মধ্য শতক (২০৩০–২০৭০)
বিজয়ী এবং বিজেতা : চাকরি
যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভব অর্থনীতিতে বিশাল পরিবর্তন সৃষ্টি করে তাই মাঝে মাঝে এটি সামাজিক স্থানান্তর ঘটায়। যেকোনো অভ্যুত্থানের পর, এখানে বিজয়ী এবং বিজেতা থাকে। এক মধ্যশতকে আরো স্পষ্ট হবে। এখন আর আমাদের গ্রামে কামার বা ঠেলাগাড়ি নির্মাতা নেই। এছাড়া, আমরা দুঃখিত নই অনেকে এসব চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো— মধ্যশতকে কোন ধরনের চাকরিগুলো ভালো করবে? প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের কাজের ধরণগুলো বদলে দেবে?
আমরা আংশিক বুঝতে পারবো একটি সাধারণ প্রশ্ন করে রোবোটের সীমাবদ্ধতাসমূহ কী কী? যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে, অন্তত দুটি ব্যাখ্যা আছে— প্যাটার্ন শনান্তকরণ এবং কমন সেন্স। তাই, যেসব চাকরি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে, মূলত তা, যা রোবটে করতে পারে না- সেসব লোক যাদের এই দুটো যোগ্যতা থাকবে।
এককথায় শ্রমিকের মধ্যে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা একই ধরনের কাজ বারবার করেন। যেমন কারখানার শ্রমিক। কারণ রোবট এসব কাজ সম্পাদন করতে পারবে। কম্পিউটারগুলো ধারণা দিচ্ছে তাদের বুদ্ধিমত্তা থাকবে তবে এটি কেবল লক্ষ লক্ষ গুণ দ্রুত কাজ করতে পারবে। আমরা ভুলে যাই কম্পিউটার কেবল একটি পরিশীলিত গণনা যন্ত্র এবং এটি পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করে ভালোভাবে। তাই গাড়ির কারখানার শ্রমিকেরা এই কম্পিউটার বিপ্লবের প্রথম শিকার হবেন। এর মানে হলো কারখানার কাজগুলো একটি নির্দিষ্ট সীমায় কমিয়ে আনা হবে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো— এখানে এই ধরনের শ্রমিকদের মতো একটি বিশাল শ্রেণি রয়েছে যারা কম্পিউটার বিপ্লবের হাত থেকে বেঁচে থাকবে এবং এমনকি আরও সমৃদ্ধ হবে। বিজয়ী হবেন তারাই যারা বারবার করতে হয় না এমন কাজের শ্রমিকেরা যার জন্য প্যাটার্ন শনাক্তকরণ প্রয়োজন হয় আবর্জনা সংগ্রহকারীরা, পুলিশ অফিসার, খনি শ্রমিকেরা। বাগান পরিচর্যাকারীরা এবং প্লাম্বারেরা। আবর্জনা সংহকারীদের ঘর-বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করতে আবর্জনার ব্যস্ত শনাক্তকরণ প্রয়োজন পড়ে, এগুলোকে ট্রাকে রাখতে হয় এবং আবর্জনা উঠিয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু প্রতিটি আবর্জনার আধারকে বিভিন্নভাবে শনাক্তকরণ করে সরাতে হয়। নির্মাণ কাজের শ্রমিকদেরও প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা সরঞ্জাম, নকশা এবং নির্দেশনার প্রয়োজন হবে। দুটি নির্মাণ কাজের স্থান এবং কাজ একই রকম নয়। পুলিশ অফিসারদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ শনাক্ত করতে হয় ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। এছাড়াও তাদেরকে অপরাধীদের উদ্দেশ্য বুঝতে হয় যা কম্পিউটারের দক্ষতার বাইরে। একইভাবে বাগান এবং ট্যাংক আলাদা, তাই আলাদা দক্ষতা ও সরঞ্জাম প্রয়োজন বাগান পরিচর্যাকারী ও প্লাম্বারদের।
