বুরুন্ডির সবুজমানুষ – ২

সেদিন ভোরে সূর্য ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রা শুরু হল। প্রথমে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেল তাঙ্গানিকার পাড়ে, তারপর আগের দিনের মতোই হ্রদের তীর ঘেঁসে এগোতে থাকল। এপথে সকাল থেকেই নানা প্রাণী চোখে পড়তে লাগল সুদীপ্তদের। কখনো জেব্রার দল চরে বেড়াচ্ছে মাঠে, কখনো জিরাফ লম্বা গলা তুলে পাতা ছিঁড়ে খাচ্ছে গাছের মাথা থেকে, আবার কখনো বা ইম্পালা নামের ছোট হরিণের ঝাঁক দৌড়ে পালাচ্ছে মানুষ দেখে। এছাড়া তাঙ্গানিকার জলে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছে জলহস্তির দাপাদাপি। চলতে চলতে সুদীপ্ত জানতে চাইল, ‘এখানে হাতি নেই?’

টোগো জানাল, ‘না, এদিকে হাতি তেমন একটা দেখা যায় না। বুরুন্ডিতে হাতি খুব বেশি নেই। হাতির স্বর্গরাজ্য হল কিনিয়া আর তাঞ্জেনিয়া। সেখানে হাতি এত বেশি যে মাঝে মাঝে সরকার থেকে হাতি মারা হয়। শিকারিদের পারমিটও দেওয়া হয়।’ টোগোর কথা শোনার পর হেরম্যান হঠাৎ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, ওই আফ্রিকাভার তো শুনলাম গ্রেট রিটে সিংহ শিকারে যাচ্ছে। ওই অঞ্চলে সিংহদের কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে নাকি?’

টোগো বলল, ‘না, তেমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। লোকটা যে এত কষ্ট করে ওখানে সিংহ শিকারে যাচ্ছেন কেন বুঝতে পারছি না। উপত্যকায় সিংহ শিকার বেশ অসুবিধাজনক। সিংহ শিকারের আদর্শ জায়গা হল, উগাভা আর কিনিয়া। সরকার তো এ বছর সেখানে সিংহ শিকারের জন্য পাশও দিচ্ছে। বুরুন্ডিরও কিছু লোক সাফারিতে গেছে সে দু-দেশে। উনি তো ওসব জায়গাতেই যেতে পারতেন!’

টোগোর উত্তর শুনে, কী যেন ভাবতে ভাবতে হাঁটতে লাগলেন হেরম্যান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও ক্রমশ চড়ছে আগের দিনের মতোই। তবে এদিকে বড় গাছ কিছুটা আছে। যতদূর সম্ভব তার ছায়াতেই সকলে চলতে লাগল।

বেলা এগারোটা নাগাদ দূর থেকে কিসের যেন গুরুগম্ভীর ধ্বনি শুনতে পেল তারা।

টোগো জানাল, ‘আমরা রুজিজি নদীর মোহনার কাছে পৌঁছে গেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুদীপ্তরা পৌঁছে গেল সেই জায়গাটাতে। গ্রেট রিফট উপত্যকা থেকে নেমে এসে রুজিজি ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঙ্গানিকার জলে। যেখানে রুজিজি এসে মিশেছে প্রচণ্ড শব্দ সেখানে। ওই শব্দই কানে আসছিল দূর থেকে। রুজিজির জল হ্রদে পড়ে প্রথমে রেণু রেণু হয়ে ছিটকে উঠছে আকাশের দিকে, তারপর আবার নীচে নেমে পাক খেতে খেতে মিশে যাচ্ছে তাঙ্গানিকার সাথে। অপূর্ব দৃশ্য! একটু দূরে দাঁড়িয়ে জায়গাটা দেখল সুদীপ্তরা। মোহানার কাছেই এক জায়গাতে বেশ বড় একটা জলহস্তির দল দেখা গেল। অন্তত জনপঞ্চাশেক প্রাণী হবে। তাদের শাবক টাবকও আছে! সুদীপ্তদের দেখে তারা কিন্তু মোটেও পাত্তা দিল না, যেন এই দুপেয়ে জীবগুলো নেহাতই মশামাছি! টোগো বলল, ‘জলহস্তির মাংস খেয়েছেন কোনো দিন? আমি খেয়েছি। ভারী তৈলাক্ত!’

