন্ট না। একটা মতামত জানার জন্য আপনার খোঁজ করছিলাম।
সায়রার কথা শুনে গর্বে আমার বুকটা কয়েক ইঞ্চি ফুলে গেল, আমার পরিচিতদের কেউই আমাকে খুব সিরিয়াসলি নেয় না। কখনো কেউ আমার মতামত জানতে চেয়েছে। বলে মনে পড়ে না। অথচ সায়রা এত বড় বিজ্ঞানী হয়ে আমার মতামত জানতে চাইছে। আমি মুখে এটা গাম্ভীর্য এনে জিজ্ঞেস করলাম, কোন বিষয়ে মতামত?
রসগোল্লা না সন্দেশ, কোনটা আপনার পছন্দ?
আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম, ভেবেছিলাম সায়রা বুঝি দেশ, সমাজ, রাজনীতি, ফিলসফি এরকম কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে! অবিশ্যি একদিক দিয়ে ভালোই হল জটিল কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে যেত-সেই হিসেবে এই প্রশ্নটাই ভালো। আমি বললাম, আমার ব্যক্তিগত পছন্দ রসগোল্লা
কেন?
জিনিসটা রসালো, নরম, মিষ্টি বেশি।
না, না, না- সায়রা আমাকে থামিয়ে দিয়ে জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, আমি স্বাদের কথা বলছি না।
আমি থতমত খেয়ে বললাম, তা হলে?
আকারের কথা বলছিলাম।
আকার?
হ্যাঁ। সায়রা গম্ভীর মুখে বলল, একটা হচ্ছে গোল, আরেকটা চতুষ্কোণ। কোনটা সঠিক?
আমি মাথা চুলকাতে শুরু করলাম। রসগোল্লা আর সন্দেশের আকারে যে সঠিক আর বেঠিক আছে কে জানত? আমতা-আমতা করে বললাম, ইয়ে-দুইটা দুই রকম। মনে করেন রসগোল্লা যদি চারকোনা হত তা হলে কি সেটাকে রসগোল্লা বলা যেত? বলতে হত রসকিউব। কিন্তু যেমন কেউ ভয় পেলে আমরা বলি চোখ রসগোল্লার মতো বড় হয়েছে-যদি রসগোল্লা না থেকে শুধু রসকিউব থাকত তা হলে আমরা কি সেটা বলতে পারতাম?
সায়রা মাথা নেড়ে বলল, আপনি ব্যাপারটা ধরতে পারছেন না। আমি বলছি আকার আর সাইজের দিক থেকে! মনে করেন আপনি পুরো ফ্রিজ রসগোল্লা আর সন্দেশ দিয়ে ভরে ফেলতে চান। কোনটা বেশি রাখতে পারবেন?
আমি আবার মাথা চুলকালাম, এক ফ্রিজ বোঝাই শুধু রসগোল্লা কিংবা শুধু সন্দেশ চিন্তা করেই আমার গা গুলিয়ে যায়। কী উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না, সায়রা বক্তৃতা দেওয়ার মতো করে বলল, সন্দেশ! কেন জানেন?
কেন?
কারণ সন্দেশ হচ্ছে কিউব, তাই সন্দেশ গায়ে গায়ে লেগে থাকতে পারে-কোনো জায়গা নষ্ট হয় না। কিন্তু রসগোল্লা হচ্ছে গোলক, এগুলো রাখলে তার মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে।
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম কিন্তু এত জিনিস থাকতে সায়রা কেন এই জিনিস নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে বুঝতে পারলাম না। আমার মুখ দেখে মনে হয় সায়রা সেটা টের পেল, জিজ্ঞেস করল, কেন আমি এটা বলছি বুঝতে পারছেন?
না।
খুব সহজ। সায়রা মাথা নেড়ে বলল, মনে করেন ডিমের কথা। ডিম যদি ডিমের মতো না হয়ে চারকোনা কিউবের মতো হত তা হলে কী হত?
ডিম পাড়তে মুরগিদের খুব কষ্ট হত।
না-না সেটা বলছি না!
তা হলে কোনটা বলছেন?
ডিম স্টোর করা কত সহজ হত চিন্তা করতে পারেন? একটার ওপর আরেকটা রেখে দেওয়া যেত। সেরকম তরমুজ যদি চারকোনা হত তা হলে অল্প জায়গায় অনেক বেশি তরমুজ রাখা যেত। আলু-টম্যাটো যদি চারকোনা হত–অল্প জায়গায় অনেক বেশি জিনিস রাখা যেত।
আমি চতুষ্কোণ কিউবের মতন ডিম, আলু, তরমুজ কিংবা টম্যাটো চিন্তা করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজটা কেন জানি সহজ হল না, উল্টো আমার শরীর কেমন জানি শিরশির করতে লাগল। সায়রা সেটা লক্ষ করল না, মুখ শক্ত করে বলল, আমি ঠিক করেছি যত ফলমূল আছে সবকিছু চতুষ্কোণ কিউবের মতো বানিয়ে ফেলব।
সব?
হ্যাঁ। লাউ কুমড়া পটল ঝিঙে থেকে শুরু করে আলু টম্যাটো ডিম কিছুই বাকি রাখব। গরিব দেশে কোল্ড স্টোরেজে এসব রাখতে কত জায়গা নষ্ট হয়-একবার কিউব বানিয়ে ফেললে আর কোনো জায়গা নষ্ট হবে না। কী বলেন আপনি?
আমি মাথা চুলকালাম-উদ্দেশ্য অতি মহৎ তাই বলে চারকোনা কিউবের মতো লাউ? কুমড়া? পটল? ডিম? সবকিছুই যদি চারকোনা হয়ে যায় তখন কী হবে? গাড়ির চাকা চারকোনা, চোখের মণি চারকোনা-ফুটবল চারকোনা-আকাশের চাঁদ চারকোনা-চিন্তা করেই আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আমার জন্য শেষ পর্যন্ত সায়রার মনে হয় একটু মায়াই হল, বলল, আপনি আসার পর থেকেই শুধু আমিই বকবক করে যাচ্ছি। এবারে আপনার কী খবর বলেন?
আমি বললাম, ভালো। তবে-
তবে কী?
খুব ভালো ছিলাম না।
কেন?
আমি তখন কলার ছিলকে আর মুগরির রোস্টের কাহিনী শুনালাম। সায়রা মোটামুটি ভদ্র মেয়ে অন্যদের মতো হেসে গড়িয়ে পড়ল না। গল্প শেষ করে আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেই ঘটনার পর আপনার কাছে একটা প্রশ্ন
কী প্রশ্ন?
মালিশ করলে খুব আরাম লাগে, কিন্তু নিজে নিজে মালিশ করলে এত আরাম লাগে, ব্যাপারটা কী?