সাদা কলার কর্মীদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা যারা ইনভেন্টরি ও গণনা কাজের সাথে জড়িত মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিরা। এর ফল হলো নিম্নশ্রেণীর এজেন্ট, দালাল, টেলার, অ্যাকাউন্টান্টস ইত্যাদি লোকজন দ্রুতই কাজ থেকে ছিটকে পড়বে এবং তাদের চাকরিগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। এই চাকরিগুলোকে বলা হয় পুঁজিবাদের সংঘর্ষ।” ইতোমধ্যে, যে কেউ প্লেনের টিকিট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারে, ট্রাভেল এজেন্সির দরকার পড়ে না।
মেরিল নিঞ্চ, উদাহরণস্বরূপ, খুব জোরালোভাবে উল্লেখ করেছেন যে এটি কোন অনলাইন স্টক ট্রেডিং গ্রহণ করবে না। এটি সর্বদা পুরাতন পদ্ধতি স্টক কেনা বেচা করতো।
মেরিলের মধ্যস্থতাকারী প্রধান জন স্টিকেলস বলেছিলেন, “বিনিয়োগের কাজকর্ম নিজেই কর। ইন্টারনেটকেন্দ্রিক বাণিজ্যকে আমেরিকার আর্থিক জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।” সুতরাং এটি ছিলো অবমাননাকর কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে এই ইন্টারনেট বাণিজ্যে জড়াতে বাধ্য হয়ে পড়ে। ইতিহাসের খুব কম ব্যক্তিই একটি শিল্পে এর মুখোমুখি না হয়ে থাকতে পারেন, কার্যত রাতারাতি বাণিজ্য, যাতে মূলত দ্রুত গ্ৰহণযোগ্য একটি মডেল হিসেবে মেনে নিতে হয়েছে। ডেডি নেট নিউজের চার্লস গ্যাস প্যারিনো এটি লিখেছিলেন।
এছাড়া এটি আরও একটি বিষয় উপস্থাপন করে তা হলো কর্পোরেট পিরামিড দ্রুতই শুরু হয়ে যাবে। যেহেতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন সরাসরি বিক্রয় শক্তি এবং প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, এর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী লোকের প্রয়োজন কম যারা শীর্ষ লোকের আদেশ সম্পাদন করবে। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের চাকরিগুলো নির্বাসিত হতে থাকে যখন কম্পিউটার অফিসগুলোতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
তাহলে মধ্যস্থকারীরা ভবিষ্যতে কীভাবে বেঁচে থাকবে? তাদের কাজের সাথে একটি জিনিস যোগ করতে হবে এবং এমন পণ্য উপস্থাপন করতে হবে যা রোবট করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ভবিষ্যতে তুমি একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ রুম ক্রয় করতে পার তোমার ঘড়ি বা কন্টাক লেন্সের মাধ্যমে। কিন্তু এইভাবে কেউ একটি বাড়ি কিনতে যাবে না যেহেতু এটি একটি আর্থিক রূপান্তর যা গুরুত্বপূর্ণ যেখানে তোমাকে তোমার জীবনের জন্য পারফর্ম করতে হবে। বাড়ি ক্রয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটা, কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ভালো একটি স্কুলের সন্ধান নেওয়া, অপরাধ প্রবণতা কম কোথায়, সুয়ারেজ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে ইত্যাদি এসবের জন্য তুমি একজন দক্ষ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে পার।
একইভাবে নিচের শ্রেণির স্টক ব্রোকাররা অনলাইন বাণিজ্যের কারণে কাজের বাইরে ছিটকে পড়বে কিন্তু ঐসব মধ্যস্থতাকারীরা যারা যৌক্তিক বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ উপদেশ দিতে পারবে তাদের মূল্য সবসময় থাকবে। মধ্যস্থতাকারী চাকরিগুলো কমে যাবে যদি না তারা তাদের সেবায় মূল্য সংযোজন করে। যেমন শীর্ষ বাজার বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞ ব্রোকারদের অন্তর্গত জ্ঞান এগুলোর চাকরি টিকে থাকবে। যখন অনলাইন বাণিজ্য বেড়ে যাবে অন স্টক ট্রেডার, স্টক ব্রোকার টিকে থাকবে কেবলমাত্র যাই তারা যারা অস্পর্শনীয় যোগ্যতাকে বিদ্যমান করতে পারবে যেমন-অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও বিশ্লেষণ।