অন্য কেউ কথাটা বললে ব্যাপারটা হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিত সুদীপ্তরা। কিন্তু টোগো এখানকার মানুষ। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোই তার পেশা। তার পক্ষে ব্যাপারটা অসম্ভব কিছু নয়।’ সুদীপ্ত জানতে চাইল, ‘ও মাংস কোথায় খেয়েছ তুমি?

সে জবাব দিল, ‘এই তাঙ্গানিকার তীরেই, তবে বুরুন্ডিতে নয়, তাঞ্জানিয়াতে এক আদিবাসী গ্রামে। বছর পাঁচেক আগে একটা দলের সাথে সেখানে সাফারিতে গেছিলাম আমি। একটা জলহস্তী মেরে গ্রামসুদ্ধ লোক ভোজ খেল।’

সুদীপ্ত এবার কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, ‘তুমি সিংহর মাংস কোনো দিন খেয়েছ?’ সে জবাব দিল, “না, আমি খাইনি। তবে ‘মাসাই ল্যান্ডে’ কোনো কোনো আদিবাসী খায় বলে শুনেছি। সিংহর যকৃত, হৃৎপিণ্ড দিয়ে অবশ্য ওঝারা ঔষুধ তৈরি করে। ও খেলে নাকি সিংহর মতো শক্তি হয়!’

হেরম্যান সুদীপ্তকে বললেন এ মহাদেশে বহু জনগোষ্ঠীর বাস। প্রায় এক হাজার কথ্য ভাষায় কথা বলে তারা। তাদের আচার আচরণ, ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনও ভিন্ন ভিন্ন। পিগমি, বুশমেন, হটেনটট—এই তিন আদিবাসী সম্প্রদায় হল প্রস্তর যুগের মানুষ। এদেশের খাদ্যাভাস যে বিচিত্র হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! গভীর বনে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভাসের কথা না হয় বাদই দাও। আমি একবার জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকার এক ঝাঁ-চকচকে ফাইভস্টার হোটেলে খেতে গেছি। সেখানে ‘রয়াল স্যুপ’ বলে আমার টেবিলে কী হাজির করা হল জানো? একটা স্যুপ, আর তার মধ্যে ভাসছে এক বিঘত লম্বা একটা সিদ্ধ গিরগিটি!!! আমার পাশের টেবিলের এক দম্পতিকে দেখি সে জিনিসই তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে!’

‘আপনি সে জিনিস খেলেন নাকি?’ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল সুদীপ্ত। হেরম্যান তার কথা শুনে চলতে চলতে মাটির ওপর বেশ কয়েকবার থুথু ফেলে তার অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দিলেন।

রুজিজি নদীর মোহানা থেকে নদীর পাড় ধরে এগিয়ে চলল তারা। তাঙ্গানিকা পড়ে রইল পিছনে। এদিকে বড় বড় গাছ আর ঝোপঝাড়ের সংখ্যাই বেশি। ঘাসে ছাওয়া প্রান্তর আর চোখে পড়ছে না। পথের নীচের মাটি বেশ শক্ত হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে রুজিজি কোথাও প্রশস্ত, আবার কোথাও সংকীর্ণ। এঁকেবেঁকে সে চলেছে সুদীপ্তদের ফেলে আসা পথের দিকে। রুজিজির পাড় বরাবর বেশ কিছুটা পথ এগোবার পর হঠাৎ নদীখাতে দূর থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ দেখতে পেল তারা। টোগোই দেখতে পেল প্রথমে। হেরম্যানের কাছে একটা বাইনোকুলার ছিল, সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ তাদের পর্যবেক্ষণ করার পর টোগো এগোল তাদের দিকে। মূল জলস্রোতের পাশেই তিরতির করে বয়ে চলা একটা উপখাতে গোড়ালি সমান জলে দাঁড়িয়ে কী যেন করছিল, জনাসাতেক অর্ধউলঙ্গ লোক। সুদীপ্তরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতেই লোকগুলো জল ছেড়ে উঠে এল তাদের কাছে। লোকগুলোর উচ্চতা মাঝারি, প্রায় নেড়া মাথা, সামান্য বস্ত্রখণ্ড পরা আছে দেহের নিম্নাংশে। রোদের তাতে পুড়ে যাওয়া কালো মুখে একটা সরলতার ভাব আছে। তবে দেখেই মনে হচ্ছে বেশ পরিশ্রমী।

