ভুঁড়ি
ভুঁড়ি হলো একজনের শরীরে বেড়ে ওঠা আরেকজনের মাংস। কোথাও কেউ না কেউ না খেয়ে থাকে বলেই জন্ম হয় ভুঁড়ির। তবে পেটের উপরে যা গজায়, তা আমাদের আসল ভুঁড়ি নয়। আসল ভুঁড়ি অন্যখানে।
ধরা যাক, গ্রামে সৈয়দ আব্দুল আলির একটি বাড়ি আছে। টাকা হওয়ার পর তিনি ঢাকায় আরেকটি নতুন বাড়ি করলেন। এই নতুন বাড়িটিই তার আসল ভুঁড়ি। এরকম আসল ভুঁড়ি সৈয়দ আব্দুল আলির আরও অনেক থাকতে পারে। পকেটে যে টাকা-সমৃদ্ধ ভারী ডেবিট কার্ডটি নিয়ে তিনি ঘোরেন, সেটিও তার একটি আসল ভুঁড়ি।
আমাদের সম্মানিত স্যারেরা সম্প্রতি তাদের কিছু ভুঁড়ি কানাডায় পাচার করে দিয়েছেন। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ভুঁড়ি ফেরত আনার জন্য তিনি ও তার সরকার এখন দেন-দরবার করছেন কানাডা সরকারের সাথে। তবে ভুঁড়ি একবার বেহাত হলে, তা পুনরায় হাত করা বেশ মুশকিলের ব্যাপার।
রাজউকের এক চেয়ারম্যান, কিছুদিন আগে অন্যের ভুঁড়ি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। ভুঁড়ি দখলের এরকম ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। বাঙালির জন্য এক স্ত্রী আর এক ভুঁড়িতে তৃপ্ত থাকা খুব কঠিন কাজ।
ভুঁড়ি একা একা ভোগ করা যায় না। ভুঁড়ির একটি ভাগ নিয়মিত রাষ্ট্রকে দিয়ে দিতে হয়। কয়েক বছর আগে অর্থমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকেও ভুঁড়ির ভাগ আদায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুঁড়িহীন পরিবারের ছাত্ররা রুখে দাঁড়ানোয় তা নস্যাৎ হয়ে যায়।
তবে সবার কাছ থেকে রাষ্ট্র ভুঁড়ির ভাগ আদায় করতে পারে না। আমাদের মাননীয় সাংসদেরা প্রতি পাঁচ বছর পরপর উপভোগ করেন শুল্কমুক্ত ভুঁড়ি সুবিধা। যে-ভুঁড়ি জনগণের কিনতে চার কোটি পাঁচ কোটি লাগে, সে-ভুঁড়ি তারা লাখের ঘরেই কিনতে পারেন। মানুষের জন্য যে-হাড়ভাঙা দুশ্চিন্তা তারা করেন, তার বিপরীতে এ সুবিধা তাদের প্রাপ্য বলেই মনে করি।
শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমানের ভুঁড়ি না থাকলেও, তাদের অনুসারীদের ভুঁড়ি আছে ভূরি ভূরি। শাহেদ নামের ওই ভুঁড়িওয়ালাটিকে না ধরলে, আমরা জানতামই না যে মুজিব কোটের ভেতরেও লুকিয়ে থাকতে পারে এতো বড় ভুঁড়ি।
ইদানীং নারীরাও ভুঁড়ির দিকে ঝুঁকছে। বিয়ে করার সময় তারা পাত্রের ভুঁড়ির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। যার ভুঁড়ি নেই, তাকে তারা বিয়ে করছে না। পড়াশোনা জানা বেকার ছেলেরা একটি ভালো ভুঁড়ির অভাবে বিয়ের স্বাদ নিতে পারছে না। এ জন্য তরুণেরা এখন রাত-দিন প্রার্থনা করছে- হে আল্লাহ্, আমাদেরকে একটি বিসিএস ভুঁড়ি দাও।
নতুন চাকরিতে ঢোকা এক ছেলেকে চিনি, যার বিয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেছে পাত্রীর ভুঁড়ির দাবি মেটাতে গিয়ে। পাত্রীর দাবি, নগদ দশ লাখ টাকা কাবিন না দিলে সে তার স্বজনদের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। পৃথিবীতে মুখ দেখাতে যে এতো টাকা লাগে, তা বাংলাদেশে না জন্মালে আমার জানা হতো না।