তিন
সামান্য দূরের ক্যাম্প সাইটে তীরের মত পৌছে গেল মুসা, খপ্ করে ধরে ফেলল ছুটন্ত, অনাহূত তরুণের বামবাহু। হ্যাঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে ফেলল, কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ঘুরিয়ে নিল নিজের দিকে।
‘খবরদার!’ হাঁপাবার ফাঁকে বলল তরুণ, ‘গায়ে হাত দেবে না!’
আবারও তার চিকন বাহু জিম্মি করল মুসা।
ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়াতে চাইল তরুণ। ‘গায়ে হাত তোলার কোনও অধিকা…’
‘ব্যাপার কী?’ কঠিন সুরে বলল মুসা। ‘আমাদের উপর স্পাইগিরি চলছিল কেন?’
‘আমি মোটেও তা করছিলাম না!’ আপত্তির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল তরুণ। ‘তোমাদের মোবাইল হোমের পাশে ক্যাকটাসের ছবি তুলছিলাম। …আমার হাত ছেড়ে দাও বলছি!’
পৌছে গেছে কিশোর ও রবিন।
তিন বন্ধু টের পেল, অন্যান্য ক্যাম্প থেকে চেয়ে আছে অনেকে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও তরুণের হাত ছেড়ে দিল মুসা, কিন্তু তৈরি থাকল, দরকার হলে আবারও ধাওয়া করবে।
‘আপনি কে?’ শান্ত স্বরে জানতে চাইল কিশোর। ‘কান পেতে আমাদের কথা শুনছিলেন কেন?’
‘আগেই বলেছি, গুপ্তচরগিরি করিনি, কানও পাতিনি,’ নাক কুঁচকে ফেলল তরুণ। ‘আমার নাম রাসেল ভালদারেজ। আমি মহান প্রকৃতির ছবি আঁকি— প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী বলতে পারো। তোমরা হয়তো আমার নাম শুনেছ?’
‘জীবনেও না!’ পাষাণের মত কঠিন মুখে বলল মুসা।
খুক খুক করে কাশল কিশোর।
চুপ করে আছে রবিন।
বেশ আহত মনে হলো রাসেল ভালদারেজকে। ‘তা যাই হোক, আমি প্রকৃতির নানা জিনিসের ফটো তুলি, তারপর সেটাকে সুন্দর লাগলে তখন অয়েল পেইণ্টিং আঁকি। তোমরা আমাকে যখন দেখলে, তখন ছোট একটা ক্যাকটাসের ছবি তুলছিলাম।’
‘তাই যদি হয়, তো ছুঁচোর মত পালাতে শুরু করলেন কেন?’ জানতে চাইল মুসা।
‘কারণ তুমি তখন ভয়ঙ্কর বুলডগের মত চিৎকার ছেড়েছিলে,’ বলল ভালদারেজ। ‘ওভাবে চেঁচিয়ে উঠলে তুমিও ভয় পেতে। আর তখন পাঁই-পাঁই করে পালাতেও দেরি করতে না।’
‘আমার তা মনে হয় না,’ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল মুসা।
‘আপনি কিন্তু এখনও বলেননি কী কারণে কান পেতেছেন,’ বলল কিশোর।
‘আগেই বলেছি, কিছুই শুনিনি,’ আবারও বলল ভালদারেজ, একটু চড়ে গেল গলা রাগে, ‘আমি ছবি তুলতে চাইছিলাম। একই দিনে বেশ ক’বার ওই ক্যাকটাসের ছবি তুলেছি। একই গাছ ভিন্ন আলোয় অন্যরকম লাগে। এসব থেকে…’ চুপ হয়ে গেল সে, হঠাৎ জোরে হাত নাড়ল। ‘কিন্তু এখন আর এসব বলে লাভ কী! ওই পরিবেশ শেষ, বারোটা বাজিয়ে দিয়েছ তোমরা, আলো বদলে গেছে, আমার সুযোগও শেষ।’
চট্ করে আকাশ দেখল মুসা। একটু নরম হলো গলার সুর, ‘আপনার কাজ বোধহয় আলোর রং নিয়ে?…. ঠিক আছে, কিন্তু পরেরবার আগেভাগে জানিয়ে আসবেন।’
চালাকির হাসি হাসল ভালদারেজ। ‘যাতে তোমরা আগে থেকেই গোপন কথা থামিয়ে চুপ হয়ে যেতে পারো?’
