ভবতোষ ঠাকুর

ভবতোষ ঠাকুর

ভবতোষ সরকারের বয়স তিপ্পান্ন। উলুবেড়ের সবডেপুটি ছিলেন, তিন বছর হল চাকরি ছেড়েছেন। এখন কেবল পড়েন আর ভাবেন। নিঃসন্তান, স্ত্রী আছেন। কলকাতার ভাড়া বাড়িতে বাস করেন, পেনশন যা পান তাতে কোনও রকমে সংসার চলে।

সকাল আটটা। দোতলায় সিঁড়ির পাশে একটি ছোট ঘরে তক্তপোশে ছেঁড়া শতরঞ্জির উপর বসে ভবতোষ চোখ বুজে কি একটা ভাবছেন। তাঁর দুই ভক্ত জিতেন আর বিধু মেঝেতে মাদুরের উপর বসে আছে।

জিতেন বললেন, প্রভু, শুনেছেন?

ভবতোষের সাড়া নেই।

জিতেন। প্রভু, ও প্রভু, দয়া করে একবারটি শুনুন।

এবারে ভবতোষের হুঁশ হল। বললেন, আঃ! কেন খামকা প্রভু প্রভু করছ? আমি সামান্য মানুষ, কারও প্রভু নই। ফের যদি প্রভু বল তো সাড়া দেব না।

জিতেন। বুঝেছি। আচ্ছা ঠাকুর—

ভবতোষ। দেবতা আর নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণকেই ঠাকুর বলে। আবার রসুয়ে বামুন আর পশ্চিম অঞ্চলে নাপিতকেও ঠাকুর বলে। আমি কায়স্থসন্তান, ঠাকুর হতে পারি না।

হাত জোড় করে জিতেন বললে, প্রভু, কায়স্থরা তো ক্ষত্রিয়, জনক আর শ্রীকৃষ্ণের স্বজাতি। তাঁদের মতন আপনিও তত্ত্বকথা বলে থাকেন, আপনার ব্রাহ্মণ ভক্তও অনেক আছে। দয়া করে যদি পইতেটি নিয়ে ফেলেন আর মাথায় একটি শিখা রাখেন তবে আর সংকোচের কারণ থাকবে না।

ভবতোষ। দেখ জিতেন, হাজার বছর আগে হয়তো আমার পূর্বপুরুষরা পইতে ধারণ করতেন, কিন্তু পরে ব্রাহ্মণদের আজ্ঞায় তাঁরা ত্যাগ করেছিলেন। আমার ঠাকুরদার কাছে তাঁর ঠাকুরদার বর্ণনা শুনেছি—পরনে খাটো ধুতি, গায়ে মেরজাই, কাঁধে কোঁচানো চাদর, পায়ে নাগরা, মাথায় টিকি, কপালে ফোঁটা, আর মুখে ফারসী বুলি। আমার ঠাকুরদা অতি বুদ্ধিমান ছিলেন, মুরগি খেতে শিখে টিকি ফোঁটা আর ফারসী তিনটেই ত্যাগ করেন।

জিতেন। পাদরীদের পাল্লায় পড়েছিলেন বুঝি?

ভবতোষ। কারও পাল্লায় পড়বার লোক তিনি ছিলেন না।

বিধু বললে, ওহে জিতেন, ইনি পইতে আর টিকি নাইবা ধারণ করলেন, পুরুত ঠাকুর সাজলে এঁর মহত্ত্ব কিছুমাত্র বাড়বে না। আমি বলি কি, ইনি দাড়ি রাখুন, চুল বাড়তে দিন, গেরুয়া কাপড় পরুন, আর গোটা কতক মোটা মোটা রুদ্রাক্ষের মালা গলায় দিন। সাধু মহাত্মার এই হল লক্ষণ।

ভবতোষ মাথা নাড়লেন।

বিধু। আচ্ছা, দাড়ি, জটা, রুদ্রাক্ষ না হয় বাদ দিলেন। গোঁফটা কামিয়ে ফেলুন, গেরুয়া সিল্কের ধুতি পাঞ্জাবি পরুন, মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বাঁধুন, কিংবা কানঢাকা টুপি পরুন। তত্ত্বদর্শী স্বামী মহারাজদের বেশ ধারণ করুন।

ভবতোষ। আমি সাধু মহাত্মা নই, তত্ত্বদর্শীও নই। আমার সাজ যা আছে তাই থাকবে।

জিতেন। এইবারে বুঝেছি। মুক্তপুরুষদের পইতে টিকি জটা গেরুয়া রুদ্রাক্ষ কিছুই দরকার হয় না। কিন্তু আপনাকে তো নাম ধরে ডাকা চলবে না। সবাই আপনাকে ঠাকুর বলে, আমরাও তাই বলব। দোহাই, এতে আপত্তি করবেন না। বলছিলুম কি—আপনি তো জীবন্মুক্ত পুরুষ, গৃহে বাস করলেও সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী, আপনার মুখের একটু কথা শোনবার জন্যে জজ ব্যরিস্টার ডাক্তার প্রফেসর মেয়ে পুরুষ সবাই লালায়িত। সবাই জানতে চায়—ইনি কি ব্রহ্মজ্ঞানী পণ্ডিত, না যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ ? পরমহংস না শুধুই পরম ভক্ত? ভগবানের অংশাবতার, না ষোল আনা ভগবান? কি বলব ঠাকুর?

