মরুদস্যু – ১৪

চোদ্দ

ডাকাত দলের লোক যাকে ভেবেছিল ওরা, এ সে— ডোনাল্ড ওয়াইলি!

তার মুখ থেকে টেপ খুলতে শুরু করেছে কিশোর।

মুসা ও রবিন খুলছে লোকটার কবজি ও গোড়ালির টেপ।

সব সরিয়ে ফেলবার পরও কথা বলল না ওয়াইলি, মুখ থেকে বেরুল গোঁ-গোঁ আওয়াজ।

তাকে দেয়া হয়েছে কোনও ধরনের কড়া ড্রাগ্‌স্।

‘গাড়ির পেছনের সিটে তোলো, তাগাদা দিল কিশোর।

‘এখন আর রায়ানের পিছু নেয়া সম্ভব নয়,’ জানাল মুসা। ‘যাকগে, আগের কাজ আগে শেষ করি।’

ধরাধরি করে প্রায় বেহুঁশ লোকটাকে গাড়িতে তুলল ওরা।

নতুন করে গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে গেল মুসা।

এখন পাশে রবিন।

পিছনের সিটে ওয়াইলির পাশে বসেছে কিশোর। নিচু স্বরে বলল, ‘আপনি কি কথা বলতে পারবেন, মিস্টার ওয়াইলি?’

জোরে কী যেন বলতে চাইল যুবক, কিন্তু সবই জড়িয়ে গেল জিভে। উঠে বসতে গিয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ল আবারও। গুঙিয়ে উঠল অসহায়ভাবে।

‘ঠিক আছে, মিস্টার ওয়াইলি, ভাববেন না, আমরা আপনাকে ডাক্তারের কাছে নেব,’ বলল কিশোর।

‘গুংডং,’ জবাবে বলল ডোনাল্ড ওয়াইলি।

‘সামনের হাইওয়েতে কেউ নেই,’ বলল মুসা। ‘হলদে ভ্যান উধাও। কিশোর, ওয়াইলির কাছে জিজ্ঞেস করো কোথায় যাচ্ছে ফিলিপ রায়ান!’

কিশোর কিছু বলবার আগেই বিড়বিড় করে কী যেন বলল ওয়াইলি। কিন্তু বোঝা গেল না কিছুই।

‘আরেকবার বলুন?’ বলল কিশোর।

দু’বার ধীরে ধীরে বলল ওয়াইলি, ‘রেড ট্যাঙ্কস্ টিনাযা! রেড ট্যাঙ্কস্ টিনাযা!’

‘রেড ট্যাঙ্কস্ টিনাযা, কোনও জায়গার নাম?’ জানতে চাইল কিশোর।

ঝট করে উপরে হাত তুলে ইশারা করল ওয়াইলি। ‘হুং, রেড ট্যাঙ্কস টিনাযা!’

‘ম্যাপে বোধহয় ওই নামের এলাকা আছে,’ বলল কিশোর।

‘এত বড় পার্কে কোথায়…’ সিলিঙের বাতি জ্বেলে টপোগ্রাফিক ম্যাপ দেখল রবিন। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ‘আশা করি জায়গাটা কাছাকাছি কোথাও হবে। …দাঁড়াও, হ্যাঁ, হাইওয়ের কাছেই। মাত্ৰ কয়েক মাইল দূরেই।’

‘পানির টাঙ্কি কেন ওখানে?’ গাড়ি চালাবার ফাঁকে বলল মুসা।

‘জানি না, ওয়াইলি হয়তো জানেন,’ বলল রবিন, ‘মিস্টার ওয়াইলি…’ চুপ হয়ে গেল ও।

ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে ঘুমাচ্ছে ডোনাল্ড ওয়াইলি, হুঁশ নেই!

‘বোধহয় কঠিন ড্রাগ্‌স্‌,’ বলল মুসা, ‘নাকি বিষ?’

‘রেড ট্যাঙ্কস্ টিনাযা লক্ষ্য করে রওনা হও,’ জানাল কিশোর। যোগাযোগ করতে চাইল সিবি রেডিয়োতে। ‘পাঁচ নম্বর চ্যানেল, কিশোর বলছি! ভালদারেজ! আপনি কোথায়?’

তখনই সিগনাল ধরল তরুণ আর্টিস্ট।

‘বলো,’ হিসহিস শব্দের ভিতর দিয়ে এল কণ্ঠ।

‘আমরা হাইওয়েতে,’ বলল কিশোর

‘কোথায়?’

‘হাইওয়েতে,’ আবারও বলল কিশোর। ‘রেড ট্যাঙ্কস টিনাযা থেকে সামান্য দূরে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে আপনার?’