টোগোই প্রথম তাদের সাথে কথাবার্তা শুরু করল। তাদের পরিচয় জানার পর সে সুদীপ্তদের উদ্দেশ্যে বলল, “ওরা নদীর ওপারের ‘জাইরে’র অর্থাৎ ‘গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর’ বাসিন্দা। ‘বান্টু’ জনগোষ্ঠীর লোক। ওরা এদিকে এসেছে নদীখাতে হীরে খুঁজতে। গ্রেট রিফট্ উপত্যকার কাছেও ছিল ক’দিন। তারপর সিংহর ভয়ে এদিকে পালিয়ে এসেছে। ওদিকে সিংহর নাকি খুব উৎপাত। এদের একজন সঙ্গীকে নাকি সিংহ টেনেও নিয়ে গেছে।’

হীরের কথা শুনে সুদীপ্ত অবাক হয়ে বলল, ‘হীরে ! হীরেও পাওয়া যায় নাকি এখানে?’ টোগো বলল, ‘রুজিজির এই যে জলপ্রবাহ তার সাথে মিশেছে বহু ছোট ছোট নদীর জলধারা। গ্রেট রিফটের বহু ভূ-গর্ভস্থ গুহার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ওইসব নাম-না-জানা নদী। তাদের জলধারা অনেক সময় সেই অজানা-গোপন পর্বতকন্দর থেকে বয়ে আনে হীরকখণ্ড। তবে খুব বড় হীরে অবশ্য পাওয়া যায় না। পর্বত কন্দরে লুকানো খনি থেকে এতটা পথ আসতে জল আর পাথরের ঘর্ষণে তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। যা পাওয়া যায়, তা আসলে হল হীরের কুচি। আপনি দেখবেন? দাঁড়ান তাহলে বলি এদের! এই বলে সে সম্ভবত তাদের কথাটা বলতেই, তাদের একজন এগোল কিছুদূরে একটা গাছের দিকে। সেই গাছের আড়ালে লোকগুলোর বাসস্থান, কাপড়ের তৈরি একটা তাঁবু এবার চোখে পড়ল সুদীপ্তর।

লোকটার তাঁবুর দিকে এগোবার পর হেরম্যান টোগোকে বললেন, ‘ওরা তো গ্রেট রিফটের ওদিকে গেছিল বলছে। দেখো ওদের কাছে ওদিকের অন্য কোনো খবর আছে নাকি?’

টোগো আবার কথা বলতে শুরু করল তাদের সাথে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁবুর দিক থেকে ফিরে এল সেই লোকটা। তারপর সুদীপ্তদের সামনে এসে একটা ছোট্ট চামড়ার থলি থেকে হাতের তেলোতে ঢালল এক মুঠো পাথর। কিন্তু সে পাথরে কোনো দ্যুতি নেই, গোলমরিচের দানার চেয়ে একটু বড় কালচে বর্ণের পাথর। একটা পাথর নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখল হেরম্যান আর সুদীপ্ত। পাথরটা লোকটাকে ফিরিয়ে দিয়ে হেরম্যান বললেন, ‘এগুলো সব অনেকটা ডায়মন্ড। পালিশ করলেই ঝলমল করে উঠবে। তারপর কেপটাউন হয়ে চলে যাবে আমস্টারভামের বাজারে। হাজার ডলারে বিকবে এক-একটা।’

সুদীপ্ত শুনে বলল, ‘এ লোকগুলোর তো তাহলে ভালোই পয়সাকড়ি আছে। কিন্তু দেখে তো মনে হয় না!’

টোগো লোকগুলোর সাথে কথা বলতে বলতে সুদীপ্তর কথা কানে যেতেই, তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক তার উল্টো। এরা সত্যিই খুব গরিব। কাগজে কলমে ক্রীতদাস প্রথা আফ্রিকা থেকে উচ্ছেদ হলেও আসলে এরা মালিকের ক্রীতদাস। সে-ই তাদের পাঠিয়েছে এখানে। ফিরে গিয়ে তার হাতে হীরেগুলো জমা দিয়ে তার বিনিময়ে এরা হয়তো পাবে, সামান্য কয়েক বস্তা খাদ্যশস্য, কিছু পুরানো পোশাক, ঘর ছাওয়ার খড় এইসব। আর যাকে সিংহ নিল, তার তো সবই গেল। জঙ্গলে কাজ করতে এলে কিছু হলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপার-ট্যাপার এখানে নেই।’ টোগোর কথা শুনে আর লোকগুলোকে দেখে বেশ খারাপ লাগল সুদীপ্তর।