সুতরাং, সাদা কলার শ্রমিকদের মধ্যে তারা বিজয়ী হবে যাদের সাধারণ জ্ঞান বেশি। এর মানে হলো কর্মীরা যারা সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত যেমন চিত্রকর্ম, অভিনয়, জোকিং, সফটওয়্যার নির্মাণ, নেতৃত্বদানের অধিকার, বিশ্লেষণ, বিজ্ঞান, সৃজনশীলতা- যেসব গুণ আমাদেরকে মানুষ হিসেবে শনাক্ত করে।
যারা শিল্পকলা নিয়ে কাজ করেন তাদের চাকরির সুযোগ থাকবে যেহেতু ইন্টারনেটের একটি বৃহৎ ক্ষুধা রয়েছে সৃজনশীল শিল্প নিয়ে। কম্পিউটার শিল্পকর্ম নকশা করতে পারবে প্রচুর পরিমাণে এবং শিল্পীদের সেই শিল্পকর্মকে উন্নত করতে সহায়তা করবে কিন্তু নতুন কোনো ধরনের কিছু সৃষ্টি করতে পারবে না। শিল্পকর্ম যা উৎসাহপূর্ণ, অন্তর্নিহিত গুণ সম্পন্ন, আবেগ উদ্দীপক এবং কম্পিত করে আমাদের, যা কম্পিউটার পারে না, কারণ এই সব গুণ সাধারণ জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত।
উপন্যাসিক, স্ক্রিপ্ট লেখক এবং নাট্যকারদের চাকরির থাকবে যেহেতু তারা বাস্তব চিন্তা, মানুষের সংঘাত এবং মানুষের উত্থান ও পতন নিয়ে কাজ করেন। কম্পিউটার মানুষের প্রকৃতি যার সাথে বোঝার ব্যাপার এবং চিন্তা জড়িত সেভাবে কাজ করতে অক্ষম। কম্পিউটার ভালোভাবে জানে না কী আমাদের কাঁদাতে পারে বা হাসাতে পারে যেহেতু তা নিজেই হাসতে বা কাঁদতে পারে না অথবা বোঝে না কোনটি হাস্যকর অথবা দুঃখজনক।
মানুষ যারা মানুষের সম্পর্কের সাথে জড়িত যেমন আইনজীবী তাদের চাকরি থাকবে। যদিও একজন রোবো আইনজীবী আইনের মূল প্রশ্নসমূহের উত্তর দিতে পারে, কিন্তু আইন নিজেই নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, সামাজিক নিয়মকানুন ও নীতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে এটি নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে আইনের ব্যাখ্যার উপর বিচার নির্ভর করে যা বুঝতে কম্পিউটার ব্যর্থ। যদি আইন খুবই সহজভাবে আক্ষরিত অর্থে ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে আদালত, বিচারক, জুড়িদের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। একটি রোবট কখনো জুড়ির বিকল্প হতে পারে না, যেহেতু জুড়ি বোর্ড প্রায়ই বিশেষ একটি গোষ্ঠী যারা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত যখন সুপ্রীম কোটের বিচারক কটায় স্টুয়ার্ট একসময় পর্ণ মুভিকে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছিলেন তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু তিনি উপসংহার বলেছিলেন “আমি এটি কী জানি যখন আমি এটি দেখি।”
এছাড়াও, বিচারব্যবস্থার রোবট নিয়োগ সম্ভবত আইনতও হবেনা, যেহেতু আমাদের আইনসমূহ কিছু মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত : জুড়িদের আমাদের সমরূপ ব্যক্তিত্ব। যেহেতু রোবট আমাদের সমরূপ নয় তাই আমাদের বিচারব্যবস্থার তাদের নিয়োগ অযৌক্তিক হবে।
