ভয়-ভুতুড়ে – ৯

নয়

পরদিন সকালে, প্রথম চিঠিটা লিখল মুসা।

প্রিয়, মিস্টার ব্র্যাণ্ড—

আমার নাম মুসা আমান। আমি সেদিন আপনার গ্যারেজে যাওয়াতে আপনি খেপে গিয়েছিলেন। আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে আমি দুঃখিত। আমি আপনার কাছে একটা সাহায্য চেয়েছিলাম। সাহায্যটা বেশ বড় ধরনের, কিন্তু আমার বিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমি জানি আপনি ড্যানি সিম্পসন। কিন্তু আমি কাউকে বলিনি-জানে শুধু আমার দুই বন্ধু, যারা আমার সাথে আপনার গ্যারেজে গিয়েছিল। আপনি বেসবল ছাড়ার পর অনেক মানুষ হতাশ হয়। আমার ধারণা আপনার নিজেরও তারপর থেকে খুব খারাপ লেগেছে।

আমি একটা ছেলেকে চিনি যে ভয়ানক হতাশ হয়ে পড়েছিল, এবং আমি তাকে কথা দিয়েছি আমি চেষ্টা করব তার জন্যে আপনাকে দিয়ে একটা হোম-রান হিট করাতে। আমার ফোন নম্বর দিলাম। দয়া করে ফোন করবেন।

আপনার বিশ্বস্ত,
মুসা আমান

মুসা পোস্ট অফিসে চিঠিটা মেইল করল সেই সকালে, এবং ওটা স্লটে ফেলা মাত্র নিজেকে বোকা মনে হলো ওর। সিম্পসন কোন্ কারণে ওকে ফোন করতে যাবে? করবে না।

বৃহস্পতিবার সকালবেলা মুসা আর রবিন গেল পার্কে, একান্তে কথা বলার জন্য। দস্তানা পরে খানিকক্ষণ প্র্যাকটিস করল ওরা। তারপর ছাউনিতে বসে ইতিকর্তব্য ঠিক করার চেষ্টা করল।

‘সোমবার রাতে তাকে আনতে হলে কী বলা দরকার?’ প্রশ্ন করল মুসা। মানুষটা বহু বছর ধরে লুকিয়ে আছে। তাকে বের করে আনার কায়দাটা কী?’

‘আজকে বৃহস্পতিবার,’ বলল রবিন। ‘তাকে শনিবার নাগাদ আরেকটা চিঠি পাঠাতে পারো।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু লিখব কী? ‘

‘সত্যি কথাটা জানালে কেমন হয়?’

মুসা এক মুহূর্ত ভেবে নিল।

‘হ্যাঁ, সত্যিটা জানালে বুঝতে পারবে আমার কোন বদ মতলব নেই।’

‘চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী, বলল রবিন। উদ্বিগ্ন দেখাল ওকে। ‘সোমবার আসতে অল্প কটা দিন বাকি, এবং সিম্পসন যদি দেখা না দেয়, বিল ফাস্ট কী করে বসবে কে জানে।’

.

সেদিন সকালে মুসা আরেকটা চিঠি ছাড়ল।

প্রিয়, মিস্টার ব্র্যাণ্ড—

আমি মুসা আমান। আপনাকে আবারও বিরক্ত করছি, সেজন্য দুঃখিত। আপনি একাকী থাকতে চান আমি জানি। একান্ত বাধ্য না হলে আপনাকে আমি লিখতাম না। আমি মস্ত বড় এক বিপদে পড়েছি, এবং একমাত্র আপনিই পারেন আমাকে সাহায্য করতে। আমি যখন বলেছিলাম আমি চাই আপনি আমার শহরে এসে একটা হোম-রান হিট করেন, তখন পুরো ঘটনাটা বলিনি।

আমাদের শহরের বলপার্কে এক কিশোরের ভূত হানা দেয়, প্রায় চল্লিশ বছর আগে যার মৃত্যু হয়েছে। ও আপনার খেলা দেখতে পার্কে যাচ্ছিল, এ সময় গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। আমাদের ধারণা ওর আত্মা এখনও মুক্তি পায়নি কারণ ও চায় আপনার হিট করা একটা হোম-রান লুফতে। আপনি ওর চোখে মহানায়ক ছিলেন, এখনও আছেন।

যা হোক, এবার অভিশাপের কথায় আসি। লোকে বলে, বলপার্কে কেউ ভূতটাকে দেখলে ওটা এসে তাকে নিয়ে যায়। আমি ওকে দেখেছি, এবং এখন সে বারবার আমার কাছে আসছে। আপনার হোম- রান লুফতে না পারলে ও আমাকে নিয়ে যাবে।

ক’রাত আগে ভূতটাকে আমি আমার বেডরুমে দেখেছি। আমি আতঙ্কিত হয়ে ওকে কথা দিয়েছি, আপনি সোমবার বলপার্কে আসবেন। জানি বোকার মত কাজ করেছি, কিন্তু এখন আর কীই বা করার আছে বলুন।

কথা দিন, আপনি আসবেন।

আপনার বিশ্বস্ত,
মুসা আমান

.

শনিবার সারাদিন মুসা ফোনের কাছে থাকল।

‘আজকে কী সুন্দর দিন,’ ওর মা বারবার বললেন। ‘ঘরে বসে সময় নষ্ট করছিস কেন?’

মুসা জানাল ওর শরীর ভাল নেই-এবং কথাটা সত্যি: উদ্বেগে অসুস্থ বোধ করছে ও। ডিনার নাগাদ চারবার ফোন বেজেছে। তিনটে কল মি. আমানের জন্য, এবং অন্যটা রবিনের, সিম্পসন ফোন করেছে কিনা জানতে চেয়ে। হতাশ মনে ডিনার টেবিলে বসে রইল মুসা। কিশোর আর ও খাবার নাড়াচাড়াই করল শুধু; কারও খিদে নেই।

‘আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। চিন্তার কিছু নেই,মা,’ বলল মুসা।

‘চিন্তার কিছু নেই বললেই হলো,’ মুসার মা বললেন। ‘গত ক’দিন ধরে তুই আর কিশোর কেমন জানি অদ্ভুত আচরণ করছিস। আমি কিছুই বুঝতে—’

ফোনের শব্দে বাধা পেলেন তিনি এবং মুসা লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল টেবিল থেকে।

‘আমি লিভিংরূম থেকে ধরছি,’ কিচেন থেকে ছুটে বেরনোর সময় চেঁচিয়ে বলে গেল মুসা।

‘এখন তো দিব্যি সুস্থ মনে হচ্ছে,’ মি. আমান বললেন।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল কিশোর।

ফোন দ্বিতীয়বার বাজার পরপরই লিভিংরূমে পৌছে গেল মুসা। ছোঁ মেরে তুলে নিল রিসিভার।

‘হ্যালো,’ বলল ও।

ওপ্রান্তে এক মুহূর্তের নীরবতা।

‘তুমি মুসা?’ কর্কশ এক কণ্ঠ বলল।

‘হ্যাঁ।’

‘আমি সোমবার সাতটায় হাজির থাকব,’ কণ্ঠটা বলল। এবার ফোন ডেড হয়ে গেল।