ভবতোষ। বলবে, ইনি একজন রিটায়ার্ড সবডেপুটি।

এই সময় ভবতোষের বাল্যবন্ধু নিখিল বাঁড়ুজ্যে এলেন। বললেন, কি হে ভবতোষ, কি রকম চলছে? বিস্তর ভক্ত জুটিয়েছ শুনছি, সুবিধে কিছু করতে পারলে?

ভবতোষ। নাঃ। যদি কোথাও একটা নিরিবিলি গুহা পাই তো পালিয়ে গিয়ে সেখানে ঢুকব।

নিখিল। পালাবে কেন? রামকৃষ্ণদেব তো ভক্তপরিবৃত হয়ে সুখে বাস করতেন।

ভবতোষ। তিনি পরমহংস ছিলেন, তাঁর মতন ধৈর্য কোথায় পাব। তবে তিনিও মাঝে মাঝে উত্যক্ত হয়ে শালা বলে ফেলতেন।

জিতেন। নির্জন আশ্রমের অভাব কি ঠাকুর? আপনি একবারটি হাঁ বলুন, আপনার ভক্তরা বরানগরে বা কাশীতে বা রাঁচিতে চমৎকার আশ্রম বানিয়ে দেবে।

নিখিল। রাজী হয়ে যাও হে, তিন জায়গাতেই আশ্রম করাও। দু—চারটে গেস্ট রুম রেখো। আমরাও মাঝে মাঝে গিয়ে থাকব। এমন সুবিধে ছেড়ো না ভবতোষ।

জিতেন। দেখুন নিখিলবাবু, আপনি ঠাকুরকে নাম ধরে ডাকবেন না, তুমিও বলবেন না, তাতে আমরা বড় ব্যথা পাই।

নিখিল। বেশ বেশ, আমিও এখন থেকে ঠাকুর আর আপনি বলব। কিন্তু যখন আর কেউ থাকবে না, তখন নাম ধরেই ডাকব। কি বলেন ঠাকুর?

ভবতোষ। হ্যাঁ হ্যাঁ।

প্রাতঃকালীন ভক্তসমাগম কি রকম হয়েছে দেখবার জন্য জিতেন আর বিধু নীচে নেমে গেল।

নিখিল বললেন, আচ্ছা ভবতোষ, তুমি তো বলতে যে কর্মযোগই শ্রেষ্ঠ যোগ, লোকসংগ্রহ অর্থাৎ লোকচরিত্রের উন্নতি সাধনই শ্রেষ্ঠ কর্ম। তবে এখন নির্জনে থাকতে চাচ্ছ কেন? শুধু নিজের মুক্তির জন্যে লুকিয়ে তপস্যা, আর নিজের পেট ভরাবার জন্য লুকিয়ে খাওয়া দুটোই তো স্বার্থপরতা।

ভবতোষ। আমি অক্ষম দুর্বল, বক্তৃতা দিতে পারি না, ধর্মপ্রচার করতে পারি না, কীর্তন গাওয়া আসে না, লোকশিক্ষার পদ্ধতিও জানি না। বুদ্ধ যিশু শংকর চৈতন্য রামমোহন রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ গান্ধী—এঁদের শক্তির কণামাত্র আমার নেই, তাই শুধু আত্মচিন্তা করি। কেউ যদি আমার কাছে কিছু জানতে চায় তো যথাবুদ্ধি বলি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, সত্য কথা শুনতে কেউ চায় না, সবাই স্বার্থসিদ্ধির সোজা উপায় বা অলৌকিক শক্তি খোঁজে।

জিতেন ফিরে এসে বললে, ঠাকুর, আজ বেশী লোক আসে নি, সবাই ভোট দিতে গেছে কিনা। চার—পাঁচ জন লোক নীচে দর্শনের জন্যে অপেক্ষা করছে।

নিখিল। কি রকম লোক জিতেনবাবু?