আমার প্রশ্ন শুনে সায়রা ফিক করে একটু হেসে ফেলল, বলল, কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছেন! সত্যিই তো তাই! সে খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, মালিশ করলে সেখানে ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়, নার্ভ দিয়ে একটা স্টিমুলেশন যায় সেজন্য ভালো লাগে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, আপনাকে ব্যাপারটা একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই।
কী এক্সপেরিমেন্ট?
এই দেওয়ালে একটা ঘুসি মারেন দেখি।
দেওয়ালে ঘুসি মারব? ব্যথা লাগবে না?
না ব্যথা লাগবে না–আমি ব্যথা না লাগার একটা স্পেশাল ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি। সায়রা উঠে গিয়ে পানির মতো কী একটু ওষুধ এনে আমার হাতের আঙুলে লাগিয়ে দিল। বলল, মারুন ঘুসি।
আমি দেওয়ালে ঘুসি মেরে বাবাগো বলে হাত চেপে বসে পড়লাম, মনে হল সবগুলো আঙুল ভেঙে গেছে। বাম হাত দিয়ে ডান হাতের ব্যথা পাওয়া জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাঙা গলায় বললাম, আপনার ওষুধ কাজ করল না দেখি! ভয়ংকর ব্যথা লেগেছে।
এইটা ওষুধ ছিল না। এইটা ছিল পানি।
তা হলে?
ইচ্ছে করে বলেছিলাম যেন আপনি একটু ব্যথা পান।
কেন? আমি কী করেছি? আমাকে ব্যথা দিচ্ছেন কেন?
আপনি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছেন।
আমি এক্সপেরিমেন্ট করছি? কখন?
সায়রা হাসি হাসি মুখে বলল, এই যে আপনি যেখানে ব্যথা পেয়েছেন সেখানে হাত বুলাচ্ছেন। এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট।
কীভাবে?
মানুষ যখন ব্যথা পায় তখন ব্যথার অনুভূতিটা নার্ভের ভেতর দিয়ে ব্রেনে যায়, তখন ব্যথা লাগে। যখন আপনি ব্যথা পাওয়া জায়গায় হাত বুলাতে থাকেন তখন ব্যথার সাথে স্পর্শের অনুভূতিটাও পাঠাতে হয়। আপনার নার্ভ তখন কিছু সময় পাঠায় ব্যথার অনুভূতি অন্য সময় পাঠায় স্পর্শের অনুভূতি-যেহেতু ব্যথার অনুভূতিটা স্পর্শের অনুভূতির সাথে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে তাই সেটা কমে যায়। বুঝেছেন?
আমি মাথা নাড়লাম, বুঝেছি। সায়রার কথা বিশ্বাস করে মনে হয় একটু বেশ জোরেই ঘুসি মেরেছিলাম। ভাগাভাগি করার পরও হাতটা ব্যথায় টনটন করছে।
কাজেই যখন নিজে মালিশ করেন তখন মালিশের যে আরামের অনুভূতি-সেটা মালিশ করার সাথে ভাগাভাগি করে হয়-আমার মনে হয় সেটা একটা কারণ হতে পারে- যে কারণে অন্য কেউ মালিশ করলে পুরো আরামের অনুভূতিটা পাওয়া যায়।
কিন্তু মালিশ করার জন্য অন্য মানুষকে ভাড়া করা জিনিসটা কেমন দেখায়?
সায়রা মাথা নাড়ল, একেবারেই ভালো দেখায় না।
কাজেই এরকম আরামের একটা জিনিস কিন্তু কখনোই পাওয়া যাবে না।
আপনি ঠিকই বলেছেন। একজনু মানুষ খালি গায়ে বসে আছে আরেকজন তাকে তেল মাখিয়ে দলাইমলাই করছে ব্যাপারটা খুবই কুৎসিত। কিন্তু
কিন্তু কী?
সায়রা হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হয়ে গেল। একবার সে অন্যমনস্ক হয়ে গেলে হঠাৎ করে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। দশটা প্রশ্ন করলে একটার উত্তর দেয়, সেই উত্তরও হয় দায়সারা কাজেই আমি আর সময় নষ্ট না করে সায়রার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
.
মাসখানেক পরে হঠাৎ একদিন আমি সায়রার ই-মেইল পেলাম। বরাবরের মতো ছোট ই-মেইল, সেখানে লেখা :
জরুরি। দেখা করুন।
আমি সেদিন বিকালবেলাতেই সায়রার বাসায় হাজির হলাম। সায়রার মুখ আনন্দে ঝলমল করছে, নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তার মুখে এরকম আনন্দের ছাপ পড়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন নাকি?
বলতে পারেন করেছি।
কী জিনিস?
আপনাকে দেখাব, ধৈর্য ধরেন। তার আগে অন্য একটা জিনিস দেখাই।
কী?
সায়রা তার শেলফের দিকে দেখিয়ে বলল, এই দেখেন। আমি তাকিয়ে দেখি তার শেলফ বোঝাই মালিশের বই। মাথা মালিশ, ঘাড় মালিশ, পেট মালিশ, পিঠ মালিশ থেকে শুরু করে চোখের ভুরু মালিশ, চোখের পাতি মালিশ এমনকি কানের লতি মালিশ পর্যন্ত আছে! সেই মালিশের কায়দাকানুন এসেছে সারা পৃথিবী থেকে ভারতীয় আয়ুর্বেদীয় মালিশ থেকে শুরু করে চীন-জাপান-কোরিয়ান মালিশ, আমেরিকান পাওয়ার মালিশ, মেক্সিকান ঝাল মালিশ, আফ্রিকান গরম মালিশ, এমনকি একেবারে এস্কিমো ঠাণ্ডা মালিশও আছে। শুধু যে বই তাই নয়, ভিডিও, সিডি, কাগজের বান্ডিল সবকিছুতে বোঝাই। আমি অবাক হয়ে বললাম, করেছেন কী? পৃথিবীর সব মালিশের বই সিডি ক্যাসেট নিয়ে এসেছেন মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ।
কেন?
ব্যাপারটা একটু স্টাডি করে দেখলাম।
কী দেখলেন?
আপনি এই চেয়ারটায় বসেন, আমি দেখাই।
এর আগেও সায়রার কথা শুনে এরকম চেয়ারে বসে বড় বড় বিপদে পড়েছি। ভয়ে ভয়ে বললাম, কোনো বিপদ হবে না তো?