‘হ্যাঁ, এখন অপেক্ষা করছি হেড রেঞ্জারের অফিসে,’ বলল ভালদারেজ। ‘পাঠানো হচ্ছে মেডিকেল কপ্টার। রওনা হয়েছে পুলিশ।

‘গুড,’ বলল কিশোর, ‘পুলিশে জানান তাঁরা যেন রেড ট্যাঙ্কস টিনাযায় আসেন। ওখানেই আছে ফিলিপ রায়ানের ডাকাত দল। আমাদের সঙ্গে আছে ডোনাল্ড ওয়াইলি, নেশাগ্রস্ত। তাকে পৌঁছে দিতে হবে হাসপাতালে।’

উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল ভালদারেজ, ‘ওর কোনও ক্ষতি হয়নি তো?’

সিটে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে ডোনাল্ড ওয়াইলি।

মনে হলো না ঘুম থেকে তোলা যাবে।

কিশোর বলল, ‘ডাক্তার দেখলে বুঝবে। রেড ট্যাঙ্কস্ টিনাযায় ডাক্তারের হেলিকপ্টার পাঠান।’

ওদিক থেকে বলল ভালদারেজ, ‘ঠিক আছে, ব্যবস্থা করছি। ভাল থেকো।’

ওয়াকি-টকির সুইচ অফ করে যন্ত্রটা রেখে দিল কিশোর।

বড় করে শ্বাস ফেলল মুসা, ‘আশা করি সঠিক পথেই যাচ্ছি।’

‘মুসা-রবিন, মাত্র একটা সুযোগ পাব আমরা, বলল কিশোর, ‘ঝটপট সরিয়ে ফেলতে হবে ওমর ভাইকে।’

নথি বা সহকারী গোয়েন্দা চুপ করে থাকল।

ঠিক কথাই বলেছে ওদের বন্ধু।

কিছুক্ষণ পর একটা টার্নঅফের কাছে পৌঁছে গেল ওরা।

দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্ত লক্ষ্য করে গেছে অর্গান পাইপ পার্ক।

মস্ত এক সাইনবোর্ডের পাশে গাড়ি রাখতে বলল কিশোর। ওর কথায় হেডলাইট নিভিয়ে দিল মুসা।

চাঁদের রুপালি আলোয় দেখা গেল, দূর থেকে দূরে মরুভূমিতে মিলিয়ে গেছে ফিতার মত কালো আঁকাবাঁকা রাস্তা।

‘সামান্য কোনও আলোও আমাদের চোখে পড়বে,’ বলল রবিন।

ওরা বুঝতে পারছে, ওদের চেয়ে ঢের ভাল অবস্থানে আছে ফিলিপ রায়ান। প্রতিটি রাস্তা, বাঁক বা ওয়াশ— সবই চেনে সে।

‘দেখি সাইনবোর্ডে কী লিখেছে,’ বলল কিশোর।

ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে সাইনবোর্ডের উপর আলো ফেলল রবিন।

ওখানে বড় করে লেখা:

রিন্স ওয়াশ অ্যাণ্ড রেড ট্যাঙ্ক টিনাযা।

বামে চলে গেছে ধুলোময় এক রাস্তা।

‘চলো, যাই,’ বলল মুসা। ‘কিছুটা গিয়েই গাড়ি রাখব। হেঁটে যাব লোকগুলোর কাছে। তারপর ওমর ভাইকে ছুটিয়ে নিয়েই ভোঁ দৌড়!’

কাঁচা রাস্তায় নেমে এল গাড়ি, গতি তুলল না মুসা, এক শ’ গজ যাওয়ার পর নেমে গেল রাস্তা থেকে। ওখানেই পার্ক করল।

‘ফ্ল্যাশলাইট আর সিবি রেডিয়ো নেব আমরা,’ বলল কিশোর। একবার দেখে নিল ডোনাল্ড ওয়াইলিকে। গভীর ঘুমে মগ্ন যুবক।

আপাতত তার জন্য কিছুই করতে পারবে না ওরা।

আগে উদ্ধার করতে হবে ওমর শরীফকে।

গাড়ি থেমে নেমে হাঁটতে শুরু করল তিন বন্ধু।

চাঁদের আলো পড়েছে মরুভূমির মেঝেতে।

হু-হু করে বইছে শীতল হাওয়া।

দূরে ডেকে উঠল এক পাল কয়োটি।

রাস্তা ধরে পৌনে এক মাইল হাঁটবার পর আরও সতর্ক হয়ে উঠল কিশোর-মুসা-রবিন।

সামনে এক টিলা। ওদিক থেকে আসছে সাদা আভা।

‘আমরা খোঁজ পেয়ে গেছি দস্যুদের,’ নিচু স্বরে বলল মুসা।

‘তাই তো মনে হয়,’ সায় দিল রবিন।

‘চলো, রাস্তা ছেড়ে টিলার ওপর উঠব,’ বলল কিশোর।

মরুভূমির বুক চিরে এগুতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা।

মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হচ্ছে।

চারপাশে কাঁটাভরা ক্যাকটাস।

সাবধানে টিলা বেয়ে উঠছে ওরা। চূড়ায় উঠে সামান্য যাওয়ার পর আবারও ওদিকের ঢাল দেখতে পেল। যা ভেবেছে, ঠিক তেমনই দৃশ্য দেখতে পেল। ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের হেডলাইটের জোরালো আলোয় ভেসে যাচ্ছে বড় এক অর্গান পাইপ ক্যাকটাস।