সাধারণত, আইনগুলো সঠিক এবং সুসংজ্ঞায়িতভাবে সংযোজিত এবং কঠোর শব্দ বহুল এবং শব্দের শিরোনাম ও সংজ্ঞা আদিম মনে হয়। কিন্তু এই দৃশ্যটি ব্যবহারের মাধ্যমে এর সংজ্ঞাসমূহ নিয়মিত বদলে যেতে থাকে। আমেরিকার সংবিধান, উদাহরণস্বরপে, মনে হয় খুব ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত একটি ডকুমেন্ট কিন্তু এখনও পায়ই সুপ্রীম কোর্ট দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায় এবং বিতর্কিত প্রশ্নের উদ্ভব ঘটায়। এটি চিরকাল ধরে সংবিধানের প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য পুনঃব্যাখ্যায়িত হতে থাকবে।
মানুষের প্রকৃতির পরিবর্তন সহজেই এর সভ্যতার ইতিহাসের পরিবর্তন দেখে বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট ১৮৫৭ সালে রুল জারি করেছিলো দাস কখনো আমেরিকায় নাগরিক হতে পারবে না। এটি এক ক্ষেত্রে সিভিল যুদ্ধ। এবং হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছিল এই সিদ্ধান্তে কারণে।
নেতৃত্বের গুণটিও ভবিষ্যতে মূল্যবান পণ্য হবে। এক অংশে, নেতৃত্ব মানে হলো সকল তথ্য উপাত্ত আয়ত্তে নেওয়া, দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা, এবং সুযোগ থেকে সবচেয়ে সঠিকটি যাচাই করে নেওয়া যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতপূর্ণ। নেতৃত্ব বেশ জটিল হচ্ছে এটি মানুষ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ ও নির্দেশনা প্রদান করে যাদের নিজস্ব শক্তি ও দুর্বলতা দুটোই আছে। মানুষের প্রকৃতি বোঝার জন্য বেশ পরিশীলিত ধারণার প্রয়োজন, বাজারের গতিবিধি বোঝা ইত্যাদি যা একটি কম্পিউটারের আয়ত্তের বাইরে।
বিনোদনের ভবিষ্যৎ
এটির মানে হলো পুরো শিল্প : যেমন-বিনোদন, যা একটি গভীর অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে চলছে। উদাহরণস্বরূপে, সঙ্গীত শিল্প কিছুদিন আগেও একজন মিউজিশিয়াননির্ভর ছিলো যিনি শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, নিজের স্বশরীরে উপস্থিতি জানান দিতেন। বিনোদন কর্মীরা রাস্তার উপরে থাকত সবসময়, একটি দিনের জন্য দোকান দিত পরে অন্য গ্রামে চলে যেত। এটি একটি কঠিন জীবন ছিলো, অল্প আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। যখন থমাস এডিসন ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার করলেন এই চিত্রটির দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেল এবং গান শোনার উপায়টি চিরতরের জন্য পরিবর্তিত হয়ে গেল। হঠাৎ করেই একজন গায়ক গান রেকর্ড করে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে এবং পূর্বে যা অকল্পনীয় ছিলো তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারে। এক প্রজন্মেই রকস্টার যারা সমাজের নতুন ধনীতে পরিণত হয়ে গেল। রকস্টার যারা পূর্বের প্রজন্মের কাছে নিচু ওয়েটারের মত ছিলো তারা তরুণদের কাছে আইডলে পরিণত হয়ে যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, সঙ্গীত শিল্প বিজ্ঞানীদের অনুমানকে উপেক্ষা করেছিলো যে বিজ্ঞানীরা ঐ দিনটি আগে অনুমান করেছিলো যখন সঙ্গীত ইন্টারনেটের মধ্যে যে সহজেই প্রেরণ করা যাবে এমনকি ইমেইল দিয়ে। সঙ্গীত শিল্প অনলাইনে ভিত্তি করে কীভাবে আয় বাড়ানো সম্ভব তা না ভেবে বরং ঐসব কোম্পানি যা সিডির মাধ্যমে সঙ্গীত বিপণন করতে আগ্রহী তাদের কাছে সিডির দাম দাবি করে এটি সমুদ্রের মাঝে চলে যাওয়ার প্রচেষ্টার মতো। এই অবজ্ঞাই বর্তমানে সঙ্গীত শিল্পের ঘোলাটে অবস্থার জন্য দায়ী।
