চার
সূর্য ওঠার পরও, বিছানায় বসে, বেডরূমের দরজার দিকে চেয়ে ছিল মুসা। বাড়িটা আলোকিত হয়ে উঠতেই সাহস ফিরে পেল ও। ছটা বাজার ক’মিনিট পর নীচে নেমে এল, কিচেন গোছগাছ করতে।
ব্রেকফাস্টের পর, সিঙ্কে প্লেট রেখে কিচেনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল মুসা।
‘কোথায় যাচ্ছ?’ টেবিল থেকে বলল কিশোর।
‘লাইব্রেরিতে,’ স্ক্রীন ডোর ভেদ করে চেঁচাল মুসা।
.
একমাত্র লাইব্রেরিয়ান বসেছিলেন ডেস্কে, সদা ক্রুদ্ধ চেহারার এক মহিলা। জোরে কথা বললে বকা দেন তিনি, ভালবাসেন আস্তে কথা বলুন’ সাইন দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতে, ‘পড়তে পারো না?’ লাইব্রেরিতে পড়তে না পারলে যায় কেউ? মুসার ধারণা প্রশ্নটা অবান্তর।
‘আমি একটা খবরের কাগজ খুঁজছি,’ মুসা বলল মহিলাকে। ‘দ্য স্ট্যাণ্ডার্ড।’
মহিলা কাগজে কিছু টুকে নিলেন।
‘তারিখ?’
শার্টের পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বের করল মুসা।
‘জুন ৭, ১৯৫২,’ বলল। ‘না, দুঃখিত। তার পরের দিন।’
‘তুমি শিয়োর?’ লাইব্রেরিয়ান প্রশ্ন করলেন।
‘হুঁ- মানে হ্যাঁ, ম্যাম,’ তুতলে বলল মুসা।
‘মাইক্রোফিল্মে আছে। কীভাবে মেশিনটা ব্যবহার করে জানো?’
‘কোথায় ওটা?’
‘মাইক্রোফিল্মে। মেশিন ব্যবহার করে পড়তে হবে। ব্যবহার করতে পারো? না পারলে পড়তে পারবে না। আর তোমাকে শেখানোর সময় আমার নেই।’
‘আমি জানি কীভাবে চালাতে হয়,’ মুসার পিছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলল। ‘আমি সেট আপ করে দেব।’ মুসা ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে রবিন। গলার স্বরটা এজন্যই পরিচিত লেগেছিল। ‘বাবার জন্যে প্রায়ই আমাকে মাইক্রোফিল্ম দেখতে হয়।’
লাইব্রেরিয়ান মুসার দিক থেকে রবিনের দিকে চেয়ে আবার মুসার দিকে দৃষ্টি ফিরালেন।
দেখা যাক পারে কিনা,’ বলে পিছনের কামরায় চলে গেলেন।
‘শুনেছি ইনি ওখানে ওনার উড়ন্ত বানরগুলোকে রাখেন,’ ফিসফিস করে বলল রবিন। মুসা হেসে উঠল। হাসিটা একটু জোরে হয়ে গিয়েছিল, ফলে লাইব্রেরিয়ান মাইক্রোফিল্ম নিয়ে ফিরে এসে ওর দিক ভ্রূ কুঁচকে চাইলেন।
‘ধন্যবাদ, ম্যাম,’ বলল রবিন। ‘আমরা সাবধানে কাজ করব।’ মুসাকে ঠেলা দিল লাইব্রেরির পিছন দিকে যাওয়ার জন্য। ‘এদিকে।’
রবিন মেশিনের সুইচ অন করে ফিল্ম ঢুকাল। পরমুহূর্তে, স্ক্রীনে ভেসে উঠল বিশাল এক খবরের কাগজের পাতা।
‘কী খুঁজছ তুমি?’ রবিনের প্রশ্ন।
‘বহু বছর আগে মারা যাওয়া এক ছেলের কথা।’
‘কী হবে ওটা দেখে?’
‘বলা হয় ওর ভূত নাকি বলপার্কে হানা দেয়,’ জানাল মুসা।
‘বিল ফাস্ট! তুমি বিল ফাস্টকে খুঁজছ?’ বলল রবিন। ‘কোন্ তারিখ দরকার তোমার?’