গাছের গোড়া খুঁড়ছে উইনটন এবং সাদা শার্ট ডাকাত।

নিচু খড়খড় শব্দ তুলছে ফ্ল্যাটবেড ট্রাক। তার চেয়ে স্পষ্ট শোনা গেল সেমি ট্রেইলারের ডিজেল ইঞ্জিনের অলস আওয়াজ।

ক্যাকটাসের পাশে কয়েকটা বোর্ড।

গাছ তুলে নেয়ার পর বোর্ড দিয়ে তৈরি করা হবে ফ্রেম।

হেডলাইটের আলোয় বেরিয়ে এল ফিলিপ রায়ান। মনে হলো নির্দেশ দিচ্ছে। আঙুল তাক করেছে ক্যাকটাসের দিকে।

আশপাশে কোথাও ওমর শরীফকে দেখতে পেল না কিশোর-মুসা- রবিন। নিজেদের ভিতর চোখে চোখে কথা হলো ওদের, তারপর সাবধানে নামতে লাগল টিলা বেয়ে। পায়ের নীচে পিছলে যেতে চাইছে নুড়ি পাথর। আছাড় খেলে ওই আওয়াজে সবই বুঝে ফেলবে ডাকাতরা।

সেমি ট্রেইলারের দিকে চলেছে ওরা।

ওদিকেই রাখা হয়েছে হলদে ভ্যান।

কিছুক্ষণ পর টিলা থেকে নেমে পড়ল ওরা। দস্যুদের এড়িয়ে ট্রাকের আড়ালে পৌঁছে গেল, উঁকি দিল ওদিক থেকে।

আলোর ভিতর দাঁড়িয়ে আছে ফিলিপ, কোমরে হোলস্টার।

আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে তিন বন্ধু।

ট্রেইলারের পিছন চাকার কাছে পড়ে আছে কালো এক স্তূপ বন্দি ওমর শরীফ!

দড়ি দিয়ে বাঁধা হাত-পা, মুখে টেপ।

হাতের ইশারা করে পিছিয়ে গেল কিশোর।

ওরা থামল গিয়ে একট দূরের ঘন এক ঝোপের ভিতর।

‘কী?’ জানতে চাইল মুসা।

‘ডাইভার্শন লাগবে,’ বলল কিশোর।

‘মুসা আর আমি ব্যস্ত রাখব ফিলিপ আর তার লোকদের,’ বলল রবিন। আর এই সুযোগে ওমর ভাইকে নিয়ে সরে পড়বে তুমি— ঠিক আছে?’

‘পরে তোমরা সরবে কীভাবে?’ জানতে চাইল কিশোর।

‘আমরা সুযোগ বুঝে লেজ তুলে ভাগব,’ বলল মুসা। ‘হেভি ডিউটি ফ্ল্যাশলাইট থাকলেও কাজ হবে না, আঁধার মরুভূমিতে কে কাকে ধরে!’

‘ওরা নিজেদের কবর খুঁড়তে ব্যস্ত,’ বলল রবিন। ‘মনে হয় না ধাওয়া করবে।’

দুই দলে ভাগ হয়ে গেল ওরা।

কিশোর চলেছে সেমি ট্রেইলারের দিকে।

এদিকে আলোর বৃত্তের দিকে পা বাড়িয়েছে সতর্ক রবিন-মুসা।

সেমি ট্রেইলারের কাছে পৌছে অপেক্ষা করল কিশোর।

একমিনিট পেরুতে না পেরুতেই হাউমাউ করে উঠল কাউবয় উইনটন। নাচতে লাগল বেদম। একহাতে চেপে ধরেছে মুখ। তারই ফাঁকে বলল, ‘ওরেব্বাপরে! সব দাঁত ভেঙে দিয়েছে বাঁদরগুলো!’

লাফ দিয়ে আরেক দিকে ছিটকে পড়ল সাদা শার্ট ডাকাত।

ধাঁই-ধাঁই করে সব পাথরের ঢিল পড়ছে তাদের উপর।

‘কে! কে!’ ধমকে উঠল ফিলিপ রায়ান।

প্যান্টের পকেট থেকে ফোল্ডিং নাইফ বের করে কালো স্তূপের দিকে রওনা হয়ে গেল কিশোর।

পরের তিরিশ সেকেণ্ডে কেটে দিল ওমর শরীফের গোড়ালি ও কবজির দড়ি। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল কিশোর, ‘ওমর ভাই, সরি।’ পরক্ষণে হ্যাঁচকা টানে চড়ু-চড়ু করে খুলে নিল বৈমানিকের মুখের টেপ। ‘দৌড়াতে পারবেন?’

