মরুদস্যু – ৫

পাঁচ

পরদিন সকালে নাস্তার পর হেড রেঞ্জারের অফিসে হাজির হলো তিন গোয়েন্দা ও ওমর শরীফ।

ফিলিপ রায়ান কথা বলছে সত্যিকারের এক কাউবয়ের সঙ্গে।

লম্বা, চিকন, তারের মত দেহ লোকটার, মাথায় চাপিয়েছে মস্ত টেন গ্যালন হ্যাট। বছরের পর বছর রোদে কাজ করেছে বলে মুখে অসংখ্য ভাঁজ।

কাউবয়ের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে তিন গোয়েন্দা ও ওমরকে দেখে হাতের ইশারা করল ফিলিপ রায়ান। ‘নিয়ম হচ্ছে পাঁচটায় অফিস বন্ধ, কিন্তু আমি থাকি সন্ধ্যা ছয়টা-সাতটা পর্যন্ত,’ বলল কাউবয়কে। ‘হ্যাঁ, আমরা পাশাপাশি কাজ করব। দেরি না করে পার্ক থেকে সরিয়ে দেব গরুগুলোকে।’

‘আমরাও তাই চাই,’ বলল কাউবয়। উঠে দাঁড়িয়েছে, একবার ছেলেদের দিকে নড করে বেরিয়ে গেল অফিস থেকে।

‘গুড মর্নিং,’ ওদের উদ্দেশে বলল রায়ান, ‘রাতে ঘুমাতে পেরেছ?’

‘আমার সামান্যতম অসুবিধা হয়নি,’ বলল ওমর, ‘ঠিকই বলেছ, সারারাত ডেকেছে কয়োটি।’

‘আমার কাছে ওগুলোর ডাক লালাবাইয়ের মত মনে হয়,’ হাসল হেড রেঞ্জার। ‘শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি নিশ্চিন্তে। …যাক সেসব, তোমরা পার্কের দুর্লভ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে তৈরি তো?’

‘নিশ্চয়ই,’ মাথা দোলাল মুসা।

কিশোর বলল, ‘একটা কথা বলতে চাই আমাদের প্রতিবেশী প্রফেসর আর্নল্ড সম্পর্কে। তিনি হয়তো কিছু লুকাচ্ছেন।’

গম্ভীর হয়ে গেল ফিলিপ। ‘কী লুকিয়ে রাখছেন? একটু খুলে বলো তো?’

প্রফেসরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কী ঘটেছে, জানাল কিশোর। মাঝে মাঝে কথা যোগ করল মুসা।

ক্যাকটাসের ডালের কথা শুনবার পর হেড রেঞ্জার মাথা দোলাল। ‘হুম্। আমার বোধহয় কথা বলা উচিত তার সঙ্গে।’

‘উনি ক্যাম্প সাইটেই আছেন,’ বলল রবিন। ‘মেয়েকে নিয়ে কোথায় যেন যাবেন, দেখলাম পিকআপে জিনিসপত্র তুলছেন।’

উঠে দাঁড়াল ফিলিপ। ‘দেখি কী বলে, পরে তোমাদের সঙ্গে কথা হবে।’

আস্তে করে মাথা দোলাল কিশোর। ঠিক করেছে ফিলিপকে পরে জানাবে ওরা গতরাতে কী শুনেছে।

ওমর শরীফ, মুসা ও রবিনের সঙ্গে অফিস থেকে বেরিয়ে এল কিশোর।

গাড়ি নিয়ে ক্যাম্প সাইটের দিকে রওনা হয়ে গেল ওরা।

কয়েক মিনিট পর মোবাইল হোমের কাছে পিকনিক টেবিলে বসে আছে ওরা, এমন সময় এল হেড রেঞ্জার ফিলিপ রায়ান।

পাশে মেয়েকে নিয়ে পার্কিং লট থেকে পিকআপ পিছিয়ে নিতে শুরু করেছেন প্রফেসর, কিন্তু নিজের জিপ থেকে লাফিয়ে নেমে গেল ফিলিপ রায়ান, হাত তুলে থামতে ইশারা করল।

ব্রেক কষে পিকআপ থামালেন প্রফেসর, বামপাশের জানালার কাঁচ নামিয়ে কর্কশ স্বরে বললেন, ‘আপনার জন্যে কী করতে পারি?’

‘আমাকে রিপোর্ট করা হয়েছে যে আপনার পিকআপের নীচে দেখা গেছে বেআইনী ক্যাকটাসের ডাল,’ বলল ফিলিপ রায়ান। ‘এ ব্যাপারে আপনার কী বলার আছে?’

