এখানে একটি গাছ, শোনা যায়, বহুকাল থেকে
দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠায় সন্ন্যাসীর মতো। লোকে বলে,
একদা এক গাছে ছিল ফলের বিস্ময়
ঋতুতে ঋতুতে, আজ আর
তার কোনো ডালকে হাসিয়ে থরে থরে দূরে থাক,
ধরে না একটি ফলও। পথচারী যারা,
তারা কিছুক্ষণ
দাঁড়ায় গাছের নিচে ছায়ায় ভিজিয়ে
নিতে বড় রোদপোড়া শরীর তাদের। কিন্তু নাকে
আসে না ফলের ঘ্রাণ। তাই
বিশ্রাম ফুরালে ওরা চলে যায় নাক সিঁটকিয়ে,
কেউ কেউ প্রস্থানের আগে
কৃতজ্ঞতাবশত তাকায়
গাছটির দিকে স্নেহশীল চোখে একবার, বলে
মনে মনে, ‘থাকুক সে এমন অক্ষয়
শতেক বছর আরও’।
পাড়ার উঠতি যুবকেরা।
ক্রমে গাছটির নিষ্ফলতা নিয়ে বড়
অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। একদিন ওরা ঢাকঢোল
বাজিয়ে গাছের নিচে পঞ্চায়েত ডেকে-
মাঝে মধ্যে দুলে ওঠে ছায়ার চামর অগোচরে-
শাণিত কুড়ুলে
বহু বছরের ঝড়জল সরে যাওয়া
গাছের শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলার সম্মিলিত
জোরালো প্রস্তাব করে পাঠ। একজন নিরক্ষর, বুড়োসুড়ো
লোক প্রস্তাবের প্রতি উদাসীন, যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গাছের
শেকড়বাকড় তুল্য নিবু নিবু চোখে
দেখেন গাছের
সমগ্র অস্তিত্ব থেকে চুইয়ে চুইয়ে
সবার অলক্ষ্যে ঝরে ক্রমাগত মূক অশ্রুজল।