ব্যাংক ডাকাত

ব্যাংক ডাকাত

দেয়াল টপকে সাবধানে ভিতরে নামল কাসেম, চোখে ইনফ্রারেড চশমা লাগানো, অন্ধকারেও সে বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। যে রবোটটা পাহারায় আছে তার হাতে নাকি কয়েক ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকে। হঠাৎ করে তার হাতে ধরা পড়তে চায় না। কয়েক মুহূর্ত সে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কোথাও কোনো শব্দ নেই, মনে হয় কেউ তাকে লক্ষ করে নি। কাসেম সাবধানে তার ছোট রেডিওটা বের করে, প্রথমে পুরো ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জটা পরীক্ষা করে নেয়, চল্লিশ মেগাহার্টজের কাছে একটা ভোতা শব্দ শুনতে পেল– সম্ভবত পাহারাদার রবোটটা এই ফ্রিকোয়েন্সিটাই ব্যবহার করছে, কাসেম নব ঘুরিয়ে একটা নিরাপদ ফ্রিকোয়েন্সি বের করে ফিসফিস করে ডাকল, বদি–

দেয়ালের অন্য পাশে বেশ কিছু দূরে একটা গাছের আড়ালে বদি দাঁড়িয়ে ছিল, সে ফিসফিস করে বলল, কী খবর ওস্তাদ? সব ঠিকঠাক?

হ্যাঁ। আগে যন্ত্রপাতি পাঠা—

পাঠাচ্ছি।

কাসেমের কোমরে একটা শক্তিশালী অটোমেটিক রিভলবার ঝুলছে, টেফলন কোটেড বুলেট, এক গুলিতেই বড় জখম করে দিতে পারে। তবু ভারি অস্ত্র হাতে না আসা পর্যন্ত সে স্বস্তি পাচ্ছে না। এই ব্যাংকটার পাহারায় যে রবোটটা রয়েছে সেটি নাকি বিশেষ উন্নত শ্রেণীর, লেজার লক না করে তাকে কাবু করা শক্ত।

বদি বাইরে থেকে নাইলনের কর্ডে করে ভারি অস্ত্রগুলো বেঁধে দিল, কাসেম ভিতরে দাঁড়িয়ে সাবধানে সেগুলো ভিতরে টেনে আনতে থাকে। অস্ত্রের পর প্রাষ্টিক এক্সপ্লোসিভ এবং যন্ত্রপাতির বাক্স। কাসেম দক্ষ হাতে অস্ত্রগুলো বের করে সাজিয়ে নেয়, এখন মোটামুটি সবকিছু হাতের কাছে আছে, হঠাৎ করে ধরা পড়ার ভয় নেই। কাসেম তার ইনফ্রারেড চশমায় চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে তার রেডিওতে মুখ লাগিয়ে নিচু গলায় বলল, বদি

কী হল?

ভিতরে চলে আয় এখন। সব ক্লিয়ার।

ঠিক আছে।

দুই মিনিট পরে বদিও ঝুপ করে কাসেমের পাশে এসে নেমে পড়ল। তার সারা শরীরে কালো পোশাক, ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে হঠাৎ করে দেখা যায় না। হাঁটুতে বেঁধে রাখা রিভলবারটা খুলে হাতে নিতে নিতে বলল, শালার রবোটটাকে নিয়ে ভয়।

কাসেম নিচু গলায় বলল, কোনো ভয় নাই। প্রথম ধাক্কায় যদি ধরা না পড়িস তাহলে কোনো ভয় নাই। মোশান ডিটেক্টরগুলো ছড়িয়ে দিতে থাক, আমি আছি।

বদি ঘাড়ে–ঝোলানো প্যাকেট থেকে ছোট ছোট মোশান ডিটেক্টরগুলো বের করে চারপাশে ছড়িয়ে দিতে থাকে। দশ মিটার রেঞ্জের মোশান ডিটেক্টর, আশপাশে কোনোকিছু নড়লেই তাদের সতর্ক করে দেবে।

কাসেম কানে হেডফোন লাগিয়ে মোশান ডিটেক্টরগুলোর সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে নেয়, অযথা প্রতিটি ঘাসফড়িংকে খুঁজে বের করে সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। পাহারাদার রবোটটা হঠাৎ করে হাজির না হলেই হল।

বদি বাক্স খুলে যন্ত্রপাতি বের করতে করতে বলল, এইসব যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের আগে মানুষ ব্যাংক ডাকাতি করত কীভাবে?

কাসেম অন্ধকারে দাঁত বের করে হেসে বলল, আগের যুগের মানুষের বুকের পাটা ছিল। বন্দুক নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে যেত, বলত টাকা দাও নইলে গুলি!