না। কোনো বিপদ হবে না।
আমি সাবধানে চেয়ারে বসলাম। সায়রা বলল, চোখ বন্ধ করেন।
যে ব্যাপারটাই ঘটুক-চাইছিলাম চোখের সামনেই সেটা হোক, কিন্তু সায়রার কথা শুনে চোখ বন্ধ করতে হল। সায়রা পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, আমি খুব সাবধানে আপনার ঘাড় স্পর্শ করছি।
টের পেলাম সায়রা আমার দুই ঘাড় স্পর্শ করল। এবারে হালকাভাবে মালিশ করে দিচ্ছি-এটি হচ্ছে কোরিয়ান মালিশ।
আমি চোখ বন্ধ করে টের পেলাম খুব দক্ষ মানুষের মতো সায়রা আমার ঘাড় মালিশ করতে শুরু করেছে। সায়রার মতো এরকম একজন ভদ্রমহিলা আমার ঘাড় মালিশ করে দিচ্ছে চিন্তা করে আমার একটু অস্বস্তি হতে লাগল কিন্তু সে এমন এক্সপার্টের মতো হাত চালিয়ে যাচ্ছে যে আরামে আমার শরীর অবশ হয়ে এল।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর আমি বললাম, এখন চোখ খুলতে পারি?
সায়রা বলল, খোলেন।
আমি চমকে উঠলাম, সায়রা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ঘাড় মালিশ করে দিচ্ছে কিন্তু উত্তরটা আসলো সামনে থেকে। আমি চোখ খুলে একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম, সায়রা সামনে একটা চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে মৃদু মৃদু হাসছে! অন্য কেউ আমার ঘাড় মালিশ করছে।
আমি পেছনে তাকালাম, কেউ নেই। ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখি দুটো হাত ঘাড়ের মাংসপেশি ডলে দিচ্ছে। একটু ভালো করে তাকালাম, সত্যিকারের হাত কোনো সন্দেহ। নেই-কিন্তু সেটা কনুইয়ের কাছে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। আতঙ্কে চিৎকার করে আমি হাত দুটি ধরে ছুঁড়ে দেবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেগুলো প্রচণ্ড শক্তিশালী, আমার ঘাড় কিছুতেই ছাড়বে না। আমি চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলাম, পায়ের সাথে ধাক্কা লেগে একটা টেবিল ল্যাম্প, দুইটা ফুলদানি, বইয়ের শেলফ উন্টে পড়ল। আমি লাফিয়ে উঁদিয়ে গড়াগড়ি দিয়ে সেই ভয়ংকর ভৌতিক দুটো হাত থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করতে লাগলাম-কিন্তু কিছুতেই ছাড়া পেলাম না। আমার লাফঝাঁপ দেখে সায়রা ভয় পেয়ে কোথায় জানি ছুটে গিয়ে একটা সুইচ টিপ দিতেই হঠাৎ করে হাত দুটো আমাকে ছেড়ে দিয়ে কেমন যেন নেতিয়ে পড়ল। আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দুই লাফে সরে গিয়ে ভয়ে ভয়ে সেই কাটা হাত দুটোর দিকে তাকালাম, এখনো প্রচণ্ড আতঙ্কে আমার বুকের ভেতরে ধকধক শব্দ করছে।
সমস্ত ঘরের একেবারে লণ্ডভণ্ড অবস্থা, এর মাঝে সায়রা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু শান্ত হবার পর সায়রা জিজ্ঞেস করল, আপনি-আপনি কী করছেন?
আমি হাত দুটো দেখিয়ে বললাম, এগুলো কার কাটা হাত?
সায়রা হেঁটে গিয়ে হাত দুটো তুলে বলল, কাটা হাত? কাটা হাত কেন হবে? এটা পলিমারের হাত। ভেতরে মাইক্রো প্রসেসর কন্ট্রোলড যন্ত্রপাতি আছে।
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, বড় বড় নিশ্বাস ফেলে বললাম, তার মানে এইগুলো সত্যিকারের হাত না?
সায়রা চোখ কপালে তুলে বলল, আপনি সত্যিই মনে করেন আমি মানুষের হাত কেটে বাসায় নিয়ে আসব?
না, মানে ইয়ে- আমি আমতা-আমতা করে বললাম, আমি ভেবেছিলাম ভৌতিক কিছু।
ভৌতিক? দিনদুপুরে ভৌতিক? সায়রা রেগে গিয়ে বলল, আপনি সত্যিই মনে করেন পৃথিবীতে ভৌতিক জিনিস থাকা সম্ভব?
ভূত আছে কি নেই সেটা নিয়ে একটা তর্ক শুরু হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব, তাই আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, এইগুলি আপনি নিজে তৈরি করেছেন?
ভাঙা টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি তুলতে তুলতে সায়রা মুখ বাঁকা করে বলল, না, এগুলো তো কিনতে পাওয়া যায় তাই আমি ধোলাইখাল থেকে কিনে এনেছি!
আমিও লণ্ডভণ্ড ঘরটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে করতে বললাম, আই অ্যাম সরি- হঠাৎ করে দেখে এত ভয় পেয়ে গেলাম!
সায়রা কঠিন মুখ করে বলল, আপনি যখন এরকম ভীতু মানুষ আপনার ঘর থেকেই বের হওয়া উচিত না। দরজা বন্ধ করে বসে থাকবেন, একটু পরে পরে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিবেন। আরো ভালো হয় কোনো পীর সাহেবকে ধরে গলায় একটা তাবিজ লাগিয়ে নিলে-
সায়রা রেগে গেছে, আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললাম, আমাকে শুধু শুধু দোষ দিচ্ছেন। হাত দুটো এমন চমৎকারভাবে আমার ঘাড় মালিশ করছিল যে আমি একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর ছিলাম যে এগুলো আপনার হাত! যখন তাকিয়ে দেখি আপনি সামনে-আর হাত দুটো কনুই পর্যন্ত-ভয়ে আমার পেটের ভাত চাল হয়ে গেল। আপনি আমার জায়গায় থাকলে আপনারও হত
আমার কথা শুনে সায়রার রাগ একটু কমল মনে হল, বলল, তা হলে আপনি বলছেন এটা একেবারে সত্যিকারের হাতের মতো?
সত্যিকার থেকে ভালো। কেমন করে তৈরি করলেন?
অনেক যন্ত্রণা হয়েছে। আঙুল কীভাবে নড়াব, কতটুকু চাপ দেবে, কতটুকু ঘষা দেবে সবকিছু হিসাব করে বের করতে হয়েছে। তারপর যান্ত্রিক একটা হাত তৈরি করতে হয়েছে, সেটার সাথে মাইক্রো প্রসেসর ইন্টারসেফ লাগাতে হয়েছে। প্রোগ্রামিং করতে হয়েছে, পুরো প্রোগ্রামটি ডাউনলোড করে ই-প্রম ব্যবহার করে ভেতরে বসাতে হয়েছে।
এত কষ্ট করে এটা তৈরি করলেন?
সায়রা উদাস গলায় বলল, খালি গায়ে একজন তেল মেখে বসে আছে আরেকজন তাকে দলাইমলাই করছে দৃশ্যটা এত কুৎসিত- তাই এটা তৈরি করলাম। যে কেউ পড়াশোনা করতে করতে, টিভি দেখতে দেখতে কিংবা গান শুনতে শুনতে শরীরের যে কোন জায়গা ম্যাসেজ করাতে পারবে।
আমি বললাম, কী সাংঘাতিক!