কিন্তু ভালো দিকটি হলো একজন অপরিচিত শিল্পী এখন শীর্ষে অবস্থান নিতে পারছে কোনো নির্দিষ্ট বড় কোম্পানির বাধাবিপত্তিকে, সেন্সরশীপকে অতিক্রম করে। অতীতে, এই সঙ্গীত মোঘলেরা ঠিক করে দিতে কে হবে পরবর্তী রকস্টার। সুতরাং ভবিষ্যতে, শীর্ষ সঙ্গীতশিল্পী আরও গণতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে- মুক্ত বাজারে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বাজারের নিয়মক দ্বারা, সঙ্গীত ব্যবসায়ী নির্বাহীদের দ্বারা নয়।
নিউজ পত্রিকাগুলো একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলো। ঐতিহ্যগতভাবে, পত্রিকাসমূহ মূলত বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে আয় করে থাকে, বিশেষ করে শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন থেকে। আয় এই পত্রিকা বিক্রি থেকে তেমন আসে না। কিন্তু বিজ্ঞাপন আয় ঐ সব প্রজ্ঞার কারণেই সৃষ্টি হয়। কিন্তু এখন আমরা দৈনিক নিউজ পত্রিকা ডাউনলোড করতে পারি বিনে পয়সায় এবং বিজ্ঞাপনসমূহ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে অনলাইন বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইট থেকে। এর ধারাবাহিকতায় নিউজ পত্রিকাগুলোয় সংখ্যা এবং আকার কমে যাচ্ছে।
কিন্তু এই প্রক্রিয়া আরও চলতে থাকবে। ইন্টারনেটে প্রচুর উটকো ঝামেলা আছে বিচিত্র ধরনে ধারণা ছাপিয়ে দিয়ে তাদের পাঠক শ্রোতাদের বিব্রত করছে যা মানুষকে নতুন পণ্য খুঁজতে আগ্রহী করে তুলছে সে পণ্য হবে-জ্ঞান। আগোছালো তথ্যগুলো জ্ঞানের সাথে জড়িত নয় এবং ভবিষ্যতে মানুষ এই উন্মাদ ব্লগারদের থেকে মুক্তি খুঁজবে এবং ঐসব ওয়েবসাইটে ঝুঁকে পড়বে যা দুর্লভ্য জ্ঞানসমৃদ্ধ লেখা উপহার দেবে।
অর্থনীতিবিদ হামিশ এমসি রয় বলেছিলেন, “তথ্যের এই বিশাল বালতি একটি আবর্জনা যা জাংক মেইলের মাঝে বুদ্ধিমত্তার মতো।” কিন্তু তিনি দায়ী করেছিলেন, “শুভ বিচার বুদ্ধি চলমান থাকবে এবং উচ্চমাত্রায় মর্যাদা পাবে-সফল আর্থিক বিশ্লেষক, একটি গ্রুপ, যারা বিশ্বের একটি ভালো আয়কারী গবেষক দল।”
দ্য ম্যাট্রিক্স
কিন্তু হলিউডের অভিনেতাদের কী হবে? বক্স অফিসের সেলিব্রেটি এবং সমাজের কথামালার পরিবর্তে অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা কি কর্মহীন হয়ে পড়বেন? সম্প্রতি, কম্পিউটারে মানুষের অ্যানিমেশনের বিশাল একটি অগ্রগতি হয়েছে তাই এগুলো বাস্তবতার কাছাকাছি মনে হয়। অ্যানিমেটেড চরিত্রগুলো এখন থ্রি-ডি গঠনের এবং ছায়া সংবলিত। তবে কি অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা যেকোনো সময় অকেজো হয়ে যাবেন?
সম্ভবত নয়। এখানে মানুষের মুখকে কম্পিউটার মডেলিং করার মৌলিক কিছু সমস্যা রয়েছে। মানুষের একজন থেকে অন্যজনের মুখমণ্ডল আলাদা করে সরলভাবে বিবর্তিত, যেহেতু আমাদের অভিযোজন এর উপর নির্ভর করে। একটি পলকে আমরা বলতে পারি কে আমাদের বন্ধু বা শত্রু। কয়েক সেকেন্ডে আমরা একজন ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, শক্তি এবং আবেগ বুঝতে পারি। যারা এটি সাধারণত করতে পারে না তারা তাদের জিনকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত করতে পারে না। এভাবে, মানুষের মস্তিষ্ক মানুষের মুখ দেখেই তার সম্পর্কে তাকে বুঝতে সক্ষমতা শক্তি নিয়ে জন্মে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বেশিরভাগ বিবর্তনের ইতিহাস, আমরা কথা বলতে শেখার আগেই, অঙ্গভঙ্গি দিয়েই যোগাযোগ স্থাপন করি বা দৈহিক ভাষা ব্যবহার করে এটি করি এবং আমাদের মস্তিষ্কের শক্তির