আগুন ঝরা দৃষ্টিতে তিন গোয়েন্দার দিকে চাইলেন প্রফেসর।

ওরা বসে আছে নিজেদের টেবিলের ধারে।

‘আমি জানতাম!’ প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন তিনি, ‘তোমাকে বলিনি, লিলি? ওরা জন্মের মিথ্যুক! এমন ব্যবস্থা নেব, সত্যিকারের শিক্ষা হবে!’ গিয়ার ফেললেন প্রফেসর, ইঞ্জিনের জোর আওয়াজ তুলে রওনা হয়ে গেলেন।

ছোট পাথরের কণা ও বালি ঝরঝর করে পড়ল ফিলিপ রায়ানের গায়ে। চোখে ময়লা পড়ছে দেখে মুখ সরিয়ে ফেলল।

কয়েক সেকেণ্ডে দূরে চলে গেল পিকআপ, পিছনে ধুলোর ঝড়। কিশোরদের টেবিলের দিকে পা বাড়িয়ে বিরক্ত স্বরে মন্তব্য করল ফিলিপ রায়ান, ‘লোকটা সত্যি খুবই অভদ্র!’

দূরের ওই গাড়ির দিকে চেয়ে রইল মুসা, বলল, ‘বোধহয় লুকাতে চাইছেন কিছু, নইলে এমন করবেন কেন?

‘ক্যাকটাসের কথা উঠতেই খেপেছেন,’ বলল রবিন।

মাথা নাড়ল কিশোর। ‘রাতের চেয়েও বেশি রাগ দেখলাম… কিন্তু কেন?’

‘ওঁর কথা বাদ দাও, বলল ফিলিপ রায়ান। ‘খুব চাপের মুখে আছেন। ওঁর মেয়ের কাছে শুনেছি, ওই প্রজেক্ট নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। এখন তাঁর ইউনিভার্সিটি থেকে জানিয়ে দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর সফল না হলে বন্ধ করে দেয়া হবে ফাণ্ডিং। মানে এতদিনের সমস্ত কাজ পণ্ডশ্রম হবে। আসলে চাকরিই থাকবে না।’

‘তার মানে টাকার অভাব দেখা দেবে,’ আনমনে নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। ভাবছে, ডোনাল্ড ওয়াইলির সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকতে পারেন প্রফেসর। কয়েক সেকেণ্ড পর রেঞ্জারের দিকে চাইল, ‘ডোনাল্ড ওয়াইলি আর প্রফেসর আর্নল্ডকে কখনও একসঙ্গে দেখেছেন?’

মাথা নাড়ল ফিলিপ। ‘না, কখনও না। কিন্তু তাতে কিছুই প্রমাণ হয় না। এটা বিশাল পার্ক, আর এরা এতদিনে ভাল করেই চিনে নিয়েছে আশপাশ। অন্তত এক হাজার জায়গা আছে যেখানে গোপনে দেখা করতে পারবে তারা।’

‘এই দু’জন ছাড়াও আছে রাসেল ভালদারেজ,’ বলল মুসা।

‘ভালদারেজ?’ ভুরু কুঁচকাল রেঞ্জার। ‘পেইন্টার?’

‘ক্যাকটাস ডাকাতির কথা জানে সে, আমাদের ক্যাম্প সাইটে কান পেতে কথাগুলো শুনেছে,’ বলল কিশোর।

‘এ ছাড়া আছে গতরাতের লোকদুটো, কথা বলছিল সিবি রেডিয়োতে,’ জানাল রবিন।

‘সিবি রেডিয়োতে কী বলছিল? কারা তারা?’

হেড রেঞ্জারকে মাঝরাতের অভিযানের কথা জানাল তিন গোয়েন্দা। ইঞ্জিনের আওয়াজ, অনুসরণ করা, শব্দ হারিয়ে যাওয়া, তারপর শেষে সিবি রেডিয়োতে কথা শোনা।

‘আমি রাসেল ভালদারেজকে চিনি,’ বলল রেঞ্জার রায়ান। ‘বেশ কিছুদিন ধরেই আছে। আচরণ বাচ্চাদের মত, সর্বক্ষণ ব্যস্ত এটা সেটা নিয়ে।’ দুই ঠোঁট চিপে কিছুক্ষণ ভাবল সে, তারপর বলল, ‘কিন্তু সিবি রেডিয়ো? তার মানে, যত সহজে এদেরকে ধরতে পারব ভেবেছি, তা বোধহয় পারব না।’