সর্বনাশ! ধরা পড়লে?

ধরা পড়লেও গুলি। যদি গুলি না খেয়ে ধরা পড়ে তাহলে চোখ বন্ধ করে আট বছর।

কী সর্বনাশ!

তবে অনেক ওস্তাদ লোক ছিল। কায়দা করে গয়নার দোকান সাফ করে দিত, ব্যাংক লোপাট করে দিত। সেই যুগের মানুষের মাথায় মালপানি ছিল।

বদি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ বের করতে করতে বলল, আমরাই খারাপ কী? মাসে একটা করে দাও মারছি!

কাসেম তার ইনফ্রারেড চশমা দিয়ে দরজাটা পরীক্ষা করতে করতে বলল, কিসের সাথে কিসের তুলনা। আমি যার কাছে কাজ শিখেছি তার নাম লোকমান ওস্তাদ। তার তুলনায় তুই হচ্ছিস গাধা।

কাসেমের কথায় বদি একটু অসন্তুষ্ট হলেও সে কিছু বলল না। সে এখন কাসেমের কাছে কাজকর্ম শিখছে, যন্ত্রপাতি ব্যবহার শিখে গেলে নিজের দল খুলবে, যতদিন সেটা না হচ্ছে কাসেমের হেনস্থা একটু সহ্য করতেই হবে। বড় একটা দাও মারতে পারলে যন্ত্রপাতির খরচটা উঠে আসবে, সে আশায় কাসেমের সাথে সাথে আজকের অপারেশনটাতে এসেছে।

কাসেম ম্যাগনেটিক ফ্লিপার দিয়ে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে দরজার কজা খুঁজে বের করতে থাকে, সেখানে পরিমাণ মতো প্রাষ্টিক এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল, বদি

কী হল ওস্তাদ?

ডাক্ট টেপ দে দেখি।

কেন?

এক্সপ্লোসিভটা ঢেকে দিই। ভাইব্রেশানে পড়ে না যায়।

অন্ধকারে বদি কাসেমের হাতে একটা রোল ধরিয়ে দিতেই কাসেম ধমক দিয়ে বলল, এটা কী দিচ্ছিস?

ডাক্ট টেপ।

এটা কি ডাক্ট টেপ হল নাকি গাধা? এটা হচ্ছে ডাবল স্টিকি। তোর মাথায় কি ঘিলু নেই? নাকি যা আছে তা হাঁটুতে?

বদি গালি খেয়ে একটু সঙ্কুচিত হয়ে গেল, ভাগ্যিস আশপাশে কেউ নেই। কাসেমের কথা বলার ধরন খুব খারাপ, নেহাত কাজকর্ম জানে বলে গালমন্দ খেয়েও কোনোভাবে টিকে আছে। একজন মানুষকে বলা তার মস্তিষ্ক হচ্ছে হাঁটুতে– কী পরিমাণ অপমানজনক কথা সেটা কখনো ভেবে দেখেছে?

কাসেম উপর থেকে বলল, ড্রিলটা দে দেখি।

বদি ড্রিলটা এগিয়ে দেয়।

কোন বিট লাগিয়েছিস? ছয় নম্বরতা?

জি। ছয় নম্বর।

ড্রিলটা চালু করেই কাসেম খেঁকিয়ে উঠল, গাধার বাচ্চা গাধা, এটা ছয় নম্বর বিট হল? তোর ঘিলু আসলেই হাঁটুতে–

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ড্রিলের বিট পাল্টাতে পাল্টাতে হঠাৎ বদি শঙ্কিত গলায় বলল, ওস্তাদ!

কী হল?

বদি ফিসফিস করে বলল, মোশান ডিটেক্টরে মোশান ধরা পড়েছে। কেউ একজন আসছে–

কাসেম তার গলা থেকে ঝোলানো মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটা টেনে নেয়। চুরি ডাকাতির জন্যে এই জিনিসটির কোনো তুলনা হয় না। ছোট একটা এলাকায় মাইক্রোওয়েভ দিয়ে ভাসিয়ে দেয়া হয়। সেখানকার রবোট, কম্পিউটার কমিউনিকেশান মডিউল সবকিছু পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। কাসেম ইনফ্রারেড চশমায় চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটি হাতে নিয়ে প্রস্তুত থাকে।

তারা যে ব্যাংকের দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছে তার পিছন দিক দিয়ে রবোটটিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। হাতে একটা অটোমেটিক রাইফেল, সেটাকে লাঠির মতো ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আনছে। রবোটটির ভঙ্গিতে সতর্কতার এতটুকু চিহ্ন নেই। কাসেম রবোটটার দিকে তাকিয়ে থেকে জেমিং ডিভাইসটির বোম চেপে ধরে এবং সাথে সাথে রবোটটি পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে যায়। শুধু একটা হাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে।