জিতেন। সেই গীতায় যেমন চতুর্বিধা ভজন্তে মাং আছে—আর্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী আর জ্ঞানী।

ভবতোষ। জ্ঞানীদের চলে যেতে বল, তাদের যখন জ্ঞান আছেই তবে আবার এখানে কেন। অর্থার্থীদেরও বলে দাও আমার অর্থ দেবার সামর্থ্য নেই। আর যারা এসেছে একে একে পাঠিয়ে দাও।

জিতেন বেরিয়ে গেলে নিখিল প্রশ্ন করলেন, একে একে পাঠাতে বললে কেন? ও তো বিলিতী কায়দায় ইন্টারভিউ। ভক্তের দল মহাপুরুষকে সর্বদা ঘিরে থাকবে এই তো চিরকেলে দস্তুর।

ভবতোষ। যারা দেখা করতে আসে তাদের সকলের মতিগতি তো সমান নয়, যে যেমন তাকে সেই রকম উত্তর দিতে হয়। বুদ্ধি—ভেদ করতে গীতায় নিষেধ আছে।

প্রথমে এলেন মাধব ধর। ইনি একজন জিজ্ঞাসু। ধর মশায় ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে করজোড়ে বললেন, ঠাকুর, আপনার কৃপায় আমার অভাব কিছু নেই, ব্যবসা ভালই চলছে, বাড়ির সবাই ভালই আছে। শুধু একটা সমস্যা সমাধানের জন্যে আপনার কাছে এসেছি।

ভবতোষ। আপনার অভাব কিছু নেই শুনে বড় আনন্দ হল ধর মশায়, আপনি ভাগ্যবান লোক। আপনার সমস্যাটি কি তা বলুন।

মাধব হেঁ হেঁ , আমাকে মশায় বলবেন না, আমি আপনার দাসানুদাস। সমস্যাটা হচ্ছে—ঠিকুজিতে আমার পরমাই লেখা আছে পঁচানব্বই বছর, এখন সবে ষাট চলছে। কিন্তু সেদিন তারাদাস জ্যোতিষী হাত দেখে বললেন, পঁচাত্তরেই মৃত্যুযোগ। ধরুন যদি পঁচাত্তরেই মারা যাই তবে বাকী বিশ বছরের কি হবে? কোষ্ঠী আর কররেখা কোনওটা তো মিথ্যে হতে পারে না।

ভবতোষ। ওহে নিখিল, তুমি তো একজন বড় অ্যাকাউণ্টাণ্ট, ধর মশায়ের প্রশ্নটির জবাব তুমিই দাও।

নিখিল। নিশ্চিন্ত থাকুন ধর মশায়, বাকী বিশ বছর পরজন্মে ক্যারেড ফরোআর্ড হবে। প্রিভিলেজ লীভ আর পরমায়ু পচে যায় না।

ধর মশায় ভাবতে ভাবতে প্রস্থান করলেন। শ্রীপতি রায় ঘরে এলেন।

ভবতোষ। আসুন শ্রীপতিবাবু। আজ আবার কি মনে করে? আমি নিতান্ত অকিঞ্চন তা তো সেদিন বলেই দিয়েছি। আমার কাছে কিছু প্রত্যাশা করবেন না।

শ্রীপতি। হেঁ হেঁ, আমাকে শ্রীপতিবাবু বলবেন না, শুধু শ্রীপতি বা ছিরু। বয়সে আপনার চাইতে কিছু বড় হলেও আমি আপনার দাসানুদাস। বড় দুর্ভাবনায় পড়ে আপনার কাছে এসেছি।

ভবতোষ। বলে ফেলুন।

শ্রীপতি। আপনার আশীর্বাদে আমার সাত ছেলে, তিন মেয়ে, তা ছাড়া গিন্নী আছেন। আমার বয়স পঁয়ষট্টি হল, ব্লাড প্রেশার ডায়াবিটিস বাত সবই আছে, কোন দিন মরব কিছুই ঠিক নেই। গিন্নীর বুদ্ধি—শুদ্ধি নেই, সাত ছেলের একটাও মানুষ হল না, তিনটে মেয়ে প্রেম করতে গিয়ে তিন ব্যাটা ওআর্থলেস বর জুটিয়েছে। তাই এমন ব্যবস্থা করে দিতে চাই যাতে আমার অবর্তমানে এদের কোনও অভাব না থাকে।

ভবতোষ। আপনার ভাবনা কি, শুনতে পাই আপনি কোটিপতি। অ্যাটর্নিকে বলুন, তিনিই ব্যবস্থা করে দেবেন।

শ্রীপতি। কি জানেন, সাত ছেলের প্রত্যেককে দশ লাখ দিতে চাই, তিন মেয়ে আর গিন্নীকে সাত সাত লাখ। তার কমে এই মাগগি গণ্ডার দিনে চলতেই পারে না। তা ছাড়া মানত করেছি আপনার জন্যে একটি ভাল আশ্রম আর দেবমন্দির বানিয়ে দেব, তাতেও লাখ দুই লাগবে। একুনে দরকার এক ক্রোর, কিন্তু আমার পুঁজি মোটে পঁচাশি লাখ। আরও পনরো লাখ না হলে চলবে না, তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।

ভবতোষ। আপনি বিচক্ষণ ব্যবসায়ী হয়েও বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে পনরো লাখ পাইয়ে দিতে পারি?