হ্যাঁ। সায়রা বলল, আমি এটা তৈরি করেছিলাম আপনার জন্য কিন্তু আপনি যা একটা কাণ্ড করলেন, এখন মনে হচ্ছে বাক্সে তালা মেরে রাখতে হবে।
আমি চমকে উঠে বললাম, আ-আ-আমার জন্য তৈরি করেছেন? আ-আ-আমার জন্য?
সায়রা বলল, আপনার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই-এটা আপনাকে নিতে হবে না! এটা দেখে ভয় পেয়ে হার্টফেল করে আপনি মারা যাবেন আর পুলিশ এসে আমাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবে! আমি তার মাঝে নেই।
আমি হড়বড় করে বললাম, না-না-না! আমি আর ভয় পাব না। একেবারেই ভয় পাব না। বিশ্বাস করেন-এই যে আমার নাক ছুঁয়ে বলছি, চোখ ছুঁয়ে বলছি
সায়রা ভুরু কুঁচকে বলল, নাক ছুঁয়ে বললে চোখ ছুঁয়ে বললে কী হয়?
আমি মাথা চুলকে বললাম, তা তো জানি না। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়।
সায়রা হেসে বলল, তার মানে আপনি বলছেন এই রবোটিক হ্যান্ড ফর অটোমেটেড মাসল রিলাক্সিং ডিভাইস উইথ মাইক্রো প্রসেসর ইন্টারফেসটা নিতে আপনার আপত্তি নেই?
আমি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বললাম, না, কোনো আপত্তি নাই।
সায়রা বলল, আপনি কিন্তু মনে করবেন না এটা আপনাকে দিচ্ছি শুধু মজা করার জন্যে। এর পিছনে কিন্তু গভীর বৈজ্ঞানিক ব্যাপার আছে।
আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম কী ধরনের ব্যাপার?
আপনি এটার ফিল্ড টেস্ট করবেন। আপনাকে একটা ল্যাবরেটরি নোটবই কিনতে হবে এবং সেখানে সবকিছু লিখে রাখতে হবে। আপনি আমার জন্যে ডাটা রাখবেন।
ব্যাপারটা কীভাবে করতে হয় সেটা নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই কিন্তু আমি তবু ঘাবড়ালাম না, মাথা নেড়ে বললাম, রাখব।
ভেরি গুড। সায়রা বলল, এখন তা হলে আপনাকে দেখিয়ে দেই এটা কীভাবে কাজ করে।
আমি বললাম, তার আগে আমার একটি কথা আছে।
কী কথা?
আপনার এই যন্ত্রকে এরকম কটমটে নাম দিয়ে ডাকতে পারব না।
তা হলে এটাকে কী ডাকবেন?
আমি এটাকে ডাকব মালিশ মেশিন।
আমার কথা শুনে সায়রা হি হি করে হেসে বলল, আমার এত কষ্ট করে তৈরি করা এরকম মডার্ন একটা যন্ত্রের এরকম মান্ধাতা আমলের নাম দিয়ে দিলেন?
আমি জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, আমি মানুষটাই তো মান্ধাতা আমলের।
ঠিক আছে? সায়রা মাথা নেড়ে বলল, আপনার যেটা ইচ্ছে হয় সেটাই ডাকেন। আগে আসেন আপনাকে শিখিয়ে দেই এটা কীভাবে কাজ করে।
আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম, আমি কি শিখতে পারব?
নিশ্চয়ই পারবেন। সায়রা তার যন্ত্রের হাত দুটোকে তুলে নিয়ে বলল, আমি এটা এমনভাবে ডিজাইন করেছি যেন খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
আমি খুশি হয়ে বললাম, ভেরি গুড। তারপর সায়রার পিছু পিছু তার ল্যাবরেটরির ঘরের দিকে রওনা দিলাম।
সন্ধেবেলা আমি আমার ঘরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসেছি। আমার কোলে একটা নোটবই এবং একটা বল পয়েন্ট কলম। নোটবইয়ের উপরে লেখা মালিশ মেশিন সংক্রান্ত তথ্য। সায়রা যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেভাবে আজকে আমি বৈজ্ঞানিক তথ্য নেব বলা যায় জীবনের প্রথম। সায়রার তৈরি করা হাত দুটো সামনে রাখা আছে আমি জানি এটা যান্ত্রিক হাত, ভেতরে যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিক্স এবং পুরোটা এক ধরনের পলিমার দিয়ে তৈরি। তারপরেও মেঝেতে রেখে দেওয়া হাত দুটোকে দেখে আমার কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে থাকে।
সায়রা পুরোটা এমনভাবে তৈরি করেছে যেন ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা না হয়। পুরোটা সাউন্ড অ্যাকটিভেটেড অর্থাৎ শব্দ দিয়ে চালু করা যায়। আমাকে কোনো সুইচ টিপতে হবে না শুধু জোরে একবার হাততালি দিতে হবে। বন্ধ করার জন্য তিনবার, দু বার কাছাকাছি তৃতীয়বার একটু পরে। এখন মালিশ মেশিন চালু করার জন্য আমি হাত দুটোর। দিকে তাকিয়ে জোরে একবার হাততালি দিলাম।
সাথে সাথে হাত দুটো জীবন্ত হাতের মতো নড়ে উঠল। আমি নিশ্চিতভাবে জানি এটা যন্ত্রের হাত তারপরেও আমার কেমন জানি ভয়ে শরীর শিরশির করতে থাকে। হাত দুটো কেমন জানি গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে, তারপর আঙুলগুলো দিয়ে হাঁটতে থাকে, আমি নিশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে রইলাম, দেখলাম হাত দুটো মেঝেতে খামচে খামচে আমার পিছনে গিয়ে চেয়ার বেয়ে উঠতে লাগল। একটু পরে টের পেলাম দুটো হাত আমার ঘাড়ের দুই পাশে আঁকড়ে ধরেছে। আমি শক্ত হয়ে বসে রইলাম এবং টের পেলাম হাত দুটো খুব সাবধানে আমার ঘাড় মালিশ করতে শুরু করেছে। প্রথমে খুব আস্তে আস্তে তারপর একটু জোরে। হাত দুটো আমার ঘাড় থেকে দুই পাশে একটু নেমে গেল, গলায় হাত বুলিয়ে পিঠের দিকে মালিশ করে দিল। আস্তে আস্তে হাত নাড়িয়ে সেটা নিচে থেকে উপরে, উপর থেকে নিচে তারপর দুই পাশে সরে যেতে লাগল। খুব ধীরে ধীরে আমার শরীরটা শিথিল হয়ে আসে, এক ধরনের আরাম সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, আমার হাত-পা, ঘাড়, মাথা সবকিছু কেমন জানি অবশ হয়ে আসে। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসতে থাকে এবং আমি আরামে আহ্ উহ্ করে একেবারে নেতিয়ে পড়তে থাকি। রাতে ঘুমানোর আগে মালিশ মেশিন সংক্রান্ত তথ্য নোটবইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় লিখলাম।
