ভয়-ভুতুড়ে – ৩

তিন

সে রাতে, মুসার ঘুমোতে কষ্ট হলো। খালি ছটফট করছে আর অ্যালার্ম ঘড়ির উজ্জ্বল সংখ্যাগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। রাত তিনটার দিকে বিছানা ছেড়ে দুধ পান করতে গেল।

এক গ্লাস দুধ ভরছে এসময় ড্রাইভওয়েতে থপ-থপ শব্দ শুনতে পেল। কিচেনের জানালার কাছে গিয়ে বাইরে উঁকি দিল ও।

কে যেন গ্যারেজের দরজায় বল বাউন্স করাচ্ছে। জানালায় দু’হাত রেখে ভালভাবে দেখার চেষ্টা করল মুসা। ডেড বোল্ট আনলক করে, কিচেনের দরজা ক’ইঞ্চি খুলে মাথা বের করে দিল।

‘কিশোর?’ নিঃশব্দে ডাকল। ‘কিশোর?’

কিশোর ঘুরে দাঁড়াল না। গ্যারেজের দরজায় বল বাউন্স করিয়ে বেসবল দস্তানায় লুফছে। কিচেনের দেয়ালে হাত বুলিয়ে ড্রাইভওয়ে লাইটটা খুঁজে নিল মুসা। জ্বালল। ড্রাইভওয়েতে ক্ষীণ আলো ফেলল বাতিটা। ‘কী করছ তু-?’

কিশোর ধীরে-সুস্থে ঘুরে দাঁড়াল মুসার উদ্দেশে—কিন্তু ওটা কিশোর নয়। ছেলেটির মুখ ছায়ায় থাকার পরও জানে মুসা। একটা টেনিস বল আলোয় গড়িয়ে গিয়ে ড্রাইভওয়ে ধরে রাস্তার দিকে চলে গেল।

‘কী করছ তুমি? কে তুমি?’ প্রশ্ন করল মুসা।

ছেলেটি এক পা এগিয়ে এল কিচেনের দরজার দিকে, এবং আলো পড়ল ওর মুখের উপর। বিল ফাস্ট।

মুসার দিকে আরেক কদম এগোল ও। মুসা দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে কিচেনের অন্যদিকে চলে গেল। ও এসে গেছে, ভাবল মুসা। আমাকে নিতে এসেছে!

ইতিকর্তব্য ঠিক করতে পারল না ও। দৌড়ে পালাবে? দরজার কাছে দৌড়ে গিয়ে লক করে দেবে? আতঙ্কিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুসা, দরজার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ। মাথার মধ্যে ঝড়ের বেগে চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিচেন প্যান্ট্রিতে ঠেস দিয়ে রাখা ওর কাঠের বেসবল ব্যাট।

সাঁত করে কিচেনে ঢুকে ব্যাটটা তুলে নিল ও। ভূতের বিরুদ্ধে এটা কি কোন কাজে আসবে?

মুসা হাঁটুর উপর বসে পড়ে গুড়ি মেরে এগোল, জানালা দিয়ে বিল ফাস্ট যাতে ওকে দেখতে না পায়। মেঝে দিয়ে পিছলে দরজার দিকে চলেছে, ডান হাতে ব্যাট-প্রয়োজন পড়লেই চালাবে। মুসা লকের কাছে পৌছেছে, ডোরনব ঘুরতে শুরু করল। মুসা লকটা চেপে ধরে মোচড় দিল।

দরজাটা কেঁপে উঠল। কেউ যেন বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়েছে। লকটা অটুট রয়েছে। মুসা কিচেনের মেঝে দিয়ে হাঁচড়ে পাঁচড়ে ফিরে গেল। ওর পায়ে বেধে কিচেনের একটা চেয়ার উল্টে পালে। পতনের শব্দের কারণে এক লাফে উঠে দাঁড়াল ও। শব্দ লক্ষ পাগলের মত ব্যাট ঘোরাল, এবং অর্ধেক ভরা দুধের কার্টনটা অপর পাশের দেয়ালে আছড়ে পড়ল। কিচেনের দরজা এখনও বন্ধ। কিন্তু নবটা ঘুরে চলেছে এবং দরজাটা ক্যাচ-কোঁচ শব্দ করছে, কেউ যেন ঠেলছে ওটাকে।

মুসা ব্যাটটা ফেলে, লিভিং রূমের ভিতর দিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি ভাঙতে লাগল। বেডরুমে ঢুকে দরজা লক করার পর শ্বাস নেয়ার কথা মনে পড়ল ওর।