শ্রীপতি। বিশ্বাস করি বই কি ঠাকুর। আমার ব্যবসা—বুদ্ধিতে যা হয় না আপনার দৈব শক্তিতে তা নিশ্চয় হবে।

ভবতোষ পিছন ফিরে চোখ বুজে অন্যমনস্ক হয়ে রইলেন। শ্রীপতি বললেন, কি মুশকিল, ঠাকুর সমাধিস্থ হলেন দেখছি। আমার আবার তাড়া আছে, দলবল নিয়ে পোলিং স্টেশনে যেতে হবে। আচ্ছা নিখিলবাবু , আপনি তো ঠাকুরের অন্তরঙ্গ, শ্রীগৌরাঙ্গের যেমন নিত্যানন্দ। আপনিই দয়া করে আমার জন্যে ঠাকুরকে একটু ধরুন না।

নিখিল। দেখুন মশায়, কেউ যখন বড় ডাক্তারকে কনসল্ট করতে আসে তখন প্রথমেই জানায় আগে কি রকম চিকিৎসা হয়েছিল, কোন কোন ডাক্তার দেখেছিল কি কি ওষুধ খেয়েছিল। আগে আপনার কেস হিস্টরি অর্থাৎ পূর্বের ক্রিয়াকলাপ খোলসা করে জানাতে হবে। কালোবাজার, পারমিট, কনট্রাক্ট, চাল চিনি কাপড় সরবরাহ, ভেজাল ঘি তেল ওষুধের ব্যবসা—এসব চেষ্টা করে দেখেছেন কি?

শ্রীপতি। সবই দেখেছি দাদা, কিন্তু তেমন সুবিধে করতে পারি নি। হাজার হোক আমি বাঙালীর সন্তান, ধর্মজ্ঞান আছে, কালচার আছে, টুপি—পাগড়িধারীদের মতন বেপরোয়া ব্যবসাবুদ্ধি নেই।

নিখিল। ফটকা বাজার, লটারি, রেস—এসব চেষ্টা করে দেখেছেন?

শ্রীপতি। ওসবেও কিছু হয় নি। তিনজন রাজজ্যোতিষীর কাছে টিপস নিয়েছি, শনি মন্দিরে পূজো দিয়েছি, বগলামুখী কবচ আর ধূমাবতী মাদুলি ধারণ করেছি, রক্তমুখী নীলার আংটিও পরেছি। কিছুই হল না, শুধু বিস্তর টাকা গচ্চা গেল। সব ব্যাটা ঠক জোচ্চোর।

নিখিল। তাই তো রায় মশায়, কিছুই বাকী রাখেন নি দেখছি। আচ্ছা, সোনা করবার চেষ্টা করেছেন?

শ্রীপতি রায় সোৎসাহে বললেন, এইবার কাজের কথা বলেছেন নিখিলবাবু। ঠাকুর জানেন নাকি সোনা করতে?

নিখিল। ঠাকুর সবই জানেন, কিন্তু কিছু করবেন না। পরমহংসদেবের মতন ইনিও বলেন—টাকা মাটি, মাটি টাকা। সোনা তৈরি হল বিজ্ঞানীর কাজ, পরমাণু চুরমার করে আবার গড়তে হয়। আপনি ডক্টর বাঞ্ছারাম মহাপাত্রকে ধরুন। তিনি আমেরিকা থেকে সোনা তৈরি শিখে এসেছেন, কিন্তু ল্যাবরেটরির অভাবে কিছু করতে পারছেন না। আপনি লাখ পাঁচ—ছয় খরচ করে ল্যাবরেটরি বানিয়ে দিন, তিনি আপনার বাঞ্ছা পূর্ণ করবেন।

শ্রীপতি। তিনি কিছু সোনা করে নিলেই তো তাঁর টাকার যোগাড় হয়।

নিখিল। আপনি যে উলটো কথা বলছেন মশায়। আগে গরু তার পর দুধ, আগে ল্যাবরেটরি তবে তো সোনা।

শ্রীপতি রেগে গিয়ে বললেন, ও—সব ধাপ্পাবাজিতে ভোলবার লোক আমি নই। আপনাদের সেরেফ বুজরুকি।

নিখিল। ঠিক ধরেছেন শ্রীপতিবাবু। আচ্ছা, এখন আসুন, নমস্কার।

জিতেন আর বিধুর সঙ্গে অজয় ঘোষাল আর তার স্ত্রী সুভদ্রা এল, দুজনেরই বয়স কম। এরা পাশের বাড়িতে থাকে। ভবতোষের পায়ের উপর আছড়ে পড়ে সুভদ্রা বললে, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনুন বাবা, তাকে হারিয়ে আমি কি করে বাঁচব?