১৪ই অক্টোবর রাত্রি দশটা তিরিশ
মিনিট
অত্যন্ত কার্যকরী সেশান। অল্প কাতুকুতু অনুভব হয়।
তবে মেঝেতে খামচে খামচে আসার দৃশ্যটি ভীতিকর।
দুর্বল হার্টের মানুষের জন্য সুপারিশ করা গেল না।
মালিশের সাথে তৈল প্রদানের ব্যবস্থা করা যায়।
নিজের লেখাটি পড়ে আমি বেশ মুগ্ধ হয়ে গেলাম, কী সুন্দর গুছিয়ে লিখেছি, পড়লেই একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা গবেষণা ভাব আছে বলে মনে হয়।
মালিশ মেশিনের হাত দুটো কোথায় রাখা যায় ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, আজকের জন্য আপাতত খাটের নিচে রেখে দিলাম। মশারি টাঙিয়ে শুয়ে শুয়ে আমি মালিশ মেশিন নিয়ে কী কী করা যায় সেটা চিন্তা করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকি। দেশের অবস্থা খারাপ, চোর-ডাকাতের উৎপাত খুব বেড়েছে। প্রতিদিনই খবর পাচ্ছি আশপাশে কারো বাসা থেকে কিছু না কিছু চুরি হচ্ছে। আমার বাসায় এমনিতেই কিছু নেই কিন্তু চোর এসে যদি মালিশ মেশিনের হাত দুটো চুরি করে নিয়ে যায় তা হলে আমি খুব বিপদে পড়ে যাব। কালকেই ভালো দেখে একটা লোহার ট্রাঙ্ক কিনে আনতে হবে–দেরি করা ঠিক হবে না।
আমি অবিশ্যি তখনো জানতাম না যে আসলে এর মাঝেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
.
এমনিতে আমার ঘুম খুব গভীর, বাসায় বোমা পড়লেও ঘুম ভাঙে না-কিন্তু ঠিক কী কারণ জানি না রাত্রিবেলা আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি শুয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম কেন হঠাৎ ঘুমটা ভেঙেছে কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম না। তলপেটে একটু চাপ অনুভব করছিলাম, বাথরুমে গিয়ে সেই চাপটা কমিয়ে আসব কিনা চিন্তা করছিলাম কিন্তু বিছানা থেকে ওঠার ইচ্ছে করছিল না তাই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। ঠিক তখন মনে হল ঘরের ভেতর কয়েকজন মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। আমি এই বাসায় একা থাকি আর কারো ঘোরাঘুরি করার কথা নয়। যারা ঘোরাঘুরি করছে তারা নিশ্চয়ই ভুল করে চলে আসে নি ইচ্ছে করেই এসেছে। ইচ্ছেটা যে খুব মহৎ না সেটাও বোঝা খুব সহজ। আমার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ঘুমের ভাব করে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা, মানুষগুলো যখন দেখবে এখানে নেয়ার মতো কিছু নেই তখন নিজেরাই যেদিক দিয়ে এসেছে সেদিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ মনে হয় আমার ইচ্ছেমতো চলে না-নিজেদের একটা স্বাধীন মতামত আছে। এই মাত্র কিছুদিন আগে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার পা একটা কলার ছিলকের মাঝে পা দিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল। আজকেও তাই হল, আমি হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম যে আমি বলে বসেছি কে?
ঘরের ভেতরে যারা ঘোরাঘুরি করছিল তারা যে যেখানে ছিল সেখানে থেমে গেল। শুনলাম একজন বলল, কাউলা, মক্কেল তো ঘুম থেকে উঠছে মনে লয়।
কাউলা নামের মানুষটা বলল, ঠিকই কইছেন ওস্তাদ। গুলি করমু?
অন্ধকারে করিস না। মিস করলে গুলি নষ্ট হইব। গুলির কত দাম জানস না হারামজাদা?
অন্ধকারে গুলি করে পাছে গুলি নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে ঘরের ভেতরের মানুষগুলো লাইট জ্বালাল। আমি দেখলাম দুইজন মানুষ, একজন কুচকুচে কালো। মনে হয়, সেইজন্যই নাম কাউলা। অন্যজন শুকনো এবং দুবলা, নাকের নিচে ঝাঁটার মতো গোঁফ, ঠিক কী কারণ।
জানি না, মাথার মাঝে একটা বেসবল ক্যাপ। দুইজনেই হাফপ্যান্ট পরে আছে হাফপ্যান্টের নিচে শুকনো শুকনো পাগুলো কেমন যেন বিতিকিচ্ছি হয়ে বের হয়ে আছে। কাউলার পরনে একটা লাল গেঞ্জি। ওস্তাদ একটা সবুজ রঙের টি-শার্ট পরে আছে, টি-শার্টে মাইকেল জ্যাকসনের ছবি। কাউলার হাতে একটা বন্দুকের মতো অস্ত্র মনে হয় এইটাকে কাটা রাইফেল বলে। ওস্তাদের হাতে একটা পিস্তল। হঠাৎ আলো জ্বালানোতে সবার চোখই একটু ধাঁধিয়ে গেছে। ওস্তাদ তার মাঝে হাত দিয়ে চোখ আড়াল করে মশারির কাছে এগিয়ে এসে আমাকে দেখার চেষ্টা করল, আমাকে দেখে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, কাউলা?
জে ওস্তাদ।
ভুল বাসা।
কাউলা নামের মানুষটা চমকে উঠে বলল, কী কন ওস্তাদ! ভুল বাসা?
হয় হারামজাদা। এই দ্যাখ। বলে মানুষটা মশারি তুলে আমাকে দেখাল।
আমি জানি, আমাকে দেখে মানুষজন খুব খুশি হয় না। কিন্তু এই মাঝরাতে আমাকে দেখে দুই ডাকাতের যা মনখারাপ হল সেটা আর বলার মতো নয়।
কাউলা বলল, হায় হায়। এইটা তো দেহি সেই হাবাগোবা মানুষটা!
ওস্তাদ চোখ লাল করে কাউলার দিকে তাকিয়ে বলল, হারামজাদা, একটা সহজ কাজ করতে পারস না? এত কষ্ট করে গ্রিল কাইটা ঢুকলাম আর অহন দেহি ভুল বাসা।
কাউলা মুখ কঁচুমাচু করে বলল, ভুল হয়ে গেছে ওস্তাদ! বাইরে থন মনে হইল দোতলা-আসলে তিন তলা।
এখন কী করবি?
