সাত
‘তো আমার বেসবল ব্যাটটা তোমার কাছে ছিল,’ মুসার কামরায় সন্ধেবেলা খুঁজতে এসে বলল কিশোর। ‘আমি সবখানে খুঁজে বেড়াচ্ছি।’ মুসার ঘরের মেঝে থেকে ব্যাটটা তুলে নিল ও।
‘এক মিনিট, কিশোর। একটু দেখতে দাও।’ ব্যাটের হাতলটা চেপে ধরল মুসা। হাতলের চ্যাপ্টা প্রান্তটা খুঁটিয়ে পরখ করল ও। কাঠে অস্পষ্টভাবে লেখা বি এফ।
‘এটা ওর ব্যাট,’ বলল মুসা। ‘ওর ব্যাট নিয়ে কাল রাতে ও আমার ঘরে এসেছিল।’
‘আমি আসিনি,’ বলল কিশোর।
‘তুমি না,’ মুসা বলল। ‘বিল ফাস্ট।’
কিশোরকে সব খুলে বলল মুসা। কিশোর গুরুত্বের সঙ্গে গল্পটা নিল। মিস্টার ও মিসেস আমান শুতে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ কিশোরের কামরায় বসে রইল দু’জনে। মুসা কিশোরকে লাইব্রেরির নোটগুলো আর কপি করা আর্টিকলগুলো দেখাল। ডেস্কে বসে সেগুলো পরখ করল কিশোর। একটু পরে, ডাক দিল মুসাকে।
‘এটা দেখো, বলল কিশোর। ফটোকপি করা এক আর্টিকল এগিয়ে দিল মুসার দিকে।
‘কী?’
‘ছবিটা,’ বলল কিশোর। ‘ছবিতে কে দেখো।’
ছবিটার দিকে চেয়ে রইল মুসা।
‘সিম্পসন,’ বলল। ‘ও যখন হাই স্কুলের সিটি লিগে ছিল।’
‘ও কোন্ স্কুলে যেত?’
‘লস এঞ্জেলেস হাই স্কুল কিংবা অন্য কোনখানে। কাগজে গুলিয়ে ফেলেছে। অন্যটা কী?’
‘হার্ডিং হাই,’ বলল কিশোর। ‘কিন্তু দেখো ও কী পরেছে।’
ছবিটা কাছ থেকে দেখল মুসা। প্র্যাকটিস করছে ড্যানি সিম্পসন। পরনে সিটি লিগ প্র্যাকটিস শার্ট।
‘সোয়েটপ্যান্টটা দেখেছ?’ ইঙ্গিত করল কিশোর।
খুঁটিয়ে লক্ষ করল মুসা। শার্টের চাইতে শেডটা আলাদা। এক পাশে খুদে এক ঈগল, এবং পাখিটার উপরে লেখা সিভিএইচএস।
‘সিভিএইচএস?’ মুসার প্রশ্ন।
‘দ্য সেন্ট্রাল ভ্যালি হাই স্কুল ঈগলস,’ বলল কিশোর। ‘দু’বছর আগে ওদের সাথে আমাদের একটা প্লে-অফ গেম ছিল। ওরা কেটলম্যান সিটির দল। এখান থেকে পনেরো মাইল দূরে।’
‘কিন্তু ও তো সেন্ট্রাল ভ্যালি হাই স্কুলে যায়নি, ও গিয়েছিল-’
‘চুপ করে একটা মিনিট ভাবো,’ বলল কিশোর। ‘সিম্পসন সেন্ট্রাল ভ্যালি সোয়েটস পরবে কেন?’
ভাবার চেষ্টা করল মুসা। মাথা নাড়ল।
‘তুমি কী বোঝাতে চাইছ জানি না। ও এল.এ.-তে থাকত। সিটি লিগে খেলত।’
‘সিটি লিগে খেলত ঠিক কথা। কিন্তু এমন যদি হয় ওখানে থাকত না?’
‘ওখানে না থাকলে খেলা সম্ভব নয়।’
‘ঠিক।’
‘ঠিক কী?’
‘যদি এমন হয় সে সেন্ট্রাল ভ্যালি হাই স্কুলের তুখোড় প্লেয়ার, এবং কেউ তাকে সিটি লিগে খেলাতে চায়?’