‘আপনি না একটু আগে বললেন কিছুই শোনেননি?’ বলল কিশোর।
‘কথা ঠিক, কান পাতিনি,’ বলল ভালদারেজ। ‘কিন্তু দু’একটা কথা ঠিকই শুনেছি। তোমরা বলছিলে কী এক কেস নিয়ে তদন্ত করছ বা করবে। …তোমরা কি আসলে কিশোর গোয়েন্দা?’
রেঞ্জার ফিলিপ রায়ানের কথা মনে পড়ল কিশোরের:
কান পেতে কথা শোনে এদিকের মানুষ। চাই না ক্যাম্প গ্রাউণ্ডে কেউ অতিরিক্ত কৌতূহলী হোক।
‘আপনি একেবারেই ভুল শুনেছেন,’ বলল কিশোর। অন্য প্রসঙ্গে সরে গেল, ‘যাক গে সেসব, আপনি কি মরুভূমির গাছের বিষয়ে এক্সপার্ট, নাকি শুধু কমলা আলোয় ছবি তোলেন?’
ভালদারেজের ঠোঁটে ভেসে উঠল চালাকির হাসি। বুঝতে পেরেছি, বদলে নিচ্ছ প্রসঙ্গ। আমারও আপত্তি নেই। জবাব না পেলেও চলবে। তবে বুঝে গেলাম, আসলেই তোমরা গোয়েন্দা। গোপন কোনও কেস নিয়ে কাজ করছ, কিছুই বলবে না।’
কোনও মন্তব্য করল না তিন গোয়েন্দার কেউ।
নিশ্চিত নয় এই তরুণের ব্যাপারে কী ভাবা উচিত।
‘তোমরা যারাই হও, আসলে বলবে না গোয়েন্দা কি না, এই তো?’ কৌতূহলী চোখে তিন গোয়েন্দাকে দেখে নিল ভালদারেজ।
‘আমি কিশোর পাশা, আর ওরা মুসা আমান ও রবিন মিলফোর্ড,’ বলল গোয়েন্দা-প্রধান। ‘আমরা তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে এসেছি এখানে।’
‘পরিচিত হয়ে খুশি হলাম,’ হাত বাড়িয়ে দিল তরুণ। একে একে তিনজনের সঙ্গে হ্যাণ্ডশেক শেষে বলল, ‘তোমাদের আগের কথার সূত্র ধরে বলছি: না, আমি ক্যাকটাসের এক্সপার্ট নই। আমি ওই বিশেষ ক্যাকটাসের তৈলচিত্র আঁকতে চাই। নাম দেব: ওখানেই লটকে আছে প্রকৃতি। সত্যিই ওই গাছ এখনও টিকে আছে বহু লড়াই করে। যখন- তখন চাকার নীচে চ্যাপ্টা হতে পারত, লাথি খেয়ে ছিটকে যেতে পারত, বা আরও কিছু — কিন্তু এখনও সে আছে।’
নাম শুনে হেসে ফেলেছে মুসা। বলল, ‘আশা করি আপনার দেয়া নামের চেয়ে ভাল হবে আপনার পেইণ্টিং।’
‘“ওখানে রয়েছে প্রকৃতি” নাম দিলেই বোধহয় ভাল হতো,’ বিড়বিড় করল রবিন।
‘জানতে পারি কতদিন ধরে এখানে আছেন?’ বলল কিশোর, ‘আমরাও হয়তো বেশ কিছুদিন থাকব।’
‘আমি আছি কমবেশি কয়েক মাস,’ বলল ভালদারেজ। ‘অবশ্য মাঝে চলে গেছি কয়েকবার। এই জায়গাটা আসলে খুব আকর্ষণীয় নয়। দু-তিন সপ্তাহ পর পর আবার ফিরেছি ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু মাঝের সময় বাদ দিলে আমিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আছি। এমন কী তোমাদের পাশের ক্যাম্পের প্রফেসরের চেয়েও পুরনো লোক আমি।’
‘প্রফেসর আর্নল্ডের কথা বলছেন?’ বলল রবিন।
‘হ্যাঁ, সে… আস্ত পাগল।’ মাথা নাড়ল ভালদারেজ। ‘অবশ্য তার মেয়েটা খুবই ভাল। ওর নাম লিলিয়ান।’
‘প্রফেসর আসলে এখানে কী করছেন?’ জানতে চাইল মুসা।
‘জানি না,’ বলল ভালদারেজ। ‘আসলে… আরি, আমরা এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছি কেন? ইচ্ছে হলে আমার ক্যাম্প সাইটে আসতে পারো। কোক চলবে? …ওই যে আমার বাসা!’
