হাদিস ৪৬৮
ইবরাহীম ইবনে মুনযির আল-হিযামী (র)…… আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) উমরা ও হজ্জের জন্যে রওয়ানা হলে ‘যুল-হুলায়ফায়’ অবতরণ করতেন, বাবলা গাছের নীচে যুল-হুলায়ফার মসজিদের স্থানে। আর যখন কোন যুদ্ধ থেকে অথবা হজ্জ বা উমরা করে সেই পথে ফিরতেন,তখন উপত্যকার মাঝখানে অবতরণ করতেন। যখন উপত্যকার মাঝখান থেকে উপরের দিকে আসতেন, তখন উপত্যকার তীরে অবস্থিত পূর্ব নিম্নভূমিতে উট বসাতেন। সেখানে তিনি শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করতেন। এ স্থানটি পাথরের উপর নির্মিত মসজিদের কাছে নয় এবং যে মসজিদ টিলার উপর, তার নিকটেও নয়। এখানে ছিল একটি ঝিল, যার পাশে আবদুল্লাহ সালাত আদায় করতেন। এর ভিতরে কতগুলো বালির স্তূপ ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সা) এখানেই সালাত আদায় করতেন। তারপর নিম্নভূমিতে পানির প্রবাহ হয়ে আবদুল্লাহ (রা) যে স্থানে সালাত আদায় করতেন তা সমান করে দিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) [নাফি (র) কে] বলেছেন: নবী (সা) শারাফুর-রাওহা’(র) মসজিদের কাছে ছোট মসজিদের স্থানে সালাত আদায় করেছিলেন। নবী (সা) যেখানে সালাত আদায় করেছিলেন, আবদুল্লাহ (রা) সে স্থানের পরিচয় দিতেন এই বলে যে, যখন তুমি মসজিদে সালাতে দাঁড়াবে তখন তা তোমার ডানদিকে। আর সেই মসজিদটি হলো যখন তুমি (মদীনা থেকে) মক্কা যাবে তখন তা ডানদিকের রাস্তার এক পাশে থাকবে। সে স্থান ও বড় মসজিদের মাঝখানে ব্যবধান হলো একটি ঢিল নিক্ষেপ পরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি। আর ইবনে ওমর (রা) রাওহার শেষ মাথায় ‘ইরক’(ছোট পাহাড়) এর কাছে সালাত আদায় করতেন । সেই ‘ইরক’ এর শেষ প্রান্ত হলো রাস্তার পাশে মসজিদের কাছাকাছি মক্কা যাওয়ার পথে রাওহা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখনে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এই মসজিদে সালাত করতেন না, বরং সেটাকে তিনি বামদিকে ও পেছনে ফেলে অগ্রসর হয়ে ‘ইরক’ এর নিকটে সালাত আদায় করতেন। আর আবদুল্লাহ (রা) রাওহা থেকে বেরিয়ে ঐ স্থানে পৌছার আগে যোহরের সালাত আদায় করতেন না। সেখানে পৌঁছে যোহর আদায় করতেন। মক্কা থেকে আসার সময় এ পথে ভোরের এক ঘণ্টা আগে বা শেষ রাতে আসলে তথায় অবস্থান করে ফজরের সালাত আদায় করতেন। আবদুল্লাহ (রা) আরো বর্ণনা করেন: নবী (সা) রুওয়ায়ছার নিকটে রাস্তার ডানদিকে রাস্তা সংলগ্ন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে একটা বিরাট গাছের নীচে অবস্থান করতেন। তারপর তিনি রুওয়ায়ছার ডাকঘরের দু’মাইল দূরে টিলার পাশ দিয়ে রওয়ান হতেন। বর্তমানে গাছটির উপরের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে মাঝখানে ঝুঁকে গেছে। গাছের কাণ্ড এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আর তার আশেপাশে অনেকগুলো বালির স্তূপ বিস্তৃত রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আরো বর্ণনা করেছেন: আরজ গ্রামের পরে পাহাড়ের দিকে যেতে যে উচ্চভূমি রয়েছে, তার পাশে নবী (সা) সালাত আদায় করেছেন। এই মসজিদের পাশে দু’তিনটি কবর আছে। এসব কবরে পাথরের বড় বড় খণ্ড পড়ে আছে। রাস্তার ডান পাশে গাছের নিকটেই তা অবস্থিত। দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়লে আবদুল্লাহ (রা) ‘আরজ’ এর দিকে থেক এসে গাছের মধ্য দিয়ে যেতেন এবং ঐ মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সে রাস্তার বাঁ দিকে বিরাট গাছগুলির কাছে অবতরণ করেন যা ‘হারশা’ পাহাড়ের নিকটবর্তী নিম্নভূমির দিকে চলে গেছে। সেই নিম্নভূমিটি ‘হারশা’-এর এক প্রান্তের সাথে মিলিত। এখানে থেকে সাধারণ সড়কের দূরত্ব প্রায় এক তীর নিক্ষেপের পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) সেই গাছগুলির মধ্যে একটির কাছে সালাত আদায় করতেন, যা ছিল রাস্তার নিকটবর্তী এবং সবচাইতে উঁচু। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আরো বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা) অবতরণ করতেন ‘মাররুয যাহরান’ উপত্যকার শেষ প্রান্তে নিম্নভূমিতে, যা মদীনার দিকে যেতে ছোট পাহাড়গুলোর নীচে অবস্থিত। তিনি সে নিম্নভূমির মাঝখানে অবতরণ করতেন। এটা মক্কা যাওয়ার পথে বাম পাশে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা)এর মনযিল ও রাস্তার মাঝে দূরত্ব এক পাথর নিক্ষেপ পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আরো বলেছেন যে, নবী (সা) ‘যূ-তুওয়া’ ইয়াহইয়া অবতরণ
করতেন এবং এখানেই রাত যাপন করতেন আর মক্কায় আসার পথে এখানেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এর সালাত আদায়ের সেই স্থানটা ছিল একটা বড় টিলার উপরে। যেখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেখানে নয় বরং তার নীচে একটা বড় টিলার উপর। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তাদের কাছে আরো বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা) পাহাড়ের দু’টো প্রবেশপথ সামনে রাখতেন যা তার ও দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝখানে কা’বার দিকে রয়েছে।বর্তমানে সেখানে যে মসজিদ নির্মিত করা হয়েছে, সেটিকে তিনি [ ইবনে উমর (র)] টিলার প্রান্তের মসজিদের বাম পাশে রাখতেন। আর নবী (সা) এর সালাতের স্থান ছিল এর নীচে কাল টিলার উপরে। টিলা থেকে প্রায় দশ হাত দূরে দু’টো পাহাড়ের প্রবেশপথ যা তোমার ও কা’বার মাঝখানে রয়েছে-সামনে রেখে তুমি সালাত আদায় করবে।