‘এখন দরকার সত্যিকার গোয়েন্দা,’ মাথা দুলিয়ে বলল মুসা।

ওকে দেখল ফিলিপ রায়ান, তারপর মৃদু হাসল। ‘তুমি এই কেস নিয়ে কাজ করতে চাও, তাই না, মুসা? সত্যিই হয়তো মন্দ হবে না তোমাদের সাহায্য নিলে। তোমাদের চোখ-কান খোলা। প্রথম দিনই খুঁজে পেয়েছ সন্দেহজনক দুই লোককে। ব্যাপারটা সহজ কথা নয়। কিন্তু সত্যিই যদি তদন্ত করতে দিই, তার আগে তোমাদেরকে কথা দিতে হবে।’

‘কী বিষয়ে, স্যর?’ জানতে চাইল কিশোর।

‘তোমরা যা-যা আবিষ্কার করবে, সব নিয়মিত জানাবে আমাকে। পুরো ব্যাপারটার ওপর দখল থাকতে হবে আমার। আর একটা কথা, আইনের বাইরে যাবে না তোমরা। ওমরের কাছে তোমাদের অনেক প্রশংসা শুনেছি। …কী বলো, মৌখিক চুক্তি হয়ে যাক, কিশোর-মুসা- রবিন?’

‘আমরা কথা দিলাম,’ বলল কিশোর। ‘চুক্তির এদিক-ওদিক করব না।’

‘আপনি বস্,’ বলল মুসা।

‘দোস্ত, তুমি কী বলো?’ ওমর শরীফের দিকে চাইল হেড রেঞ্জার।

‘আমিও কথা দিলাম,’ বলল ওমর। ‘যদিও এসেছি ছুটি কাটাতে, কাজ করতে নয়। কাজ যা করার ওরাই করবে। দরকার পড়লে তখন আছি।’

‘ওরা আমার কথামত চললেই হবে।’ বন্ধুর দিকে চেয়ে হাসল হেড রেঞ্জার। ‘তোমার যখন কোনও কাজই নেই, মাঝে মাঝে এসে আড্ডা দিয়ে যেয়ো আমার অফিসে, ঠিক আছে?’

‘ভাল প্রস্তাব,’ বলল ওমর। ‘আপাতত চলো, তোমার অফিসে গিয়ে বসা যাক। বলেছিলে পার্কের ভাল একটা ম্যাপ দেবে। ওটাতে তুলে নেব কোথায় কোথায় ডাকাতি হয়েছে।’

‘এ ছাড়া ডোনাল্ড ওয়াইলি এবং অন্যদের ব্যাপারেও জেনে নেয়া দরকার,’ বলল কিশোর।

মাথা দোলাল ফিলিপ রায়ান।

হেড রেঞ্জারের জিপে রওনা হলো ওমর শরীফ।

নিজেদের গাড়িতে উঠে পিছু নিল তিন গোয়েন্দা।

অফিসের সামনে পৌছুতেই দেখা গেল পার্ক করা ডোনাল্ড ওয়াইলির নীল পিকআপ।

বারান্দায় বসে আছে যুবক, অপেক্ষা করছে হেড রেঞ্জারের জন্য।

‘লোকটা বোধহয় আবারও চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্যে এখানে এসে বসে আছে,’ নিচু স্বরে বন্ধুদের বলল কিশোর।

ওয়াইলির পিকআপের পাশে জিপ রাখল হেড রেঞ্জার, গাড়ি থেকে নেমে পড়ে বলল, ‘মর্নিং, ওয়াইলি। কী চাই?’

বারান্দার মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াল যুবক, একবার ছেলেদের দেখে নিয়ে চাইল ফিলিপ রায়ানের দিকে।

‘আপনার সঙ্গে কথা আছে, চিফ।’

‘আমারও তাই ধারণা,’ বলল হেড রেঞ্জার। ‘কিছুক্ষণের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে তোমাদের,’ তিন গোয়েন্দা ও ওমরের উদ্দেশে বলল। হাতের ইশারা করল। তার পিছু নিয়ে অফিসে গিয়ে ঢুকল ডোনাল্ড ওয়াইলি। পিছনে ভিড়িয়ে দিল দরজা।

সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিন গোয়েন্দা।

ফিলিপ রায়ানের জিপের গায়ে হেলান দিল ওমর।

‘কি মনে হয়, চাকরি ফিরিয়ে দেবেন রায়ান?’ বলল মুসা, ‘ওয়াইলি কিন্তু হামলে পড়েছিল।’

