(ওয়াহিদুল হক বন্ধুবরেষু)
তখনো আমার সুহৃদের মনে শহুরে
ক্লান্তি ছিলো কি? অবশ্য তাঁর ভব্যতটুকু
বজায় রেখেই, আন্দাজ করি, চায়ের পেয়ালা
হাতে তুলে নিয়েছিলেন সুচারু ধরনে।
মফস্বলের আলাভোলা ছায়া দু’চোখে
সাজিয়ে হলুদ বিকেল বেলায় তুমি আঙিনায়
পাতলে আসন, সিলেটি শ্যামল লাগে বিদগ্ধ
বন্ধুর প্রাণে, প্রাঙ্গণ যেন মিনতি।
শহুরে মনের নিসর্গপ্রীতি পেয়েছে
তৃপ্তি এবং তারই রেশ কিছু বাঙময় হয়,
বৈকালী সিএ স্নিগ্ধ স্মৃতির হার্দ্য লেখনে,
বর্ষ-শুরুতে হ্রস্ব ভ্রমণকাহিনী।
বস্তুত আমি দেখিনি কখনো তোমাকে।
বন্ধুর চোখে গাছপালাঘেরা একটি আঙিনা,
আনন্দসুরে মাতাল পক্ষী, লাজুক তন্বী
যেন বা স্বপ্নে উঠেছিলো দুলে বিকেলে।
ক’জন অচেনা শহুরে শ্রোতার সমুখে
যখন দ্বিধায় ধরেছিলে গান, তখন হে মেয়ে
নয়নে জল, আঁচলের ফুল ঝরেছে ব্যাকুল;
গীতি ও গায়িকা একই বৃন্তের সুরভি।
যখন তোমার ছোঁয়ায় হারমোনিয়াম
হলো নজরুল করুণ রঙিন, তখন আঙিনা
হরিণমুখর বনরাজিনীলা, টলটলে দিঘি,
ময়াল-বাসর, দূর নীলিমার বসতি।
ঘনিষ্ঠ তানে তুমি চলে গেলে সুদূরে।
রইলো আড়ালে অতিথি, উঠোন, হরিয়ালপাখি,
ঝোপঝাড় আর মলিন জীবিকা এবং অবাধ
তোমার যাত্রা চেনা বৃত্তের বাইরে।
যদিও দেখিনি, তবু বলা যায়, দেখেছি
আমিও তোমাকে হরফের বনে, বন্ধুব চোখে
প্রকৃত তোমাকে। আশাবরী রাগে তোমার শরীর
হোক লীলায়িত চিরায়ুষ্মতী ছায়ায়।
দেখিনি তোমাকে, তবু ভাবা যায় শরীরে
তোমার মোহন ঊষার সখ্য, জাগরে চকিতে
সুরমা নদীর কূল-উপচানো তন্বী জোয়ার।
হৃদয়ে তোমার শারদ রাত্রি, মিনতি।
তোমার না-থাকা তোমাকেই আনে নিকটে।
সমাজদ্রোহিতা আমার মনের নেপথ্যে বাঁচে,-
কলুষমুক্ত স্বরচিত এই স্মৃতিতে আমার
তুমি বাঁচো সুরে মণিপুর লোকদুহিতা।