বিধু চুপিচুপি ভবতোষকে বললে, এঁদের একমাত্র ছেলেটি টাইফয়েডে ভুগে কাল মারা গেছে।

ভবতোষ বললেন, স্থির হয়ে ব’স মা, আমার পা ছাড়। চোখে মুখে একটু জল দাও,—বিধু, শিগগির একটু জল আন। আগে একটু শান্ত হও, নইলে আমার কথা বুঝতে পারবে কেন।

সুভদ্রা। আমার তিন বছরের খোকা, পদ্মফুলের মতন ছেলে, কোথায় গেল বাবা?

ভবতোষ। মা, তোমার নিষ্পাপ খোকা ভগবানের কোলে সুখে আছে। স্বর্গে গিয়ে কিংবা পরজন্মে তুমি তাকে ফিরে পাবে।

সুভদ্রা। ভগবান কেন তাকে নিলেন? তার খেলনা যে চারদিকে ছড়ানো রয়েছে, তার হাসি কান্না আবদার কি করে ভুলব বাবা, এই শোক কি করে সইব?

ভবতোষ। মহা মহা দুঃখও ক্রমশ সয়ে যায়, তুমিও সইতে পারবে। ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন—একথা বিশ্বাস কর তো?

সুভদ্রা। না বাবা, করি না। এই সর্বনাশ করে ভগবান আমার কি মঙ্গল করলেন? এত সব বুড়ো বুড়ী রয়েছে, তাদের ছেড়ে আমার খোকাকে নিলেন কেন?

ভবতোষ। ভগবান কেন কি করেন তা বোঝা তো আমাদের সাধ্য নয়। পূর্বজন্মের কর্মফলে লোকে ইহজন্মে সুখ দুঃখ ভোগ করে—একথা বিশ্বাস কর তো?

সুভদ্রা। পূর্বজন্মের কথা জানি না বাবা। কার পাপের ফলে আমার খোকা অকালে গেল? তার নিজের পাপ, না তার বাপের না আমার? দয়াময় ভগবান আমাদের পাপ করতে দিয়েছিলেন কেন? ঢের বড় বড় পাপীকে তো তিনি সুখে রেখেছেন।

ভবতোষ। মা এখন তুমি বড় ব্যাকুল হয়ে আছ, পাপ পুণ্য কর্মফল এসব কথা এখন থাক, আগে তুমি একটু স্থির হও। তোমার মনে ভক্তি আছে?

সুভদ্রা। ভক্তি তো ছিল বাবা, এখন যে হতাশ হয়ে গেছি। যিনি আমার ছেলেকে কেড়ে নিলেন তাঁকে কি করে ভক্তি করব?

ভবতোষ। আচ্ছা, সে কথা পরে হবে, এখন শুধু মন শান্ত কর। যত পার জপ কর, স্তব পাঠ কর।

সুভদ্রা। কি জপ করব? কি স্তব করব, বলে দিন বাবা।

ভবতোষ। যা তোমার ভাল লাগে—হরিনাম, শিবনাম, দুর্গানাম, সত্যং শিবসুন্দরম। এই স্তবমালা বইখানি নিয়ে যাও, যে স্তব তোমার পছন্দ হয় আবৃত্তি ক’রো। ভগবানকে ব’লো—’দুঃখ—তাপে ব্যথিত চিতে নাই বা দিলে সান্ত্বনা, দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’

সুভদ্রা। আবার কবে আসব বাবা?

ভবতোষ। তুমি ব্যস্ত হয়ো না, আমি তোমাকে ডেকে পাঠাব।

সুভদ্রার ছোট ভাই বাইরে অপেক্ষা করছিল, সে তার দিদিকে নিয়ে চলে গেল।

সুভদ্রার স্বামী অজয় বললে, আমার ব্যবস্থা কি করবেন ঠাকুর?

ভবতোষ। তোমার স্ত্রী আর তোমার একই ব্যবস্থা। তুমি পুরুষ মানুষ, সহজেই শোক দমন করতে পারবে, স্ত্রীকেও সান্ত্বনা দেবে। ওঁকে নিয়ে দিনকতক তীর্থভ্রমণ করে এস।

অজয়। ঠাকুর এত শোকের মধ্যেও আপনার কাছে স্বীকার করছি—আমি বড় অবিশ্বাসী, দয়াময় ভগবানে আমার আস্থা নেই। সুভদ্রাকে যা বললেন, তাতে আমি শান্তি পাব না।