বদি হাতে কিল দিয়ে বলল, ধরেছ সোনার চাঁদকে।

কাসেম দাঁত বের করে হেসে মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটাকে সশব্দে চুমু খেয়ে বলল, এই জিনিস না থাকলে আমাদের বিজনেস লাটে উঠত। যা বদি, দাঁড়িয়ে থাকিস না, রবোটের বাচ্চাকে ডিজআর্ম কর আগে।

বদি সাবধানে এগিয়ে গিয়ে রবোটটার হাত থেকে রাইফেলটা কেড়ে নিল। এতক্ষণে রবোটের হাতের কম্পন খানিকটা কমেছে কিন্তু এখনো সমস্ত শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছে এবং গলা দিয়ে মাঝে মাঝেই একটা বিচিত্র শব্দ বের হচ্ছে।

কাসেম দরজার উপর থেকে নেমে আসে, কাছাকাছি এসে পিঠে ঝোলানো শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা রবোটের দিকে তাক করে জেমিং ডিভাইসের সুইচ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সাথে সাথে রবোটটা নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল, সে ঘাড় ঘুরিয়ে দুজনকে দেখল এবং কণ্ঠস্বরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ফুটিয়ে নিয়ে বলল, শুভ সন্ধ্যায় আপনারা নিশ্চয়ই ব্যাংক ডাকাত।

কাসেম অস্ত্রটা সোজাসুজি তাক করে রেখে বলল, তুমি নিশ্চয়ই কোনো খবর পাঠানোর চেষ্টা করছ না? পুরো কমিউনিকেশান্স চ্যানেল জ্যাম করে রেখেছি।

রবোটটা খুশি খুশি গলায় বলল, সেটা আমিও লক্ষ করেছি।

তোমাকে এখন আমরা কাবাব বানিয়ে ছেড়ে দেব।

রবোটটি দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো এক ধরনের শব্দ করে বলল, তার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা ইতিমধ্যে আমার অস্ত্রটা নিয়ে নিয়েছেন, জ্যামিং ডিভাইস দিয়ে সবকিছু জ্যাম করে রেখেছেন এখন আমার মাঝে আর একটা কলাগাছের মাঝে বিশেষ পার্থক্য নেই।

না থাকুক–কাসেম এক হাতে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে খুব কায়দা করে ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে বলল, ডাকাতি লাইনের প্রথম কথাই হচ্ছে সাবধানের মার নেই। তোমাকে এক্ষুনি কাবাব বানিয়ে ছেড়ে দেব।

রবোটটি করুণ গলায় বলল, ছেড়ে দেন স্যার। অনেকদিনের রবোট, অনেক স্মৃতি জমা আছে সব শেষ হয়ে যাবে।

বদি নিচু গলায় বলল, ছেড়ে দেন ওস্তাদ! এত করে বলছে–

চুপ ব্যাটা গর্দভ–কাসেম রেগে গিয়ে বলল, তোর মাথার ঘিলু আসলেই হাঁটুতে। এই রকম একটা রবোটের মাঝে কী পরিমাণ কমিউনিকেশানের ব্যবস্থা আছে জানিস? ইচ্ছা করলে সারা দুনিয়াতে খবর পাঠিয়ে দিতে পারে।

রবোটটা বলল, সত্যি কথা স্যার। কিন্তু আপনারা তো সেটা করতে দিচ্ছেন না। আপনারা তো আমার সবকিছু জ্যাম করেই রেখেছেন–

ঘ্যান ঘ্যান কোরো না, চুপ কর। কাসেম সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বলল, তোমার সময় শেষ। যদি চাও তো খোদাকে ডাকতে পার।

রবোটটা অবশ্যি খোদাকে ডাকার কোনো চেষ্টা করল না, বেঢপ একটা ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে রইল

কাসেমের প্রথম গুলিতে রবোটের মাথাটা চূর্ণ হয়ে উড়ে গেল। সেটা কয়েকবার দুলে পড়তে পড়তে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মুণ্ডহীন একটা রবোটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা খুব বিচিত্র–বদির খুব অস্বস্তি হতে থাকে। সে গলা নামিয়ে বলল, এই শালা কি এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?

মনে হয়।

একেবারে শেষ কর দিলে হয় না?