আইছি যহন যা পাই লইয়া যাই।
তখন কাউলা এবং ওস্তাদ দুইজনেই আমার ঘরের চারপাশে তাকিয়ে একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ওস্তাদ বলল, এর তো দেহি কিছুই নাই। একটা বাক্স পর্যন্ত নাই।
কাউলা বলল, খালি একটা টেলিভিশন
এতক্ষণ আমি কোনো কথাবার্তা বলি নাই, তাদের কথাবার্তায় আমার যোগ দেওয়াটা মনে হয় ঠিক ভদ্রতাও হত না, কিন্তু টেলিভিশনের ব্যাপারটা চলে আসায় আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম, ইয়ে মানে টেলিভিশনটা নষ্ট।
ওস্তাদ বলল, নষ্ট? কেমন করে নষ্ট হল?
লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। বাজে প্রোগ্রাম হচ্ছিল তো
ওস্তাদ এবং কাউলা মনে হয় প্রথমবার আমার দিকে ভালো করে তাকাল এবং আমি স্পষ্ট দেখলাম ওস্তাদের মুখটায় কেমন যেন ভয়ের ছাপ পড়ল। সে ঘুরে কাউলার দিকে তাকিয়ে বলল কাউলা, চল যাই।
চলে যাব?
হ্যাঁ। আমি কামকাজ শিখছি সুলেমান ওস্তাদের কাছে। সুলেমান ওস্তাদ কইছে কখনো হাবাগোবা মানুষের বাড়িতে চুরি-ডাকাতি করতে যাবি না।
কেন ওস্তাদ?
বিপদ হয়। অনেক বড় বিপদ হয়।
কাউলাকেও এবারে খুব চিন্তিত দেখাল। আমি আমার বাসায়, আমার বিছানায় মশারির ভেতরে জবুথবু হয়ে বসে আছি। আর দুইজন ডাকাত আমার দিকে দুশ্চিন্তা নিয়ে তাকিয়ে আছে পুরো ব্যাপারটার মাঝে একটা কেমন যেন অবিশ্বাসের ব্যাপার আছে। কাউলা কাছে এসে মশারিটা তুলে খানিকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল-আমি মুখটাকে একটু হাসি হাসি করার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুব একটা লাভ হল না।
কাউলা ওস্তাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ওস্তাদ হাবাগোবা মানুষের বাড়িতে চুরি-ডাকাতি করলে বিপদ হয় কেন?
একজন মানুষ কখন কী করবে সেটা আন্দাজ করা যায়, তার জন্য রেডি থাকা যায়। কিন্তু বোকা মানুষ কখন কী করবে সেটা আন্দাজ করা যায় না। এরা একেবারে উল্টাপাল্টা কাজ করে সিস্টিম নষ্ট করে দেয়।
কাউলা চিন্তিতভাবে বলল, ওস্তাদ, বিপদ ডেকে লাভ আছে? গুলি কইরা ফিনিস কইরা দেই।
ওস্তাদ প্রস্তাবটা খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, নাহ। গুলির অনেক দাম। বাজে খরচ করে লাভ নাই।
আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম, আমার জানের দাম গুলি থেকে কম হওয়ায় মনে হয় এই যাত্রা বেঁচে গেলাম।
কাউলা বলল, এসেই যখন গেছি, যা পাই নিয়া নেই?
ওস্তাদ টেবিলের কাছে রাখা চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে উদাস গলায় বলল, নে।
কাউলা তখন আমার কাছে এগিয়ে আসে, হাতের বন্দুকটা দিয়ে মশারিটা উপরে তুলে বলল, টাকাপয়সা যা আছে দেন।
আমি তাড়াতাড়ি বালিশের নিচে থেকে মানিব্যাগটা বের করে সেখান থেকে সব টাকা বের করে কাউলার হাতেই দিয়ে দিলাম। কাউলা গুনে মুখ বিকৃত করে বলল, মাত্র সাতাইশ টাকা? তার মাঝে একটা দশ টাকার নোট ছিঁড়া?
সাতাশ টাকার মাঝে একটা নোট ছেঁড়া বের হওয়ার জন্য লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল। আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম, খেয়াল করি নাই, এক রিকশাওয়ালা গছিয়ে দিয়েছে।
মাত্র সাতাইশ টাকা দিয়ে কী হইব? গ্রিল কাটার ভাড়া করছি দুই শ টাকা দিয়ে।
ওস্তাদ বলল, বাদ দে কাউলা বাদ দে।
বাদ দেই কেমন কইরা? কাউলা মহাখাপ্পা হয়ে বলল, বউয়ের সোনা গয়না
অলংকার কই?
আমি মাথা চুলকে বললাম, জি, এখনো বিয়ে করি নাই।
ওস্তাদ চেয়ারে বসে পা নাচাচ্ছিল। পা নাচানো বন্ধ করে বলল, এখনো বিয়া করেন। নাই?
জি না।
বয়স কত?
সার্টিফিকেটে পঁয়ত্রিশ। অরিজিনাল আরো দুই বছর বেশি।
সাঁইত্রিশ বছর বয়স এখনো বিয়া করেন নাই? তা হলে বিয়ে করবেন কখন? বুড়া হইলে?
সাঁইত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেল এখনো বিয়ে হয় নি সেজন্য আবার আমার লজ্জায় মাথা কাটা গেল। আমতা-আমতা করে বললাম, ইয়ে-চেষ্টা করে যাচ্ছি-কিন্তু কোনো মেয়ে রাজি হতে চায় না।
কাউলা অবিশ্যি বিয়ের আলাপে একেবারে উৎসাহ দেখাল না। আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল, মূল্যবান আর কী আছে বাসায়?
জাহানারা ইমামের নিজের হাতে অটোগ্রাফ দেওয়া একটা বই আছে।
কাউলা কিছু না বুঝে ওস্তাদের দিকে তাকাল, ওস্তাদ হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, কাউলা, আয় যাই। হাবাগোবা মানুষের কাছাকাছি থাকা খুব বড় রিস্ক।
কাউলা অবিশ্যি তবু হাল ছাড়ল না, আমার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল, সত্যিকারের মূল্যবান কী আছে? ঘড়ি? আংটি?