ভালদারেজের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করে প্রফেসর আর্নল্ডের বিষয়ে তথ্য পেল তিন গোয়েন্দা।
‘জানি না এখানে কী কাজ করে প্রফেসর,’ বলল তরুণ। ‘প্রায় প্রতিদিন বেরোয় লিলিয়ানকে নিয়ে। পার্কের এখানে ওখানে ওদেরকে দেখি। অথবা বলা উচিত, দেখি ওদের পিকআপ গাড়ি। মরুভূমির ভেতর কোনও রিসার্চ করে বোধহয়। কী কাজ করে বুঝবার জন্য একবার লোকটার সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছিলাম। আরেকটু হলে ঘাড় ভেঙে দিত আমার।’
‘লিলিয়ান কেমন?’ বলল কিশোর, তার সঙ্গে কথা বলা যায়?’
‘ভাল মেয়ে, কথা বলেছি ওর সঙ্গে,’ বলল ভালদারেজ। কিন্তু মনে হয় খুব ভয় পায় বাবাকে।’
‘জানলেন কী করে?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।
‘ওর বাবা থাকলে শামুকের মত গুটিয়ে রাখে নিজেকে।’
ভালদারেজের ক্যাম্প সাইটে পৌঁছে গেল তিন গোয়েন্দা।
ওদের চোখে পড়ল পিকনিক টেবিলের নীচে কলার খোসা, পুরনো কাগজ, বিস্কুট ও চকলেটের র্যাপার।
হয়তো অন্তরে সত্যিকারের শিল্পী, কিন্তু পরিচ্ছন্ন নয় ভালদারেজ। জানেই না তার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাপ্রকৃতি।
‘ওর বাবা না থাকলে তখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলে মেয়েটা?’ জানতে চাইল কিশোর।
‘তাই তো মনে হয়,’ টেবিলের পাশের আইস চেস্ট খুলল ভালদারেজ। ‘সোড়া দেব, না কোক? আর কিছু নেই।’
‘আমার লাগবে না,’ বলল কিশোর।
মাথা নাড়ল রবিন।
‘একটা কোক,’ জানাল মুসা। ‘আপনার পেছনে দৌড়ে গলা শুকিয়ে গেছে।
বাক্স থেকে ঠাণ্ডা কোকের ক্যান বের করে মুসার হাতে ধরিয়ে দিল ভালদারেজ।
‘বাবা যখন থাকে না, কী নিয়ে কথা বলে মেয়েটা?’ জানতে চাইল কিশোর।
নিজে সোডার বোতল খুলে চুমুক দিল ভালদারেজ। ‘বলেছিল কী যেন মেডিকেল রিসার্চ করে ওর বাবা। তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে ক্যাকটাস আর মরুভূমির গাছের। ওসব দিয়ে তৈরি করবে ওষুধ। দু’এক দিন পর পর বেরিয়ে পড়ে— সবসময় রাতে।’
কিশোর-রবিন ও মুসা মনোযোগ দিয়ে কথাটা শুনেছে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করল রবিন, ‘শুধু রাতে?’