‘পারব!’ মুখ কুঁচকে বিড়বিড় করল ওমর।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আড়ষ্ট হয়ে গেছে ওর পায়ের পেশি।

কিশোরের কাঁধে হাত রেখে রওনা হয়ে গেল ওমর আঁধারে।

একমিনিট পেরুবার আগেই ঢুকে পড়ল ঘন ঝোপঝাড়ে।

কিছুটা যেতেই শুকনো ঝর্নার মত খাদে পিছলে নামল ওরা।

তখনই ঝর্নার পাড়ে বিঁধল কী যেন!

এক সেকেণ্ড পর বুম্! আওয়াজ এল।

গুলি করা হয়েছে ওদেরকে লক্ষ্য করে!

ঝোপের ভিতর লুকিয়ে থাকতে চাইল ওরা।

কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পর পাড়ে এসে পড়ল জোরালো আলো।

পরক্ষণে ওদের উপর পড়ল বাতি।

‘ভেবেছিলে আমি আস্ত গাধা— না?’ দাঁত খিঁচিয়ে বলল ফিলিপ রায়ান। ‘ভুল! উঠে এসো, নইলে লাশ ফেলে দেব!’

‘মনে হয় না গুলি করবে, কিন্তু ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না,‘ কিশোরের কানের কাছে বলল ওমর।

‘ঠিকই বলেছ, ওমর!’ হেসে উঠল ফিলিপ। ‘আরও পাঁচটা বুলেট আছে। উঠে এসো, পুরনো দোস্ত!’

পাড় বেয়ে উঠতে লাগল কিশোর ও ওমর।

একটু পিছিয়ে গিয়ে অস্ত্র তাক করল ফিলিপ রায়ান।

পরের পাঁচ মিনিটে অস্ত্রের মুখে ওমর ও কিশোরকে সেমি-র সামনে নিয়ে এল মরুদস্যু।

ততক্ষণে রবিন-মুসাকে ধরতে না পেরে আবারও ফিরেছে সাদা শার্ট ও দাঁত ভাঙা কাউবয় উইনটন।

‘এদের ওপর চোখ রাখো,’ বলল ফিলিপ। কিশোরের উদ্দেশে বলল, ‘অ্যাই ছেলে, তোমার দুই বন্ধু কোথায়?’

‘দূরে কোথাও,’ বলল কিশোর। ‘আর ধরতে পারবেন না।’

অস্ত্র হাতে আঁধারে চোখ চালাল ফিলিপ রায়ান। বোঝা গেল অস্বস্তি লাগছে তার। ‘ঠিক আছে, পালিয়ে যাক,’ বলল কয়েক মুহূর্ত পর, ‘ধারে কাছে এলেই গুলি চালাব।’

‘তোমাকে সৎ লোক ভাবতাম, রায়ান!’ বলল ওমর, ‘ছিহ্, দেশের সম্পদ এভাবে ডাকাতি করছ! কিডন্যাপিং করা বা ড্রাগস্ দেয়া কবে থেকে ধরলে?’

‘কবে থেকে?’ হাসল ফিলিপ রায়ান। ‘ছয় বছর হলো এ চাকরি করছি। কিন্তু এই কাজ ধরেছি গত তেরো মাস ধরে। কেন এসব করছি জানতে চাও? লোকবল কমিয়ে আনছে ফরেস্ট সার্ভিস। কবে ছাঁটাই করে দেয় তার ঠিক নেই। অর্ধেকেরও কম পাব পেনশনের টাকা। স্রেফ না খেয়ে মরতে হবে। পেনশনের টাকায় জীবন চলবে না। শেষে কোনও ফাস্ট ফুডের দোকানের বেয়ারা হতে হবে! এসব বুঝেই ক্যাকটাস বিক্রি করছি, বলতে পারো তুলে নিচ্ছি পেনশনের টাকা।’

‘চোরের আত্মপক্ষ সমর্থন!’ বলল কিশোর। ‘এসব কথা মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। রেঞ্জারের কাজ পছন্দ না হলে অন্য হাজারটা চাকরির রাস্তা খোলা ছিল। কেউ তো আপনাকে ঠেকিয়ে রাখেনি। চুরিকে কখনও উচিত কাজ বলে চালাতে পারবেন না। আদালতে শাস্তি হবেই। মস্ত অন্যায় করেছেন, কাজেই এবার জেলের ভাত খেতেই হবে। পুলিশ আসছে।’

‘ওরা আসার আগেই মেক্সিকোয় ঢুকে পড়ব,’ বলল ফিলিপ রায়ান। ‘আধঘণ্টাও লাগবে না সীমান্তে পৌছুতে। মেক্সিকোতে সব কিছুর দাম অনেক কম। রীতিমত রাজার হালে থাকব ওখানে।’