বান্টুদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর টোগো হেরম্যানকে জানাল, ‘এরা গিয়েছিল গ্রেট রিফট্ উপত্যকার ঠিক মুখ পর্যন্ত যেখানে আমরা আজ তাঁবু ফেলব। এখান থেকে আনুমানিক জায়গাটা আট-দশ মাইল উত্তরে হবে। বেশ ঘন জঙ্গল যেখানে। রাতে খুব ঠান্ডা, আর সিংহর উপদ্রব ছাড়া, সে জায়গা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলতে পারছে না এরা। পাহাড় টপকে ও-পাশের উপত্যকাতে তারা যায়নি। তবে অন্য একটা খবর এরা বলছে। সেই আফ্রিকাভারের নেতৃত্বে যাওয়া দলটার সাথে নাকি কাল বিকালে এদের এখানে দেখা হয়েছিল। তারাও এদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছিল ও অঞ্চলের। আর সেই আফ্রিকান্ডার নাকি হুটুদের মতো, এদের কাছেও জিজ্ঞেস করেছে সবুজ বানরের কথা!’ হেরম্যান শুনে শুধু মন্তব্য করলেন, ‘আশ্চর্য!’

লোকগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার চলতে শুরু করল সকলে। টোগো বলল, বিশ্রামের জন্য আজ আর থামা যাবে না, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলতে হবে। সন্ধ্যা নামার আগেই নির্দিষ্ট স্থানে তাঁবু ফেলতে হবে। নইলে বিপদ আছে!’ তার কথা শোনার পর সকলে দ্রুত পা চালাতে শুরু করল। মাইল দেড়েক চলার পর নীল দিগন্তে একটা অস্পষ্ট কালো রেখা চোখে পড়ল সুদীপ্তদের। মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে টোগো বলল, “ওই হল, ‘গ্রেট রিফট্।’ ওখানেই আমরা যাব।”

হেরম্যান প্রশ্ন করলেন, ‘ও দিকে এর আগে কোন পর্যন্ত তুমি গেছ?’

টোগো জবাব দিল, ‘গ্রেট রিফটে, আমি আগে দু-বার গেছি। কিন্তু আপনি যেখানে যেতে চাইছেন সেই ওপাশের উপত্যকাকে যাইনি কোনোদিন। পাহাড়ের মাথা থেকে গভীর বনে ঘেরা জায়গাটা দেখেছি শুধু।

সুদীপ্তদের যাত্রাপথে পায়ের নীচের মাটি ক্রমশ রুক্ষ হতে শুরু করল। আবার কমে আসতে লাগল বড় বড় গাছের সংখ্যা, তার পরিবর্তে তাদের বেষ্টন করতে লাগল বিরাট বিরাট কাঁটাঝোপের বন। তাদের ভিতর বিরাজ করছে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। দিগন্তের কালো রেখাটা ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠতে লাগল। সুদীপ্তদের চলার সাথে তাল মিলিয়ে সূর্যও ক্রমশ ধীরে ধীরে পশ্চিমে এগোতে লাগল। জঙ্গলের ভিতর থেকে আসা পাখির ডাকগুলোও মিলিয়ে গেল এক সময়। শুধু জেগে রইল রুজিজির গম্ভীর নিনাদ। শুধু চলা আর চলা। সে-চলার যেন আর বিরাম নেই।

চলতে চলতে সুদীপ্তরা তখন গ্রেট রিফটের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। পাহাড়ি উপত্যকার গিরিশিরাগুলো তখন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট দৃশ্যমান। সূর্যের আলো নরম কিন্তু সন্ধ্যা নামতে প্রায় ঘণ্টা দুই দেরি। নির্ধারিত সময় অনুপাতে বেশ একটু দ্রুতই পথ অতিক্রম করেছে তারা। ঠিক এই সময় চলতে চলতে টোগো পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর আঙুল তুলে ইশারায় কাছে একটা ঝোপের দিকে দেখাল। আস্কারিরা সঙ্গে সঙ্গে কোনো অজানা বিপদের আশঙ্কাতে সুদীপ্তদের ঘিরে দাঁড়িয়ে রাইফেল তাগ করল সেই ঝোপের দিকে। কয়েক মুহূর্ত সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর একজন কুলি সেই ঝোপটার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার হাতের বর্শাটা দিয়ে ঝোপটা একটু ফাঁক করতেই তার আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ল বিরাট হরিণ জাতীয় একটা প্রাণীর দেহ। তার কালো অঙ্গ লাল হয়ে গেছে রক্তে। চারপাশেও ছড়িয়ে আছে চাপচাপ রক্ত। প্রাণীটার দেহের পিছনের অংশ থেকে বেশ কয়েক পাউন্ড মাংস কে যেন খুবলে নিয়েছে। টোগো প্রাণীটাকে দেখে সুদীপ্তদের উদ্দেশ্যে প্রথমে বলল, ‘এটা হল কুণ্ডু জাতীয় হরিণ .এ দেশে এই হরিণ খুব সামান্যই পাওয়া যায়। এদের আসল দেশ হল অ্যাঙ্গোলা। সেখানকার ‘গ্রেট কুডু’ বিখ্যাত প্রাণী!’

