মন্দির-কাহিনী
ট্রামটা যখনই চারমাথা মোড় পেরোয়, অফিসবাবুরা
হাত দুটো তোলে কপালে যেদিকে কালী ঠাকুরের মন্দির
তিরিশ বছর আগে যা দেখেছি, এখনও ছবিটা তেমনি
সে সব অফিসবাবুরা অনেকে হাড় জুড়িয়েছে শ্মশানে
কিংবা ছেলের সংসারে আজ বিনা বেতনের ভৃত্য
হাত জোড় করে কী চেয়েছিলেন, কী বা পেয়েছেন কে জানে!
ছেলেরা এখন অফিসযাত্রী, একই রাস্তায় রোজ যায়
ঠিক জায়গায় হাত জোড় করে, চোখ বুজে কিছু বিড় বিড়
মন্দিরখানা প্রায় একই আছে, খসেছে কিছুটা চলটা
কালী মূর্তির স্তন খুঁটে যায় আরশোলা এক গন্ডা
কলার খোসা ও রাশি রাশি বাসি ফুল পচা কটু গন্ধ
ধেড়ে ইঁদুরেরা রাজত্ব পেয়ে রাত্তিরে করে হুল্লোড়
গত বছরই তো চোর ঢুকেছিল, নিয়ে গেছে সব গয়না
পুলিশরা এসে ভোগ খেয়ে গেছে, ঢালাও মদ্য মাংস!
পুরুত মশাই কাঁদছেন, তাঁর মেয়ের প্রেমিক খ্রিস্টান
ছেলেটা দিব্যি বোমা বানাচ্ছে, বাড়িতে দেয় না পয়সা
মল্লিকবাবু সেবায়েৎ, তাঁর লিঙ্গেও বাঁধা মাদুলি
তবু গাঁটে গাঁটে বাতের বেদনা, বাঁজা রইলেন গিন্নি
মহাকাল থেকে ঝুরঝুর করে খসে পড়ে কিছু ময়লা
একটি বৃদ্ধা রোজ ভোরবেলা ঝাঁট দিতে দিতে ক্লান্ত
তারই ফোকলা মুখের হাসিটি ধার চায় কালী মূর্তি
তিনটি ভিখিরি চট পেতে বসে, কুকুরটা করে ঘুর ঘুর
প্রথমেই আসে রুক্ষ নারীটি, প্রণামের ছলে কেঁদে যায়
অশ্রু ফোঁটায় প্রতিদিন শুরু হয় জীবনের গল্প…।