সাত
ঝুঁকে দেখল রবিন। ‘যাহ্, এ তো ছুরি দিয়ে কেটেছে!’
‘বাইপাস করার উপায় নেই,’ রেগে গেছে মুসা। ‘কেউ গাড়ি নিয়ে এলে মুক্তি, নইলে হাঁটতে হবে ক্যাম্পের দিকে।’
‘কিন্তু ক্যাম্প গ্রাউণ্ড তো কমপক্ষে দশ-পনেরো মাইল!’ আপত্তির সুরে বলল ভালদারেজ, ‘এত হাঁটবে কে!’
‘আপনি তো মরুভূমি এক্সপার্ট,’ বলল কিশোর, ‘হাসতে হাসতে পৌঁছে যাবেন বাড়ি।’
‘এক্সপার্ট হওয়া আর এত হাঁটতে বাধ্য হওয়া এক কথা না,’ গজগজ করল ভালদারেজ। ‘সাথে আবার পানি বা খাবারও নেই!’
গাড়ির তলা থেকে বেরিয়ে গাড়ির ট্রাঙ্ক খুলল মুসা। টিউবিং আছে কি না দেখবার জন্য চোখ বোলাল।
না, নেই।
ধুপ্ করে ডালা বন্ধ করল মুসা। ‘কপাল মন্দ, ভাড়া করা গাড়ি। এমনিতে আমাদের গাড়িতে সবসময় বাড়তি টিউবিং আর ফ্যান বেল্ট রাখি।’
রোদ এড়াতে কপালে হাত রেখে রাস্তার দু’দিক দেখে নিল কিশোর। কোথাও কোনও যানবাহন নেই। থমথম করছে চারপাশ।
‘কাজটা কার হতে পারে?’ আনমনে বলল মুসা।
‘আর যারই হোক, ডোনাল্ড ওয়াইলির না,’ বলল কিশোর। ‘ওই লোক তো দূরে নিজের গাড়ির ভেতর বসে ছিল।’
‘ওই হলদে ফোক্সভাগেন ভ্যানের কেউ,’ বলল রবিন, ‘কয়েক মিনিটের জন্যে গাড়ি থামিয়েছিল।’
‘ক্যাম্প গ্রাউণ্ডের আশপাশে ওই রঙের কোনও ভ্যান দেখিনি,’ বলল কিশোর। ‘লোকটা হতে পারে ওয়াইলির দোসর।’ ভালদারেজের দিকে চাইল। ‘আচ্ছা, আপনি যখন ওয়াইলির ওপর চোখ রাখলেন, তখন তাকে সিবি রেডিয়োতে কথা বলতে দেখেছেন?’
‘সিবি রেডিয়ো?’ মাথা নাড়ল ভালদারেজ, ‘না, তার হাতে ছিল শুধু কলম আর খাতা। কী যেন লিখছিল।’
‘হঠাৎ সিবি রেডিয়োর কথা কেন, কিশোর?’ জানতে চাইল মুসা।
‘কারণ কেউ খবর দিয়েছে, নইলে এখানে এসে আমাদের বারোটা বাজাতে পারত না,’ বলল কিশোর। ‘এমন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, আমাদের জন্যে আগেই বসে ছিল ওয়াইলি। আঁচ করে নিয়েছে ওর ওপর নজর রাখতে আমাদেরকে পাঠাবেন হেড রেঞ্জার রায়ান। তাই সিবি রেডিয়োতে সঙ্গীকে জানিয়ে দিয়েছে কখন হাজির হতে হবে। আর পরে ঠিকসময়ে স্যাবোটাজ করেছে আমাদের গাড়ি।’
‘হুঁ, হতে পারে,’ বলল মুসা। কিন্তু এতে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে না। সেই মাইলকে মাইল হাঁটতেই হচ্ছে!’
