দুই
ছেলেরা পাঁই করে ঘুরে দাঁড়াল। বছর দশেকের এক মেয়ে দাঁড়িয়ে খোলা দরজায়, ওদেরকে দেখছে। ওর পরনে জিন্স আর সবুজ টি- শার্ট। পুঁতি বসানো এক হেডব্যাণ্ড চোখের ওপর থেকে সরিয়ে রেখেছে মেয়েটির কোঁকড়া সোনালী চুলের গোছা।
‘তুমি নিশ্চয়ই মনিকা,’ আন্তরিক হেসে বলল রবিন।
‘হ্যাঁ, তোমরা নিশ্চয়ই বড়আম্মার অতিথি। তোমাদের কথা শুনেছি।’
রবিন ওদের সবার পরিচয় দিল।
‘বুঝলাম না, বলল কিশোর, কেউ ওই ব্রিজটায় মাছ ধরতে যায় না কেন—’
ওর কথার জবাব না দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে গটগটিয়ে চলে গেল মনিকা।
ছেলেরা বিভ্রান্তি নিয়ে একে অন্যের দিকে চাইল।
‘খাইছে, ওর নিশ্চয়ই তাড়া আছে,’ ভ্রূ কুঁচকে বলল হতভম্ব মুসা।
‘আমার ধারণা ও সাঁকোটার ব্যাপারে কথা বলতে চায় না, ‘ বলল রবিন। ‘কেন কে জানে।’
শ্রাগ করল কিশোর।
‘আল্লাই জানে।’
‘ওটা ভুতুড়ে, চাপা কণ্ঠে বলল ডন। ‘আমি নিশ্চিত!’
.
‘আরও মাংসের বড়া নাও, মুসা,’ এমিলি ডিনারে বসে তাগিদ দিলেন।
মুসাকে সাধতে হয় না।
‘ধন্যবাদ,’ বলে সাগ্রহে স্প্যাগেটির থালায় আরও কটা মাংসের বড়া তুলে নিল ও।
মিসেস ম্যাকলিন মনিকার দিকে চাইলেন।
‘তুমি বড় হয়ে গেছ, মনি,’ উষ্ণ হেসে বললেন।
‘সময় চোখের পলকে উড়ে যায়,’ বলে, ডনের বাড়িয়ে দেয়া গার্লিক ব্রেডের ঝুড়িটা নিলেন এমিলি। ‘মনি প্রথম যে সামারটা আমার সাথে কাটায় তখনও ভালমত হাঁটতে শেখেনি।’ এমিলি হাত বাড়িয়ে মনিকার বাহুতে আদর করে মৃদু চাপড় দিলেন।
মুসা চাইল মনিকার উদ্দেশে। –
‘বাবা-মাকে মিস কর না তুমি?’