এরপর একটু নীচু হয়ে মৃত প্রাণীটার ক্ষতস্থানটা ভালো করে দেখে টোগো বলল, ‘সিংহর কাজ! বান্টু উপজাতীয় লোকগুলো মিথ্যা বলেনি। এ তল্লাটে সিংহ আছে। খুব সাবধানে পথ চলতে হবে আমাদের।’

প্রাণীটাকে দেখে আর টোগোর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে গেল আস্কারি আর কুলির দল। সুদীপ্ত আর হেরম্যানকে ঘিরে একটা বৃত্ত রচনা করল তারা। তুতসি কুলিরা তাদের বর্শার ফলাগুলোকে বাগিয়ে ধরল ঝোপের দিকে। আফ্রিকানদের বর্শার ফলাগুলো বেশ অদ্ভুত ধরনের হয়। লাঠির মাথায় অনেকটা বেয়নেটের মতো দেখতে ফুট তিনেক লম্বা ইস্পাতের ফলা। তার দু-পাশে ধার। অনায়াসে তাদের তরোয়ালের ফলার মতো ব্যবহার করা যায়, রাইফেল আর বর্শা ফলকের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবৃত হয়ে তারা এগিয়ে চলল সামনের দিকে। ক্রমশই এগিয়ে আসতে লাগল গ্রেট রিফট্।

সারা দিনের পথশ্রমের পর অবশেষে তারা সন্ধ্যা নামার কিছু আগে এসে উপস্থিত হল গ্রেট রিফটের পাদদেশে। ছোট বড় পর্বতশ্রেণি সেখানে ক্রমশ বিস্তৃত হতে হতে হারিয়ে গেছে উত্তর দিগন্তে। হেরম্যান বললেন, ‘এই পর্বতশ্রেণি উত্তরে রোয়ান্ডা সীমান্ত অতিক্রম করে উগান্ডার ওপাশে এগিয়েছে। রুজিজি আর এই পর্বতমালার ওপাশটা হল জাইরে বা গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো । জাইরের অন্তর্গত, আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত শৃঙ্গ ‘মাউন্ট স্টানলি’র উচ্চতা ৫১১০ মিটার। মাউন্ট স্ট্যানলি কিন্তু এই গ্রেট রিফটেরই অন্তর্গত।’

দিনান্তের সূর্যরশ্মির লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে পর্বতশৃঙ্গের মাথায়। তার পাদদেশে বয়ে চলা রুজিজি নদী, আফ্রিকার অরণ্য প্রদেশের গহীন জঙ্গল, সভ্য পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন এ এক অচেনা পৃথিবী! সুদীপ্ত আর হেরম্যান বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখতে লাগল অস্তাচলগামী সূর্যালোকে রাঙানো প্রকৃতিকে। টোগো তাড়া লাগাল, ‘আমাদের কিন্তু এখন দাঁড়ালে হবে না। চটপট জায়গা বেছে তাঁবু ফেলতে হবে। অগ্নিকুণ্ডও জ্বালাতে হবে। এ জায়গা কিন্তু ভালো নয়।’