মুসার কথা পাত্তা দিল না কিশোর। ‘ওয়াইলি হয়তো জানে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। একটা ব্যাপার পুরো নিশ্চিত: যে লোক আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করল, সে ভাল করেই জানে ডাকাতি চলছে পার্কে। আর আমরা তা ঠেকাতে চাইছি।’
চিত হয়ে পিঠ ঘষ্টে গাড়ির নীচে ঢুকল মুসা। বিড়বিড় করে বলল, কোনওভাবে কাটা হোসটা বাইপাস করতে পারলেই…’
‘যে একাজ করেছে, সে ওয়াইলিই হোক বা হলদে ভ্যানের কেউ হোক, সে আসলে সতর্ক করে দিল আমাদেরকে,’ বলল কিশোর। ‘সাবধান হয়ে যাও, নইলে এর পরেরবার… বুঝলে না?’
‘সোজা মেসেজ,’ বলল রবিন। জানিয়ে দিল: আমাদের সঙ্গে লাগতে এলে এমনই হয়! এবার হাঁটো, বাছারা!
‘টিউবিং না পেলে কোনভাবেই বাইপাস সম্ভব নয়,’ হতাশ হয়ে গাড়ি নীচ থেকে বেরুল মুসা। উঠে দাঁড়িয়ে রাগ নিয়ে চাইল ভালদারেজের চোখে। ‘আপনি না বললেন এই রাস্তা ধরে মাঝসকালে মরুভূমি দেখতে যায় অনেকে?’
‘কথা ঠিক,’ জোর দিয়ে বলল ভালদারেজ। পরক্ষণে জানাল, ‘কিন্তু আজকেও লোকের ভিড় হবে, এমন না-ও তো হতে পারে?’
‘চমৎকার সব তথ্য দেন আপনি,’ রাগী রাগী সুরে বলল মুসা।
প্রিয় বন্ধু আর ভালদারেজ ঝগড়া শুরু করবার আগেই বলল কিশোর, ‘ঠিক আছে, এবার রওনা হওয়া যাক। ক্যাম্প গ্রাউণ্ডে পৌঁছুতে তিনঘণ্টা মত লাগবে। তবে রওনা হওয়ার আগে একবার দেখব কোথায় বসে কাজ করছিল ওয়াইলি। ওখানে হয়তো কোনও সূত্র পাওয়া যাবে।’
নীরবে হাঁটতে শুরু করল ওরা।
বেশ কিছুক্ষণ পর পৌছে গেল দূরের মেস্কিট গাছের নীচে।
বালিময় রাস্তার কাঁধে ওয়াইলির পিকআপের চাকার দাগ।
ভালদারেজ ঠিকই বলেছে, এক গাছের নীচে গাড়ি রেখেছিল লোকটা। তছনছ হয়েছে পিছনের এলাকা। কোদালের দাগ ও মাটির উপর ভারী চাকার চিহ্ন।
নতুন করে মাটি দিয়ে বুজে দেয়া হয়েছে গর্ত।
ওখানে বসে পড়ল ভালদারেজ, মাটি থেকে দুই আঙুলে খুঁটে তুলতে চাইল সাদা কী যেন।
‘কী ওটা?’ খেয়াল করেছে কিশোর।
‘কিছুই না, ভেবেছিলাম সিগারেটের পোড়া টুকরো, কিন্তু আসলে ছোট পাথর।’ ক্ষতিগ্রস্ত চারপাশ দেখে নিয়ে বলল ভালদারেজ, ‘খুবই খারাপ, কে বা কারা এমন জঘন্য কুকীর্তি করল?’
‘কে জানে!’ কাঁধ ঝাঁকাল মুসা।
‘বোঝা যাচ্ছে নিজের কাজ করেছে ডোনাল্ড ওয়াইলি,’ বলল রবিন।
‘এবার সোজা ক্যাম্প গ্রাউণ্ডে,’ বলল কিশোর, ‘রাস্তা তো ওয়ান ওয়ে। মাঝপথে কারও গাড়িতে উঠতে পারলেও আবারও এদিকেই আসতে হবে। আর ভেবে লাভ নেই, চলো হাঁটতে শুরু করি।’
কথাটা শুনে গুঙিয়ে উঠল রাসেল ভালদারেজ। ‘নিকুচি করি!’ বিড়বিড় করল।
রাস্তার দিকে রওনা হয়ে গেল চারজন।
ওয়াইলির পিকআপ রাখবার জায়গাটা পাশ কাটাতে গিয়েও থেমে দাঁড়িয়ে কিশোর বলল, ‘তোমরা এগোতে থাকো, আমি একমিনিট পর আসছি।’
অন্যরা হাঁটছে, কিন্তু মাটির উপর চোখ বোলাল কিশোর।
মুসা ও রবিনের পাশে হাঁটতে হাঁটতে ভালদারেজ বলল, ‘তোমাদের বন্ধু কি সবসময় সূত্র খোঁজে?’