নিখিল। আপনাদের কথার মধ্যে আমি কথা বলছি, অপরাধ নেবেন না ঠাকুর। এই অজয়কে আমি খুব জানি, এর অহেতুকী ভক্তি হবে এমন মনে হয় না। কর্মফল, জন্মান্তর, পরলোকে পুনর্মিলন, মঙ্গলময় ঈশ্বর—ইত্যাদি মামুলী প্রবোধবাক্যে অজয় সান্ত্বনা পাবে না। তোতা পাখির মতন স্তবপাঠেও এর কিছু হবে না।

ভবতোষ। দু—চার দিন যাক, এরা দুজনে একটু শান্ত হোক, তারপর আমি যথাসাধ্য প্রবোধ দেবার চেষ্টা করব।

নিখিল। ঠাকুর, আর একটা কথা নিবেদন করি। অজয়ের স্ত্রী বড়ই কাতর হয়েছে। সে যদি একটি বালগোপালের মূর্তি গড়িয়ে তার সেবা করে, তবে কেমন হয়? সন্তানহারা অনেক স্ত্রী এতে ভুলে থাকে দেখেছি। তাদের ধারণা হয়, শিশুকৃষ্ণের সেই বিগ্রহেই নিজের সন্তান লীন হয়ে আছে।

অজয়। না না নিখিলবাবু, ওসব চলবে না। সুভদ্রার আবার সন্তান হতে পারে, এখনকার শোকও ক্রমশ কমে যাবে, তখন ওই বালগোপাল একটি বোঝা হয়ে পড়বেন, লোকলজ্জায় তাঁকে ফেলাও চলবে না। যন্ত্রণা কমাবার জন্য এক—আধবার মরফীন দেওয়া চলে, কিন্তু একটি মানুষকে চিরকাল নেশাখোর করে রাখা কি উচিত?

ভবতোষ। অজয়ের কথা খুব ঠিক। নিখিল যা বললে তা ক্ষেত্রবিশেষে চলতে পারে, যেখানে শোক সইবার শক্তি নেই, যুক্তি বোঝবার মতন বুদ্ধি নেই, অন্য সন্তানের সম্ভাবনাও নেই। সুভদ্রার ওপর কোনও ভার চাপানো উচিত নয়। এখন তাকে নানা রকমে অন্যমনস্ক আর প্রফুল্ল রাখবার চেষ্টা করতে হবে।

নিখিল। আচ্ছা, অজয়ের স্ত্রী যদি মন্ত্র নিয়ে পূজাঅর্চায় মগ্ন থাকে তো কেমন হয়?

অজয়। তাতেও আমার আপত্তি আছে। সেদিন এক বনেদী বড়লোকের বাড়ি গিয়েছিলাম। তাঁর বৈঠকখানায় তিনটি বড় বড় অয়েল পেণ্টিং আছে, প্রত্যেকটিতে একজন মহিলা সেজেগুজে আসনে বসে পূজো করছেন। সামনে সোনারুপোর হরেক রকম পূজোর বাসন ঝকমক করছে, নানা উপচার সাজানো রয়েছে, সন্দেশের ওপর পেস্তাটি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। তাঁদের দৃষ্টি বিগ্রহের দিকে নয়, আগন্তুকের দিকে। যেন বলছেন, সবাই দেখ গো, আমরা পূজো করছি। খোঁজ নিয়ে জানলাম, একটি ছবি গৃহস্বামীর স্ত্রীর, আর দুটি তাঁর স্বর্গতা মা আর ঠাকুমার। এঁদের পূজো একটা উপলক্ষ্য মাত্র, আসল উদ্দেশ্য আড়ম্বর, যেমন আজকালকার সর্বজনীন।

ভবতোষ। সকলেই লোক দেখানো পূজা করে না। সুভদ্রার যদি নিজের আগ্রহ হয় তবে সে মন্ত্র নিয়ে পূজো করুক, কিংবা বিনা আড়ম্বরে উপাসনা করুক, কিন্তু তার জন্যে তাকে হুকুম করা চলবে না। হুজুক থেকেও তাকে বাঁচাতে হবে। কালক্রমে অনেকের নিষ্ঠা কমে যায়, তবু তারা চক্ষুলজ্জায় ঠাট বজায় রাখে। আমি একজনকে জানতুম, তিনি অহিংসার ব্রত নিয়ে নিরামিষাশী হয়েছিলেন। সাধুপুরুষ বলে তাঁর খ্যাতি হল। কিন্তু তিনি লোভ দমন করতে পারেন নি, একদিন হোটেলে লুকিয়ে খেতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। নিখাকী মায়েরা বোধ হয় পুণ্যকর্ম ভেবেই উপবাস আরম্ভ করে, কিন্তু লোকের বাহবা শুনে শুনে তাদের কুবুদ্ধি হয় শেষটায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভক্তি বা নিষ্ঠার অভাব, সন্ধ্যা—আহ্নিক পূজা—অর্চনা না করা, আমিষ ভোজন, কোনওটাই অপরাধ নয়। অনুষ্ঠানহীন নাস্তিকদের মধ্যেও সাধুপুরুষ আছেন। যার ভাল লাগে, সে চিরজীবন একনিষ্ঠ হয়ে অনুষ্ঠান পালন করতে পারে। যদি ভাল না লাগে, তবে যেদিন খুশি ছেড়ে দিলেও কিছুমাত্র দোষ হয় না। কিন্তু নিষ্ঠা হারিয়ে লোক দেখানো অনুষ্ঠান পালন মহাপাপ। সুভদ্রাকে শান্ত করতে হবে, কিন্তু কোনও রকম বন্ধনে পড়ে তার বুদ্ধি যেন মোহগ্রস্ত না হয়।