‘হ্যাঁ,’ বলল ভালদারেজ। সন্ধ্যার সময় রওনা হয় পিকআপ গাড়ি নিয়ে, পিছনে রেখে যায় তাদের ক্যাম্প ট্রেইলার। একদিন বা দু’দিন পর আবারও ফেরে।’
‘শেষ কবে গিয়েছিল? জানতে চাইল কিশোর।
কয়েক মুহূর্ত ভাবল ভালদারেজ, তারপর বলল, ‘তিনদিন আগে। আজ দুপুরের পর ফিরেছে। তোমরা আসার দু’ ঘণ্টা আগে।’
‘খাইছে!’ বিড়বিড় করল মুসা। ভাবছে, বোধহয় ধরা পড়ে গেছে ডাকাত! দুই চুমুকে শেষ করে ফেলল কোকের ক্যান, ওটা ফেলে দিল গার্বেজের ড্রামের ভিতর।
‘এখানে যা ঘটছে সব খেয়াল রাখেন, তাই না, ভালদারেজ?’ বলল রবিন
উজ্জ্বল হয়ে উঠল ভালদারেজের চোখ-মুখ। ‘সবসময় সব খেয়াল করে শিল্পীরা। চোখ-কান খোলা থাকে। তাই কিছুই এড়ায় না।’
‘প্রফেসর আর আপনি ছাড়া আর কেউ এত দিন ধরে আছে?’ জানতে চাইল কিশোর।
আবারও কিছুক্ষণ ভাবল ভালদারেজ, তারপর বলল, ‘না, কেউ না। এক দম্পতি ছিল দুই সপ্তাহ, তারপর চলে গেল এক মাসের জন্যে। আমার ধারণা তারা গিয়েছিল মেক্সিকোয়। এক সপ্তাহ হলো আবারও ফিরেছে। নাহ্, ব্যস, আর কেউ না। আর সবাই হাওয়ার মত আসে যায়।’
চুপ করে ভালদারেজের দিকে চেয়ে আছে কিশোর। ভাবছে, এমনি এমনি তরুণ অতি কৌতূহলী, নাকি কোনও কারণে নাক গলাচ্ছে ওদের বিষয়ে?
‘ঠিক আছে,’ কয়েক সেকেণ্ড পর বলল কিশোর, ‘এবার ফিরতে হয়। মুসা, হটডগ চুলোয় তোলা জরুরি।’
‘এতক্ষণে ঠিকঠাক জ্বলছে কয়লার আগুন,’ বলল রবিন।
‘কোকের জন্য ধন্যবাদ,’ হাত বাড়িয়ে তরুণের সঙ্গে করমর্দন করল মুসা।
কিশোর এবং রবিনও।
নিজেদের ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
‘ভালদারেজ সত্যি একটা তথ্যের ভাণ্ডার,’ হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন। ‘হয়তো ওর কাছ থেকে আরও কিছু জানা যাবে।’
আস্তে করে মাথা দোলাল কিশোর। ‘কিন্তু তাকে একফোঁটা বিশ্বাস করা যায় না।’
‘কেন?’ জানতে চাইল মুসা।
‘গভীর মনোযোগে কাজ করে সত্যিকারের শিল্পী, লোকের আদনা- আদনা বিষয়ে নাক গলাবার সময় থাকে না তার,’ বলল কিশোর। ‘আমি নিশ্চিত নই আসলেই ভালদারেজ শিল্পী কি না।’
‘হুম,’ সায় দিল রবিন।
‘চোখ রাখতে হবে ওর ওপর,’ মাথা দোলাল মুসা। ‘রাসেল ভালদারেজ নিজেকে যা বলছে, সে হয়তো তা নয়।’
ক্যাম্প সাইটে এসে ওমর শরীফকে দেখতে পেল না ওরা।
দেরি না করে মোবাইল হোমে উঠল তিন গোয়েন্দা।
কিচেনের সিঙ্কে হাত পরিষ্কার করছে ওমর শরীফ। মৃদু হেসে বলল, ‘কপাল ভাল, আরও দেরি করোনি। ছেলেটা আসলে কী চাইছিল? কী ঘটল?’
ভালদারেজের সঙ্গে ওদের কী কথা হয়েছে, সবই জানাল তিন গোয়েন্দা।
ওদের সঙ্গে সায় দিল ওমর।
সত্যি নজর রাখা উচিত ওই ছেলেটার ওপর।
‘কিন্তু এবার আরও জরুরি কথা,’ বলল ওমর, ‘মুসা কি রাঁধবে, না সত্যি না-খেয়ে মরে যাব?’