‘না,’ বলল মুসা, ‘শুধু যখন তদন্ত করে।’ চট্ করে একবার পিছনদিকটা দেখে নিল।
ধীরে ধীরে হাঁটছে কিশোর, নিচু করে রেখেছে মাথা। বন্ধুদের দিকে মুখ তুলে চাইল, তারপর আবারও চোখ নামিয়ে নিল মাটির দিকে। এক সেকেণ্ড পর হাঁটবার গতি বাড়ল ওর, জগিং করতে করতে পৌঁছে গেল বন্ধুদের পাশে।
‘কিছু পেলে?’ জানতে চাইল রবিন।
‘নাহ্, কিছুই না,’ সরল স্বীকারোক্তি করল কিশোর। ‘দেখলাম ওয়াইলি তার পিকআপের আশপাশে কিছু ফেলে গেছে কি না।’
সন্দেহ নিয়ে বন্ধুকে দেখল মুসা। রবিনও।
চোখে চোখে কথা হলো কিশোর-রবিন-মুসার।
কথা বলবার জন্য পিছিয়ে গেল ওরা।
কিন্তু ওদের সঙ্গে কাঁঠালের আঠার মত লেগে থাকল রাসেল ভালদারেজ। বলল, ‘তোমরা বোধহয় হাঁটতে পারছ না? আগে হোক বা পরে, কেউ না কেউ আসবে এ রাস্তায়।’
জবাব দিল না তিন গোয়েন্দার কেউ। নীরবে হেঁটে চলেছে।
ঠাণ্ডা কোক ও পিৎযার কথা মন থেকে দূর করতে চাইছে মুসা।
কড়া রোদে টুপি থাকলে ভাল হতো, ভাবছে রবিন।
কান পেতে কী যেন শুনতে চাইছে কিশোর। ‘আওয়াজটা পেলে?’ কয়েক মুহূর্ত পর বলল।
‘হ্যাঁ, গাড়ির আওয়াজ মনে হয়,’ বলল রবিন।
হাসি-হাসি মুখে বলল ভালদারেজ, ‘এক দিনের পক্ষে যথেষ্ট ব্যায়াম! এবার দেখবে ক্যাম্পে ফিরেই সলভ করে ফেলব জটিল কেস!’
তখনই রাস্তার উঁচু ঢালে দেখা গেল একটা পিকআপ। আসছে ঠিক ওদের দিকেই।
‘সমস্যা নেই,’ বলল ভালদারেজ, ‘পিকআপের পিছনে বসব। প্যান্ট নোংরা হলেই বা কী— তুমি কি বলো, মুসা?’ ভুলেই গেছে কালো ছেলেটা ত্যাড়া ধরনের মানুষ।
‘মোটেও সাহস পাচ্ছি না,’ বিড়বিড় করল মুসা। চেয়ে আছে এগিয়ে আসা পিকআপের দিকে F
‘তোমার সমস্যা কী?’ জানতে চাইল ভালদারেজ।
‘সমস্যা হচ্ছে: ওটা প্রফেসর জর্জ আর্নল্ডের পিকআপ,’ বিরস বদনে বলল মুসা।
‘হায় ঈশ্বর!’ বিড়বিড় করল ভালদারেজ। ‘কপালই মন্দ, পড়লাম তো পড়লাম ঝগড়াটে প্রফেসরের সামনে!’