‘রায়ান কী করবে জানি না,’ বলল ওমর, ‘হয়তো এমন কিছু জানে, যেটা আমরা জানি না। হয়তো প্রফেসরের মত ওয়াইলিও কোনও চাপের মুখে আছে।’

‘হতে পারে, অথবা হয়তো ওয়াইলির ওপর চোখ রাখার সুযোগ হারাতে চাইবেন না রায়ান,’ বলল কিশোর।

বারান্দায় উঠে জানালার পাশ দিয়ে হেঁটে গেল মুসা।

অফিসে দুই হাত বুকের উপর ভাঁজ করে নিজ ডেস্কের পিছনে বসেছে ফিলিপ রায়ান। সামনে দাঁড়িয়ে আছে ডোনাল্ড ওয়াইলি, স্বীকার করছে নিজের ভুল।

আবারও বন্ধুদের কাছে ফিরল মুসা। ‘কারও ভেতর রাগ দেখলাম না। বোধহয় আরেকবার সুযোগ পাবে ওয়াইলি।’

‘গুড,’ বলল কিশোর। ‘অর্থাৎ আমরা ওর ওপর চোখ রাখতে পারব।’

‘একটা কথা ভাবছি,’ বলল ওমর, ‘রাতেই তো কাজ সারে ক্যাকটাস ডাকাতরা, সেক্ষেত্রে দিনে অন্যদের কাছ থেকে দূরে থাকার কথা নয় ওয়াইলি বা তার সঙ্গীদের?

‘হয়তো দিনে স্কাউটিং করছে ভাল স্পেসিমেন খুঁজতে গিয়ে, ‘ বলল কিশোর।

‘অসম্ভব নয়,’ বলল ওমর, ‘তোমরা হয়তো ওর পিছু নিতে পারবে।’

‘এদিকে ডাকাতির সব সাইট দেখাও প্রয়োজন, রায়ান নিশ্চয়ই ম্যাপে ওই জায়গাগুলো দাগিয়ে দেবেন,’ বলল মুসা।

খুলে গেল অফিসের দরজা, বেরিয়ে এল ডোনাল্ড ওয়াইলি। তিন গোয়েন্দা বা ওমরের দিকে ঘুরেও চাইল না, দ্রুত গিয়ে উঠল পিকআপে, ইঞ্জিন চালু করে রওনা হয়ে গেল।

তিন গোয়েন্দা ও ওমর অফিসে ঢুকতেই বলল ফিলিপ, ‘ঠিক করলাম আপাতত চাকরিতে রাখব ওকে। গতকাল দুর্ব্যবহারের জন্যে মাফ চাইল। বলল, চাকরিটা ওর সত্যিই দরকার। এভাবে বলার পর আর বেশিকিছু বলিনি। আরেকটা কথাও ভেবেছি: ও এখানে কাজ করলে সহজেই ওর ওপর চোখ রাখতে পারব।’

‘আমরাও তাই ভাবছিলাম,’ বলল মুসা।

‘আপনি কি জানেন এখন কোথায় যাবে সে?’ জানতে চাইল কিশোর। ‘আমরা পিছু নিতে পারি। চোখে চোখে রাখব।’

‘কোথায় যাচ্ছে চিহ্ন এঁকে দেব ম্যাপে।’ বলল হেড রেঞ্জার।

‘আরও একটা ব্যাপার,’ বলল কিশোর। ‘ভাল হয় ওই ম্যাপে দাগিয়ে দিলে কোথায় কোথায় ডাকাতি হয়েছে। তাতে সেসব এলাকা ঘুরে দেখতে সুবিধা হবে।’

‘আজই ডাকাতির একটা সাইট পরিষ্কার করতে ওয়াইলিকে নির্দেশ দিয়েছি,’ বলল রেঞ্জার। ‘যত শীঘ্রি সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মেরামত বা পরিষ্কার করি আমরা।’

নীচের ড্রয়ার খুলে অর্গান পাইপ ক্যাকটাস ন্যাশনাল মনুমেন্ট পার্কের ম্যাপ বের করল রেঞ্জার, ভাঁজ খুলে বিছিয়ে দিল ডেস্কের উপর। ‘এটা টপোগ্রাফিক ম্যাপ। তোমরা হয়তো জানো, এই দাগগুলো দিয়ে বোঝানো হয় এলাকা কতটা উঁচু বা নিচু।’

