পারো তো কাদায় ধৈর্য ধ’রে প’ড়ে থাকো
আরো কিছুকাল, ওরা লাথি ছুঁড়ুক বেদম বেশুমার, ঢাকো
ঢেকে রাখো মুখে থুতু-ছিটানো লোকেরা চ’লে
যাক দূরে ক্লান্ত হয়ে ঢ’লে
মাতাল মোষের মতো, নইলে কিছু অতিশয় কাছের চেহারা
দেখে দুঃখ পাবে। দিশেহারা
হ’লে চলবে না আজ, যারা ভাবে তোমাকে বেহদ অপমান
ক’রে নিজেদের শান
সোজা সাত আসমানে পৌঁছে দিলো তরতর, নিজেদের ওরা
ত্বরিত ঠাউরে নেয় তালেবর, নিত্যদিন হাতে পেয়ে বশম্বদ তোড়া
রঙ বেরঙের তাজা ফুলের এবং
আহলাদে আটখানা হয় সামনে দেখে শত শত চমৎকার সঙ।
ছলছুতো ক’রে
বহুরূপী মন্ত্রণার ছমছমে কর্কশ প্রহরে
একজন শব্দ শ্রমিকের মুখ ঘোর অন্ধকার
ক’রে দেয়া কী এমন শক্ত কাজ আর
একালে? এমন হ’য়ে এসেছে সুদূর অতীতের
দরবার থেকে বারবার দেশে দেশে, তারই জের
চলছে, চলছে নিরন্তর। যার ঠোঁটে বাঁশি রাগ রাগিনীর
বিস্তার ফুটিয়ে তোলে তারই বুকে বিঁধে যায় জহরিলা তীর।
কী তোমার অপরাধ? ঘুমের মতন
নিমগ্ন জীবন থেকে তুলে আনো যখন তখন
লতাগুল্ম, চিত্রিত ঝুনুক
রাশি রাশি এবং দেখতে চাও হিরন্ময় মুখ
সত্যের, দিয়েছো পেতে জীবন কাঁটার বিছানায়। অলৌকিক
পাথরের জন্যে দশদিক
তন্ন তন্ন ক’রে খোঁজা, স্বপ্নে-জাগরণে খুশনুমা দ্বীপে একা
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবো, পাও কিনা দেখা
সুন্দরীতমার কিংবা দাও সাড়া তখনই যখনই, আর্তনাদ
করে ওঠে দেশ বন্দী প্রমোথিউসের মতো। নিজের অগাধ
দুঃখেও চকিতে বেজে ওঠো
গুণীর বাদ্যের মতো বারবার, ছোটো তুমি ছোটো,
যেন দূর পাল্লার নিঃসঙ্গ দৌড়বাজ, পায়ে ক্ষত
ফোটে ক্রমাগত।
কী আশ্চর্য, দানেশমন্দিতে দড়, অথচ কিছুতে এ সহজ
সত্য ওরা মেনে নিতে পারে না, মগজ
নিখুঁত ধোলাই করলেও কিছু লোক
থেকে যায়, যাদের ভেতরে বেড়ে ওঠে দ্রোহের দুর্বার ঝোঁক।
কে না জানে বুদ্ধের হাতের পদ্ম ফুল পায়ের তলায় ফেলে
চটকালে কিংবা রেগে মেগে এলেবেলে
সাত তাড়াতাড়ি
কোকিলের ঘাড় মটকালে কৃতিত্বের পাল্লা ভারি
হয় না মোটেই বাস্তবিক,
বরং চৌদিকে দিনরাত্রি রব ওঠে ধিক ধিক।
মেনী মেনী থ্যাঙ্কস ওদের, ওরা যা যা করেছেন তার ঋণ
শোধ করা অসম্ভব। তাদের অশেষ বদৌলতে অন্তরীণ
কবিতা তোমার
ঝাঁকিয়ে-ঝাঁকড়া চুল বেরিয়ে এসেছে খুলে দ্বার
এক ঝটকায় আর তোমার কবিতা ফের গোইয়ার ছবির মতো ফোটে
ঘন ঘোর তমিস্রায়, তোমার কবিতা ঠোঁটে ঠোঁটে
নাচে, যেন মত্ত নটরাজরূপী উদয়শঙ্কর। করো শুকুর আদায়,
বেশ ভালোই তো, নির্দ্ধিধায়
সেসব বিবেচকের, যাদের অশেষ কৃপা বিনা তুমি এই
তালিম পেতে না-অবরুদ্ধ খাঁচা ছাড়া হারাবার কিছু নেই।