‘আমাদের ওপর খেপে আছেন তিনি,’ বলল মুসা।
রাস্তা থেকে নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ল ও।
ওর দেখাদেখি কিশোর ও রবিন।
বাধ্য হয়ে থামল ভালদারেজও।
পিকআপ চলে আসতেই রাইড চাওয়ার জন্য বুড়ো আঙুল উপরে তুলল ওরা।
গাড়িতে প্রফেসরের পাশে বসেছে মিষ্টি মেয়েটা। প্রায় থেমে এল পিকআপ, আর তখনই আর্নল্ড বুঝলেন হিচহাইকাররা আসলে কে।
হঠাৎ গর্জে উঠে আবারও লাফ দিয়ে রওনা হয়ে গেল গাড়ি। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে মাটিতে থুতু ফেললেন প্রফেসর।
গতি আরও বাড়ছে পিকআপের, কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পর জ্বলে উঠল পিছনের লাল ব্রেক লাইট। ধীরে ধীরে থেমে গেল গাড়ি।
‘একটা নরম মনও আছে ব্যাটার,’ মন্তব্য করল ভালদারেজ।
‘মনে হয় না, আপত্তির সুরে বলল মুসা, ‘থামার একমাত্র কারণ লিলিয়ান। ও বুঝিয়েছে। নইলে মরুভূমিতে আমাদেরকে পচতে ফেলে যেত প্রফেসর।’
চেয়ে রইল ওরা।
ব্যাক গিয়ার দিয়ে পিছিয়ে আসছে পিকআপ।
থামল ওদের পাশে।
ভুরু ভয়ঙ্কর কুঁচকে কিশোর-মুসা-রবিনকে দেখলেন প্রফেসর আর্নল্ড। কড়া স্বরে বললেন, ‘মরুভূমিতে আটকা পড়েছ?’
‘জী, স্যর,’ বিনীত স্বরে বলল কিশোর। ‘আমরা…’
পিছনে ওটা তা হলে তোমাদের গাড়ি?’ ধমকে উঠলেন আর্নল্ড। ‘কী নষ্ট হয়েছে?’
‘কে যেন…’ শুরু করেছিল মুসা, কিন্তু থামতে হলো ওকে।
‘স্যর, আমাদের গাড়ির ফিউয়েল লাইনে সমস্যা,’ তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। ‘টিউবিং নিয়ে আবারও ফিরব।’
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন প্রফেসর, বহু দূরে কোথায় যেন চেয়ে রইলেন। ‘ঠিক আছে, পিকআপের পিছনে ওঠো। আমার কাছে টিউব আছে, সমান মাপের হলে তোমাদের কপাল ভাল। এ ছাড়া দিতে পারব ডাক্ট টেপ। বড় কোনও সমস্যা না থাকলে ওটা দিয়ে টিউব ঠিক করতে পারবে।’
‘ধন্যবাদ, স্যর,’ বলল কিশোর। ফিরতি পথ দেখাল। ‘ওদিকে রেখে এসেছি সাদা টয়োটা গাড়ি।’
‘দেখেছি,’ বললেন প্রফেসর। ‘উঠে পড়ো পিকআপের বেডে। জানি না কেন তোমাদেরকে সাহায্য করছি! আমার অনেক ক্ষতি করতে চেয়েছ তোমরা।’
কথা বাড়াল না তিন গোয়েন্দা, উঠে পড়ল পিকআপের পিছনে। মেঝেতে বসল ওরা, আর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে রওনা হয়ে গেলেন প্রফেসর।
বেডের দু’পাশে ও সামনে ধাতব তাক। স্বচ্ছ সব প্লাস্টিকের বাক্সে টুলস, স্পেয়ার পার্টস এবং নানান মেযারিং ইন্সট্রুমেন্ট।
‘এটা বোধহয় প্রফেসরের চাকাওয়ালা ল্যাবোরেটরি,’ মন্তব্য করল মুসা। ‘কী প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন জানতে পারলে হতো।’
‘কথা বলার সুযোগ হলে জানতে চাইব,’ বলল কিশোর।
‘সে-সুযোগ করে নেয়া কঠিনই হবে,’ বলল রবিন।
‘একেবারে ঠিক বলেছে রবিন,’ বলল ভালদারেজ। ‘প্রফেসর তোমাদেরকে দুচোখে দেখতে পারে না, তাই না?’