আংটি নাই। আমি ঢোক গিলে বললাম, একটা ঘড়ি আছে।
দেখি।
আমি বালিশের তলা থেকে আমার ঘড়িটা বের করে দিলাম। ডিজিটাল ঘড়ি স্টেডিয়ামের সামনে ফুটপাত থেকে দশ টাকায় কিনেছিলাম। আরো ভালো করে দরদাম করলে মনে হয় আরো দুই টাকা কম রাখত। ঘড়িটা দেখে কাউলা খুব রেগে গেল, চিৎকার করে বলল, আপনি একজন ভদ্রলোক মানুষ এই ঘড়ি পরেন? রিকশাওয়ালারাও তো এইটা পরে না।
আমি বললাম, জি খুব ভালো টাইম দেয়। প্রতি ঘণ্টায় শব্দ করে।
শব্দের খেতা পুড়ি-বলে কাউলা ঘড়িটা মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে গুঁড়ো করে ফেলল।
ওস্তাদ পা নাচানো বন্ধ করে মেঘের মতো গর্জন করে বলল, কাউলা?
জে ওস্তাদ।
তুই এইটা কী করলি? তোরে কতবার বলেছি অপারেশন করার সময় রাগ করতে। পারবি না। মাথা ঠাণ্ডা রাখবি। রাগ করলেই কামকাজে ভুল হয়, বিপদ হয়। বলি নাই তোরে?
জে, বলেছেন ওস্তাদ।
এই মানুষ চরম হাবাগোবা-এর সামনে খুব সাবধান।
গত পরশু যে চাকু মারলাম একজনরে—
চাকু মারা ঠিক আছে। ভাবনাচিন্তা করে ঠাণ্ডা মাথায় বাড়ির মালিকরে চাকু মারতেই বউ স্টিলের আলমারির চাবি দিয়ে দিল। এখানে তুই রাগ করে ঘড়িটা গুঁড়া করে দিলি তাতে কী লাভ হল?
কাউলা আমাকে দেখিয়ে বলল, এরে একটা চাকু মারা ঠিক আছে?
ওস্তাদ উদাস গলায় বলল, মারতে চাইলে মার। চাকু মারায় খরচ নাই, গুলি নষ্ট হয়। পত্রিকায় খবর ওঠে, মানুষ ভয়ভীতি পায়, বিজনেসের জন্য ভালো। চাকু আছে সাথে?
কাউলা মাথা নাড়ল, বলল, জে না। বড় অপারেশন মনে করে কাটা রাইফেল নিয়ে বের হইছিলাম।
তা হলে?
কাউলা কিছুক্ষণ মাথা চুলকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কাছে আছে?
জি একটা আছে। বেশি বড় না। একটু ভোঁতা।
ভোঁতা? কাউলা খুব বিরক্ত হল, ভোঁতা চাকু কেউ ঘরে রাখে নাকি?
বাসায় একটা ভোঁতা চাকু রাখার জন্য আবার লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল। কাউলা মুখ খিঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, চাকুটা কই?
রান্নাঘরে। ড্রয়ারের ভিতরে।
কাউলা খুব বিরক্ত হয়ে রান্নাঘরে চাকু আনতে গেল। আমি আর ওস্তাদ চুপচাপ বসে আছি। আমি মশারির ভিতরে, ওস্তাদ চেয়ারের উপর। কোনো কথা না বলে দুইজন চুপচাপ বসে থাকা এক ধরনের অভদ্রতা-আমি তাই আলাপ চালানোর জন্য বললাম, ইয়ে-চাকু মারলে কি ব্যথা লাগে?
ওস্তাদ বলল, কোথায় মারে তার ওপর নির্ভর করে। পেটে মারলে বেশি লাগে না।
আপনারা কোথায় মারবেন?
সেইটা কাউলা জানে-তার কোথায় মারার শখ। হাত পাকে নাই এখনো, প্র্যাকটিস দরকার। ওস্তাদ আমাকে ভালো করে পরীক্ষা করে বলল, আপনাকে মনে হয় পেটেই মারবে। ভুঁড়িটা দেখে লোভ হয়।
ও। এরপর কী নিয়ে কথা বলা যায় চিন্তা করে পেলাম না। অবিশ্যি আর দরকারও ছিল না। কাউলা ততক্ষণে চাকু আর একটা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে চলে এসেছে।
ওস্তাদ বিরক্ত হয়ে বলল, তোকে কতবার কইছি জিব্বাটারে সামলা? অপারেশনে গিয়ে কখনো খাইতে হয় না, কই নাই?
কইছেন ওস্তাদ।
তাইলে?
আপনার জন্য আনছি। কিরিম বিস্কুট।
ওস্তাদের মুখটা একটু নরম হল, বলল, ও, কিরিম বিস্কুট? দে তাইলে। ওস্তাদ আর কাউলা তখন টেবিলের দুই পাশে দুইটা চেয়ার নিয়ে বসে ক্রিম বিস্কুট খেতে লাগল। মাত্র গতকাল কিনে এনেছি, যেভাবে খাচ্ছে মনে হয় এক্ষুনি পুরো প্যাকেট শেষ করে ফেলবে।
মশারির ভেতরে বসে বসে আমি কাউলা আর তার ওস্তাদকে দেখতে লাগলাম, বিস্কুট খাওয়া শেষ করেই তারা আমার পেটে চাকু মারছে। কী সর্বনাশ ব্যাপার! আমি এখন কী করব? মশারিসহ তাদের ওপর লাফিয়ে পড়ব? চিৎকার করে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করব? হাত জোড় করে কাকুতি-মিনতি করব? নাকি সিনেমায় যেরকম দেখেছি নায়কেরা মারামারি করে সেভাবে মারামারি শুরু করে দেব?