মনিকার মুখের চেহারা লাল হয়ে গেল, পরক্ষণে চোখ নামাল ও।
‘আমি তো বাবা-মাকে ছেড়ে বেশিদিন থাকতে পারি না,’ বলল রবিন।
গোমড়ামুখে নিজের থালার দিকে চেয়ে রইল মনিকা।
‘সারাক্ষণ বড়দের খবরদারি আমার ভাল্লাগে না।’
ছেলেরা ওর কথায় অবাক হলেও, কোন মন্তব্য করল না।
এসময়, হলদে হল্টার টপ আর মানানসই শর্টস্ পরা এক তরুণী কামরায় পা রাখল। লম্বা মেয়েটির মাথা ভর্তি কোঁকড়া বাদামি চুল।
‘সরি, দেরি হয়ে গেল, এমিলি,’ বলে, রবিনের পাশে ফাঁকা চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ল। ‘কাজের মধ্যে থাকলে সময়ের হুঁশ থাকে না আমার।’
‘অসুবিধা নেই,’ আমুদে হেসে বললেন এমিলি। ‘সব এখনও গরমাগরমই আছে।’ এবার মিসেস ম্যাকলিন আর ছেলেদের সঙ্গে পরিচয় করালেন রুবি ম্যাকেঞ্জির। ‘রুবি ইটন বংশ নিয়ে গবেষণায় আমাকে সাহায্য করছে। ও অন্য স্টেটের মেয়ে, তাই ফল-এ কলেজ শুরু না হওয়া অবধি আমার এখানেই থাকবে।’
‘আপনি কলেজে কী নিয়ে পড়ছেন, রুবি?’ প্রশ্ন করে, সালাদের বাটিটা ওর দিকে ঠেলে দিল রবিন।
‘ইতিহাস।’ কোলের ওপর ন্যাপকিন বিছাল রুবি। ‘এমিলির গবেষণা সহকারী লাগবে সেই বিজ্ঞাপনটা দেখতেই লুফে নিই অফারটা।’
স্মিত হাসলেন এমিলি।
‘ও খুব পরিশ্রমী মেয়ে।’
‘পুরনো জিনিসের প্রতি আমার অসম্ভব আগ্রহ,’ বলে চলল রুবি। ‘ছাই ঘাঁটতে গিয়ে মানিক রতন পাবে কিনা কেউ জানে না।’
কথাগুলো ডনের মনোযোগ কাড়ল।
‘আপনি কি দামি কিছু পেয়েছেন?’
‘সত্যিকারের দামি কিছু নয়।’ নার্ভাস হাসল রুবি। ‘স্রেফ ইন্টারেস্টিং তথ্য। আমি শুধু এটুকুই বলতে চেয়েছি—’ আচমকা থেমে গেল ও, বেশি বলে ফেলেছে বুঝেই যেন।
ডন দুধটুকু গিলে নিল।
‘আমরা গুপ্তধন উদ্ধারে ওস্তাদ, অহঙ্কার করে বলল। ‘তাই না, কিশোরভাই?’
‘কিছু গুপ্তধন আমরা খুঁজে পেয়েছি আরকী।’ স্বীকার করল কিশোর।
রুবির হতচকিত মুখের চেহারার অভিব্যক্তি দেখে মিসেস ম্যাকলিন বললেন, ‘ওরা খুব পাকা গোয়েন্দা।
‘গোয়েন্দা?’ মনিকা রীতিমত তাজ্জব হয়ে গেছে।
‘আমরা রহস্যের সমাধান করি, হেসে ওকে বলল ডন। ‘এটাই আমাদের বিশেষত্ব।’
সহকারীর দিকে চাইলেন এমিলি।
‘আমাদের রহস্যটা নিয়ে ওরা কাজ করতে পারে, তাই না, রুবি?’
‘মানে…?’ কাঁটাচামচটা হাতে ধরে রইল ও। ‘কীসের কথা বলছেন?’ বিচলিত শোনাল ওর কণ্ঠ।
‘কেন, মেগ প্লামের সেই রহস্যটা,’ জবাবে বললেন এমিলি। ‘ আর কীসের কথা বলব?’
হঠাৎ রুবির আচরণ একেবারে পাল্টে গেল।
‘আমার কাজ পছন্দ না হলে সাফ বলে দিন, এমিলি!’ কাঁটাচামচ গাঁথল এক মাংসের বড়ায়।
চমকে গেছে ছেলেরা। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল রুবির দিকে।
‘পছন্দ হবে না কেন, রুবি, অবশ্যই হচ্ছে।’ এমিলিকে আহত দেখাল। ‘তোমার এমন মনে হওয়ার কারণ কী?’