অতঃপর আর দাঁড়িয়ে না থেকে তাঁবু ফেলার জন্য স্থান নির্বাচন করা হল। জায়গাটা পাথুরে দেওয়াল আর জঙ্গলের মাঝে এক চিলতে ফাঁকা জমি। দুজন কুলি লেগে গেল তাঁবু খাটানোর কাজে। হেরম্যান, সুদীপ্ত আর টোগোও হাত লাগাল তাতে। আর অন্য দু-জন কুলি আস্কারিদের প্রহরাতে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে এক জায়গাতে জমা করতে লাগল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটো তাঁবু খাটিয়ে ফেলল তারা। ছোট তাঁবুতে থাকবে হেরম্যান, সুদীপ্ত আর টোগো। বড়টাতে থাকবে কুলিরা, আর দুজন আস্কারি। আস্কারিরা নিজেদের মধ্যে সময় ভাগ করে নিয়ে দুজন করে একসাথে তাঁবু পাহারা দেবে। তাঁবু দুটোর গা ঘেঁষে থাকবে দুটো ছোট আর একটা বড় অগ্নিকুণ্ড, তাঁবু খাটানো আর কাঠ সংগ্রহর পর কুলির দল রান্নার প্রস্তুতি শুরু করল। হেরম্যান, সুদীপ্তকে নিয়ে তাঁবুর ভিতর প্রবেশ করলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইরে অন্ধকার নেমে এল। আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে আসতে লাগল ঝিঁঝিঁ পোকার নিরবচ্ছিন্ন ঐকতান। তাঁবুর ভিতর হাত-পা ছড়িয়ে বসে সেই কলতান শুনতে লাগল সুদীপ্তরা। অন্ধকার গাঢ় হতেই ধীরে ধীরে ঠান্ডা নামতে শুরু করল উপত্যকার বুকে।

এক ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নেবার পর তারা দুজন যখন আবার তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে এল, তার অনেক আগেই অগ্নিকুণ্ড জ্বালানো হয়ে গেছে। কুলিদের তাঁবুর সামনে রান্নার কাজ চলছে। সেখানেই একটা ছোট অগ্নিকুণ্ড ঘিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে টোগো সহ অন্যরা। বাইরে বেরিয়ে হেরম্যান সুদীপ্তকে নিয়ে বসলেন নিজেদের তাঁবুর সামনে অগ্নিকুণ্ডের পাশে। চাঁদ উঠেছে আকাশে, সেই আলোতে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে উঠে যাওয়া থাক থাক পাথুরে দেওয়াল—‘গ্রেট রিফট্ ভ্যালি’। চারপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গল। চাঁদের আলো কেন, দিনমানে আফ্রিকার প্রখর সূর্যরও প্রবেশের অনুমতি নেই সেখানে। চন্দ্রালোকিত গ্রেট রিফটের একটা অংশ দেখিয়ে হেরম্যান বললেন, ওর ওপাশে যেতে হবে আমাদের। জানি না সেখানে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে!’

সুদীপ্ত সেদিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমাদের কী ওই অত উঁচু পাহাড়ে উঠতে হবে?’ হেরম্যান বললেন, ‘পাহাড়ের মাথায় উঠতে না হলেও, অন্তত হাজার তিনেক ফিট উঠতে হবে। বেশ কয়েকটা গিরিশিরা আছে এখানে, তারই একটা ধরে এগিয়ে, তারপর ওপাশের ঢাল বেয়ে নামতে হবে। বেশ কয়েকটা উপত্যকা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গ্রেট রিফটের ওপাশে। অনুচ্চ পাহাড়ঘেরা জঙ্গলময় সব ছোট ছোট উপত্যকা। তারই একটা উপত্যকা, ম্যাপ দেখে খুঁজে বার করতে হবে আমাদের। যেখানে আছে ওই পিগমি গ্রাম।

সুদীপ্ত শুনে বলল, ‘ম্যাপ! ওখানকার ম্যাপ কোথায় পেলেন আপনি?’ হেরম্যান বললে, ‘বছর পঞ্চাশ আগে ডারবানবাসী এক ইওরোপীয় ধর্মযাজক, রেভারেন্ড কলিন্স ওই অঞ্চলে গেছিলেন। অবশ্য তাঁর আগে-পরেও বেশ কয়েকজন গেছে ওই অঞ্চলে। তারাও অধিকাংশই ইওরোপীয় পর্যটক। যাই হোক কলিন্স ওই অঞ্চলের একটা কাঁচা ম্যাপ এঁকেছিলেন, একটা ডায়েরিতে কিছু নোটও নিয়েছিলেন। কলিন্স মারা যান কুড়ি বছর আগে। কিছু দিন আগে তারই এক উত্তরসূরীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়েই ম্যাপ আর ডায়েরি সংগ্রহ করি আমি। আর তারপরই এই বুরুন্ডি অভিযানের পরিকল্পনা করি। যার ফলশ্রুতি চাঁদের আলোতে গ্রেট রিফটের সামনে আমাদের এই বসে থাকা।

