ভয়-ভুতুড়ে – ২

দুই

পরদিন সকাল। বাইক চালিয়ে শহরের অপরপ্রান্তে চলে এল মুসা। বিল ফাস্ট ও তার অভিশাপ সম্পর্কে আরও জানতে চায় ও। এজন্য রিনাত মিশেল উপযুক্ত লোক।

‘মিশেল’স বেসবল কার্ডস’ এত সরু যে দোকানের সামনে মাত্র দুটো পার্কিং স্পেস। জানালায় রং দিয়ে লেখা: বেসবল কার্ডস

কেনা-বেচা-ব্যবসা।

মিশেল শুধু যে রকি বীচের একমাত্র বেসবল কার্ডশপের মালিক তা-ই নয়, রকি বীচের বেসবল ট্রিভিয়ার বেসরকারী সম্রাট- বুলডগের প্ৰিগেম কুইজ শো দু’সপ্তাহ পর বন্ধ হয়ে যায়, কেননা মিশেল প্রায় সব ক’টা পুরস্কার জিতে নিয়েছিল।

‘হাই, মিশেল,’ বলল মুসা।

কাউন্টারের পিছনের ছোট্ট টুলটার তুলনায় শরীরটা অনেক বেশি বড় মিশেলের।

‘বেসবল নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন আছে,’ বলল মুসা।

‘বলে ফেলো।’

মিশেল, আপনি কখনও বিল ফাস্টের ভূতের কথা শুনেছেন?’

‘বিল ফাস্ট? নিশ্চয়ই, ওর ব্যাপারে কী জানতে চাও?’

‘আপনি যা জানেন সব।’

‘ও এই শহরে থাকত,’ বলল মিশেল। ‘পঞ্চাশের দশকে যখন এখানে ট্রিপল-এ ক্লাব ছিল। আমরা মেজর থেকে এক ধাপ দূরে ছিলাম, কাজেই বেশ কিছু বড় বড় নাম এসেছিল। ফাস্ট একটা খেলা দেখতে যাচ্ছিল, এসময় পার্কের সামনে গাড়িচাপা পড়ে। হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায় ও।’

মিশেল সামনে ঝুঁকে পড়ে কাঁচের কেসে কনুই দুটো রাখল।

‘খুব ভিড় ছিল সেদিন,’ মিশেল বলল। ‘সবাই ড্যানি সিম্পসনের খেলা দেখতে আসছিল। সে ছিল কিংবদন্তী এবং তার টিম ছিল ফ্যালকন্স।’

‘ফ্যালকন্স?’

‘হ্যাঁ।’

‘ড্যানি সিম্পসন কে ছিল?’

মিশেল পিছনে হেলান দিয়ে মৃদু হাসল।

‘খেলা ছেড়ে না দিলে তার মত হিটার আর পাওয়া যেত না। ওর কিছু ব্যাটিং রেকর্ড চল্লিশ বছর ধরে টিকে আছে।’

‘খেলা ছেড়ে দিয়েছিল?’

‘হ্যাঁ, মেজর লীগ ক্যারিয়ারে মাত্র একটা খেলা খেলেছিল।’

‘কেন খেলা ছাড়ল?’

‘কেউ জানে না। টুইন্সরা ওকে যখন ডাকল তখনই সে রীতিমত বিখ্যাত।’

‘তারপর?’

‘ও একটা খেলা খেলে এবং দুটো হিট নেয়, তারপর স্রেফ উধাও হয়ে যায়।’

‘উধাও হয়ে যায়?’

‘হ্যাঁ, টুইন্সরা মেইলে চিরকুটসহ ওর প্র্যাকটিস ইউনিফর্ম ফেরত পায়। ও বলেছিল ও আর ফিরবে না। আর ওকে যেন খোঁজাখুঁজি করা না হয়। বদমেজাজী লোক ছিল। লোকের ধারণা কোন ব্যাপারে খেপে গিয়ে খেলা ছেড়ে দেয় ও।’

‘গেল কোথায়?’

‘কেউ জানে না। সারা দেশের খবরের কাগজ তাকে নিয়ে স্টোরি ছাপে। ওটা ছিল বিরাট বড় এক রহস্য। তবে কিছুদিন পর সব থিতিয়ে যায়, এবং এখন সবাই ভুলেই গেছে।’

‘তো বিল ফাস্ট সিম্পসনের খেলা দেখতে যাচ্ছিল?’

‘হ্যাঁ। খেলাটা দেখার জন্যে যে কোন কিশোর নিজের ডান হাত দিতে রাজি ছিল।’

‘অভিশাপের ব্যাপারটা কী?’

‘ওটা কিংবদন্তীর একটা অংশ: যে বিল ফাস্টের ভূতকে দেখে সে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। লোকে বলে ওকে দেখলে আয়ু আর বেশি দিন বাকি থাকে না। ও শেষমেশ তাকে ধরতে আসে। কিন্তু এটা স্রেফ গল্প।’

মুসার দিকে চাইল মিশেল। তাক থেকে পুরানো এক স্ক্র্যাপবুক বের করে পাতা উল্টাল।

‘ক’ বছর আগে বিল ফাস্টের ভূত নিয়ে কাগজে ছোট্ট একটা খবর বেরিয়েছিল।’ ব্যাখ্যা করল মিশেল। ‘হ্যালোইনের জন্যে ছেপেছিল।’

হ্যালোইনের সময় বিল ফাস্টের কাহিনি শোনে না এমন কেউ রকি বীচে নেই। স্থানীয় কিংবদন্তী বলে, সার্জেণ্ট ফিল্ডে বিল ফাস্টের ভূত হানা দেয়, যে ছেলেটি ১৯৫২ সালের ৭ই জুন গাড়িচাপা পড়ে মারা যায়। কেউ কেউ বলে তারা ভূতটাকে দেখেছে। কিংবদন্তী বলে যারা ওকে দেখেছে তাদেরকে ভূতটা কিছুদিনের মধ্যেই অপহরণ করে। কাজেই সাবধান: তুমি যদি আজ রাতে বল পার্কের কাছে যাও, খেয়াল রেখো বাড়তি কোন ট্রিক-অর-ট্রিটার যেন তোমার দলে যোগ না দেয়!

এক টুকরো কাগজে বিল ফাস্টের দুর্ঘটনার তারিখটা লিখে নিল মুসা।