‘আমি চাই না একদল ছেলেপিলে আমার কাজে বাধা দিক।’
‘ওরা তোমার কাজে বাধা দেবে না,’ দৃঢ় কণ্ঠে জানালেন মিসেস ম্যাকলিন। ‘ওরা কারও ব্যাপারে নাক গলায় না।’
‘অবশ্যই,’ সায় জানালেন এমিলি। ‘কারও দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।’ কিন্তু পরিষ্কার বোঝা গেল রুবি অসন্তুষ্ট।
‘আমরা সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করব,’ কথা দিল কিশোর।
‘ধন্যবাদ, কিশোর,’ বললেন এমিলি।
রুবিকে দেখে মনে হলো তর্ক জুড়বে বুঝি। কিন্তু তা করল না। নীরবে ডিনার সারল, গুম হয়ে রইল সারাটাক্ষণ। এবার বিদায় নিয়ে ঘর ছাড়ল।
সহকারীর ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন এমিলি।
‘রুবি গুণী মেয়ে, কিন্তু মাঝে-মাঝে খামখেয়ালি আচরণ করে।’
পরে, ছেলেরা যখন টেবিল পরিষ্কার করছে, নিচু শিস দিল কিশোর।
‘রুবি আমাদের সাহায্য চায় না,’ বলল।
‘আমরা ওর ছায়াও মাড়াব না,’ বলল রবিন। গরম সাবান পানিতে ভরিয়ে তুলল সিঙ্কটা। অন্যরা একমত হলো।
কিচেন গোছগাছ করে, ছেলেরা তড়িঘড়ি সামনের বারান্দায় বেরিয়ে এল। এমিলি আর মিসেস ম্যাকলিন ঠাণ্ডা চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর গল্পগুজব করছেন ওখানে বসে। কাছেই এক যিগ-স পালের ওপর ঝুঁকে রয়েছে মনিকা। রুবিকে কোথাও দেখা গেল না।
ছেলেরা চেয়ার দখল করল। এবার এমিলির দিকে চাইল ডন-রহস্যটার কথা কি এখন বলবেন তিনি?
এমিলি তৈরিই ছিলেন। বরফ চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে, শূন্য গ্লাসটা পাশের টেবিলে রাখলেন। বারান্দার কোমল আলোয়, আজব এক গল্প বলতে শুরু করলেন তিনি। আঁধারে ঝিঁঝি ডাকছে, জমে উঠল গল্পের আসর।
‘বহু বছর আগে, আমার পরদাদার দাদা, জন ইটন দেশ ভ্রমণে বেরোন। ঘুরতে ঘুরতে একসময় তিনি ইংল্যাণ্ডের ছোট্ট গাঁ স্টোন পুলে গিয়ে পৌঁছন। ওখানেই তিনি সুন্দরী মেগ প্লামকে দেখেন এবং প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েন।’
‘সেজন্যেই আপনার বাড়িটা বেগুনী রঙের, তাই না?’ প্রশ্ন করল মুসা। ‘মেগ প্লামের কারণে। প্লাম বেগুনী হয় কিনা। প্লাম মানে কুল।
মুসা এটা জানে দেখে অবাক হলেন এমিলি।
‘হ্যাঁ, ঠিক,’ বললেন তিনি।
মেগ স্টোন পুল ছেড়ে জনের সাথে এই ইটন প্লেসে নতুন জীবন আরম্ভ করেন। কিন্তু শুরুর দিকে তাঁর এখানে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।’
এমিলির দিকে চোখে প্রশ্ন নিয়ে চাইল রবিন।
‘ওঁর এখানে ভাল লাগত না বলছেন?’
‘না, না, অবশ্যই ভাল লাগত। কিন্তু বাড়ির জন্যে ভীষণ মন কেমন করত। মাঝে-মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে স্টোন পুলের একটা ফটোর দিকে চেয়ে থাকতেন।’ দুঃখিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন এমিলি। ‘প্রায়ই কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি।
‘আহা, বেচারী!’ বলল মুসা। ‘জন ওঁকে সান্ত্বনা দিতেন না?’