‘ও কোয়ালিফাই করবে না।’
কিশোর মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকাল।
‘যদি না লিগ কমিটিকে কনভিন্স করতে পারে যে সে এল.এ.-তে থাকে।’
মুসার চোখজোড়া বিস্ফারিত হয়ে গেল।
‘হ্যাঁ। ও সেন্ট্রাল ভ্যালির গ্রেট হিটার, কাজেই ওরা কিছু ভুয়া রেকর্ড বানিয়ে শহরে ওকে একটা ঠিকানা দেয়, যাতে সিটি লিগে সে একজন রিঙ্গার হতে পারে।’
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
‘ওর নামটাও হয়তো পাল্টে দিয়েছিল।’
গোটা ব্যাপারটা মুসার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
‘কাজেই সে যখন উধাও হয়,’ বলে চলল কিশোর, ‘নিজের হোমটাউনে স্বনামে ফিরে যায়। সবার ধারণা সে এল.এ.-তে লুকিয়ে আছে, কিন্তু আছে আসলে কেটলম্যান সিটিতে। ছোট শহরের সবাই __ গোপনীয়তা রক্ষা করছে। এবং কেউ ওকে খুঁজে পাচ্ছে না কারণ সে ড্যানি সিম্পসন নয়।’
‘আমরা এখন কী করতে পারি?’ মুসার প্রশ্ন।
‘আমরা হয়তো সেন্ট্রাল ভ্যালি হাইয়ের কোনো একটা ইয়ারবুকের কপি খুঁজতে পারি। সে ওখানে ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে ছিল। তুমি কি চাও ওখানে গিয়ে চেক করে দেখতে?’
‘হ্যাঁ, সেটাই মনে হয় ভাল হয়,’ জানাল মুসা।
কিশোর, মুসা আর রবিন বাইকে করে সেন্ট্রাল ভ্যালি হাই স্কুলে গেল। ক্লাসরূম আর অফিসগুলোর পাশ কাটিয়ে হেঁটে গেল ওরা।
‘ওরা যদি জানতে পারে আমরা এ স্কুলের নই?’ মুসা ফিসফিস করে বন্ধুদের প্রশ্ন করল। ‘যদি হল পাস-টাস দেখতে চায়?’
‘কেউ সন্দেহ করবে না.’ বলল কিশোর। ‘জানবে কীভাবে আমরা এখানকার নই? স্বাভাবিক থাকো।’
ক’মিনিট বাদে ছোট এক কোর্টইয়ার্ডে প্রবেশ করল ওরা। জনা দুই ছেলেকে বইয়ের গাদা নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখল। তিন গোয়েন্দা দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিল।
‘বিঙ্গো,’ কিশোর বলল।
রবিন লাইব্রেরিয়ানের এক সহকারীকে জিজ্ঞেস করল, পুরানো ইয়ারবুকগুলো কোথায় রাখা হয়, এবং লোকটি ওদেরকে পিছন দিকে ক’টা তাকের কাছে নিয়ে এল। দু’তাক ভর্তি ইয়ারবুক রাখা এখানে। ১৯৪৫-১৯৫১ সালের মাঝামাঝি সময়েরগুলো বের করে নিল ওরা। মেঝেতে বসে পড়ল তিনজনে। কাগজের টুকরো দিয়ে চিহ্ন রেখে চলল, যখনই কাউকে ড্যানি সিম্পসনের মতন লাগল। প্রায় পনেরো মিনিটের মত কাজ করার পর সশব্দে শ্বাস চাপল মুসা।
রবিন মুসার হাতে ধরা বইটার দিকে ঝুঁকে পড়ল। মার্ক ব্র্যাণ্ড নামে এক ছাত্রের ছবিতে তর্জনী রেখেছে মুসা।
‘হ্যাঁ!’ বলে উঠল রবিন। ‘কোন সন্দেহ নেই, এটাই ড্যানি সিম্পসন!’
মুসা লাইব্রেরি ডেস্কে গিয়ে লোকাল ফোনবুকের খোঁজ করল। মার্ক ব্র্যাণ্ডের নাম নেই, কিন্তু ব্র্যাণ্ডের অটোমোটিভ রিপেয়ার ৮৫৭৯ পার্কসাইডে তালিকাবদ্ধ।
দশ মিনিটের মধ্যে তিন গোয়েন্দা বাইকে চেপে পৌঁছে গেল গ্যারেজটার বাইরে।
‘ওর বয়স নিশ্চয়ই ষাট পেরিয়ে গেছে,’ ফিসফিস করে বলল মুসা। কর্মরত তিন মেকানিকের দিকে চাইল। ‘বিশালদেহী লোক ছিলেন তিনি। চোখ ফাঁকি দেয়া কঠিন।
এক মেকানিক গাড়ির পিছন থেকে বেরিয়ে এসে দেয়াল থেকে একটা বেল্ট নামাল। এর বয়স অনেক কম।
আরেকজন উদয় হলো। ছবির সঙ্গে চেহারার মিল নেই, তবে বয়সের আছে। সে মুহূর্তখানেক পরে তৃতীয় মেকানিকের কাছে গিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলতে লাগল। তৃতীয় মেকানিক এবার গাড়িতে চড়ে গ্যাস পেডালে চাপ দিতে শুরু করল।
ধড়াস করে উঠল মুসার হৃৎপিণ্ড। এটাই ড্যানি সিম্পসন।
‘এটাই উনি। এটাই উনি,’ বলল ও।
তিন বন্ধু কয়েক মিনিট নীরবে কাজ দেখে গেল।
‘এখন কী করা?’ রবিনের প্রশ্ন।
‘আমরা ওঁকে বলব একটা ভূত ওঁর সাথে দেখা করতে চায়,’ বলল কিশোর।