কিন্তু আমার কিছুই করা লাগল না, তখন সম্পূর্ণ অন্য একটা ব্যাপার ঘটল এবং সেটা ঘটাল একটা মশা। মশাটা সম্ভবত ওস্তাদের ঘাড়ে বসে কামড় দিয়ে খানিকটা রক্ত খাবার চেষ্টা করল, ওস্তাদ বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে মশাটাকে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে বলল, ওহ! এই মশার যন্ত্রণায় মনে হয় চুরি-ডাকাতি ছেড়ে দিতে হবে।
ওস্তাদ, মশারে তাচ্ছিল্য কইরেন না। কাউলা বলল, ডেঙ্গু মশা বিডিআর থেকেও ডেঞ্জারাস।
ঠিকই কইছিস। ওস্তাদ এবারে মশাটাকে লক্ষ করে, তার নাকের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, দুই হাত দিয়ে সশব্দে সেটাকে থাবা দিয়ে মেরে ফেলল-হাততালি দেবার মতো একটা শব্দ হল তখন।
সাথে সাথে খাটের নিচে রাখা মালিশ মেশিনের দুইটা হাত চালু হয়ে যায়। সেটাকে প্রোগ্রাম করা আছে যেদিকে শব্দ হয়েছে সেদিকে এগিয়ে যাবার জন্য। কাজেই খাটের নিচে হাত দুটো আঙুল ভর করে এগিয়ে আসতে শুরু করল। আমি বিস্ফারিত চোখে দেখলাম সেগুলো মেঝে খামচে খামচে এগিয়ে যাচ্ছে।
ওস্তাদের কাছাকাছি গিয়ে চেয়ারের পা বেয়ে হাত দুটো উপরে উঠতে করেছে।
আমি নিশ্বাস বন্ধ করে রইলাম এবং দেখলাম মাথার কাছাকাছি গিয়ে হাত দুটো নিঃশব্দে হঠাৎ করে ওস্তাদের ঘাড় চেপে ধরল। ওস্তাদ চমকে গিয়ে চিৎকার করে উঠে দাঁড়াল। খপ করে পিস্তলটা হাতে নিয়ে পিছনে তাকাল, পিছনে কেউ নেই। সে হতবাক হয়ে ঘুরে সামনে তাকাল, সামনেও কেউ নেই। কাউলা ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছে-ভয়ে তার চোয়াল ঝুলে পড়েছে, মুখ হাঁ হয়ে গেছে, গলায় কোথায় জানি একটা তাবিজ আছে সেই তাবিজটা ধরে কাঁপা গলায় বলল, কসম লাগে-জিন্দাপীরের কসম লাগে-আল্লাহর কসম লাগে।
ওস্তাদ হাত দিয়ে ঘাড়ে ধরে রাখা হাত দুটো ছোটানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সেগুলো লোহার মতো শক্ত, কারো সাধ্যি নেই ছোটায়। দুই হাতে ধরে টানাটানি করে ভয়ে চিৎকার করে বলল, কাউলা-হাত লাগা-বাচা আমারে
না ওস্তাদ। আমি পারুম না। এইটা নিশ্চয়ই ঘাউড়া ছগিরের কাটা হাত। আল্লাহর গজব লাগছে, কাটা হাত চইলা আইছে
ওস্তাদ অনেক কষ্ট করে একটা হাত ছুটিয়ে আনল কিন্তু তাতে ফল হল আরো ভয়ানক। হাতটা ছুটে গিয়ে এবারে সামনে দিয়ে গলায় চেপে ধরল এবং ওস্তাদ আ-আ করে সারা ঘরে ছুটে টেবিলে ধাক্কা লেগে দড়াম করে পড়ে গেল। নিচে পড়ে গিয়ে সে দুই হাত দুই পা ছুঁড়তে থাকে-বিকট গলায় চিৎকার করতে থাকে, কাউলারে কাউলা, বাচা আমারে আল্লাহর কসম লাগে-
কাউলা এবারে তার কাটা রাইফেল তাক করে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। চিৎকার করে হাত দুটিকে বলল, খামোস, খামোস বলছি-গুলি কইরা দিমু, বেরাশ মারমু।
ওস্তাদ হাত তুলে চিৎকার করে বলল, কাউলা হারামজাদা গুলি করে আমারে মারবি নাকি-খবরদার।
কাউলা বুঝতে পারল গুলি করায় সমস্যা আছে–তখন কাটা রাইফেলটা লাঠির মতো ধরে হাতটাকে মারার চেষ্টা করল, ঠিকভাবে মারতে পারল না, রাইফেলের বাটটা লাগল ওস্তাদের মাথায়, ঠাস করে একটা শব্দ হল আর চোখের পলকে মাথার এক অংশ গোল আলুর মতো ফুলে উঠল।
ওস্তাদ গগনবিদারী একটা চিৎকার করে দুই পা ছুঁড়ে একটা লাথি দিয়ে কাউকে ঘরের অন্য মাথায় ফেলে দেয়। কাউলা আবার উঠে আসে, কাটা রাইফেলটা দিয়ে আবার হাতটাকে আঘাত করার চেষ্টা করল, ওস্তাদ ক্রমাগত ছটফট করছিল বলে এবারেও আঘাতটা লাগল মুখে এবং শব্দ শুনে মনে হল তার চোয়ালটা বুঝি ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেছে। কাউলা অবিশ্যি হাল ছাড়ে না, ওস্তাদের গলার মাঝে চেপে ধরে রাখা হাতটাকে আবার তার কাটা রাইফেল দিয়ে মারার চেষ্টা করল। এবারে সত্যি সত্যিই মারতে পারল কিন্তু তার ফল হল ভয়ানক!
কাটা হাতটা এতক্ষণ মালিশ করার চেষ্টা করছিল রাইফেলের বাটের আঘাত খেয়ে তার যন্ত্রপাতি গোলমাল হয়ে গেল, সেটা তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে থাকে এবং যেটাকেই হাতের কাছে পেল সেটাকেই ধরার চেষ্টা করতে লাগল। কাউলা ব্যাপারটা বুঝতে পারে নাই হঠাৎ করে হাতটা তার উরুর মাঝে খামছে ধরে, কাউলা যন্ত্রণায় চিৎকার করে ঘরময় লাফাতে থাকে আমার খাটের সাথে পা বেধে সে আছাড় খেয়ে পড়ল, বেকায়দায় পড়ে তার নাকটা থেতলে গেল এবং আমি দেখলাম নাক দিয়ে ঝরঝর করে আধ লিটার রক্ত বের হয়ে এল।
দুইজন নিচে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে, আমি সাবধানে বিছানা থেকে নেমে প্রথমেই অস্ত্রগুলো আলাদা করলাম, ওস্তাদের পিস্তল, কাউলার কাটা রাইফেল আর আমার রান্নাঘরের চাকু। তখন শুনতে পেলাম কে যেন আমার ঘরের দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, এখানকার ভয়ংকর নর্তন-কুর্দন শুনে এই বিল্ডিঙের সবাই নিশ্চয়ই চলে এসেছে। দরজা খুলতে যাবার আগে আমার মালিশ মেশিনের হাতগুলো সামলানো দরকার। আমি তিনবার হাততালি দিলাম, দুইবার সাথে সাথে, তৃতীয়বার একটু পরে, ঠিক যেরকম সায়রা শিখিয়ে দিয়েছিল। সাথে সাথে হাতগুলো নেতিয়ে পড়ে যায়। আমি সাবধানে হাতগুলো নিয়ে খাটের নিচে রেখে দরজা খুলতে ছুটে গেলাম, আর একটু দেরি হলে মনে হয় দরজা ভেঙে সবাই ঢুকে যাবে। তখন বাড়িওয়ালাকে ব্যাপারটা বোঝানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।
কাউলা এবং ওস্তাদের যে অবস্থা তারা আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না।
.
পুলিশ যখন কোমরে দড়ি বেঁধে কাউলা আর ওস্তাদকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন শুনলাম ওস্তাদ ফ্যাসফ্যাসে গলায় কাউকে বলছে, তোরে কইছিলাম না-হাবাগোবা মানুষের বাসায় চুরি-ডাকাতি করতে হয় না? অহন আমার কথা বিশ্বাস করলি?
কাউলা ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, জে ওস্তাদ, করেছি। এই জন্মে আর হাবাগোবা মানুষের বাড়িতে ঢুকুম না। খোদার কসম।