‘হ্যাঁ, দিতেন তো, তবে ও কথা অন্য কখনও বলব।’ পাশের টেবিল থেকে এক ফটোগ্রাফের অ্যালবাম তুলে নিতে হাত বাড়ালেন এমিলি। ‘তোমাদেরকে এখন একটা জিনিস দেখাব। রুবি সেদিন হঠাৎই ছবিটা খুঁজে পায়।’ অ্যালবামের এক পাতায় তর্জনী রাখলেন তিনি। ‘এই যে-স্টোন পুল গাঁয়ের সেই ছবি।’
কালের প্রবাহে ফেটে ঝাপসা হয়ে গেলেও, ছবিটিতে দেখা গেল সেকেলে পোশাক পরা লোকজন রাস্তা দিয়ে ঢিমে তেতালায় হাঁটছে এবং ছোট-ছোট দোকানে ঢুকছে-বেরোচ্ছে। ছবিটার তলায় বাহারী হস্তাক্ষরে কিছু একটা লেখা রয়েছে চোখে পড়ল ডনের।
‘ওখানে কী লেখা, এমিলি?’ ডন জানতে চাইল।
এমিলি চশমা পরে নিয়ে শব্দগুলো জোরে জোরে পড়লেন: ‘১৮১০-এর গরমের এক বিকেলে স্টোন পুল গ্রাম।’
এমিলির কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিলেন মিসেস ম্যাকলিন।
‘চমৎকার, ছিমছাম ছবির মত একটা গ্রাম। জন্মভূমির জন্যে মেগের মন কেমন করাটাই স্বাভাবিক।’
এমিলি গল্পটা বলে চললেন, ‘একদিন মেগের দাদীর কাছ থেকে নাতনীর জন্যে বিশেষ এক উপহার আসে।
ছেলেরা মুহুর্তে কৌতূহলী হয়ে উঠল।
‘কী সেটা?’ কিশোর প্রশ্ন করল।
‘হার্ট শেপের এক ব্রুচ,’ এমিলি বললেন ওদেরকে। ‘মূল্যবান রত্ন দিয়ে তৈরি এক পারিবারিক ঐতিহ্য। রুবিগুলো ছিল অপূর্ব সুন্দর আর দুষ্প্রাপ্য।’
‘ব্রুচ কী?’ জানতে চাইল ডন।
‘পিন, ডন,’ জানালেন মিসেস ম্যাকলিন। ‘আমার ব্লাউজে যেমনটা দেখছ। তবে মেগেরটা নিশ্চয়ই অনেক বেশি সুন্দর আর দামি ছিল।’
‘মেগ ফ্রঁচটাকে সাঙ্ঘাতিক ভালবাসত, দেশের কথা মনে পড়লেই ওটা পরত।’ আবারও অ্যালবামের পাতা ওল্টাতে লাগলেন এমিলি। এবার পাতা ওল্টানো থামিয়ে প্রাচীন এক ফটোগ্রাফ টেনে নিলেন। ‘এটা মেগের ব্রুচ পরা ছবি।’ ওটা সবার দেখার জন্য মিসেস ম্যাকলিনের হাতে দিলেন।
হ্যাঁ, উঁচু গলার ব্লাউজ আর লং স্কার্ট পরা পাকাচুলো মহিলাটি গলার কাছে এক হৃদয়-আকৃতির ক্রচ পরেছেন। ছেলেরা পালা করে দেখল ছবিটা প্রথমে মুসা, তারপর ডন, কিশোর আর সবশেষে রবিন।
তোমাদেরকে ব্রুচটা দেখাতে পারলে ভাল হত,’ বললেন এমিলি, রবিনের হাত থেকে ফটোটা নিলেন। কিন্তু তা সম্ভব নয়।’
‘কেন?’ রবিনকে বিস্মিত দেখাল।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন এমিলি।
‘ব্ৰুচটা বহু আগেই হারিয়ে গেছে।’
‘খাইছে!’ অস্ফুটে বলে উঠল মুসা।
‘যদ্দূর জানা যায়, এক সন্ধেয় মেগ তাঁর ড্রেসারে ব্রুচটা রাখেন,’ ব্যাখ্যা করলেন এমিলি। পরদিন সকালে আর পাননি ওটা।’
হাঁ হয়ে গেছে ডন।
‘তারমানে…কেউ চুরি করেছে?’