অজয় । তবে তাকে জপ আর স্তব করতে বললেন কেন? ইংরিজী প্রবাদ আছে—ঘুম যদি না আসে, তবে ভেড়া গুনতে থাক। জপ আর স্তব করে মনে শান্তি আনাও সেইরকম নয় কি?

ভবতোষ। সেইরকম হলেই বা ক্ষতি কি। ওতে মন শান্ত হবার সম্ভাবনা আছে অথচ বাহ্য আড়ম্বর নেই। নিষ্ঠা না হলে বিনা চক্ষুলজ্জায় যেদিন ইচ্ছে ছেড়ে দেওয়া চলে।

অজয়। আপনি সুভদ্রাকে স্বর্গ পুনর্জন্ম কর্মফল মঙ্গলময় ভগবান—এইসব ছেলে ভুলনো কথা বললেন কেন ঠাকুর? আপনিও কি আধ্যাত্মিক মুষ্টিযোগে বিশ্বাস করেন?

ভবতোষ। দেখ অজয়, তুমি বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী যাই হও, একথা মান তো —তুমি আছ, আবার তোমার চাইতে বড়ও একটা কিছু আছে? সেই বড়কে বিশ্বপ্রকৃতি, ব্রহ্ম, অ্যাবসলিউট, মহা অজানা, যা খুশি বলতে পার। সেই বৃহৎ বস্তুর মধ্যে তুমি ডুবে আছ, তা থেকেই তোমার জন্মমৃত্যু সুখদুঃখ ভালমন্দর উৎপত্তি। এই বস্তু কি রকম তা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের অতীত, অথচ আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। বিজ্ঞানী দার্শনিক কবি আর ভক্ত সবাই কৌতূহলী, কিন্তু কেউ স্পষ্ট বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আর দার্শনিক শুধু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আর যুক্তিসিদ্ধ তথ্য খোঁজেন, যেটুকু জানতে পারেন তাতেই তুষ্ট হন, শিব বা অশিব, সুন্দর বা বীভৎস কিছুতেই তাঁদের পক্ষপাত নেই। কিন্তু কবি আর ভক্ত প্রমাণের অপেক্ষা রাখেন না, তাঁরা রস চান, ভাব চান, আনন্দ চান। এজন্য কল্পনা আর রূপকের আশ্রয় নিয়ে মানস বিগ্রহ রচনা করেন, সমগ্র বস্তুর ধারণা করতে না পারলেও খণ্ডে খণ্ডে অনুভব করেন, তবে দৈবাৎ কেউ কেউ পূর্ণানুভূতি পান। মিল্টন আর মধুসূদন পেগান ছিলেন না, তবু তাঁরা অমৃতভাষিণী বাগদেবীর আবাহন করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেশ আর দেশবাসীর ত্রুটি বিলক্ষণ জানতেন, তবু তাঁরা ঐশ্বর্যময়ী মাতৃভূমির বন্দনা করেছেন। Wordsworth বলছেন—Great God ! I would rather be a pagan, suckled in a creed outworn…ইত্যাদি। মঙ্গলময় ভগবান না হলে সাধারণ ভক্তের চলে না, কাজেই অমঙ্গলের কারণস্বরূপ তাকে কর্মফল, জন্মান্তর, অরিজিনাল সিন, ফ্রি উইল, শয়তান, কলি ইত্যাদি মানতে হয়। ভক্ত কবি অমঙ্গলের কারণ খোঁজেন না, যেটুকু মঙ্গল পান তাতেই কৃতার্থ হন। তিনি দেখেন—’আছে আছে প্রেম ধূলায় ধূলায়, আনন্দ আছে নিখিলে।’ তিনি বলেন—’এ জীবনে পাওয়াটারই সীমাহীন মূল্য, মরণে হারানোটা তো নহে তার তুল্য।’

অজয়। আমার উপায় কি হবে ঠাকুর? আমি বিজ্ঞানী নই, দার্শনিক নই, কবি নই, ভক্ত নই, কোনও রকম make-believe এও রুচি নেই।