বড় অংশ মুখশ্রী দেখে বোঝার জন্য সক্ষমতায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কম্পিউটার তার পাশের সাধারণ জিনিসকে শনাক্ত করতেই বহু সময় লেগে যায়, এবং বাস্তবিক মানুষের মুখের অ্যানিমেশন সৃষ্টি করা কঠিন হয়। শিশুরা সহজে বুঝে ফেলে তারা সত্যিকার মানুষের এবং কম্পিউটার সঙ্গতি করণের মুখগুলির পার্থক্য। (কেভম্যান নীতির দিকেই ফিরে যায়। যদি আমাদের অপশন দেয়া হয় আমাদের প্রিয় অভিনেতাদের সরাসরি একশনধর্মী ব্লক বাস্টার মুভি এবং কার্টুনের অ্যাকশন মুভি যা কম্পিউটারে অ্যানিমেশন করে তৈরি দেখার তাহলে আমরা পূর্বেরটি পছন্দ করবো।
সেই তুলনায় দেহকে সহজে কম্পিউটার মডেলিং করা যায়। যখন হলিউড বাস্তবধর্মী দৈত্যগুলো তৈরি করে এবং কাল্পনিক ব্যক্তিবর্গ মুভিতে উপস্থাপন করে তার একটি শর্টকাট ব্যবহার করে। একজন অভিনেতা একটি চামড়ার সাথে লেগে থাকা পোশাক পরে, যার সংযোগ স্থলে সেন্সর লাগানো থাকে। যখন অভিনেতা চলাফেরা বা নৃত্য করে, সেন্সর কম্পিউটারে সিগন্যাল পাঠায় এবং তারপর এটি অ্যানিমেশন তৈরি করে সারমর্মগতভাবে চলাফেরাকে উপস্থাপন করে—যেমন আভাটার মুভিতে করা হয়েছে।
আমি একবার একটি কনফারেন্সে বক্তৃতা করেছিলাম যে অনুষ্ঠানটি লিভরসোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি স্পন্সর করেছিলো। যেখানে আণবিক অস্ত্রসমূহ ডিজাইন করা হয় এবং ডিনারের সময় আমার পাশে বসা একজনের সাথে কথা বলেছিলাম যিনি দ্য ম্যাট্রিক্স মুভিতে কাজ করেছিলেন। তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন তাদের কম্পিউটারের পিছনে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছিলো একটি বৃষ্টির বিশেষ অংশ ঐ মুভিতে সৃষ্টি করার জন্য। কারণ দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ছিল এটি কাল্পনিক শহর সৃষ্টি করা হেলিক্টারের উপর দিয়ে দেখা একটি শহরের মতো- তিনি বলেছিলেন।
কম্পিউটারে প্রচুর সময় ব্যয় করে তিনি বলেন, কাল্পনিক শহরটি সৃষ্টি করা গিয়েছিলো। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন, একটি মানুষের মত বাস্তব মুখ তৈরি করা তার সক্ষমতার বাইরে। এর কারণ যখন কোনো মানুষের মুখে আলোক রশ্মি ফেলা হয় এটি সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে মুখের গঠনের উপর নির্ভর করে। আলোর প্রতিটি কণাকে কম্পিউটার দিয়ে ট্রাকিং করতে হয়। এভাবে ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডলের ত্বকের প্রতিটি বিন্দুকে একটি জটিল গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে ফেলতে হয় (যাকে ফর্ম ফ্যাক্টর বলা হয়) যা প্রতিটি কণার ব্যাখ্যা করে।
আংশিক রসিকতা করে, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি ওখানে মানুষের মুখ এবং উচ্চ শক্তির কণার পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে তিনি উত্তর দিলেন- হ্যাঁ। কম্পিউটার অ্যানিমেশনে উচ্চ শক্তির কণাগুলোর পদার্থ বিজ্ঞানের মতো সূত্র ব্যবহৃত হয় যেসব মুখ তুমি সিনেমার স্ক্রীনে দেখো। আমি ঐ আদি সূত্রগুলো কখনো বুঝিনি যা আমাদের মতো তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের একদিন মানুষের মুখের মডেলিং সমস্যায় ভুগতে হবে। সুতরাং, বাস্তবতা হলো আমরা মানুষের মুখ ঐভাবে শনাক্ত করি যেভাবে তাত্ত্বিক পদার্থবিদেরা উপ-পারমাণবিক কণাগুলো বিশ্লেষণ করেন।