‘সবার তা-ই ধারণা,’ বললেন এমিলি। ‘কিন্তু বাসায় চোর ঢোকার কোন চিহ্ন মেলেনি।
‘একটা ব্যাপারে খটকা লাগছে, বলল কিশোর। মেগ অত দামি একটা জিনিস ড্রেসারে রাখতে গেলেন কেন?’
একই কথা ভাবছিল রবিনও।
‘ব্রুচটা তাঁর কাছে যদি এতই মূল্যবান হয়, তবে নিরাপদ কোন জায়গায় রাখা উচিত ছিল না?’
‘আসলেই তাই!’ বললেন এমিলি, ওদের প্রশ্নগুলো তাঁকে সন্তুষ্ট করেছে মনে হলো। এর কোন মানে নেই, তাই না?’
একটা ভ্রূ উঠে গেল কিশোরের।
‘আপনি কী বোঝাতে চাইছেন, এমিলি?’
‘বলতে চাইছি আমি মনে করি না ব্রুচটা চুরি গেছে।’ অ্যালবামটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলেন। ‘আমার বিশ্বাস মেগ ওটা কোনখানে লুকিয়ে রেখেছেন। সাথে দামি আরও কিছু অলঙ্কার থাকাও অস্বাভাবিক নয়।
হতচকিত দেখাল রবিনকে।
‘উনি ও কাজ করতে যাবেন কেন?’
‘ব্যাপারটা তুমি যেমন ভাবছ মোটেই তেমন অদ্ভুত কিছু না, রবিন।’ কুশনে হেলান দিলেন এমিলি। এটা স্রেফ আমার অনুমান, তবে ফ্রঁচটাকে নিরাপদ রাখতে তিনি কোন গোপন জায়গা বেছে নিতেই পারেন-এমন কোন জায়গা যেটা তাঁর স্বামীর নাগালের বাইরে!’
‘খাইছে, তার মানে?’ মুসা শুধাল।
‘আমাকে ভুল বুঝো না,’ বলে একটা হাত তুললেন এমিলি। ‘জন ইটন ভাল মানুষ ছিলেন, কিন্তু তাঁর মারাত্মক জুয়ার নেশা ছিল। টাকার খুব খাঁই ছিল তাঁর।’
‘বলেন কী?! তাই বলে এতটাই যে মেগের ব্রুচ বেচে দেবেন?’ বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল নথি।
‘বলা শক্ত, রবিন। তবে আমার মনে হয় মেগ কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। আমি নিশ্চিত তিনি ওটার জন্যে কোন গুপ্তস্থান খুঁজে নেন।’
‘এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?’ শুধাল কিশোর।
‘কারণ শেষ বয়সে, মেগ এক ওয়াল-হ্যাঙ্গিং বানান যেটির মধ্যে হাতে বোনা এক ছড়া ছিল।’ সামনে ঝুঁকলেন এমিলি। ‘আমার বিশ্বাস ছড়াটার মধ্যে গোপন কোন সূত্র রয়েছে।
‘কী ধরনের সূত্র?’ প্রশ্ন করল কিশোর, কণ্ঠ থেকে উত্তেজনা লুকোতে পারেনি।
‘ব্ৰুচটা কোথায় লুকোনো আছে সেই সূত্র। চেয়ারে ঠেকনো দিয়ে রাখা ফ্রেমবন্দি ছড়াটার দিকে হাত নামালেন তিনি।
‘খাইছে, অপূর্ব!’ এমিলি সবার দেখার জন্য ওটা তুলে ধরতেই মুগ্ধ কণ্ঠে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
রবিন কাছিয়ে এল ভালমতন দেখতে।
‘প্রতিটা অক্ষরের জন্যে আলাদা রঙের সুতো ব্যবহার করেছেন মেগ,’ সপ্রশংস কণ্ঠে বলল।
