বোম্বেটে ব্ল্যাক বিয়ার্ড ও রবার্ট মেনার্ড
সাত সাগরের বুকে জাহাজ ভাসিয়ে যেসব জলদস্যু ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তাক্ত করে তুলেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর, হিংস্র ও ভয়ংকর মানুষ হচ্ছে বোম্বেটে-সর্দার এডওয়ার্ড টিচ ওরফে এডওয়ার্ড ব্ল্যাক বিয়ার্ড। সাধারণ মানুষের কথা তো ছেড়েই দিলাম, দুর্ধর্ষ জলদস্যুরাও তাদের দলপতি ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে যমের মতোই ভয় করত। ব্ল্যাক বিয়ার্ড তার দলকে পরিচালনা করত কঠোর হস্তে। ক্রুদ্ধ হলে তার হাতে শত্ৰুমিত্র কারুরই রক্ষা ছিল না। উক্ত বোম্বেটে-দলপতির দৈহিক শক্তি ছিল অসাধারণ। একটা জোয়ান মানুষকে সে মাথার ওপর তুলে ফেলতে পারত অনায়াসে। বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রের ওপর সন্ত্রাস ও বিভীষিকার রাজত্ব চালিয়েছিল বোম্বেটে ব্ল্যাক বিয়ার্ড। তার অধীনে জলদস্যুরা বহু জাহাজ লুঠ করেছিল এবং ওইসব জাহাজের নাবিক ও যাত্রীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল ব্ল্যাক বিয়ার্ডের আদেশ অনুসারে। কোনো
একদিন রাজকীয় নৌবহরের দুটি জাহাজ বোম্বেটে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের জাহাজকে আক্রমণ করল। উক্ত জাহাজ দুটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট রবার্ট মেনার্ড। প্রচণ্ড হট্টগোল ও মারামারির মধ্যেও মেনার্ডের সন্ধানী দৃষ্টি ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে আবিষ্কার করতে সমর্থ হল। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে বোম্বেটে দলপতিকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানালেন অসিধারী মেনার্ড। বলাই বাহুল্য সেই আহ্বানে সাড়া দিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেনি বোম্বেটে ব্ল্যাক বিয়ার্ড। শুরু হল যুদ্ধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্ল্যাক বিয়ার্ড বুঝল এ-শত্রু সহজ নয়–সে আজ শক্ত পাল্লায় পড়েছে। একবার এগিয়ে, একবার পিছিয়ে এবং চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে অনেকক্ষণ ধরে লড়াই চলল। দুই যোদ্ধারই সর্বাঙ্গ হল ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত। অবশেষে সমুদ্রের দিকে সংঘটিত যাবতীয় দ্বন্দ্বযুদ্ধের জাহাজের রক্তরঞ্জিত পাটাতনের ওপর লুটিয়ে পড়ল মরণাহত ব্ল্যাক বিয়ার্ডের ঘৃণিত শরীর।
তখনকার দিনে প্রচলিত সূক্ষ্মাগ্র সোর্ড বা সোজা তলোয়ার নিয়ে লড়াইটা হয়নি–দ্বন্দ্বযুদ্ধটা হয়েছিল কাটলাস (cutlass) নামক বাঁকা তলোয়ার নিয়ে।