‘আপনার দুই ট্রাকের জন্যে হাইওয়েতে চোখ রেখেছে পুলিশ,’ বলল কিশোর। ‘ধরা পড়বেন।

‘এই চালান না নিলেও চলবে,’ বলল ফিলিপ, ‘গত এক বছরে সরিয়ে নিয়েছি কমপক্ষে দুই শ’টা গাছ। রিপোর্ট করিনি, তাই কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। আমাকে কেউ ধরতে পারবে না। আর এটা জানি বলেই তোমাদেরকে তদন্ত করতে দিয়েছি। নজর রেখেছি প্রতিটি বিষয়ে।’

‘তারই ভেতর অনেক ভুলও করে ফেলেছেন,’ বলল কিশোর। ‘পুলিশ জেনে গেছে আপনি গুরুতর আহত করেছেন প্রফেসর আর্নল্ডকে। শুধু তাই নয়, আরও আছে— আপনি কিডন্যাপ করেছেন ডোনাল্ড ওয়াইলিকে। পুলিশ সবই জানে। ‘

‘হ্যাঁ, ওয়াইলি,’ সন্তুষ্ট সুরে বলল ফিলিপ। ‘নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল আমার। তোমরা ঝামেলা না করলে সব দোষ পড়ত ওর ওপর। আমি হাসতে হাসতে জীবন কাটাতাম…’

চুপ হয়ে গেছে সে।

মরুভূমির ভিতর হঠাৎ গম্ভীর আওয়াজ শুরু হয়েছে।

চাপা পড়ে গেল দুই ট্রাকের ইঞ্জিনের শব্দ।

‘হেলিকপ্টার!’ চেঁচিয়ে উঠল ফিলিপ রায়ান। ‘অ্যাই, বাতি নেভাও!’

আকাশ থেকে নেমে আসছে অত্যুজ্জ্বল সাদা আলো।

পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিনি টেপ রেকর্ডারটা বন্ধ করে দিল কিশোর— স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে।

ছুটে গিয়ে ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের বাতি নিভিয়ে দিল দাঁতভাঙা উইনটন। তার সঙ্গী দুই সেকেণ্ড পর বাতি বন্ধ করল ট্রেইলারের।

কিশোর ভাবছে এ সুযোগে পালাবে, কিন্তু খপ্ করে ওর কলার ধরল ফিলিপ রায়ান। কপালে ঠেসে ধরেছে অস্ত্রের নল। কর্কশ স্বরে বলল, ‘সামনে বাড়ো! ওমর! অ্যাই, সোজা হয়ে দাঁড়াও! দেরি করলে ফুটো করে দেব এই ছোকরার কপাল!’

সতর্ক হয়ে উঠেছে ওমর।

ওকে হলদে ভ্যানের দিকে ইশারা করল ফিলিপ রায়ান। ওমর রওনা হতেই কলার ধরে কিশোরকে হেঁচড়ে নিয়ে চলল সে। চেঁচিয়ে বলল, ‘সরে পড়ো, উইনটন-সিমন্স! পড়ে থাক ক্যাকটাস! জানোই তো কোথায় দেখা হবে!’ ভ্যানের দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে কিশোরকে তুলে দিল সে। ধমকে উঠল, ‘মেঝের ওপর বসো! মাথা তুললেই মরবে! পাশের সিটে বসো, ওমর!’

কিশোর ও ওমরকে একবার দেখে নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল ফিলিপ রায়ান, হাতে গুলিভরা রিভলভার। অন্য হাতে ইঞ্জিন চালু করে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল সে, ছুটতে লাগল হাইওয়ে লক্ষ্য করে।

রিয়ারভিউ মিররে দেখা গেল ট্রাকদুটোর উপর সার্চলাইটের আলো ফেলেছে হেলিকপ্টার।

‘ওরা ট্রাক সার্চ করুক, সে সুযোগে হাওয়া হয়ে যাব সীমান্তের ওপাশে,’ কর্কশ স্বরে হাসল ফিলিপ। একবার দেখে নিল ওমর ও কিশোরকে। ‘খুন করতে চাই না তোমাদের। সীমান্ত পেরুবার পর নামিয়ে দেব। ছোট শহর সোনোইটা, কিন্তু বাড়ি ফিরতে সমস্যা হবে না তোমাদের। …শেষ ক্যাকটাসটা থেকে আসত দশ হাজার ডলার। টাকাটা হারালাম। আসলে অনেক সমস্যা করেছ তোমরা, কিন্তু মন থেকে মাফ করে দিয়েছি। বলতে পারবে না যে সত্যিকারের ভাল মানুষ নই আমি!’

‘একটা কথা জানতে পারি?’ নরম সুরে বলল কিশোর, ‘আপনি তো কোনও ঝামেলা ছাড়াই নিশ্চিন্তে টাকা-পয়সা নিয়ে সরে যেতে পারতেন। তা হলে ডোনাল্ড ওয়াইলিকে ফাঁদে ফেললেন কেন?’

