নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

ব্যথিত পুরুষ

বড়ো দুঃখে থাকি আমি বড়ো দুঃখে রাত্রিদিন; বিষাদ আমাকে
মুখস্থ করায় বিষণ্নতা বেলা-অবেলায়, সারাক্ষণ পাঠে
কবরের ঘাস নড়ে, কাঁপে গুহার আঁধার, কখনও-বা
সমুদ্রের তল জেগে ওঠে কিংবা দীর্ঘ পথরেখা, জনহীন।
মুহূর্তে মুহূর্তে মরে বুনোহাঁস মগজে আমার, শক্ত হয়;
বড়ো দুঃখে থাকি আমি বড়ো দুঃখে রাত্রিদিন, ভীষণ একাকী।

একজন শীর্ণকায় ব্যথিত পুরুষ তার বুকের ভেতর থেকে পচা
মাখনের মতো জ্যোৎস্না বের করে সাবলীল আমার টেবিলে
সহসা রাখেন জমা। এই উপহার কী কাজে লাগবে ভেবে
আমি তো অন্যমনস্কার ঊর্ণাজালে রইলাম ঝুলে শুধু।
এই উপহারে দুর্বলতা ছিলো, ভালোবাসা ছিলো হয়তোবা,
অথচ হেলায় আমি ফিরিয়ে দিয়েছি তাকে, অকম্পিত তিনি
ব্যর্থ কবিতার মতো মুখ নিচু করে একটি রুমাল ফেলে
কোথায় গেলেন চলে। আমি সেই রুমালের প্রতি কী প্রবল
আকর্ষণ বোধ করি। কেন করি? বুঝি-বা প্রকৃত বস্তু ছেড়ে
শুধু তার চিহ্নের জন্যই বড় বেশি কাতরতা আমাদের।

মনে হয়, নিজেকেই জব্দ করে দিয়েছি ফিরিয়ে উদাসীন,
আমার ভেতরে দেখি অভিমানে পা ঝুলিয়ে রয়েছেন একা
ব্যথিত পুরুষ আর প্রত্যঙ্গসমূহ তার ভেঙে ভেঙে পড়ছে কেবলি।
বড়ো দুঃখে থাকি আমি বড়ো দুঃখে রাত্রিদিন। দুঃখবোধ প্রায়ই
রাখে উপবাসে, পিপাসায় ছুঁই না শীতল জল; তবে কি আমিও
কমলালেবুর মতো শুকিয়ে মরে যাবো অগোচরে?

জরায়ুর অভ্যন্তরে পুরুষের বীজরাশি গ্রহণ করেও
যে-নারী অত্যন্ত বন্ধ্যা, তারই অনুরূপ থাকি আমি
অপেক্ষায় সর্বক্ষণ। কিসের অপেক্ষা তা-ও বুঝি না কখনও।
অস্থিরতা অস্তিত্বের সূত্র টানে, মৃত হাঁসের ওপর থেকে
ছায়া সরে এসে যেন আমাকে জড়াতে চায়, জড়ায় খানিক।
আমার বুকের পাশে ঘুমিয়ে থাকেন গাঢ় ব্যথিত পুরুষ,
চতুর্দিকে আস্তে-সুস্থে বাড়ে উদ্ভিদ, কোমল প্রাণী
কতিপয়; আকালেও তার কানে সুর ঢালে অবাধ্য কোকিল!