‘আগেও এ ম্যাপ ব্যবহার করেছি আমরা,’ বলল মুসা।

‘আর লম্বা ভারী লাইনগুলো নিশ্চই পার্কের চারপাশের রাস্তা?’ বলল রবিন, ‘পার্কের পশ্চিমে দেখছি মাত্র একটা রাস্তা।’

‘দাগিয়ে দিন কোথায় কোথায় ডাকাতি হয়েছে,’ বলল কিশোর।

উঠে দাঁড়িয়ে একদিকের দেয়ালের কাছে চলে গেল ফিলিপ রায়ান। ওখানে ঝুলছে বড় ম্যাপ।

‘এসব ডাকাতির সাইট দেখিয়েছি লাল রঙে, খেয়াল করো,’ বলল রেঞ্জার। ‘সবমিলে আঠারোটা সাইট। বেশিরভাগই পার্কের পশ্চিমে। ওদিকে ভিড় কম লোকজনের।’

ফিলিপ রায়ানের পাশ থেকে ম্যাপ দেখছে তিন গোয়েন্দা।

‘গতকালের ওই সাইট কি এই এলাকার?’ ম্যাপে আঙুল তাক করে পার্কের পুবদিক দেখাল কিশোর।

‘হ্যাঁ ওদিকেই,’ একই জায়গায় আঙুল ঠুকল হেড রেঞ্জার। ‘ডায়াবলো মাউণ্টেনের কাছে। এখনও দাগ দিইনি।’ ম্যাপে লাল মার্কার পেনের ডট দিল। ‘সবমিলে উনিশটা ডাকাতির এলাকা।’

‘আজ কোথায় কাজ করবে ডোনাল্ড ওয়াইলি?’ জানতে চাইল কিশোর।

ম্যাপের পশ্চিমাংশে লাল ডট দেখাল রেঞ্জার, ‘এখানে।’

পাওয়া ম্যাপে কলম দিয়ে গোল চিহ্ন বসিয়ে নিল রবিন। জানতে চাইল, ‘এখন ওয়াইলি ওদিকেই চলেছে?’

‘যাওয়ার কথা ওখানেই,’ ডেস্কে ফিরে এল ফিলিপ রায়ান। চেয়ারে বসে বলল, ‘একটা কথা মনে রাখবে, আমাকে নিয়মিত জানাবে কী করছ, সবই লেখা হবে আমার রিপোর্টে।’

‘কোনও সমস্যা নেই,’ বলল কিশোর।

নিজেদের ম্যাপে মনোযোগ দিয়েছে রবিন। বলল, ‘বুঝলাম গতকাল রাতে কোথা থেকে এসেছে শব্দ। জায়গাটা পার্কের পশ্চিম দিকে।’

‘মিস্টার ওয়াইলির ওপর চোখ রাখতে যাওয়ার সময় ওদিকটা ঘুরে দেখব,’ বলল কিশোর, ‘হয়তো রাস্তায় ট্র্যাক পেয়ে যাব।’

‘পেতেও পারো, বলল ওমর। ‘তবে সাবধানে থেকো।’

‘তো চলো, রওনা হয়ে যাই,’ দু’বন্ধুর দিকে চাইল কিশোর।

ওরা দরজার কাছে চলে গেছে, এমন সময় হাসি-মুখে ঘরে ঢুকল রাসেল ভালদারেজ। ‘হাই গাইয, কোথায় চললে?’

‘বলার মত কোথাও না,’ স্বাভাবিক সুরে বলল কিশোর, তবে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। ওর মত করেই ব্রেক কষেছে দুই বন্ধু, ওদেরকে হাতের ইশারা করল কিশোর। ‘চলো, যাওয়া যাক।’

হাসি আরও চওড়া হলো তরুণ ভালদারেজের।

‘বলো দেখি কী কারণে এসেছি?’

আমরা কীভাবে জানব,’ বলল বিরক্ত মুসা।

‘ভাবতেও পারবে না,’ বলল ভালদারেজ।

অধৈর্য হয়ে কাঁধ ঝাঁকাল মুসা।

ম্যাপ ভাঁজ করবার ফাঁকে দরজার দিকে পা বাড়াল রবিন।

এক মুহূর্ত দ্বিধা করে তরুণকে পাশ কাটাল কিশোর। আর তখনই ওর কানে এল কথাগুলো।

খুশি-খুশি সুরে বলছে ভালদারেজ, ‘আমি খুঁজে পেয়েছি গতরাতে কোথায় ক্যাকটাস ডাকাতি হয়েছে!’