ডায়েরি আর ম্যাপের কথা শুনে বিস্মিত হয়ে সুদীপ্ত জানতে চাইল, ডায়েরিতে

তাহলে নিশ্চয়ই সবুজ বানরের কথা লেখা আছে। তিনি কী লিখছেন প্রাণীটার সম্বন্ধে? হেরম্যান জানালেন, ‘রোজ নামচা’ বলতে যা লেখা হয় তাঁর ডায়েরিতে তেমনভাবে কিন্তু কিছু লেখা নেই। আছে খণ্ড খণ্ড কিছু ঘটনার বিবরণ। আর আছে ওষুধপত্তরের হিসেব। আফ্রিকার অত্যন্ত গ্রামগুলোতে ওষুধপত্র বিলি আর তার সাথে সাথে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যেই এদিকে তিনি এসেছিলেন। তবে অবশ্যই তাঁর ডায়েরিতেই ওই প্রাণীর উল্লেখ আছে। নইলে আর আমি সেটা সংগ্রহ করব কেন? পিগমিরা তাদের ডেরায় কলিন্সকে ঢুকতে দেয়নি। তিনি বেশ দূর থেকে কয়েক মুহূর্তের জন্য তাকে একবার দেখেছিলেন পিগমিদের দঙ্গলে। তাতে তিনি ওই প্রাণীটার যে চেহারা লিপিবন্ধ করেছেন, তা হল, ‘প্রাণীটার দেহ সবুজ বর্ণের লোমে ঢাকা, উচ্চতা অন্তত দশফুট, প্রাণীটা দু-পায়ে চলাফেরা করে, তবে একটু ঝুঁকে হাঁটে। আর প্রাণীটা দু-পায়ে হাঁটে বলেই তিনি সম্ভবত তার লেখার সময়, ‘গ্রিন-মাঙ্কি’র পরিবর্তে ‘গ্রিন ম্যান’ কথাটা ব্যবহার করেছেন! হ্যাঁ, ‘সবুজমানুষ!’ ব্যাস এটুকুই লেখা আছে এই প্রাণীর সম্পর্কে?’ সুদীপ্ত শুনে বলল, ‘আচ্ছা, আপনার কী মনে হয় ; ওই প্রাণীটা কী মানুষ জাতীয় কোনো প্রাণী?’

হেরম্যান জবাবে বললেন, ‘দ্যাখো এই আফ্রিকা মহাদেশ হল মনুষ্য প্রজাতির অন্যতম আদি বাসস্থান। গ্রেট রিফটের একটা অংশ কেনিয়াতেও আছে। সেখানে গ্রেট রিফটে অবস্থিত তারকানা হ্রদের তীরে পৃথিবীর প্রাচীনতম মানুষের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে। শুধু কঙ্গো-বুরুন্ডি এ অঞ্চলেই ২০০ জনগোষ্ঠী বাস করে। তার মধ্যে আবার কেউ কেউ প্রস্তর যুগের মানুষ। এখানে যেমন দেখা মেলে চার ফুট উচ্চতার ক্ষুদ্রাকৃতি পিগমিদের, তেমনই দেখা যায় ছয়-সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার যাযাবর সাসাইদের। তবে তাদের কেউই রোমশ নয়, উচ্চতাও দশফুট নয়। এ অঞ্চলে বেশ কিছু প্রজাতির গোরিলা, শিম্পাঞ্জির দেখা মেলে। বিশেষত কঙ্গো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। আমার নিজস্ব ধারণা, ও প্রাণীটা গোরিলা জাতীয় প্রাণী। বিরাট বপুর এই প্রাণীরা মানুষের মতো দু-পায়ে হাঁটতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, এই নীল বানর বা নীলমানুষ হল, হিমালয়ের ‘ইয়েতি’ বা ‘আমেরিকার ‘বিগ ফুটে’র’ আফ্রিকান সংস্করণ!’

কুলির দল ছেড়ে টোগো এর পর এসে বসল তাদের কাছে। হেরম্যান তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওই পাথরের দেওয়াল অতিক্রম করতে আমাদের কত সময় লাগতে পারে মনে হয়?’