আস্তে করে মাথা দোলাল মুসা।
‘কী করেছিলে,’ বলল ভালদারেজ, ‘বলে দিয়েছিলে সন্দেহ করো তাকে? …ক্যাকটাস ডাকাতির কথা জানে সে?’
‘জানি না,’ বলল মুসা। পায়ে কিশোরের হালকা লাথি খেয়ে মুখ বুজে ফেলল ও, চাইল বন্ধুর দিকে।
চোখে চোখে কথা হলো দু’জনের।
বাড়তি কথা ঠিক নয় এখন, বুঝে গেল মুসা।
কয়েক মিনিট পর কমে এল পিকআপের গতি, ধীরে ধীরে থেমে গেল রাস্তার কাঁধে। গাড়ি থেকে নামল লিলিয়ান ও তার বাবা। ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে তিন গোয়েন্দা ও রাসেল ভালদারেজ।
‘কী মাপের টিউবিং চাই?’ জানতে চাইলেন প্রফেসর।
‘এখনও জানি না,’ বলল মুসা। ‘এটা ভাড়া নেয়া গাড়ি, সঙ্গে কোনও টুলস-ও দেয়নি। আন্দাজ আধ ইঞ্চির টিউব লাগবে।’
ভুরু কুঁচকে কী যেন ভাবলেন প্রফেসর, তারপর বললেন, ‘মনে হয় না ওই জিনিস আমার কাছে আছে। কিন্তু অন্য ব্যবস্থা হতে পারে।’ পিকআপের বেডে উঠে পড়লেন তিনি।
মুখ খুলল লিলিয়ান, ‘তোমরা কখন থেকে হাঁটছ?’
‘কয়েক মিনিট,’ বলল কিশোর।
‘তোমাদের কপাল ভাল যে এখন জুলাই মাস না,’ বলল লিলিয়ান। ‘গ্রীষ্মের সময় এ জায়গা একেবারে নরক হয়ে যায়।’
‘আমরাও তাই শুনেছি,’ বলল মুসা। ‘আরও শুনেছি…’
ছোট এক টুলবক্স ও ধূসর ডাক্ট টেপ নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রফেসর, জিনিসদুটো বাড়িয়ে দিলেন মুসার দিকে। ‘নাও, দেখো এগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারো কি না।’
দেরি না করে টুলবক্স ও টেপ নিয়ে ওদের গাড়ির পাশে চলে গেল মুসা, সেঁধিয়ে গেল চেসিসের নীচে।
‘চলো যাওয়া যাক, লিলি,’ বললেন আর্নল্ড। ‘অনেক কাজ বাকি।’
‘সাহায্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, স্যর,’ আন্তরিক স্বরে বলল কিশোর।
‘ঠিক আছে,’ আড়ষ্ট কণ্ঠে বললেন প্রফেসর, ‘পরে তোমাদের কাছ থেকে বুঝে নেব আমার টুলবক্স।’ ক্যাবে উঠতে গিয়েও ঘুরে চাইলেন। ‘আরেকটা কথা, আবারও যদি তোমাদের মনে হয় আমি কোনও ভুল করেছি, কথাটা আমাকে সরাসরি বলবে— রেঞ্জার ডেকে আনার দরকার নেই।’
‘আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম,’ বলল রবিন। ‘কিন্তু…’
‘আহ্, থাক,’ হাত তুলে কথাটা উড়িয়ে দিলেন আর্নল্ড। উঠে পড়লেন পিকআপের ড্রাইভিং সিটে। লিলিয়ান প্যাসেঞ্জার সিটে উঠতেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আবারও রওনা হয়ে গেলেন প্রফেসর।
‘কথাই বলা যায় না এ লোকের সঙ্গে!’ বিরক্ত স্বরে বলল ভালদারেজ। ‘রেঞ্জারদের ব্যাপারে কী বলছিল লোকটা?’