শেষ তো হয়েই গেছে। ইচ্ছে হলে দে আরো বারটা বাজিয়ে।

বদি তার হাতের অস্ত্র নিয়ে আবার গুলি করল, রবোটের বুকের কাছাকাছি একটা অংশ প্রায় উড়ে বের হয়ে গেল। গুলির প্রচণ্ড আঘাতে রবোটটি তাল হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে থাকে। বদি তার মাঝে আবার গুলি করল এবং এবারে শরীরের অংশগুলো প্রায় আলাদা আলাদা হয়ে ছিটকে পড়ল। রবোটটি কীভাবে তৈরি হয়েছে কে জানে। তার শরীরের নানা অংশ নিচে পড়েও থরথর করে কাঁপতে থাকে। শুধু তাই নয়, একটা পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক জায়গায় লাফাতে থাকে।

বদি দৃশ্যটি দেখে হাসি থামাতে পারে না, কাসেমকে ডেকে বলল, ওস্তাদ! দেখেন, পায়ের কারবারটা দেখেন!

কাসেম সিগারেটটা নিচে ফেলে জুতো দিয়ে পিষে বলল, টিকটিকির লেজের মতো! কাটার পরেও তড়পাতে থাকে।

বদি একটু এগিয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন পা–টাকে কষে একটা লাথি দিল, পা–টা ছিটকে পড়ল দূরে এবং সেখানেও সেটা নড়তে লাগল। বদি সেদিকে তাকিয়ে আবার হাসতে শুরু করে। শুধু একটা পা হেঁটে বেড়াচ্ছে–দৃশ্যটি যে এত হাস্যকর সেটি নিজের চোখে দেখার আগে সে বুঝতে পারে নি।

ব্যাংকের শক্ত দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে তাদের এক ঘণ্টার মতো সময় লাগল। ভিতরে ভল্ট ভাঙতে আরো এক ঘণ্টা। টাকাগুলো বের করে যখন তারা তাদের ব্যাগে গুছিয়ে রাখছে তখন হঠাৎ করে টের পেল সমস্ত ব্যাংকটি পুলিশে ঘিরে ফেলেছে। উপরে। হেলিকপ্টার এবং দূরে সেনাবাহিনী তাদের দিকে মেশিনগান তাক করে রেখেছে। বদি ভাঙা গলায় বলল, কী হল ওস্তাদ?

কাসেম পিচিক করে থুতু ফেলে চাপা স্বরে একটা গালি দিয়ে বলল, খেল খতম।

.

কাসেম আর বদিকে যখন হাতকড়া পরানো হচ্ছে তখন হঠাৎ করে তারা রবোটের সেই ভাঙা পা–টিকে আবার দেখতে পেল। সেটা লাফিয়ে লাফিয়ে পুলিশ অফিসারের কাছে এসে বলল, এই যে মোটা মতন মানুষটাকে দেখছেন এটা হচ্ছে পালের গোদা। আর ওই যে শুটকো মতন মানুষটা তার নাম বদি, সে হচ্ছে চামচা

বদি হতচকিত হয়ে বিচ্ছিন্ন পা–টির দিকে তাকিয়ে রইল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, আরে! আরে! তাজ্জবের ব্যাপার–পা দেখি কথা বলে।

পা–টা আবার লাফিয়ে লাফিয়ে পুলিশ অফিসারকে বলল, মোটা মানুষটাকে যে দেখছেন তার মুখ খুব খারাপ। সারাক্ষণ এই চামচাকে গালিগালাজ করে–

বদি নিজেকে সামলাতে পারল না, প্রায় চিৎকার করে বলল, এই এই তুমি কথা বলছ কেমন করে?

পা–টা এবারে লাফিয়ে লাফিয়ে বদির কাছে এসে বলল, কেন সমস্যা কোথায়?

তু–তু–তুমি তো শুধু পা।

তাতে কী হয়েছে? আমি তো আর মানুষ না যে আমার মস্তিষ্ক থাকবে মাথায়। আমি হচ্ছি রবোট। আমার মস্তিষ্ক যেখানে জায়গা হয় সেখানেই রাখা যায়। আমার বেলায় রেখেছে পায়ে।

পায়ে?

শুদ্ধ করে বলতে পার হাঁটুতে। চোখও আছে আমার হাঁটুতে। শোনার জন্যে আছে মাইক্রোফোন আর কথা বলার জন্যে ছোট পিজিও স্পিকার। এই দেখ–

এই বলে পা–টি বদির সামনে ছোট ছোট লাফ দেয়া শুরু করে।

বদি চমকৃত হয়ে বলল, ওস্তাদ! দেখেছেন কী তাজ্জবের ব্যাপার? দেখেছেন। কারবারটা? দেখেছেন?

চুপ কর–কাসেম গর্জে উঠে বলল, চুপ কর গাধার বাচ্চা গাধা। মাথায় কি ঘিলু আছে? নাকি ঘিলুটা রয়েছে–

কাসেম কথাটা শেষ না করে হঠাৎ থেমে গেল। ফোঁস করে বড় একটা নিশ্বাস ফেলল সে।