টোগো হিসেব করে বলল, ‘ওপরে উঠতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। ও পাশের ঢাল বেয়ে নামতে আরও তিন ঘণ্টা। আমার ধারণা, কাল বিকালের আগেই আমরা ও পাশের কোনো উপত্যকায় পৌঁছে যাব।’ এরপর সে একটু থেমে বলল, ‘আফ্রিকান্ডার দলটা আমাদের ঠিক একদিন আগে চলছে। হয়তো ওপাশে গেলে তাদের সাথে আমাদের দেখা হয়ে যাবে।’

তার কথা শোনার পর হেরম্যান বললেন, ‘কাল সুদীপ্তর কথা আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু ওই দলটার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার মনেও কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে! যে সিংহ শিকারের জন্য যাচ্ছে সে সিংহর ব্যাপারে খোঁজ না নিয়ে সবুজ বানরের সম্বন্ধে খোঁজ নিচ্ছে কেন? তাদের সাথে যতক্ষণ না সাক্ষাৎ হচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না!’

কথাগুলো বলার পর হেরম্যান আর টোগো পরদিনের যাত্রার খুঁটিনাটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কুলিরা রাতের খাবার নিয়ে এল। খাওয়া সেরে তাঁবুতে ঢুকে শুয়ে পড়ল সুদীপ্তরা।

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল সুদীপ্তর। তাঁবুর ভিতর পেট্রোম্যাক্স জ্বলছে। সুদীপ্ত দেখল টোগো আর হেরম্যান উঠে বসেছেন। সুদীপ্তও উঠে বসতেই হেরম্যান ইশারায় চুপ থাকতে বললেন তাকে। তার মনে হল, তাঁরা যেন কান খাড়া করে আঁবুর বাইরে কী যেন একটা শোনার চেষ্টা করছেন। কয়েক মুহূর্ত পর সুদীপ্তও শুনতে পেল শব্দটা। ‘খক্খক্’ কাশির শব্দ। যে পাথরের দেওয়ালের নীচে তাদের তাঁবু, তারই মাথার ওপর কোনো জায়গা থেকে আসছে শব্দটা। আরও কিছুক্ষণ শোনার পর সুদীপ্তর মনে হল ওই শব্দটা যেন ক্রমশই গড়িয়ে গড়িয়ে নীচের তাঁবুর দিকে নেমে আসছে। মিনিট খানেক পর ওই খক্ খক্ কাশির শব্দটা বদলে গেল একটা ঘড়ঘড় শব্দে। শব্দটা যেন এবার কিছু দূর থেকে অগ্নিকুণ্ডে ঘেরা তাঁবু দুটোকে প্রদক্ষিণ শুরু করল। টোগো এবার অস্পষ্ট স্বরে সুদীপ্তদের উদ্দেশ্যে বলল, ‘সিম্বা’ অর্থাৎ সিংহ!

ঠিক এই সময় একজন রাইফেলধারী আস্করি সুদীপ্তদের তাঁবুর দরজায় এসে দাঁড়িয়ে তাকাল টোগোর দিকে। অর্থাৎ শব্দটা তার কানেও গেছে। টোগো হেরম্যানকে বলল, ‘যদিও আগুন জ্বালানো আছে, তবুও এ প্রাণীকে বিশ্বাস নেই। খুব ধূর্ত প্রাণী! তাঁবুর ভিতর থেকেও মানুষ তুলে নিয়ে যায়! ওকে দূরে সরাতে হবে।’

‘কীভাবে?’ জানতে চাইলেন হেরম্যান।

টোগো বলল, ‘ফাঁকা আওয়াজ করে।’—এই বলে সে দুর্বোধ্য ভাষায় কাজটা করার নির্দেশ দিল আস্কারিকে।

লোকটা সরে গেল তাঁবুর দরজা থেকে, আর তারপরই রাইফেলের কানফাটানো গর্জনে খান খান হয়ে গেল রাতের অরণ্যের নিস্তব্ধতা। পরপর তিনবার ফায়ার করল লোকটা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাইফেলের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে লাগল গ্রেট রিফটে।

সে শব্দ থেমে যাবার পর, সেই ঘড়ঘড় শব্দটা আর শোনা গেল না। নিজের রাইফেলটা মাথার কাছে রেখে টোগো বলল, ‘আপনারা এবার ঘুমিয়ে পড়ুন। আবার তো কাল সকালে উঠতে হবে।’

শুয়ে পড়ল সুদীপ্ত, কিন্তু ঘুমের মধ্যে সে যেন খালি শুনতে লাগল সেই ঘড় ঘড় শব্দ।