কাঁচা রাস্তায় তীক্ষ্ণ বাঁক নিল ফিলিপ রায়ান। গতি কমল না গাড়ির। ড্রাইভিঙের ফাঁকে বলল সে, ‘ও ছিল আমার ইনশ্যুরেন্স। কোনও গোলমাল দেখা দিলে ওকে ব্যবহার করে নিজেকে নিরাপদ রাখতাম। ফিনিক্সে কোম্পানি ডুবে যাওয়ার পর বদনাম হয়ে গিয়েছিল ওর, সেটা মাথায় রেখে ওয়াইলিকে চাকরি দিই। তোমাদের বলেছি, ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে সে। একই কথা তাকেও বলেছি আর সে কারণেই রেগে গিয়ে ঘুষি তুলেছিল।’

তীব্র গতি তুলে আরেকটা বাঁক নিল ফিলিপ রায়ান। আর তখনই সামনে জ্বলে উঠল অতি উজ্জ্বল সাদা আলো। অন্ধ হয়ে গেল প্রাক্তন রেঞ্জার। কড়া ব্রেক কষল, কিন্তু তখনই পিছলে গেল গাড়ির চাকা। রাস্তার কাঁধে উঠেই কাত হয়ে গেল ভ্যান। পরক্ষণে আছড়ে পড়ল নীচের জমিতে— ছ্যার ছ্যার শব্দ তুলে দূরে গিয়ে থামল। কাত হয়ে পড়ে আছে গাড়ি।

কয়েক সেকেণ্ড পর কিশোর বুঝল ওর কোনও ক্ষতি হয়নি।

‘ওমর ভাই, ঠিক আছেন?’ জানতে চাইল ও।

‘ঠিক আছি,’ চাপা স্বরে বলল ওমর।

গাড়ির ডানদিকের বন্ধ দরজার উপর বসে আছে ওরা।

বামদিকের দরজা আকাশের দিকে খুলল ফিলিপ রায়ান। সে-ও আহত নয়। লাফ দিয়ে গাড়ির বডিতে উঠে নামল কাঁচা, সরু রাস্তায়। ধমকে উঠল, ‘বেরিয়ে এসো তোমরা! খবরদার! আমার হাতে রিভলভার!’ কী কারণে অ্যাক্সিডেন্ট হলো ঘুরে দেখল সে।

রাস্তার উপর রাখা হয়েছে ভালদারেজের পিকআপ। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তরুণ। হাত মাথার উপর।

‘গুলি করবেন না, স্যর!’ ভয় পাওয়া স্বরে বলল সে।

‘এদিকে এসো!’ ধমক দিল ফিলিপ।

কিশোরের পর গাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এল ওমর।

ভালদারেজের মত করেই মাথার উপর হাত তুলে রেখেছে ওরা।

‘অ্যাই, গাড়ির চাবি দাও!’ ভালদারেজকে ধমক দিল ফিলিপ। হাত বাড়িয়ে দিল তরুণ, ওর কাছ থেকে ছোঁ দিয়ে চাবি নিল মরুদস্যু। বলল, ‘পিকআপ নিয়েই পার হব বর্ডার। খবরদার! কেউ নড়বে না!’

কিশোর, ওমর ও ভালদারেজকে রিভলভারের মুখে রেখে পিছাতে শুরু করেছে। পিকআপের ক্যাবের চার ফুট দূরে পৌঁছে ঘুরল সে ওঠার জন্য।

চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর, ওমর ও ভালদারেজ।

আর তখনই কী যেন উড়াল দিতে দেখল ওরা।

নিজেদের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারল না।

পিকআপের বেড থেকে উড়ে গিয়ে ফিলিপের বুকে প্রচণ্ড এক কিক মেরেছে মুসা। হুড়মুড় করে রাস্তার উপর পড়ল দু’জন। মুসা পড়েছে ফিলিপ রায়ানের বুকের উপর। ওর ঘুষি নামল লোকটার মুখে। থ্যাচ্ করে ভেঙে গেল নাক।

প্রাক্তন হেড রেঞ্জার বুঝে গেল মস্ত বিপদে পড়েছে।

রাস্তা হাতড়ে তুলে নিতে চাইল পড়ে যাওয়া রিভলভার।

আর তখনই পাশ থেকে থাবা দিল রবিন, তুলে নিল রিভলভারটা। ধরল অসৎ রেঞ্জারের কপাল লক্ষ্য করে।

নড়াচড়া বন্ধ করে বরফের মূর্তি হয়ে গেল ফিলিপ রায়ান। লোকটার বুকের উপর থেকে উঠেই ওর পাঁজর বরাবর দুটো কড়া

লাথি লাগাল মুসা মনের সুখে।

ততক্ষণে কাছে চলে এসেছে অন্যরা।

ওমর শরীফের হাতে রিভলভার তুলে দিল রবিন।

প্রাক্তন বন্ধুর বুকে অস্ত্র তাক করে রাখল ওমর।

‘রবিন আর আমি জানতাম আপনারা বন্দি, কিন্তু পারব না কিছুই করতে,’ বলল মুসা। ‘ঠিক করলাম আপনারা এলে গাড়ি নিয়ে পিছু নেব। দৌড়ে এখানে ফিরলাম, আর তখনই এল ভালদারেজ। তাকে খুলে বললাম সব। রবিনের কথায় ঠিক করা হলো রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে পিকআপ।’

‘তারপর সব সিনেমার মত,’ বলল ভালদারেজ। ‘কাত হয়ে গেল ফিলিপ রায়ানের ভ্যান। পিকআপের বেডে লুকিয়ে পড়ল রবিন ও মুসা। ঝাঁপিয়ে পড়ল ঠিক সময়ে। এরপর বলার কিছুই নেই। মার খেয়ে এখন কোঁ-কোঁ করছে বদমাশ। সত্যিই যেন সিনেমা!