‘ওই, গতকাল রাতে…’
শুরু করেও থামতে হলো রবিনকে।
‘তোমাকে বোধহয় ডাকছে মুসা,’ বলে নিজেই গাড়ির দিকে পা বাড়াল কিশোর।
ওর পাশে এসে চাপা স্বরে বলল রবিন, ‘কী ব্যাপার?’
‘পরে বলব, একে কিছু বলতে যেয়ো না,’ প্রায় ফিসফিস করে বলল কিশোর। ওদের গাড়ির পাশে বসে পড়েছে।
তখনই মুসা বলল, ‘তোমরা কেউ খোলো গাড়ির হুড! এই হোসটা তুলে নেবে কারবুরেটরের দিকে।’
মুসার কথা অনুযায়ী কাজ করল কিশোর।
কিছুক্ষণের ভিতর মেরামত হয়ে গেল ফিউয়েল লাইন।
আবারও গাড়িতে চেপে বসল ওরা।
পাশের সিট থেকে ড্রাইভার মুসাকে বলল কিশোর, ‘ওয়াইলি যেখানে পিকআপ রেখেছিল, ওখানে আরেকবার যেতে চাই।’
আস্তে করে মাথা দোলাল মুসা।
গাড়ি রওনা হয়ে গেল, দেখতে না দেখতে হাজির হলো মেস্কিট গাছগুলোর কাছে।
গাড়ি থেকে নেমে পড়ল ওরা।
কয়েক কদম গিয়ে বলল কিশোর, ‘ভালদারেজ, আপনি রাস্তা পার করে ওই ট্রাকের চাকার দাগের কাছে চলে যান।’
‘যেখানে রাস্তা থেকে নেমে গেছে চাকার চিহ্ন?’ জানতে চাইল তরুণ।
‘হ্যাঁ,’ মাথা দোলাল কিশোর।
রাস্তা পেরুতে শুরু করেছে ভালদারেজ।
সে শুনতে পাবে না এমন দূরত্বে চলে যেতেই চট্ করে বলল কিশোর, ‘বেশি কিছু বলার নেই, আমার পায়ের পাশে একটা জুতোর ছাপ আছে, ওটা ভালভাবে দেখে নাও।’ এবার গলা উঁচু করল ও, ‘হ্যাঁ, ঠিক, ওখানেই দাঁড়ান, ভালদারেজ।’ আঙুল তুলে এমনভাবে ইশারা করল, যেন ওদিকের কিছু দেখাচ্ছে মুসা-রবিনকে।
এই সুযোগে জুতোর ছাপ দেখল নথি ও সহকারী গোয়েন্দা।
‘কোনও স্নিকারের,’ নিচু স্বরে বলল রবিন।
‘ঠিক আছে, এবার ফিরে আসুন, ভালদারেজ,’ দূরে দাঁড়ানো তরুণের উদ্দেশে বলল কিশোর। নিজেই সামনে বেড়ে গেল কয়েক পা।
হনহন করে হেঁটে হাজির হলো ভালদারেজ, বিস্মিত চেহারা। জানতে চাইল, ‘কী বুঝলে? সন্দেহজনক কিছু?’
‘না, তেমন কিছু না,’ মাথা নাড়ল কিশোর। ‘আসলে ওখানে আপনাকে দাঁড় করিয়ে বুঝলাম পরিবেশটা কী ছিল। এবার ফিরতে হবে রেঞ্জার অফিসে। চলুন যাওয়া যাক।’ তরুণ হাঁটতে শুরু করলেও নড়ল না কিশোর। চট্ করে দুই বন্ধুকে দেখাল ভালদারেজের জুতোর ছাপ।
এসব ছাপ আর একটু আগের ছাপ হুবহু এক।
‘বুঝলাম,’ চাপা স্বরে বলল মুসা, ‘রাস্তা পেরিয়েছে। পরিষ্কার তাকে দেখেছে ওয়াইলি। চোখে চোখে রাখার বদলে টিলা থেকে নেমে কথা বলেছে ভালদারেজ।’
‘মানে… একই দলের,’ নিচু স্বরে বলল রবিন, ‘আর আমরা ফিলিপ রায়ানকে বুঝিয়েছি: তদন্তে সুবিধা হবে এ সঙ্গে থাকলে!’