‘বড়জোর দশ মিনিট,’ বলল মুসা। ‘তার মধ্যেই শেষ করব রান্না।’
দু’ মিনিট পর মোবাইল হোম থেকে নেমে কাঁচা হটডগ ও বাটি ভরা না-ফোটানো বিন গ্রিলে চাপিয়ে দিল মুসা।
ততক্ষণে বাসন, চামচ ইত্যাদি সব টেবিলে সাজিয়ে ফেলল কিশোর ও রবিন। তারই ফাঁকে ওরা দেখল গর্জন তুলে রাস্তা ধরে চলে গেল ডোনাল্ড ওয়াইলির নীল পিকআপ।
‘লোকটা এখন কী করবে জানতে পারলে ভাল হতো,’ নিচু স্বরে বলল কিশোর। ‘মনটা কু ডাকছে আমার।’
‘আমারও, মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটবে,’ বলল মুসা। ‘কেন মনে হচ্ছে, বলতে পারব না।
‘সে কী করবে বলে ভাবছ?’ জানতে চাইল রবিন
জবাব দিল না কিশোর বা মুসা।
‘ভাল হয় না পিছু নিলে?’ কিশোরের দিকে চাইল মুসা।
‘চলো যাই,’ বলল কিশোর।
‘ওমর ভাই!’ মোবাইল হোমের দিকে চেয়ে হাঁক ছাড়ল মুসা। ‘হটডগ আগুনের ওপর, চুলার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আমরা দশ মিনিটের ভেতর ফিরছি।’
এবার আর একমিনিটও লাগল না গাড়ি নিয়ে রওনা হতে।
বেশ গতি তুলছে রবিন।
দূরে দেখা গেল ডোনাল্ড ওয়াইলির নীল পিকআপ।
‘পিছিয়ে থাকো,’ বলল কিশোর। ‘চাই না দেখে ফেলুক।’
স্পিড কমাল রবিন, এগুতে দিচ্ছে পিকআপকে। কয়েক মুহূর্ত পর মন্তব্য করল নথি, ‘মনে হচ্ছে অফিসে যাচ্ছে।’
‘আমারও তাই ধারণা,’ বলল মুসা।
নীল পিকআপকে পুরো আধ মাইল অনুসরণ করল তিন গোয়েন্দা, তারপর বাঁক নিয়ে ফিলিপ রায়ানের অফিসের সামনে থামল ডোনাল্ড ওয়াইলি। লাফ দিয়ে নেমে গেল গাড়ি থেকে।
বেশ দূরেই গাড়ি রেখেছে রবিন।
ওদেরকে দেখতে পাবে না ওয়াইলি।
লোকটা অফিসে ঢুকবার পর আবারও এগোল কিশোরদের গাড়ি, থামল গিয়ে দালানের পাশে।
‘এবার?’ নিচু স্বরে জানতে চাইল রবিন।
‘এখানেই অপেক্ষা করব,’ বলল কিশোর।
‘তাতে লাভ কী?’ অধৈর্য শোনাল মুসার কণ্ঠ।
‘রাত হয়ে এল, আবার যখন বেরুবে, তার পিছু নেব,’ বলল কিশোর।
‘মন্দ বুদ্ধি না,’ বলল মুসা। ‘ওই লোক যদি সত্যিই ক্যাকটাস ডাকাত হয়, হয়তো পার্ক থেকে আরও গাছ তুলবে।
মাথা নাড়ল রবিন। ‘ওই ছোট পিকআপে বড় ক্যাকটাস আঁটবে না।’
‘কিন্তু সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে দেখা করতে পারে,’ বলল মুসা।
‘এমনও হতে পারে…’
ঠিক তখনই অফিসের ভিতর রাগী গর্জন শুনতে পেল ওরা। পরক্ষণে চেঁচিয়ে উঠল দ্বিতীয়জন।
পরস্পরের দিকে চাইল তিন গোয়েন্দা।
অফিসে দ্বিতীয় লোকটার কণ্ঠ ওরা চেনে।
ওই লোক ওমর শরীফের বন্ধু হেড রেঞ্জার ফিলিপ রায়ান!
এবার শুনল ওরা কাঁচ ভাঙার জোরালো ঝনঝন আওয়াজ!