‘সিনেমা নকল জিনিস, কিন্তু বাস্তবে আহত হতে পারে মানুষ, ‘ বলল কিশোর। ‘প্রফেসর আর্নল্ড এখন কেমন আছেন?’

‘আশা করা যায় সুস্থ হয়ে উঠবেন,’ বলল ভালদারেজ। ‘আধ ঘণ্টা আগে অ্যাজো থেকে মেডিকেল হেলিকপ্টার এসে তুলে নিয়েছে তাঁকে, সঙ্গে গেছে লিলিয়ান। তখনই ভাবলাম দেখি তোমাদের সাহায্যে আসতে পারি কি না। চলে এলাম। সরু এই রাস্তার পাশে পেলাম মুসা আর রবিনকে। আকাশে হেলিকপ্টার দেখাল ওরা, খুলে বলল কী ঘটেছে। তারপর দূরের বাঁকে তুমুল গতি তুলে আসতে দেখলাম ওই হলদে ভ্যান। রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে রাখলাম গাড়ি। …আবার কী?’

‘উন্মাদ শিল্পী,’ বিড়বিড় করল ওমর শরীফ। ‘আরেকটু হলে অ্যাক্সিডেণ্টেই মরতাম!’

পিছনে পায়ের শব্দ এগিয়ে এল।

হেডলাইটের সামনে থামল ডোনাল্ড ওয়াইলি, টলছে।

কাঁধ ধরে রাস্তার ধারে তাকে বসিয়ে দিল ভালদারেজ। এখন কেমন লাগছে?’

‘আগের চেয়ে ভাল, শুকনো গলায় বলল ওয়াইলি।

‘ওকে কি ড্রাগস দিয়েছ, ফিলিপ?’ জানতে চাইল ওমর।

‘কড়া ঘুমের ওষুধ। আরেক ডোজ দিলে আরও বারো ঘণ্টা ঘুমাত।’

‘ঘুমের ওষুধ দেয়ার পরের ঘটনা বোধহয় বুঝতে পেরেছি,’ বলল কিশোর। ‘মরুদস্যুরা স্থির করেছিল সব কাজ শেষে ওয়াইলির পিকআপ আর মোটেলের ঘর থেকে নিজেদের আঙুলের সব ছাপ মুছে ফেলবে। তারপর সকালে পুলিশে জানিয়ে দেবে ওয়াইলি ঘুমিয়ে আছে অপরাধের এলাকায়। পিকআপ সহ তাকে গ্রেফতার করত পুলিশ। বিপক্ষেই যেত সব প্রমাণ। র‍্যাটলস্নেক ছাড়া, র‍্যাপলিং দড়ি কাটা, ফিউয়েল লাইন কাটা, সবচেয়ে বড় কথা ক্যাকটাস ডাকাতি — সবই আঙুল তুলত ওয়াইলির দিকে। কিছুই জানা নেই তার, কিন্তু নিজের পক্ষে একটা প্রমাণও দেখাতে পারত না। কমপক্ষে দশ-বারো বছরের জেল হতো।’

‘শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরুতে বেরুতে এক যুগ,’ মন্তব্য করল মুসা।

কাঁচা রাস্তায় চুপ করে বসে আছে ফিলিপ রায়ান।

‘আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম আমি, ফিলিপ?’ অবাক হয়ে বলল ওয়াইলি।

‘কিছুই না,’ বলল ফিলিপ। ‘ফাঁদে পড়েছিলে।’

‘আজ শহরে পাঠিয়েছে আমাকে,’ ওমরের দিকে চেয়ে বলল ওয়াইলি। ‘বলেছে ওই মোটেল থেকে কিছু জিনিস আনতে হবে। কিন্তু ওখানে অপেক্ষা করছিল তার লোক। গেলাম, আর তখনই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল দু’জন একসঙ্গে।’

‘এই কেসে আপনার কোদাল গুরুত্বপূর্ণ কেন?’ জানতে চাইল কিশোর।

‘তোমাদের জানার কথা নয়, ফিনিক্সে আমার ছোট একটা কোম্পানি ছিল, কাজ ছিল ল্যাণ্ডস্কেপ তৈরি করা,’ বলল ওয়াইলি।