গর্বের হাসি হাসলেন এমিলি।
মেগ বাহারী সেলাই-ফোঁড়াইয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। ডনের উত্তেজনা ধরে না।
‘ওখানে কী লেখা, এমিলি?’ প্রশ্ন করল। সবে পড়তে শিখছে ও। ‘ছড়াটার কথা বলছি।’
ওর উৎসাহ দেখে মুখ টিপে হাসলেন এমিলি।
এবার জোরে-জোরে, স্পষ্ট উচ্চারণে পড়ে শোনালেন অপটু হাতে লেখা ছড়াটা:
শেষটা যখন শুরু,
আর শুরু যখন শেষ,
তুমি ইটন’স লুপের জট খুললে,
শুকরিয়া অশেষ।
বিভ্রান্ত ছেলেরা পরস্পর মুখ তাকাতাকি করল। ছড়াটা আরেকবার শুনে কিশোর বলল, ‘ছড়াটার সমাধান করা খুব সহজ হবে না!’
সহমত হলো ডন।
‘কিছুই বুঝলাম না।’
পকেট থেকে ছোট্ট নোটবইটা আর পেন্সিল বের করল রবিন। ছড়াটা টুকছে, কিশোর আর মুসা চোখাচোখি করে মুচকি হাসল। রবিন সবসময়ই অনেক গোছাল।
‘আচ্ছা, ইটন’স লুপটা কী?’ গভীর ভাবনায় মগ্ন ডন।
‘আমিও জানি না, ডন,’ ওকে বললেন এমিলি।
‘তোমাদের বয়সে,’ বললেন মিসেস ম্যাকলিন, ‘এর অর্থ বের করতে কত চেষ্টাই না করেছি দু’জনে! যখনই মনে হয়েছে সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছি—’
‘তখনই টের পেয়েছি একই জায়গায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছি!’ শেষ করলেন এমিলি।
হঠাৎই একটা চিন্তা ঘাই মারল মুসার মাথায়
‘মনিকা, তুমি কি রহস্যটা সমাধানে আমাদের সাথে কাজ করবে?’ মেয়েটির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল।
‘আরেকটা মাথা যোগ হলে ভালই হবে,’ বলল কিশোর। মাথা নাড়ল মনিকা।
‘আমার রহস্য পছন্দ নয়, বলল ও, পা থেকে চোখ প্রায় না সরিয়েই।
নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না ডনের।
‘কিন্তু রহস্যও তো যিগ-স পালের মতই,’ চট করে মনে করাল। ‘সবকটা টুকরো জুড়লেই-’
ওকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই সটান উঠে দাঁড়াল মনিকা।
‘আমি শুতে গেলাম।‘
এমিলিকে হতাশ দেখাল।
‘আচ্ছা, তোমার যদি ক্লান্তি লাগে তো কী আর করা। ওহ, যাওয়ার সময় এটা লিভিং রুমে রেখে যেতে পারবে?’ ফটো অ্যালবামটা এগিয়ে দিলেন মনিকার উদ্দেশে।
‘কাঁচের দরজাওয়ালা ক্যাবিনেটটায় তো?’
‘হ্যাঁ।’
মনিকা বড়আম্মাকে জড়িয়ে ধরল, তারপর শুভরাত্রি জানিয়ে ভেতরে চলে গেল। এমিলিকে উদ্বিগ্ন দেখাল।
‘এবার লক্ষ করছি মনিকার কী যেন হয়েছে,’ বললেন। এমনিতে ও খুব হাসিখুশি। ওর সমস্যাটা কী ধরতে পারছি না।’
ছেলেরা পরস্পর মুখ তাকাতাকি করল, ওরাও একই কথা ভাবছে।