আবারও পকেটের নোটটা দেখে নিল মুসা।
‘জুন ৮।’
রবিন ফিল্মটাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। ও আরেকটি নব ঘোরাতেই পাতাগুলো ধীরে ধীরে নড়তে লাগল। খেলার বিভাগের প্রথম পাতায় থামল রবিন।
‘মনে হয় লোকাল নিউজ সেকশনে থাকবে,’ বলল মুসা।
রবিন একটা নবের দিকে হাত বাড়াল।
‘দাঁড়াও,’ বলল মুসা। খেলার বিভাগের শিরোনাম ওর দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে:
জেনারেলদের কাছে ফ্যালকনরা বিধ্বস্ত
সিম্পসন পিঠাপিঠি হোমার হিট করেছে
শিরোনামের নীচে বিরাট সুইঙের পর এক খেলোয়াড়ের মোচড়ানো শরীর।
‘ওর হওয়ার কথা ছিল পরের বেব রুথ,’ ফিস ফিস করে বলল রবিন। ‘চাচা ওর কথা প্রায়ই বলত। মানুষটা স্রেফ উধাও হয়ে যায়।’
তুমি বেসবলের অনেক খবর জান,’ বলল মুসা।
‘চাচা,’ বলল রবিন। ‘সে ছিল মাইনর লীগের ব্যাটিং কোচ।’
‘সত্যি?’
খবরের কাগজের ফিল্মটা ধীরেসুস্থে রিওয়াইও করার কথা বলল রবিন।
‘চাচা বুলডগদের পক্ষে কাজ করত। তারা তাকে অন্য দলে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু ছেলে-মেয়েরা স্কুলে পড়ত বলে চাচা কাজ ছেড়ে দেয়। চাচা এখন ইনশিওরেন্স বেচে আর আমার চাচাতো ভাইয়ের লিটল লীগ টিমকে কোচ করায়।’
রবিন মুহূর্তের জন্য চুপ করে, মেশিনের নবগুলো নিয়ে কাজ করল।
‘এই যে,’ বলল।
স্ক্রীনের দিকে চাইল মুসা।
বলপার্কের বাইরে
কিশোর নিহত
গতরাতে সার্জেন্ট ফিল্ডের বাইরে, মোরেল বনাম ফ্যালকনদের খেলা শুরুর আগে, বিল ফাস্ট (১৪) নামে এক কিশোর গাড়িচাপা পড়ে মারা যায়। রাস্তায় যানবাহনের
খুব ভিড় ছিল। সবাই হোম-রান কিংবদন্তী ড্যানি সিম্পসনের খেলা দেখতে এসেছিল বিল ফাস্ট জেফারসন অ্যাভিনিউ পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ছেলেটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। চালককে আটক করা হয়নি। ছেলেটির বাবা বব ফাস্ট জানান, ‘ও সিম্পসনের খেলা দেখার জন্যে উন্মুখ হয়ে ছিল। গত ক’সপ্তাহ ধরে এজন্যে অপেক্ষা করছিল বিল।’ বিল ফাস্ট বাস করত ৩৫৭, স্ট্যাফোর্ড স্ট্রীটে। তার দাফন হবে ওক লন গোরস্থানে, শনিবার। শেষকৃত্য
অনুষ্ঠিত হবে দুপুর
২টায় টেম্পলমোর গির্জায়।
‘যাক,’ পড়া শেষে বলল রবিন, ‘ব্যাপারটা ততটা ভয়ঙ্কর নয়। আমি ভেবেছিলাম—’ থেমে গিয়ে মুসার মুখের দিকে চাইল।
‘কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করল। মুখ ফ্যাকাসে কেন?’
‘ওর ঠিকানা,’ বলল মুসা।
স্ক্রীনের দিকে দৃষ্টি ফেরাল রবিন।
৩৫৭ স্ট্যাফোর্ড স্ট্রীট, পড়ল আবারও। ‘তার মানে তো তোমার বাড়ি?’
‘হ্যাঁ,’ বলল মুসা। বিল ফাস্ট আমার বাসায় থাকত।’