‘সামান্য শুনেছি,’ বলল কিশোর।

‘যাই হোক, আদালত থেকে আমি বেকসুর খালাস হওয়ার পর, আর উকিলের পয়সা দেয়ার পর ব্যবসাই থাকল না। নিজের বলতে থাকল বাবার আমলের ওই কোদাল। ওটা দিয়েই ল্যাণ্ডস্কেপ করতেন তিনি। নামও লেখা আছে ওটার ওপর। ওই কোদাল হাতে নামলাম পেটের দায়ে। বাবার জিনিস, তাই ওই কোদালের গুরুত্ব আমার কাছে অনেক।’

দূরের ঢালে উঠে এসেছে পর পর তিনটে গাড়ি। প্রতিটির মাথায় ঝলমল করছে নীল-লাল বাতি।

পুলিশের গাড়ি।

দু’ মিনিট পর থামল একটা ক্রুজার।

অন্যদুটো পাশ কাটিয়ে গেল কপ্টারের আলোর দিকে।

কিশোরদের পাশে গাড়ি রেখে নামলেন দু’জন অফিসার।

মানিব্যাগ থেকে পরিচয়পত্র বের করে সামনের পুলিশের হাতে দিল ওমর শরীফ।

অফিসার বললেন, ‘আপনাকেই কিডন্যাপ করা হয়েছিল?’

‘বলতে পারেন ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলাম,’ বলল ওমর। ‘আমিও আটকা পড়েছিলাম ফিলিপ রায়ানের হাতে। কিন্তু আসলে কিডন্যাপ করা হয়েছিল যাকে, তার নাম ডোনাল্ড ওয়াইলি। এই যে সে।’

‘হত্যা-প্রচেষ্টা, কিডন্যাপিং, ডাকাতি ইত্যাদি বেশকিছু অপরাধে হেড রেঞ্জার ফিলিপ রায়ানকে গ্রেফতার করতে পারেন,’ পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে বলল গম্ভীর কিশোর

‘সব খুলে বলতে লাগবে সারারাত,’ বলল মুসা।

‘তাই?’ কোমর থেকে হ্যাণ্ডকাফ নিলেন প্রথম অফিসার, হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দিলেন ফিলিপ রায়ানকে। দুই কবজিতে আটকে দিলেন হাতকড়া।

‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এক কিশোরী মেয়ে,’ বললেন দ্বিতীয় অফিসার। ‘তাতেই আরও জটিল হয়েছে গোটা পরিস্থিতি। আমরা কপ্টার পাঠিয়েছি সীমান্তে। আবার এদিকেও।’

‘পালাতে চেয়েছিল আরও দুই ডাকাত,’ বলল কিশোর। ‘এতক্ষণে বোধহয় ধরা পড়েছে তারা।’

‘সবই ঘটেছে ওয়েস্টার্ন সিনেমার মত,’ বলল ভালদারেজ। ‘তো তুমিই ধরেছ এই বদমাশকে?’ তরুণ আর্টিস্টের কাছে জানতে চাইলেন প্রথম পুলিশ অফিসার।

‘না, আমি না,’ মাথা নাড়ল ভালদারেজ। আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল কিশোর-রবিন-মুসাকে। ‘ওরা! একেকজন ওয়েস্টার্ন হিরো!’

‘আমরা হিরো নই, আর সিনেমাও নয় এটা,’ বলল কিশোর। ‘ওয়েস্টার্ন সিনেমার রাসলাররা ঘোড়ায় চড়ে চুরি করে ক্যাটল, আর বর্তমানের বাস্তব ডাকাতরা পিকআপ আর ট্রাক ব্যবহার করে মরুভূমি থেকে সরিয়ে নেয় ক্যাকটাস। তাদের সঙ্গে থাকে ওয়াকি-টকি আর পাওয়ার উইঞ্চের মত আধুনিক জিনিসপত্র। নিজেরা ধরা পড়ে পুলিশের গাড়ি বা কপ্টারের কারণে। পুলিশের কাজ পুলিশই করে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও হিরো হতে পারি না।

‘বুঝলাম তোমার বহুকিছু বলার আছে,’ বললেন দ্বিতীয় পুলিশ। ‘ক্রিমিনালকে স্টেশনে নেয়ার পর জবানবন্দি নেব তোমাদের।’

প্যাট্রল কারে গিয়ে উঠলেন প্রথম অফিসার। তাঁর সঙ্গী পিছন সিটে বসিয়ে দিলেন বন্দি ফিলিপ রায়ানকে। নিজে বসলেন তিনি সামনের প্যাসেঞ্জার সিটে।

পুলিশের গাড়ির পিছু নিল তিন গোয়েন্দার গাড়ি।

পিছনে পিকআপ নিয়ে ভালদারেজ।

কিশোর-মুসা-রবিন খুশি। সুস্থ আছে ওমর শরীফ। এবং অ্যারিযোনার ঊষর মরুভূমিতে এসে জটিল এক রহস্য ভেদ করে

ফেলেছে ওরা!

***