ভবতোষ। মাথা ঠাণ্ডা করে বুদ্ধি খাটাও, বুদ্ধৌ শরণমম্বিচ্ছ। এদেশের জ্ঞানীরা একদেশদর্শী নন, তাঁরা অত্যন্ত realist, মঙ্গল অমঙ্গল দুই শিরোধার্য করেছেন, বিরোধ মেটাবার প্রয়োজনই বোধ করেন নি। বলেছেন—ভয়ানাং ভয়ং ভীষণং ভীষণানাং; আবার পরেই বলেছেন—গতিঃ প্রাণিনাং পাবনং পাবনানাম। জগতে নিত্য কত লোক মরছে, প্রতি নিমেষে কোটি কোটি জীব ধ্বংস হচ্ছে, কত লোকের সর্বনাশ হচ্ছে, তা দেখেও আমরা বিধাতার দোষ দিই না, অমঙ্গলের কারণ খুঁজি না, জগতের বিধান বলেই মেনে নিয়ে স্বচ্ছন্দে হেসে খেলে বেড়াই। কিন্তু যেমনি নিজে আঘাত পাই অমনি আর্তনাদ করে বলি—ভগবান, একি করলে, আমাকে মারলে কেন? গীতায় বিশ্বরূপের যে বর্ণনা আছে, তা ভয়ংকর, কিন্তু তা ধ্যান করলে মনের ক্ষুদ্রতা কমে। দার্শনিক Santayana লিখেছেন,— The truth is cruel, but it can be loved, and it makes free those who have loved it.

অজয়। আপনার কথা ভাল বুঝতে পারছি না ঠাকুর।

ভবতোষ। ক্রমশ বুঝতে পারবে। সকলের দুঃখ বোঝবার চেষ্টা কর, তোমার দুঃখ কমবে; সকলের সুখে সুখী হও, তোমার সুখ বাড়বে।

অজয় চলে গেল। একটু পরে নিখিল বিদায় নিলেন, তাঁর পিছনে জিতেন আর বিধুও নীচে নেমে এল।

নিখিল বললেন, কি হল জিতেনবাবু, আপনারা বড্ড যেন মুষড়ে গেছেন মনে হচ্ছে।

জিতেন। আরে ছি ছি, এমন করলে কি প্রতিষ্ঠা হয়, না মানুষের শ্রদ্ধা পাওয়া যায়? প্রেম, ভক্তি, ভগবানের লীলা এই সবের ব্যাখ্যান করতে হয়, কর্মফল জন্মান্তর পরলোকতত্ত্ব বোঝাতে হয়, কিছু কিছু বিভূতি আর দৈবশক্তি দেখাতে হয়, মিষ্টি মিষ্টি বচন বলতে হয়, তবে না ভক্তরা খুশী হবে। চেতলার গোলক ঠাকুর সেদিন কি সুন্দর একটা কথা বললেন ‘মানুষ কি রকম জানিস? মাছির মা আর ফানুসের—নুষ। তোরা মাছির মতন আঁস্তাকুড়ে ভনভন করবি, না ফানুষ হয়ে ওপরে উঠবি?’ কথাটি শুনে সবাই মোহিত হয়ে গেল। আর আমাদের ঠাকুরটির শুধু কটমটে আবোল—তাবোল বাক্যি, যেন জিয়মেট্রি পড়াচ্ছেন। শ্রীপতি রায় ভীষণ রেগে গেছেন, ঠাকুর তাঁকে গ্রাহ্যই করলেন না। তিনি ধনী মানী লোক, ক্যাডিলাক গাড়িতে এসেছিলেন, তাঁর অপমান করা কি উচিত হয়েছে? আমরা যতই ঠাকুরকে উঁচুতে তোলবার চেষ্টা করছি ততই উনি নেমে যাচ্ছেন।

নিখিল। যা বলেছেন। দেখুন জিতেনবাবু, সৈয়দ মুজতবা আলি সাহেবের লেখায় একটি ফারসী বয়েতে পড়েছি, তার মানে হচ্ছে—পীর ওড়েন না, তাঁর চেলারাই তাঁকে ওড়ান। ভবতোষ ঠাকুরকে ওড়াবার জন্যে আপনারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, কিন্তু উনি মাটি কামড়ে আছেন, কিছুতেই উড়বেন না। ওঁর আশা ছেড়ে দিন।

জিতেন। এর চাইতে উনি যদি মৌনী হয়ে থাকতেন কিংবা হিমালয়ে গিয়ে তপস্যা করতেন, তাও ভাল হত। আমাদের মাঠাকরুনটি অতি বুদ্ধিমতী, তাঁকে ঠাকুরের প্রতিনিধি করে আমরা একটি চমৎকার সংঘ খাড়া করতে পারতুম।

১৩৬০ (১৯৫৩)